টিপাইমুখ নিয়ে আরও কিছু কথা by এম এ কাসেম
ভারত্রকর্তৃক্রপ্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে প্রথম আলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত ড. আকবর আলি খানের প্রবন্ধটি মনোযোগসহকারে পড়েছি। লেখক অত্যন্ত যত্নসহকারে তাঁর বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুেকন্দ্র নিয়ে বিতর্ক যত আলো জ্বেলেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। (প্রথম আলো, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯)
আমি তাঁর সব তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার এবং উপসংহারের সঙ্গে একমত পোষণ করি না। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, তিনি টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের বিতর্কে আলো জ্বালার চেষ্টা করেছেন।
পাঁচ সংখ্যায় প্রকাশিত সুদীর্ঘ প্রবন্ধের সব দিক নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমার আলোচনা তথ্য-উপাত্ত, নিরপেক্ষতার প্রশ্নবিদ্ধতা, লক্ষণীয় অসংগতি এবং কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মতামতের ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রবন্ধকার বরাবরই ‘স্ট্রেট ফরওয়ার্ড’ বলে পরিচিত। তাই তিনি প্রবন্ধের উপক্রমণিকায় বলতে পেরেছেন, আল্লাহ বাংলাদেশে মাত্র দুই ধরনের মানুষ তৈরি করেছেন—ভারতবান্ধব ও ভারতবিদ্ধেষী। অবশ্য কৌতূহলী পাঠককুল প্রশ্ন করতে পারে, প্রবন্ধকার নিজে কোন ধরনের মানুষ; কারণ তিনি ভারতবান্ধব ও ভারতবিদ্ধেষীর্রবাইর্রেকোনো তৃতীয় ধরনের মানুষের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেননি। আমি ভারতবিদ্ধেষী নই। ভারত পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র; মুক্তিযুদ্ধে ও তার পরবর্তীকালে ভারতের সাহয্যের বিষয়টি বাদ দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া ধর্মীয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক পর্যায়্রেযাতায়াত এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয় বিবেচনা করে আমি ভারতের সঙ্গে ‘বৈরিতা নয়, বন্ধুত্বের”নীতি’তে বিশ্বাসী। আমি এও্রবিশ্বাস করি, পারস্পরিক স্বার্থের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ এবং পারস্পরিক সাহায্যের মনোভাবই হলো সকল বন্ধুত্বের ভিত্তি—ব্যক্তিই হোক আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই হোক। বন্ধুত্ব রাক্ষার ক্ষেত্রে উভয়কেই যত্নশীল হতে হয়।
যেকোনো প্রবন্ধের ক্ষেত্রেই ব্যবহূত তথ্য-উপাত্তের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনায় অনেককেই অসত্য তথ্য ও বক্তব্য এবং বিভ্রান্তিকর উদ্ধৃতি দিতে, এমনকি চাতুর্যের আশ্রয়ও নিতে দেখেছি। প্রবন্ধকার কর্তৃক প্রদত্ত রেফারেন্স এবং উদ্ধৃতির ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে, যদিও উদ্ধৃতির ব্যবহার সর্বত্র সঠিক মনে হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রণীত ফ্যাপ-৬-এর রিপোর্টকে প্রবন্ধকার আমলে নেননি। ওটা ১৯৯৩ সালে প্রণয়ন্রকরা হয়েছে। তাই তিন্রিঅপ্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। অথচ তিনি ১৯৮৯ (তারও ৪ বছর আগের) সালে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনকে প্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। বিষয়টি স্ববিরোধিতা হয়ে গেল না?
