সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিচার এক তালগোল পাকানো অবস্থা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিচার বিভাগের জন্য নতুন বছরটি শুরু হয়েছে অশুভ লক্ষণ দিয়ে। দুটো মামলার ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, সে দেশের আইন সবার জন্য সমান নয়।
আমিরাতের সবচেয়ে ধনী অঙ্গরাজ্য আবুধাবির একটি আদালত সে দেশের এক জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শেখ ঈসা বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানকে আফগানিস্তানের এক শস্য ব্যবসায়ীকে মারধর করার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। শেখ ঈসা ওই ব্যবসায়ীকে প্রথমে লাঠি দিয়ে মারেন, তারপর তাঁর দেহের ক্ষতগুলোতে লবণ ঢেলে দেন এবং সবশেষে তাঁর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। আর এসব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের এক টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়।
অপর এক ঘটনায় এক ব্রিটিশ পর্যটক তরুণী আমিরাতের আরেক সদস্য দুবাইয়ের যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন তার এক ওয়েটারের বিরুদ্ধে, পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ওই লোক তাঁকে আগের রাতে ধর্ষণ করে। কিন্তু অভিযোগের পর পুলিশ যে মামলা করে তার সঙ্গে ওই ধর্ষণের কোনো সম্পর্কই নেই। উল্টো অন্য একটি ঘটনা, আবুধাবিতে ছুটি কাটানোর সময় মদ পান করা ও তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হওয়ার অভিযোগে তরুণীটির ছয় বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
শেখ ঈসার বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের ভাষ্য ছিল, ওই অপরাধের জন্য তাঁর দায়দায়িত্ব ছিল খুবই কম। কারণ, তাঁর কিছু ব্যবসায়িক সঙ্গী তাঁকে ঘটনার আগে মাদক সেবন করিয়েছিলেন। সুতরাং ওই কর্মকাণ্ডের জন্য রাজপুত্রের ততটা দায়দায়িত্ব নেই। তবে তাঁর যে ব্যবসায়িক সঙ্গীরা ওই ঘটনার একটি ভিডিও টেপ যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেলটিকে দেন, তাঁদেরকে আদালত তাঁদের অনুপস্থিতিতে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
রাজপুত্র শেখ ঈসা আদালতের রায়ে মুক্ত হলেও ২৩ বছর বয়সী ধর্ষিত ব্রিটিশ তরুণীটির ওপর বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমিরাত ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। নববর্ষের দিন তরুণীটি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, আগের সন্ধ্যায় পাঁচ-তারকা যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছিলেন, তার এক ওয়েটার তাঁকে ধর্ষণ করে। পরে সেই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ জানতে পারে যে আবুধাবিতে ছুটি কাটানোর সময় তিনি মদ পান করেন এবং তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হন। আর এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ দুটো ঘটনাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈষম্যমূলক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত। দেশটি একাধারে পশ্চিমা বিশ্বের সরকার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও পর্যটকদের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়, আবার একই সঙ্গে তার নিজস্ব আইন ও ঐতিহ্যকেও ধরে রাখতে চায়। আমিরাতের অনেক হেটেলেরই মালিক সরকার। ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী সে দেশে বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক কিংবা মদপান নিষিদ্ধ হলেও অতিরিক্ত মুনাফা লাভের উদ্দেশে হোটেলগুলো অবিবাহিত দম্পতিদের কক্ষ ভাড়া ও পর্যটকদের মদপানের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তারা ওই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী ও তাঁর ৪৪ বছর বয়সী প্রেমিক, দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করেছে।
এক অপরাধের বিচার চাইতে গিয়ে এর সঙ্গে যোগসূত্রহীন অপরাধে বিচারপ্রার্থীর শাস্তির ঘটনা সে দেশে এটাই প্রথম নয়, গত মাসের শুরুর দিকে প্রকাশিত ইউগভ সিরাজ নামের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিচারপ্রক্রিয়ার জটিলতা ও তাদের পরিবার হেনস্তার শিকার হতে পারে, এই ভয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্ধেক নারীই যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে চায় না।
আমিরাতের অনেকেই স্বীকার করে যে সে দেশের আইনে অনেক অসংগতি রয়েছে। আবুধাবির সরকার-সমর্থিত পত্রিকা দ্য ন্যাশনাল সম্প্রতি এক সম্পাদকীয়তে ধর্ষণের মামলাগুলোর ভুল ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশের সমালোচনা করেছে। সম্পাদকীয়টিতে মন্তব্য করা হয়, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের নারীরা তাদের ওপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।’ তবে পুলিশের ধারণা ভিন্ন। ওই ব্রিটিশ মহিলার ধর্ষণের মামলায় সম্পৃক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মহিলা নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও মদ পান করেন। এমন অপরাধকে আমরা কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারি না।’
দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে এস কামরুন নাহার
আমিরাতের সবচেয়ে ধনী অঙ্গরাজ্য আবুধাবির একটি আদালত সে দেশের এক জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শেখ ঈসা বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানকে আফগানিস্তানের এক শস্য ব্যবসায়ীকে মারধর করার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। শেখ ঈসা ওই ব্যবসায়ীকে প্রথমে লাঠি দিয়ে মারেন, তারপর তাঁর দেহের ক্ষতগুলোতে লবণ ঢেলে দেন এবং সবশেষে তাঁর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। আর এসব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের এক টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়।
অপর এক ঘটনায় এক ব্রিটিশ পর্যটক তরুণী আমিরাতের আরেক সদস্য দুবাইয়ের যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন তার এক ওয়েটারের বিরুদ্ধে, পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ওই লোক তাঁকে আগের রাতে ধর্ষণ করে। কিন্তু অভিযোগের পর পুলিশ যে মামলা করে তার সঙ্গে ওই ধর্ষণের কোনো সম্পর্কই নেই। উল্টো অন্য একটি ঘটনা, আবুধাবিতে ছুটি কাটানোর সময় মদ পান করা ও তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হওয়ার অভিযোগে তরুণীটির ছয় বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
শেখ ঈসার বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের ভাষ্য ছিল, ওই অপরাধের জন্য তাঁর দায়দায়িত্ব ছিল খুবই কম। কারণ, তাঁর কিছু ব্যবসায়িক সঙ্গী তাঁকে ঘটনার আগে মাদক সেবন করিয়েছিলেন। সুতরাং ওই কর্মকাণ্ডের জন্য রাজপুত্রের ততটা দায়দায়িত্ব নেই। তবে তাঁর যে ব্যবসায়িক সঙ্গীরা ওই ঘটনার একটি ভিডিও টেপ যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেলটিকে দেন, তাঁদেরকে আদালত তাঁদের অনুপস্থিতিতে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
রাজপুত্র শেখ ঈসা আদালতের রায়ে মুক্ত হলেও ২৩ বছর বয়সী ধর্ষিত ব্রিটিশ তরুণীটির ওপর বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমিরাত ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। নববর্ষের দিন তরুণীটি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, আগের সন্ধ্যায় পাঁচ-তারকা যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছিলেন, তার এক ওয়েটার তাঁকে ধর্ষণ করে। পরে সেই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ জানতে পারে যে আবুধাবিতে ছুটি কাটানোর সময় তিনি মদ পান করেন এবং তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হন। আর এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ দুটো ঘটনাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈষম্যমূলক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত। দেশটি একাধারে পশ্চিমা বিশ্বের সরকার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও পর্যটকদের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়, আবার একই সঙ্গে তার নিজস্ব আইন ও ঐতিহ্যকেও ধরে রাখতে চায়। আমিরাতের অনেক হেটেলেরই মালিক সরকার। ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী সে দেশে বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক কিংবা মদপান নিষিদ্ধ হলেও অতিরিক্ত মুনাফা লাভের উদ্দেশে হোটেলগুলো অবিবাহিত দম্পতিদের কক্ষ ভাড়া ও পর্যটকদের মদপানের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তারা ওই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী ও তাঁর ৪৪ বছর বয়সী প্রেমিক, দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করেছে।
এক অপরাধের বিচার চাইতে গিয়ে এর সঙ্গে যোগসূত্রহীন অপরাধে বিচারপ্রার্থীর শাস্তির ঘটনা সে দেশে এটাই প্রথম নয়, গত মাসের শুরুর দিকে প্রকাশিত ইউগভ সিরাজ নামের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিচারপ্রক্রিয়ার জটিলতা ও তাদের পরিবার হেনস্তার শিকার হতে পারে, এই ভয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্ধেক নারীই যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে চায় না।
আমিরাতের অনেকেই স্বীকার করে যে সে দেশের আইনে অনেক অসংগতি রয়েছে। আবুধাবির সরকার-সমর্থিত পত্রিকা দ্য ন্যাশনাল সম্প্রতি এক সম্পাদকীয়তে ধর্ষণের মামলাগুলোর ভুল ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশের সমালোচনা করেছে। সম্পাদকীয়টিতে মন্তব্য করা হয়, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের নারীরা তাদের ওপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।’ তবে পুলিশের ধারণা ভিন্ন। ওই ব্রিটিশ মহিলার ধর্ষণের মামলায় সম্পৃক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মহিলা নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও মদ পান করেন। এমন অপরাধকে আমরা কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারি না।’
দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে এস কামরুন নাহার
No comments