গাজায় চারদিকে শুধুই লাশ: ‘ইসরাইলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু নেতানিয়াহু’

ভয়াবহ। হৃদয় হরণকারী। চারদিকে শুধুই লাশ। ধ্বংসস্তূপ। লোকালয় ক্রমশ মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। একসময় গাজায় জনবসতি ছিল, সেই চিহ্নকে জোর কদমে মুছে দিচ্ছে ইসরাইল। সেখানকার মানুষদের স্বপ্ন ছিল। উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। উন্নত জীবনের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তা এখন স্মৃতির পাতা থেকে যেন হারিয়ে গেছে। শিশুরা এই নৃশংসতার মধ্যে আর বাঁচতে চায় না। তারা ইসরাইলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে কাছে ডাকে। অভিভাবকদের নিউরনও যেন ঘুমিয়ে গেছে। প্রিয়জনের লাশ দেখে শুধু হাউমাউ করেন। চোখে অশ্রু নেই। শুকিয়ে গেছে। গাজার মাটি খুঁড়লেই এখন লাশ। যেখানে সেখানে দাফন করা হয়েছে মানুষ। ধ্বংসস্তূপ যেন জীবন্ত কবর। সব মিলে সেখানে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন ইসরাইলের হামলায়। এ সংখ্যা শুধু গাজা জুড়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর রেজিস্ট্রার অনুযায়ী। কিন্তু জীবন্ত কবর রচনা হয়েছে কতোজনের তার হিসাব নেই কারও কাছে। দুই সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির পর আবার শুরু করা হামলায় গাজা থেকে একটি প্রজন্মকে মুছে দিচ্ছে ইসরাইল। রোববার ভোরেও তাদের হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন গাজায়। এর মধ্যে আছেন হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সালাহ আল বারদায়িল এবং তার স্ত্রী। তারা ভোরে একটি তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলেন। এখানেই শেষ নয়, ইয়েমেনে নতুন করে বোমা হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা সেখানকার একটি বিমানবন্দর এবং হোদেইদাহ বন্দরে অভিযান চালিয়েছে। অভিযান চালিয়েছে মারিব এবং সা’দার উত্তরাঞ্চলে। লেবাননে তারা হত্যা করেছে কমপক্ষে সাতজনকে। এর ফলে চার মাস আগে হিজবুল্লাহর সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সংকটাপন্ন হয়ে পড়লো।

ওদিকে ফিলিস্তিনের দখল করে নেয়া পশ্চিম তীরে ১৩টি অবৈধ বসতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরাইল। এর কড়া সমালোচনা করেছে হামাস। বলেছে, এটা হলো বর্ণবাদীদের দিয়ে মানুষ সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা। রোববার ইসরাইলের উগ্র-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজেলেল স্মোট্রিস ওই বসতিকে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। জবাবে হামাস বলেছে, এটা হলো ফিলিস্তিনিদের ভূমি চুরি করা, পবিত্র স্থাপনাগুলোকে চুরি করা, জাতিবিদ্বেষী একটি ঘৃণা আরোপ করা। একই সঙ্গে ইসরাইল এর মাধ্যমে সব রকম আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইন ও কনভেনশনকে লঙ্ঘন করেছে। বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ওদিকে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ইসরাইলে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সহ সব রকম ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশে পুরোপুরি অবরোধ দিয়েছে ইসরাইল। এর ফলে ফিলিস্তিনিরা অনাহারে, পিপাসার্ত অবস্থায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খান ইউনিসে একটি দাতব্য কিচেনে ১৯ বছর বয়সী ইমান আল বারদায়িল বলেন, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা খাদ্য ও পানি যোগাড় করতে লড়াই করছে। এই পবিত্র রমজানের মাসে সবার চারপাশেই শুধু হতাশা। ওই কিচেনে উপস্থিত হয়েছেন সাইদ আবু আল জিদায়েন। তিনি বলেছেন, সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য চাপ পাওয়ার আশায় এখানে এসেছিলাম। কিন্তু তা শেষ হয়ে গেছে। ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আমার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গাজায় কোনো খাবার নেই।

mzamin

‘ইসরাইলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু নেতানিয়াহু’

ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতে’র প্রধান রোনেন বার’কে বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এই সপ্তাহে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি রোনেনে’র ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এ অভিযোগ এনে তাকে বরখাস্ত করেন নেতানিয়াহু। ২০২১ সালে শিন বেতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রোনেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা। শনিবার নেতানিয়াহু বলেন,  রোনেন’কে বরখাস্ত করা হলেও দেশটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবেই থাকবে। এদিকে তেল আবিবের হাবিমা স্কয়ারে ইসরাইলি পতাকা নাড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কাছে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তির আহ্বান জানান। মোশে হাহয়ারোনি (৬৩) নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ইসরাইলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু হলো নেতানিয়াহু। ২০ বছর ধরে তিনি দেশের কথা ভাবেননি। তবে রোনেন’কে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু। এদিকে সমালোচনাকারীরা ইসরাইলের গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেয়ার অভিযোগে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। শুক্রবার ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে রোনেন’কে বরখাস্তের বিষয়টি স্থগিত করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঘুষের তদন্তকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ধরে নেতানিয়াহু ও রোনেনে’র মধ্যে দ্বন্দ্ব চলমান। এছাড়া রোনেনে’র বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগও এনেছেন নেতানিয়াহু।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.