প্রবন্ধকারের লেখায় আরও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ অসংগতি লক্ষণীয়। সীমিত পরিসরে সব সমানভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। তিনি লিখেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ কর্তৃক সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ছাড়া অনেক ব্যাপারেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব নয়।’ তার এই বক্তব্য যথার্থ এবং আমি একমত পোষণ করি। কিন্তু সুদীর্ঘ প্রবন্ধে প্রতিটি গুরূত্বপূর্ণ বিষয়েই তিনি চূড়ান্ত মতামত দিয়ে ফেলেছেন। যেমন, ‘টিপাইমুখে বৃহত্ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশেও প্রান্তজনের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’ (৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৯)
প্রশ্ন হচ্ছে, টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নই হয়নি, তাহলে এটা বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবেশী দেশের প্রান্তজনের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে কীভাবে? তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘...টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বরাক নদী অববাহিকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমবে না এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাবে।’ (৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯) ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে তার উপসংহার, ‘কাজেই এ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি, তাতে সন্দেহ নেই।’ (১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯) এ ক্ষেত্রেও্রস্ববিরোধিতা লক্ষণীয়।
প্রবন্ধকার উপরিউল্লিখিত্রচূড়ান্ত্রএবং্রগুরুত্বপূর্ণ মতামতের ভিত্তি হিসেবে কোনো বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের রেফারেন্স দেননি। উল্লেখ্য, ফ্যাপ-৬-এর রিপোর্ট প্রবন্ধকারের বক্তব্যকে সমর্থন করে না। ফ্যাপ-৬-এর সংশ্লিষ্ট ম্যাথমেটিক্যাল মডেল সিম্যুলেশনের মাধ্যমে কৃত টিপাইমুখসংক্রান্ত পর্যালোচনা্রবাংলাদেশ সরকারের একমাত্র বিজ্ঞানভিত্তিক বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ। সংশ্লিষ্ট কোনো্রবিজ্ঞানী্রএটাকে অপ্রাসঙ্গিক বলবেন না। ফ্যাপ-৬-এর Findingsকে বিরোধিতা্রকরতে হলে প্রমাণ করতে হবে যে (ক) ফ্যাপ-৬-এর বিশ্লেষণে ব্যবহূত মডেল (MIKE II) উপযুক্ত নয়, (খ) তথ্য-উপাত্ত পর্যাপ্ত ছিল না, (গ) মডেল সিম্যুলেশনের ফলাফলের ব্যাখ্যা (interpretation) সঠিক নয়, (ঘ) মডেলে ব্যবহূত তথ্য-উপাত্তের মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে ইত্যাদি। অন্যথায় যেভাবে কথাগুলো বলা হচ্ছে তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক বক্তব্য না হয়ে ভবিষ্যত্রদ্রষ্টার্রকথার্রমতোই শোনাবে। উল্লেখ্য, টিপাইমুখ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বা স্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রবন্ধকার NEEPCO কর্তৃক্রপ্রণীত্রঅত্যন্ত্রগুরুত্বপূর্ণ ‘এনভায়রনমেন্ট মিটিগেশন প্ল্যান’ও (ইএমপি) আমলে নেননি।
আমার উপরিউক্ত কথাগুলো টিপাইমুখ প্রকল্পকে ছাড় দেওয়ার জন্য নয়, আলোচনা-পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণপদ্ধতি ব্যবহারের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। ইতিমধ্যেই ড্যাম এবং বাঁধসংক্রান্ত অনেক ভ্রান্ত আলোচনা হয়েছে ঢালাওভাবে, যা ভবিষ্যতে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহূত হতে পারে।
এবার প্রবন্ধকারের কয়েকটি বক্তব্য্রসম্পর্কে দু-একটি কথা্রবলা্রপ্রয়োজন। টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রকল্পের উপদ্রুত উত্তর-পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে, মণিপুর রাজ্যে আপত্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু প্রকল্পের পক্ষেও যে জনসমর্থন রয়েছে, তা বলা হয়নি। গুগল্রসার্চ্রকরলেই্রজানা্রযাবে। আমাদের বর্তমান অর্থমন্ত্রী টিপাইমুখ এলাকার সন্নিকটস্থ্রএলাকায় বেড়াতে গিয়ে টিপাইমুখের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে কী প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখেই না পড়েছিলেন! এ ঘটনার বিবরণ আমি তাঁর সহযাত্রীর (একটি বেসরকার্রিবিশ্ববিদ্যালয়ের্রউপাচার্য) মুখে শুনেছি।
দ্বিতীয়ত,্রপ্রবন্ধকার ভূমিকম্পের আশঙ্কা এবং ভয়াবহতার কথা বলেছেন। কিন্তু বিগত দশকগুলোয় ভূমিকম্প প্রতিরোধমূলক টেকনোলজির উত্কর্ষতা ও ব্যবহার, বিশ্বের সর্বোচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপানে ২২০০-এর্রঊর্ধ্বে নির্মিত্রড্যামের অভিজ্ঞতা এবং টিপাইমুখ্রেযে টেকনোলজি ও্রডিজাইন্রব্যবহার করা হবে, তার আলোকে ভূমিকম্পের সত্যিকারের সম্ভাবনা কতটুকু, এ সম্পর্কে প্রবন্ধকার কিছু বলেননি।
তৃতীয়ত, ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা বিদ্যুত্ চায় না, চায় তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে। কথাটাতে আবেগ আছে, আমি শ্রদ্ধা করি। ঐতিহ্য ধরে রাখার বিষয়টি আমি জোরালোভাবে সমর্থন করি, তবে ঐতিহ্যের ভালো ও প্রগতিমুখী দিকগুলো, পশ্চাত্মুখী মানসিকতা নয়।
চতুর্থত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০ এবং ৩৬ বছর আগে দুটি জলবিদ্যুেকন্দ্র পলি জমে অকার্যকর হয়ে গেছে। এরও বহু বছর আগে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্ ড্যামে (মিসরের আসওয়ান ড্যাম) একসময় পলি জমার বিষয়টি পশ্চিমা পত্রিকাগুলোয় মহা সংকট হিসেবে ফলাও্রকর্রেপ্রচারিত হয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং আসওয়ান ড্যাম আজও ভালোভাবে কার্যকর আছে। প্রবন্ধকার কর্তৃক উল্লিখিত ড্যামদ্বয়ের বিষয়ে ভারত সরকারের নিরুত্সাহ হয়ে পড়ার আর কোনো বিশেষ কারণ আছে কি না জানা প্রয়োজন।
পঞ্চমত, প্রকৃতিতে জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন একটি নিমোঘ সত্য ও নিয়ম। মাঝেমধ্যেই দৈনিক পত্রিকায় দেখা যায়, আমাদের দেশেও বহু প্রাণী, মাছ ও উদ্ভিদ দিনে দিনে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা কেউই ওল্টাতে পারবে না। তবে মানুষের indiscriminate কার্যাবলির দ্বারা যাতে জীববৈচিত্র্য এবং প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং তার জন্য যত্নবান হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। উন্নত দেশ বা পৃথিবীর কোথাও জীববৈচিত্র্যের দোহাই দিয়ে মানবসমাজের ক্রমবিকাশ বা উন্নয়ন প্রকল্প ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে না। তারা জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। প্রবন্ধকার নিজেও তাঁর প্রবন্ধের শেষ অধ্যায়ে অনুরূপ সুপারিশ করেছেন। উল্লেখ্য, টিপাইমুখের ক্ষেত্রেও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য ইএমপি প্রণয়ন করা হয়েছে—প্রবন্ধকার সে বিষয়ট্রিউল্লেখ করেননি।্রতবে সেটা কেবল ভারতীয় অঞ্চলের জন্য, বাংলাদেশের বিষয় তাতে স্থান পায়নি। বাংলাদেশের বিষয়টি তাদের বিবেচনায় অবশ্যই আসা্রউচিত ছিল। প্রবন্ধকার একই সময়ে অতি বন্যা এবং ভূমিকম্পের্রআশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়টি বিবেচনায়্রআনা প্রয়োজন।
ষষ্ঠত,্রপ্রবন্ধকার টিপাইমুখ বাঁধ এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাজনিত্রঝুঁকির কথা্রবলেছেন্র(১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিলেই হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে কম ঝুটঝামেলা হয়নি। কিন্তু কাপ্তাই ড্যাম কি নিরাপদ ছিল না?
