বই পরিচিতি- অভিবাসী মানুষদের উপন্যাস by আখতার জামান
শীতপাখিরা: ওয়াসি আহমেদ \ প্রকাশক: শুদ্ধস্বর \ ফেব্রুয়ারি ২০১১ \ প্রচ্ছদ: শিবু কুমার শীল \ ১৩৬ পৃষ্ঠা \ ২২৫ টাকা শীতপাখিরা কি সুখের পাখি? কেবল প্রয়োজনে তারা স্থান বদলায়? তাদের সংবদ্ধতা আসলে স্বার্থপরতার নামান্তর? না, শীতপাখিদের নিয়মটাই এমন। এ তাদের অভ্যাস, অভিযোজন বা আসলে প্রকৃতিকে মোকাবিলা করার এক পন্থা। ফলে পাখিদের আর মানুষদের অভিবাসনের পার্থক্য তো থাকেই। ওয়াসি আহমেদ কেন তবে ইংল্যান্ড অভিবাসী মানুষদের শীতপাখি বললেন। পাখিদের যে জীবন, মানুষদের তো সে জীবন না।
মানুষরা যে বিদ্যা অর্জন করে, সেই বিদ্যা ভেঙে কলে, কারখানায়, দোকানে, হোটেলে, বাসা-বাড়িতে, এমনকি নিজেদের শরীরে বেঁচে থাকার যত অবলম্বন মানুষ খুঁজে পেয়েছে, পাখিরা তো সেই তুলনায় নস্যি। কেবল এই যে উড়ে যাওয়ার ঐক্যতেই অভিবাসী মানুষ আর পাখিরা এক হয়ে যায়। নাকি মানুষদের যে কোকিলস্বভাব ‘অন্যের বাসায় ডিম পাড়া’, সেই স্বভাবের, ঐকতানের মিল খুঁজে পেয়েছেন লেখক। না হলে ইংল্যান্ড অভিবাসী মানুষদের নিয়ে লেখা উপন্যাসের নাম কেন শীতপাখিরা। এই উপন্যাসের মঞ্চ বেশির ভাগই ইল্যান্ড, কিছু অংশ বাংলাদেশে। কিন্তু চরিত্ররা বাংলাদেশি। বাঙালি স্বভাব রহিত যেন তারা, তারা যেন সেই পাখিদের মতোই কেবল বেঁচে থাকতে উড়াল দিয়েছে সেই দেশে। ঘটনার সত্যগুলো এমনই, কিন্তু সত্য যা, যা মানুষদের কঠিন করে তুলেছে নিজের দেশেই বেঁচে থাকা, সে সব সত্য নিরাবেগ উঠে এসেছে শীতপাখি উপন্যাসে। এই বাংলাদেশ আসলে সিলেটও নয়, সমগ্র বাংলাদেশই। সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি মুরাদ বা হাবিব বা হায়দার বা সুমাইয়া। তাঁরা ইংল্যান্ডে গিয়েও বাংলাদেশিদের মতো আচরণ করেন। তাঁদের চিন্তায়, আচরণে, অন্তর্গত ভাবনায় এক দেশ আছে—বাংলাদেশ। শীতপাখিদের মনের তালাশ বৃথা চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু বিদেশে বেঁচে থাকতে আসে যাঁরা, তাঁদের মন আর মননের যে যত্নশীল পাঠ তৈরি করতে চেয়েছেন লেখক, যে মেলানকালিক সুর যোজনা করতে চেয়েছেন, তা কি কোনোভাবে পাখিদের মতো?
মানুষরা যে বিদ্যা অর্জন করে, সেই বিদ্যা ভেঙে কলে, কারখানায়, দোকানে, হোটেলে, বাসা-বাড়িতে, এমনকি নিজেদের শরীরে বেঁচে থাকার যত অবলম্বন মানুষ খুঁজে পেয়েছে, পাখিরা তো সেই তুলনায় নস্যি। কেবল এই যে উড়ে যাওয়ার ঐক্যতেই অভিবাসী মানুষ আর পাখিরা এক হয়ে যায়। নাকি মানুষদের যে কোকিলস্বভাব ‘অন্যের বাসায় ডিম পাড়া’, সেই স্বভাবের, ঐকতানের মিল খুঁজে পেয়েছেন লেখক। না হলে ইংল্যান্ড অভিবাসী মানুষদের নিয়ে লেখা উপন্যাসের নাম কেন শীতপাখিরা। এই উপন্যাসের মঞ্চ বেশির ভাগই ইল্যান্ড, কিছু অংশ বাংলাদেশে। কিন্তু চরিত্ররা বাংলাদেশি। বাঙালি স্বভাব রহিত যেন তারা, তারা যেন সেই পাখিদের মতোই কেবল বেঁচে থাকতে উড়াল দিয়েছে সেই দেশে। ঘটনার সত্যগুলো এমনই, কিন্তু সত্য যা, যা মানুষদের কঠিন করে তুলেছে নিজের দেশেই বেঁচে থাকা, সে সব সত্য নিরাবেগ উঠে এসেছে শীতপাখি উপন্যাসে। এই বাংলাদেশ আসলে সিলেটও নয়, সমগ্র বাংলাদেশই। সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি মুরাদ বা হাবিব বা হায়দার বা সুমাইয়া। তাঁরা ইংল্যান্ডে গিয়েও বাংলাদেশিদের মতো আচরণ করেন। তাঁদের চিন্তায়, আচরণে, অন্তর্গত ভাবনায় এক দেশ আছে—বাংলাদেশ। শীতপাখিদের মনের তালাশ বৃথা চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু বিদেশে বেঁচে থাকতে আসে যাঁরা, তাঁদের মন আর মননের যে যত্নশীল পাঠ তৈরি করতে চেয়েছেন লেখক, যে মেলানকালিক সুর যোজনা করতে চেয়েছেন, তা কি কোনোভাবে পাখিদের মতো?
