জাফলং লুট চাঁদাবাজিতে হুমায়ূনই সব

মাইটিভি’র হুমায়ূন নামেই পরিচিত। এ টিভির জাফলং প্রতিনিধি সে। তবে নামেই কেবল প্রতিনিধি। কাজে চিহ্নিত চাঁদাবাজ। জাফলংয়ে যাই ঘটবে সেখান থেকে তার নামে কিংবা তার টিভির নামে চাঁদা আসবে। চলে দখলবাজি। জাফলং জিরোপয়েন্টে ক’বছর আগে অস্থায়ী কাপড়ের দোকান বসিয়ে সেখান থেকে পুলিশের নামে চাঁদা তুলতো। পরে জড়িয়ে পড়ে সীমান্তের ওপার ভারত থেকে আসা চিনি চোরাকারবারিতে। সেখানে তার শেষ রক্ষা হয়নি। গণপিটুুনি খেতে হয়েছিল হুমায়ূনকে। এই হুমায়ূনের শেষ রক্ষা হলো না এবার। দীর্ঘদিন ধরে আরেক সহযোগী সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় পলাতক থাকা অবস্থায় র‌্যাবের হাতে ধরে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৫ই আগস্টের পর জাফলংয়ে নতুন রূপে আভির্ভূত হয় হুমায়ূন আহমদ ওরফে মাইটিভি হুমায়ূন। শেখ হাসিনা হটানোর পর বিজয় মিছিলে দেয় নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাড়িঘরে ভাঙচুরের নেতৃত্ব দিয়েছে নিজেকে নেতা হিসেবে জাহির করে। অথচ তার ছেলে সানোয়ার হচ্ছে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক।

৫ই আগস্ট দিনভর এমন নাটকীয়তার পর যখন সন্ধ্যা নামে তখন জাফলংয়ের পরিবেশ বদলে যায়। লুট হয় কোয়ারিতে। হাত দিয়েই সরিয়ে ফেলা হয় পাথর। আর এতে দলবল নিয়ে নামেন হুমায়ূন। নিজেও পাথর লুট করেন। একই সঙ্গে পুলিশের ঠিকাদার হিসেবে ওই সময় পুলিশের নামে চাঁদাবাজি করে। এতে করে জাফলং কোয়ারিতে অন্যতম শক্তিধর হিসেবে আভির্ভূত হয় হুমায়ূন। প্রথম ২০-২২ দিনে জাফলং কোয়ারিতে ১২৫ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট করা হয়। এ তথ্য প্রশাসনের। ওই সময় নেতৃত্বে ছিল বিএনপি’র বহিষ্কৃত দুই নেতা স্বপন ও শাহপরান। তাদের সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতো হুমায়ূন। পরে যখন বোমা মেশিন দিয়ে লুটপাট শুরু হয় তখন আরও বেশি আধিপত্য নেয় হুমায়ূন। নিজেই গড়ে তোলে বলয়। আর এই বলয়ে নেতৃত্ব দেয় তার ছেলে সানোয়ার। জাফলংয়ের বর্তমান বিট অফিসার গোয়াইনঘাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর ওবায়দুল্লাহ। তার চাঁদাবাজির টাকা তুলতে অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো হুমায়ূনকে। কোয়ারি থেকে প্রতিদিন ওবায়দুল্লাহ অন্তত ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেন বলে জানিয়েছেন জাফলংসহ আশপাশ এলাকার মানুষ। এসআই ওবায়দুল্লাহ’র শেল্টারে থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল হুমায়ূন।

গত ১৭ই মার্চ জাফলং ব্রিজের মুখে হুমায়ূনের ঘটনা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। জৈন্তাপুরে আরেক টিভি সাংবাদিক রাজু। তিনি বাংলা টিভি’র জৈন্তাপুর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। জাফলংয়ে হুমায়ূন ও তার বাহিনীর আধিপত্যের ঘোর বিরোধী ছিলেন রাজু। তার বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলায় হলে জাফলংয়ের কাছাকাছি এলাকায় তার গ্রামের অবস্থান। হুমায়ূনের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ঘটনার দিন মধ্যরাতে মোটরসাইকেলযোগে ফেরার পথে জাফলং ব্রিজ সংলগ্ন বাজারে আসা মাত্র হুমায়ূনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা সানোয়ার, সালাউদ্দিন, সুফিয়ানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাজুর ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে নগদ অর্থ, মোটরসাইকেল, ক্যামেরা, ওয়ারলেস মাইক্রোফোন বুম্ব, মোবাইল সেটসহ অন্যান্য ডিভাইস সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা হামলায় আহত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে নেয়ার পর সাংবাদিক দুলাল হোসেন রাজুর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে হুমায়ূন জাফলং থেকে পালায়। তবে ঘটনাটি আলোচিত হওয়ায় অভিযানে নামে র‌্যাব। গতকাল সিলেট র‌্যাব-৯ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯ ও র‌্যাব-১০ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার বংশাল থানাধীন ৭৮/৩সি নাজিমউদ্দিন রোড, চানখারপুল চৌরাস্তা এলাকা থেকে হুমায়ূনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় হুমায়ূনকে গোয়াইনঘাট প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কার ছাড়াও টিভি চ্যানেল থেকে ইস্তফা দেয়া হয়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.