প্রবন্ধকার শেষ অধ্যায়ে (১১ সেপ্টেম্বর ২০০৯) টিপাইমুখ বাঁধ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। সেগুলো যাচাই্রকরে দেখত্রেহ্বে। লক্ষণীয়, প্রবন্ধকার এ ক্ষেত্র্রেএকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেননি। সেটা হচ্ছে দেওয়া-নেওয়ার এবং সমঝোতার জন্য একটা সহায়ক সম্পর্ক ও পরিবেশের প্রয়োজনীয়তার কথা;্রযদিও প্রবন্ধকার বলেছেন, ভারত সরকারের সম্মতি ও সহযোগিতা ছাড়া কোনো অর্থবহ ব্যবস্থা সম্ভব নয়। স্পষ্ট করে বলেননি, তবে মনে হয়, অনেকের মতো তিনিও মনে করেন, এ ধরনের সমঝোতার ব্যাপারে ভারতের কোনো আগ্রহ নেই এবং ভারতের দেওয়া ও নেওয়ার মনোবৃত্তিও নেই। এ ক্ষেত্র্রেতিন্রিকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে: তাঁর্রপরামর্শ অনুযায়ী ভারতের বাঁধবিরোধী সংগ্রামী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মোর্চাবদ্ধ্রহয়ে যৌথ আন্দোলন করে, এই পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ‘ক্যাম্পেইন’ করে সমঝোতা ও দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি কি নিশ্চিত হবে?
প্রবন্ধকার বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় পূর্বশর্ত হলো, বাংলাদেশ সরকারের ঘুম ভাঙাতে হবে।’ এটা বিরোধী দলের বক্তৃতার মতো শুনিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে টিপাইমুখ বিষয়ে সরকারের নীতি ও করণীয় সম্পর্কে ঘোষণা দিয়েছেন, পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদল ভারতীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং টিপাইমুখ সাইট পরিদর্শন করেছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতীয় সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি বারবার আলোচনা হচ্ছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করা হবে না।’ অনেকেই মনে করেন, বর্তমান পর্যায়ে সরকার অনুসৃত পদ্ধতি সঠিক; আবার অনেকে অবশ্যই ভাবতে পারেন, সরকার যা করছে তা যথেষ্ট নয়। কিন্তু সরকার ঘুমিয়ে আছে বলাটা কি সঠিক? পরিশেষে, ভীতি ও আতঙ্ক মানুষের সহজাত দুর্বলতা। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই দুর্বলতাকে ভিত্তি না করে, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করাই বিধেয়। পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকৌশলী হিসেবে এটাই আমার আরজি।
ড. এম এ কাসেম: সাবেক মহাপরিচালক, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, বাংলাদেশ।
আমি তাঁর সব তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার এবং উপসংহারের সঙ্গে একমত পোষণ করি না। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, তিনি টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের বিতর্কে আলো জ্বালার চেষ্টা করেছেন।
পাঁচ সংখ্যায় প্রকাশিত সুদীর্ঘ প্রবন্ধের সব দিক নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমার আলোচনা তথ্য-উপাত্ত, নিরপেক্ষতার প্রশ্নবিদ্ধতা, লক্ষণীয় অসংগতি এবং কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মতামতের ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রবন্ধকার বরাবরই ‘স্ট্রেট ফরওয়ার্ড’ বলে পরিচিত। তাই তিনি প্রবন্ধের উপক্রমণিকায় বলতে পেরেছেন, আল্লাহ বাংলাদেশে মাত্র দুই ধরনের মানুষ তৈরি করেছেন—ভারতবান্ধব ও ভারতবিদ্ধেষী। অবশ্য কৌতূহলী পাঠককুল প্রশ্ন করতে পারে, প্রবন্ধকার নিজে কোন ধরনের মানুষ; কারণ তিনি ভারতবান্ধব ও ভারতবিদ্ধেষীর্রবাইর্রেকোনো তৃতীয় ধরনের মানুষের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেননি। আমি ভারতবিদ্ধেষী নই। ভারত পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র; মুক্তিযুদ্ধে ও তার পরবর্তীকালে ভারতের সাহয্যের বিষয়টি বাদ দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া ধর্মীয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক পর্যায়্রেযাতায়াত এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয় বিবেচনা করে আমি ভারতের সঙ্গে ‘বৈরিতা নয়, বন্ধুত্বের”নীতি’তে বিশ্বাসী। আমি এও্রবিশ্বাস করি, পারস্পরিক স্বার্থের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ এবং পারস্পরিক সাহায্যের মনোভাবই হলো সকল বন্ধুত্বের ভিত্তি—ব্যক্তিই হোক আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই হোক। বন্ধুত্ব রাক্ষার ক্ষেত্রে উভয়কেই যত্নশীল হতে হয়।
যেকোনো প্রবন্ধের ক্ষেত্রেই ব্যবহূত তথ্য-উপাত্তের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনায় অনেককেই অসত্য তথ্য ও বক্তব্য এবং বিভ্রান্তিকর উদ্ধৃতি দিতে, এমনকি চাতুর্যের আশ্রয়ও নিতে দেখেছি। প্রবন্ধকার কর্তৃক প্রদত্ত রেফারেন্স এবং উদ্ধৃতির ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে, যদিও উদ্ধৃতির ব্যবহার সর্বত্র সঠিক মনে হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রণীত ফ্যাপ-৬-এর রিপোর্টকে প্রবন্ধকার আমলে নেননি। ওটা ১৯৯৩ সালে প্রণয়ন্রকরা হয়েছে। তাই তিন্রিঅপ্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। অথচ তিনি ১৯৮৯ (তারও ৪ বছর আগের) সালে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনকে প্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। বিষয়টি স্ববিরোধিতা হয়ে গেল না?
প্রবন্ধকারের লেখায় আরও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ অসংগতি লক্ষণীয়। সীমিত পরিসরে সব সমানভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। তিনি লিখেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ কর্তৃক সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ছাড়া অনেক ব্যাপারেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব নয়।’ তার এই বক্তব্য যথার্থ এবং আমি একমত পোষণ করি। কিন্তু সুদীর্ঘ প্রবন্ধে প্রতিটি গুরূত্বপূর্ণ বিষয়েই তিনি চূড়ান্ত মতামত দিয়ে ফেলেছেন। যেমন, ‘টিপাইমুখে বৃহত্ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশেও প্রান্তজনের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’ (৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৯)
প্রশ্ন হচ্ছে, টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নই হয়নি, তাহলে এটা বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবেশী দেশের প্রান্তজনের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে কীভাবে? তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘...টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বরাক নদী অববাহিকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমবে না এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাবে।’ (৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯) ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে তার উপসংহার, ‘কাজেই এ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি, তাতে সন্দেহ নেই।’ (১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯) এ ক্ষেত্রেও্রস্ববিরোধিতা লক্ষণীয়।
প্রবন্ধকার উপরিউল্লিখিত্রচূড়ান্ত্রএবং্রগুরুত্বপূর্ণ মতামতের ভিত্তি হিসেবে কোনো বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের রেফারেন্স দেননি। উল্লেখ্য, ফ্যাপ-৬-এর রিপোর্ট প্রবন্ধকারের বক্তব্যকে সমর্থন করে না। ফ্যাপ-৬-এর সংশ্লিষ্ট ম্যাথমেটিক্যাল মডেল সিম্যুলেশনের মাধ্যমে কৃত টিপাইমুখসংক্রান্ত পর্যালোচনা্রবাংলাদেশ সরকারের একমাত্র বিজ্ঞানভিত্তিক বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ। সংশ্লিষ্ট কোনো্রবিজ্ঞানী্রএটাকে অপ্রাসঙ্গিক বলবেন না। ফ্যাপ-৬-এর Findingsকে বিরোধিতা্রকরতে হলে প্রমাণ করতে হবে যে (ক) ফ্যাপ-৬-এর বিশ্লেষণে ব্যবহূত মডেল (MIKE II) উপযুক্ত নয়, (খ) তথ্য-উপাত্ত পর্যাপ্ত ছিল না, (গ) মডেল সিম্যুলেশনের ফলাফলের ব্যাখ্যা (interpretation) সঠিক নয়, (ঘ) মডেলে ব্যবহূত তথ্য-উপাত্তের মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে ইত্যাদি। অন্যথায় যেভাবে কথাগুলো বলা হচ্ছে তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক বক্তব্য না হয়ে ভবিষ্যত্রদ্রষ্টার্রকথার্রমতোই শোনাবে। উল্লেখ্য, টিপাইমুখ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বা স্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রবন্ধকার NEEPCO কর্তৃক্রপ্রণীত্রঅত্যন্ত্রগুরুত্বপূর্ণ ‘এনভায়রনমেন্ট মিটিগেশন প্ল্যান’ও (ইএমপি) আমলে নেননি।
