সিলেটের ম্যাজিক ম্যান by মিজানুর রহমান

সরকার পরিবর্তন হলে চাপে পড়েন। থাকেন দৌড়ের উপরে। তবে অজানা এক জাদুর বলে দ্রুত সব আয়ত্তে নিয়ে নেন। যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অদ্ভুত এক ক্যারিশমা তার। অনেকে তাকে বলেন, ‘ম্যাজিক ম্যান’, কেউ বলে ম্যানেজ ম্যান। সব সরকারের আমলে একই হাল। প্রথমে বিপাকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত অজেয়-অপ্রতিরোধ্য। আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটে জুয়া-যাত্রা এবং ক্যাসিনোর মতো সামাজিক অপরাধে জাহাঙ্গীর আলমের সম্পৃক্ততার অভিযোগ বহু পুরনো। সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার এবং জেল খেটেছেন অনেক বার। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছেন কিন্তু রাজনীতির রং বদলে নিজস্ব অপরাধের সাম্রাজ্যে এখনো আছেন বহাল তবিয়তে!

শেখঘাট-কাজিরবাজার তথা সিলেট জুড়ে তার অপরাধের নেটওয়ার্ক। বিতর্কিত জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী জমানায় কাউন্সিলর ভাইয়ের কল্যাণে ছিলেন দলটির নেতৃত্বের আসনে। অবশ্য তার পদ-পদবির প্রয়োজন পড়েনি। সেই সময়ে অনেকদিন ছিলেন কমিউনিটি পুলিশের সভাপতির দায়িত্বে। ৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের খোলস পাল্টে এবার ফের তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে। যুক্তি তার জিনে নাকি জাতীয়তাবাদ। সব কিছুকে পেছনে ফেলে দুই দশক আগে ওয়ার্ড বিএনপি’র সেক্রেটারি পরিচয়ে জাহাঙ্গীর এবার বাগিয়ে নিয়েছেন মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতির পদ! আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জাহাঙ্গীরের টিকি ছুঁতে পারে না- এমনটা ভুল। সঠিক হচ্ছে তাকে বেশিদিন আটকে বা অপরাধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। ছলে-বলে, কলে-কৌশলে তিনি নিজের অপরাধ-রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেন। তার আগে তিনি ক্ষমতাসীনদের  ম্যানেজ করেন। বহুরূপী জাহাঙ্গীর আলম তার অপকর্ম আড়াল করতে প্রায়শই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন সিলেট সদর মৎস্য আড়তদার কল্যাণ সমবায় সমিতিকে। তিনি ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক। জনশ্রুতি আছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেই থাকুক কাজির বাজারের গদি জাহাঙ্গীরের।

সিলেট সদর মৎস্য আড়তদার কল্যাণ সমিতির দায়িত্বশীল একাধিক প্রতিনিধি সম্প্রতি মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম সমিতির বারবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে অনেক রিপোর্ট হয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ করেছি। এক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি আমাদের সমিতির জন্য ভালো, টাকা পয়সাও খরচ করেন। পারিবারিকভাবে তাদের সঙ্গে অনেকের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ কারণে তার ভাই কাউন্সিলর সিকান্দর আলীকে নিয়েও অনেক রিপোর্ট হয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছি। সমিতির এক সিনিয়র নেতা বলেন- ‘কাজিরবাজারের মাছ বাজারটি ঐতিহ্যবাহী। সোয়া শ’ বছরের পুরনো। এতে অনেকের চোখ। এ জন্য ক’দিন পরপর বাজারে অভিযান হয়। জুয়ার বোর্ডেই বেশি অভিযান হয়। সব সরকারের আমলে জাহাঙ্গীরের আস্তানায় অভিযান হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজারের নিয়ন্ত্রণ জাহাঙ্গীর পরিবারেরই হাতে। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার অন্যত্র সরিয়ে নিতে বহু চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে ব্রিজ করার সময়। জাহাঙ্গীর আলম এবং তার পরিবার বাজার এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় সরব ছিলেন। এজন্য অপকর্ম করলেও ব্যবসায়ীরা তা মেনে নেন। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে তার অর্জিত সম্পদ অবৈধ নয়। কিন্তু তার অন্য অনেক ধান্দা আছে, বদনামও আছে। তার কামাই রোজগার কতোটা ‘হালাল’ তা নিয়ে আমাদের মনেও খটকা আছে। কিন্তু কে এ নিয়ে কথা বলবে? তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কাছে আমরা কিছুই না!’