অভিবাসী মানুষরা ভিন দেশে যে সমাজ গড়ে তোলে, তা তাদের আপন দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। তাদের স্মৃতিতে কেবল এক দেশ জাগরুক থাকে। প্রজন্মপরম্পরায় তাদের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হয়, সংস্কৃতির দূরত্ব তৈরি হয়, তা তারা নিজেদের হাতেই তৈরি করে। নিজের হাতে নিজেকে ভেঙে ফেলার এক চিত্র এঁকেছেন ওয়াসি আহমেদ। উন্মূল প্রজাতির বেঁচে থাকাকে তুলে ধরেছেন। যারা ভেসে ভেসে বেঁচে থাকে, যাদের গায়ের রঙে আর আচরণে তৈরি হয় নতুন সংস্কৃতি। বেঁচে থাকতে গিয়ে স্বভূম ছেড়ে পরাভূমে জীবন ধারণের কষ্ট মানুষদের জন্য আরও করুণ। দেশ ছেড়ে আসা মানে কেবল শরীর নিয়ে উড়ে আসা নয়, ইতিহাস, সমকাল বিচ্ছিন্ন হয়ে আসা। রাজনীতি যদিও টের পাওয়া যায় না এই উপন্যাসে, তবুও গায়ের চামড়ার মতোই রাজনৈতিক বাস্তবতাও এই উপন্যাসের অঙ্গীভূত। শিকড় ছেঁড়ার বেদনা সারাক্ষণ পোড়ায় এই মানুষদের। তারা মেনে নেয় ভিন্ন বাতাস, ভিন্ন জল, ভিন্ন আইন। সে সব আইনের কাছে করুণার মুখচ্ছবি হয়ে, সে সব বিধিনিষেধের ফাঁকফোকর গলে চোরের মতো বেঁচে থাকা মানুষদের আখ্যান শীতপাখিরা। বেঁচে থাকতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন কী, এ প্রশ্নও জরুরি হয়ে ওঠে এই উপন্যাসে। অভিবাসী মানুষদের নিয়ে ওয়াসি আহমেদের লেখা এই উপন্যাস বাংলা ভাষার সাহিত্য পাঠকদের ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে। তার ঝরঝরে গদ্য, দৃশ্যাবলির চিত্রায়ণ, একটানা কাহিনি সুখপাঠ্য।
============================
দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ আখতার জামান
এই বই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
আগুনের পরশমণি প্রেমাংশুর রক্ত চাই গল্প- কোথায় তুমি কবিতা বাতাসে অক্সিজেন ছড়ায় সত্যজিৎ আমার গুরু ছিলেন গল্প- দৌড় বাংলা ঋতু-মাসের নামবিচার যেভাবে মায়ের মন জয় করল বাবা মানিক পীরের গান গল্প- চুপি চুপি বাঁশি বাজে গল্প- বিধুহীন গল্প- অসমাপ্ত চুম্বনের ১৯ বছর পর... গল্প- বসন্ত বিলাপ খোয়াবের প্রতিলিপি গল্প- জিঞ্জির ফেরা দুর্লভ সময়ের হলফনামা ইচ্ছা ছিল কবি হওয়ার আমার গ্রন্থাগার সোনার কমলার খোঁজে রূপবান ঢাকার রক্তক্ষরণ নারী জীবনের অচলায়তন 'ত্যাগের' মূল্যায়ন ও মুক্তকণ্ঠ তারুণ্য মূল সংবিধান সংরক্ষণে সরকারের ইউটার্ন তুরস্কে জেনারেলদের পদত্যাগ কেন? ছোট দলগুলো ফুরফুরে মেজাজে! কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষার বেহাল দশা গল্প- লঞ্চের আপার ক্লাসে বাচ্চা হাতি গুরুপল্লির আশ্রমে ভর্তি না হয়েই মুক্তিযুদ্ধের ১০ বই মগ্নচৈতন্যের বর্ণময় অভিঘাত গল্প- চিনেজোঁক পুস্তক প্রকাশনা ও বাংলা একাডেমীর বইমেলা শাহি মনজিলে সাহিত্য উৎসব by শাহীন আখতার বাজে জসীমউদ্দীন নান্দনিক চৈতন্য গ্রামকে শহরে এনেছি গল্প- জলঝড় একাত্তরের অপ্রকাশিত দিনপঞ্জি রশীদ করীমে'র সাক্ষাৎকার- 'মনে পড়ে বন্ধুদের' প্রাচ্যের ছহি খাবনামা গল্প- এভাবেই ভুল হয় গল্প- মাঠরঙ্গ ফয়েজ আহমেদঃ স্মৃতিতে চিঠিতে অরুন্ধতী রায়ের সাক্ষাৎকারঃ উপন্যাসের জগতের জগতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই ইতিহাস ও জাতি দিয়ে ঘেরা গল্প- চাল ডাল লবণ ও তেল ক-য়ে ক্রিকেট খ-য়ে খেলা গল্পসল্প- ডাংগুলি হ্যারল্ড পিন্টারের শেষ সাক্ষাৎকারঃ আশৈশব ক্রিকেটের ঘোর সূচনার পিকাসো আর ভ্যান গঘ
দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ আখতার জামান
এই বই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments