বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা পুতিনের প্রশংসা

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ও ইউরোপিয়ান নেতাদের সমালোচনা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। অন্যদিকে প্রশংসা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু উইটকফ তা উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এটা তাদের একরকম ভঙ্গি। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের জন্য যে পরিকল্পনা নিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপিয়ান নেতারা, তাতে তারা মনে করেছেন ‘আমাদের সবাইকে উইনস্টন চার্চিলের মতো হতে হবে। ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে তিনি পছন্দ করেন। বলেন, পুতিনকে আমি খারাপ বলবো না। তিনি একজন সুপার স্মার্ট মানুষ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। উল্লেখ্য, ১০ দিন আগে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উইটকফ। এরপর তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গে সরল এবং দয়ালু আচরণ করেছেন। পুতিন তাকে বলেছেন, গত বছর ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পর ট্রাম্পের জন্য প্রার্থনা করেছেন পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ছবি উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তাতে ট্রাম্পের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার বিভিন্ন যুক্তিতর্ক পুনরুল্লেখ করেন। বলেন, ইউক্রেন একটি ‘মিথ্যা দেশ’। ইউক্রেনের দখল করে নেয়া ভূখণ্ড বিশ্ব কখন রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দেবে তা জানতে চেয়েছেন। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন উইটকফ। কিন্তু রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে তার মধ্যে ৫টি অঞ্চলের নাম বলতে পারেননি তিনি। উইটকফ বলেন, কথিত চারটি অঞ্চল ডনবাস, ক্রাইমিয়াসহ চারটি অঞ্চলের যুদ্ধ হলো সবচেয়ে বড় ইস্যু। আপনারা জানেন আরও দুটি অঞ্চল আছে। কিন্তু চারটি নয়। এমন অঞ্চল ৫টি। তা হলো- লুহানস্ক,  দোনেতস্ক, ঝাপোরিঝিয়া, খেরসন ও ক্রাইমিরয়। ডসকাম গনো পূর্বদিকে একটি শিল্প এলাকা। এর সঙ্গে আছে লুহানস্ক ও দোনেতস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ। তিনি আরও বলেন, কুরস্কে বহু ইউক্রেনিয়ান সেনাকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। তবে তার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন সরকার। উইটকফ আরও বলেন, ইউক্রেনের থেকে দখল করে নেয়া চারটি অঞ্চলের আংশিক এলাকায় গণভোট হয়েছে। সেখানকার জনগণ রাশিয়ার শাসনের অধীনে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের দখলীকৃত কিছু অঞ্চলে গণভোট হয়েছিল।  যে প্রক্রিয়ায় এই ভোট হয়েছে এবং এর যে ফল তা নিয়ে ব্যাপক বিরোধ আছে। কেউ এটাকে কৃতিত্ব দেয় না।

ওদিকে রোববার ও সোমবার দু’দিনে সৌদি আরবে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে আলাদা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছে, শনিবার দিবাগত রাতে কিয়েভের ওপর ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আছে একটি ৫ বছর বয়সী শিশু। আহত হয়েছেন আটজন। ওদিকে শুক্রবার দক্ষিণের জাপোরিঝিয়া শহরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তাতে নিহত হয়েছেন একই পরিবারের তিনজন। রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ক্রাইমিয়া সহ দক্ষিণের বিভিন্ন অঞ্চলে ইউক্রেনের ৫৯টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে তারা। সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় উইটকফ বার বার রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের কারণ নিয়ে কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এটা এখন বলাই যায় যে, দখল করে নেয়া কিছু অংশ এখন সঠিকভাবেই রাশিয়ার অংশ। রাশিয়ায় একটি ধারণা কাজ করে যে, ইউক্রেন একটি মিথ্যা রাষ্ট্র। এটাই হয়তো এই যুদ্ধের মূল কারণ।
তবে বার বার পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে হামলার মূল কারণ হলো ন্যাটোর বিস্তার ঘটিয়ে রাশিয়ার জন্য হুমকি সৃষ্টি করা। উইটকফ বলেন, কেন রাশিয়া পুরো ইউক্রেনকে নিয়ে নিতে চাইবে? কি উদ্দেশ্যে? তাদের তো ইউক্রেনকে গ্রাস করার দরকার নেই।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.