শেখঘাটের নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর গং: হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত শাহজালাল ঘাট তথা শেখঘাট। এটি সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যার সঙ্গে নগরীসহ গোটা সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। সুরমা নদীর তীরবর্তী শেখঘাটের পাশে ইটাখলা, ভাঙ্গাটিকর, কুয়ারপাড়, সওদাগরটিলা। বৃহত্তর শেখঘাট সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডভুক্ত। সরকারি ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত তথ্য অনুযায়ী শেখঘাট এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা বেশ ভালো। শেখঘাট পঞ্চায়েতের মৃত মো. শহিদ উল্লাহ’র সন্তান জাহাঙ্গীর আলম। হজ করার পর তার নামের আগে হাজী বসিয়েছেন নিজেই। শুভেচ্ছা-৪১৭, শেখঘাট এই ঠিকানায় তার বর্তমান বসবাস। জাহাঙ্গীরের বড় ভাই সাবেক সিটি কাউন্সিলর সিকান্দর আলী। তিনি বৈষম্যবিরোধী  ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তার এলাকা তো বটেই, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে অকুস্থল মদিনা মার্কেট পর্যন্ত সামাল দিয়েছেন। সেখানে অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার তৎপরতার দালিলিক প্রমাণ হতে এসেছে মানবজমিনের। সূত্র মতে, শেখঘাটে আওয়ামী বিরোধী মানুষই বেশি। জাহাঙ্গীর পরিবার সেই ব্লকেই ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতা প্রলম্বিত হওয়ায় তারা তর সইতে পারেনি। আধিপত্য বিস্তারে তারা এক পর্যায়ে গোটা পরিবারই আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। তাদের পরিবারে অন্তত ৬ জনের পদ-পদবি থাকার তথ্য মিলেছে। জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা মো. রেদওয়ান আহমদ বাপ্পিকে গত ২৪শে সেপ্টেম্বর আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তখন মিডিয়া ব্রিফিংয়ে র‍্যাব-৯ এর তরফে জানানো হয়- ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে আদালতে মামলা রয়েছে তার। আসামি বাপ্পী দীর্ঘ সময় পলাতক ছিলেন। গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানে ধরা পড়েছেন। ওদিকে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে খুন, দুর্নীতি, নদী ও সমতলের জায়গা দখল এবং চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এটা করে তিনি শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জন করেছেন। তবে জুয়া আর অনৈতিক কর্মকাণ্ড তার নেশা। ঘুরে ফিরে সব সময় সরকারি দলে থাকা জাহাঙ্গীর পরিবারের অন্যরাও ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তুলেছে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। স্মরণ করা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ২০০৩ সালে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালিত হয়। তখন সিলেটে জাহাঙ্গীর এবং দুষ্টচক্রকে গ্রেপ্তারে নগরীর কাজিরবাজারসহ শেখঘাট এলাকায় যৌথ বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালায়। সে সময় নদীপথে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায় জাহাঙ্গীর বাহিনী। এরপর অপারেশন ক্লিনহার্ট চলাবস্থায় আর এলাকায় ফিরতে পারেনি। পলাতক ছিল। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শেষ সময়ে জাহাঙ্গীর এলাকায় ফিরেন। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ফের দৌড়ের ওপর থাকে জাহাঙ্গীর বাহিনী। এলাকায় জমি দখলসহ বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে যৌথ বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে তারা গাঢাকা দেয়। এ অবস্থায় ছিল দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরও কিছুদিন এলাকার বাইরে ছিল জাহাঙ্গীর বাহিনী। কিন্তু না ২০১১ সালে কাউন্সিলর সিকান্দর আলী সব ‘ভাও’ করে নেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু হয় তাদের। ছোট ভাই জাহাঙ্গীর ও আরেক ছোট ভাই সন্ত্রাসী আছকিরের নেতৃত্বে তখন জায়গা দখল শুরু হয়ে গেছে। বিপত্তি ঘটে দিনমজুর লাকী মিয়াকে প্রহারে। সে নিহত হলে ৩ ভাই ফেঁসে যান। লাকি হত্যাকাণ্ডে উত্তাল হয়ে উঠে সিলেট। বাধ্য হয়ে পুলিশ চার্জশিট দেয় ৩ ভাইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু না হত্যা মামলাটি সিকান্দর-জাহাঙ্গীর- আছকির ধামা চাপা দিতে সক্ষম হন আওয়ামী যোগসাজশে।