আমার উপরিউক্ত কথাগুলো টিপাইমুখ প্রকল্পকে ছাড় দেওয়ার জন্য নয়, আলোচনা-পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণপদ্ধতি ব্যবহারের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। ইতিমধ্যেই ড্যাম এবং বাঁধসংক্রান্ত অনেক ভ্রান্ত আলোচনা হয়েছে ঢালাওভাবে, যা ভবিষ্যতে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহূত হতে পারে।
এবার প্রবন্ধকারের কয়েকটি বক্তব্য্রসম্পর্কে দু-একটি কথা্রবলা্রপ্রয়োজন। টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রকল্পের উপদ্রুত উত্তর-পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে, মণিপুর রাজ্যে আপত্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু প্রকল্পের পক্ষেও যে জনসমর্থন রয়েছে, তা বলা হয়নি। গুগল্রসার্চ্রকরলেই্রজানা্রযাবে। আমাদের বর্তমান অর্থমন্ত্রী টিপাইমুখ এলাকার সন্নিকটস্থ্রএলাকায় বেড়াতে গিয়ে টিপাইমুখের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে কী প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখেই না পড়েছিলেন! এ ঘটনার বিবরণ আমি তাঁর সহযাত্রীর (একটি বেসরকার্রিবিশ্ববিদ্যালয়ের্রউপাচার্য) মুখে শুনেছি।
দ্বিতীয়ত,্রপ্রবন্ধকার ভূমিকম্পের আশঙ্কা এবং ভয়াবহতার কথা বলেছেন। কিন্তু বিগত দশকগুলোয় ভূমিকম্প প্রতিরোধমূলক টেকনোলজির উত্কর্ষতা ও ব্যবহার, বিশ্বের সর্বোচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপানে ২২০০-এর্রঊর্ধ্বে নির্মিত্রড্যামের অভিজ্ঞতা এবং টিপাইমুখ্রেযে টেকনোলজি ও্রডিজাইন্রব্যবহার করা হবে, তার আলোকে ভূমিকম্পের সত্যিকারের সম্ভাবনা কতটুকু, এ সম্পর্কে প্রবন্ধকার কিছু বলেননি।
তৃতীয়ত, ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা বিদ্যুত্ চায় না, চায় তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে। কথাটাতে আবেগ আছে, আমি শ্রদ্ধা করি। ঐতিহ্য ধরে রাখার বিষয়টি আমি জোরালোভাবে সমর্থন করি, তবে ঐতিহ্যের ভালো ও প্রগতিমুখী দিকগুলো, পশ্চাত্মুখী মানসিকতা নয়।
চতুর্থত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০ এবং ৩৬ বছর আগে দুটি জলবিদ্যুেকন্দ্র পলি জমে অকার্যকর হয়ে গেছে। এরও বহু বছর আগে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্ ড্যামে (মিসরের আসওয়ান ড্যাম) একসময় পলি জমার বিষয়টি পশ্চিমা পত্রিকাগুলোয় মহা সংকট হিসেবে ফলাও্রকর্রেপ্রচারিত হয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং আসওয়ান ড্যাম আজও ভালোভাবে কার্যকর আছে। প্রবন্ধকার কর্তৃক উল্লিখিত ড্যামদ্বয়ের বিষয়ে ভারত সরকারের নিরুত্সাহ হয়ে পড়ার আর কোনো বিশেষ কারণ আছে কি না জানা প্রয়োজন।
পঞ্চমত, প্রকৃতিতে জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন একটি নিমোঘ সত্য ও নিয়ম। মাঝেমধ্যেই দৈনিক পত্রিকায় দেখা যায়, আমাদের দেশেও বহু প্রাণী, মাছ ও উদ্ভিদ দিনে দিনে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা কেউই ওল্টাতে পারবে না। তবে মানুষের indiscriminate কার্যাবলির দ্বারা যাতে জীববৈচিত্র্য এবং প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং তার জন্য যত্নবান হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। উন্নত দেশ বা পৃথিবীর কোথাও জীববৈচিত্র্যের দোহাই দিয়ে মানবসমাজের ক্রমবিকাশ বা উন্নয়ন প্রকল্প ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে না। তারা জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। প্রবন্ধকার নিজেও তাঁর প্রবন্ধের শেষ অধ্যায়ে অনুরূপ সুপারিশ করেছেন। উল্লেখ্য, টিপাইমুখের ক্ষেত্রেও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য ইএমপি প্রণয়ন করা হয়েছে—প্রবন্ধকার সে বিষয়ট্রিউল্লেখ করেননি।