জুয়ার বোর্ডসহ গ্রেপ্তার, কীন ব্রিজের নিচে প্রকাশ্য আদালতে সাজা জাহাঙ্গীরের: ২০১৭ সালে জুয়ার বোর্ডসহ প্রথম গ্রেপ্তার হন জাহাঙ্গীর। দীর্ঘদিন জেল খাটেন। জেল থেকে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। প্রকাশ্যে জুয়ার আসর জমালেও এলাকার কাউন্সিলর সিকান্দর আলী ও জাহাঙ্গীরের ভয়ে তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে কাজিরবাজারে জাহাঙ্গীর আলমের জুয়ার বোর্ডে অভিযান হয়। তখন জাহাঙ্গীর আলমহ বেশ ক’জন জুয়াড়িকে আটক করে পুলিশ। পরে কীন ব্রিজের নিচে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের এক বছর কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি পুনরায় কুকর্মে জড়ান। ২০১৯ সালের ২৭শে জুন, বৃহস্পতিবার। জাহাঙ্গীরের জুয়ার বোর্ডে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। সেটি ছিল ওই সময়ে সিলেটে জুয়া-ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সফল অপারেশন। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, জাহাঙ্গীর আলমের জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে সেদিন একসঙ্গে ২২ জনকে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যাকালীন সেই অভিযানের নেতৃত্বে ছিল সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জব্দ করা হয় জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি। কিন্তু জাহাঙ্গীর থামেননি। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি তার জুয়া বাণিজ্য আরও বাড়িয়ে তুলেন। জেলা জুড়ে ‘ওয়ানটেন’ নামক জুয়ার আসর ছড়িয়ে দেন। তার শেখঘাটের আস্তানা তখন আরও জমজমাট হয়। অভিযোগ আছে- ক’বছর আগে নগরীর ঐতিহ্যবাহী বন্দরবাজারে অবস্থিত জালাল বাজার নামীয় একটি মৎস্য বাজারে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন জাহাঙ্গীর। বাজার কমিটি  আদালতের দ্বারস্থ হয়। জাহাঙ্গীরসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে একটি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। যার নং ৪৩/৬৭৩। ঘটনার তারিখ: ১১/০৮/২০২১ইং। মামলাটি এখনো বিচারাধীন। অভিযোগ আছে- সিলেটের কাজিরবাজারে জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে এবং ভাঙ্গাটিকরপাড়ায় তার ছোট ভাই আছকির আলীর নেতৃত্বে অবৈধ সিলং তীর নামক জুয়াও চলে। যা অনেক খেটে খাওয়া ও অসহায় গরিব মানুষকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।  জাহাঙ্গীরের তীর কাউন্টারে খেলতে গিয়ে অত্র এলাকার মতিন মিয়ার মিলের একজন কর্মচারী সর্বস্ব হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই (সর্বকনিষ্ঠ) যুবলীগ নেতা রেদওয়ান আহমদ বাপ্পী’র নামে নগরীর কাজিরবাজার থেকে শেখঘাট পর্যন্ত মেইন রোডে থাকা ট্রাক এবং বিভিন্ন মিল-কারখানা থেকে মাসোহারা  আদায়ের অভিযোগ ছিল।  বর্তমানে এটা হাতবদল হয়েছে। জাহাঙ্গীর তার লোক দিয়ে ছোট ভাই’র চাঁদার লাইন ঠিক রেখেছেন বলে জানা গেছে। তার তত্ত্বাবধানে তৈরি হওয়া কাজিরবাজার জামে মসজিদের পেছনে দক্ষিণ পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় এখনো গরুর খামার রয়েছে। বর্তমানে এটি তার আরেক সহোদর আঙ্গুর আলী ও সহযোগী যুবদল নেতা আমিনুল ইসলাম তুহিন দেখভাল করেন। যার ফলে মসজিদের আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে মসজিদে আগত মুসল্লিদের নামাজ পড়তে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ আছে জাহাঙ্গীর-আছকির সহোদর সিন্ডিকেট বর্তমানে ভারত থেকে অবৈধ উপায়ে আসা চিনির কারবারে যুক্ত।  কাজিরবাজার ব্রিজ দিয়ে পারাপার হওয়া চোরাই মালবাহী ট্রাক যারই হোক না কেন কাজিরবাজার এলাকায় ঢুকলেই ওই সিন্ডিকেটকে চাঁদা দিতে হয়। জাহাঙ্গীর পরিবারের জুনিয়র কয়েকজন মিলে অত্র এলাকায় কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছে। তাদের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। বর্তমান ছাত্রলীগ ১২ নং ওয়ার্ড শাখার দায়িত্বে রয়েছে- সিয়াম আহমদ সিতাব (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ১২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ), পিতা-সাবেক কাউন্সিলর সিকান্দর আলী, মেহরাজ জাহাঙ্গীর জয় (সহ সভাপতি, ১২ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ), পিতা-জাহাঙ্গীর আলম, মিরাজ আহমদ সিজান (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১২ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ), পিতা- সাবেক কাউন্সিলর সিকান্দর আলী, বিজয় (১২ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা), পিতা-জাহাঙ্গীর আলম। অভিযোগ আছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর সিকান্দর আলী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপিতে জায়গা করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপি’র এক নেতা বলেন, আমরাও তার নতুন তৎপরতা দেখছি। তিনি পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগে গেছেন বলে প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা দলের হাইকমান্ডের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত আশা করি।