্রতবে সেটা কেবল ভারতীয় অঞ্চলের জন্য, বাংলাদেশের বিষয় তাতে স্থান পায়নি। বাংলাদেশের বিষয়টি তাদের বিবেচনায় অবশ্যই আসা্রউচিত ছিল। প্রবন্ধকার একই সময়ে অতি বন্যা এবং ভূমিকম্পের্রআশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়টি বিবেচনায়্রআনা প্রয়োজন।
ষষ্ঠত,্রপ্রবন্ধকার টিপাইমুখ বাঁধ এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাজনিত্রঝুঁকির কথা্রবলেছেন্র(১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিলেই হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে কম ঝুটঝামেলা হয়নি। কিন্তু কাপ্তাই ড্যাম কি নিরাপদ ছিল না?
প্রবন্ধকার শেষ অধ্যায়ে (১১ সেপ্টেম্বর ২০০৯) টিপাইমুখ বাঁধ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। সেগুলো যাচাই্রকরে দেখত্রেহ্বে। লক্ষণীয়, প্রবন্ধকার এ ক্ষেত্র্রেএকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেননি। সেটা হচ্ছে দেওয়া-নেওয়ার এবং সমঝোতার জন্য একটা সহায়ক সম্পর্ক ও পরিবেশের প্রয়োজনীয়তার কথা;্রযদিও প্রবন্ধকার বলেছেন, ভারত সরকারের সম্মতি ও সহযোগিতা ছাড়া কোনো অর্থবহ ব্যবস্থা সম্ভব নয়। স্পষ্ট করে বলেননি, তবে মনে হয়, অনেকের মতো তিনিও মনে করেন, এ ধরনের সমঝোতার ব্যাপারে ভারতের কোনো আগ্রহ নেই এবং ভারতের দেওয়া ও নেওয়ার মনোবৃত্তিও নেই। এ ক্ষেত্র্রেতিন্রিকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে: তাঁর্রপরামর্শ অনুযায়ী ভারতের বাঁধবিরোধী সংগ্রামী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মোর্চাবদ্ধ্রহয়ে যৌথ আন্দোলন করে, এই পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ‘ক্যাম্পেইন’ করে সমঝোতা ও দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি কি নিশ্চিত হবে?
প্রবন্ধকার বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় পূর্বশর্ত হলো, বাংলাদেশ সরকারের ঘুম ভাঙাতে হবে।’ এটা বিরোধী দলের বক্তৃতার মতো শুনিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে টিপাইমুখ বিষয়ে সরকারের নীতি ও করণীয় সম্পর্কে ঘোষণা দিয়েছেন, পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদল ভারতীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং টিপাইমুখ সাইট পরিদর্শন করেছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতীয় সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি বারবার আলোচনা হচ্ছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করা হবে না।’ অনেকেই মনে করেন, বর্তমান পর্যায়ে সরকার অনুসৃত পদ্ধতি সঠিক; আবার অনেকে অবশ্যই ভাবতে পারেন, সরকার যা করছে তা যথেষ্ট নয়। কিন্তু সরকার ঘুমিয়ে আছে বলাটা কি সঠিক? পরিশেষে, ভীতি ও আতঙ্ক মানুষের সহজাত দুর্বলতা। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই দুর্বলতাকে ভিত্তি না করে, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করাই বিধেয়। পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকৌশলী হিসেবে এটাই আমার আরজি।
ড. এম এ কাসেম: সাবেক মহাপরিচালক, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, বাংলাদেশ।
No comments