ক্যাসিনো থেকেই বেশির ভাগ সম্পদ গড়েছেন জাহাঙ্গীর: ২০১৫ সালের দিকে সিলেটে ক্যাসিনো শুরু করেন জাহাঙ্গীর। চলে ২০১৯ সাল অবধি। ঢাকায় ক্যাসিনো সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর সব গুটিয়ে নেন। তার পরিবারের সদস্যরাও নানাভাবে ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ থেকেই তারা বেশির ভাগ সম্পদ গড়েছেন। শেখঘাটে তারা ৪ তলার যে ভবনে থাকেন সেটি দখল করা। এ ছাড়া নগরীতে আরও অন্তত ৮টি বাড়ি রয়েছে জাহাঙ্গীর পরিবারের। আছে একটি লাঠিয়াল বাহিনী। দামি দামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের একাধিক গাড়িতে (এলিয়ন, প্রাডো, রেভ ফোর, সিআরবি) চড়েন তারা।

জাহাঙ্গীর যা বলেছেন: দল বদল, জুয়া, ক্যাসিনোসহ উপরোল্লিখিত বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম গত রাতে মানবজমিনকে বলেন, আমি ৮৫ সাল থেকে বিএনপি’র রাজনীতি করি। ছাত্রদল করেছি, যুবদল করেছি, এখন বিএনপি’র মহানগরের সহ-সভাপতি এবং ১২নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হিসেবে আছি। আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরে আমার এলাকার অনেকে দল ছেড়ে গেলেও আমি বিএনপিতেই ছিলাম। আমি রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছি বার বার বিএনপি করার কারণে। কিন্তু পুলিশ আমাকে রাজনৈতিক মামলা না দিয়ে জুয়াড়িদের সঙ্গে জুয়ার মামলায় চালান দিয়েছে। আমি জীবনে কোনো দিন জুয়া খেলিনি, জুয়ার বোর্ড বসাইনি। ক্যাসিনো কি জিনিস আমি চিনি  না। আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করুক, যদি কোথাও জমি দখল, জুয়া, ক্যাসিনোর সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয় তাহলে আমি এক কোটি টাকা পুরস্কার দেবো।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.