শাহবাগে সমাবেশ: বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে
এ সময় ‘আবু সাঈদ, মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘এনসিপি কি চায়, আওয়ামী লীগের বিচার চায়’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’, ‘গুম খুনের বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’, ‘জুলাই হত্যার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, আমরা জুলাইকে ভুলি নাই। জুলাইয়ের শক্তি আছে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে মুছে দেয়ার। যে আওয়ামী লীগ শাপলা, বিডিআর, মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। নাৎসি পার্টির থেকেও ভয়ঙ্কর দল আওয়ামী লীগ। যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চান তারা সাবধান হয়ে যান।
এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ২০১৪ সালে যখন ভোট হলো না তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল, ১৮ সালে রাতে ভোট হলো, ২৪-এ ডামি নির্বাচন হলো তখন আপনাদের ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? যে বাংলাদেশে এখনো রক্তের দাগ মুছে যায় নাই। এখন বিডিআর, শাপলা, মোদিবিরোধী আন্দোলনের বিচার হয় নাই। এখনো জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নাই। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আপনারা যেভাবে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন, রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপ করেছেন আপনারা তখন কোথায় ছিলেন। এত গুম খুন হত্যা হয়েছে আপনারা তখন কোথায় ছিলেন?
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন। এর জন্য জীবন দিতে হয়েছে। জামায়াত পুনর্বাসন করেছিল তাদের নেতাকর্মীদের গুম খুন করা হয়েছে। কেউ যদি জীবন দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার পুনর্বাসন করতে চায় তাহলে সেই দায় পূরণ করতে হবে। আমরা সব করবো গণতান্ত্রিকভাবে। কিন্তু সেখানে আওয়ামী লীগ থাকবে না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, দ্রুত নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এটা দেশের দল নয় এটা ভারতের দল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা, সমর্থন রয়েছে। কোনো ব্যক্তির ওপর আমাদের ক্ষোভ নাই। আপনাদের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। আর রাজনীতির বিষয়টি আপনারা রাজনীতি করতে দেন। আমাদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। সেনাবাহিনীর অবদান রয়েছে। আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই। অমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির দলগুলোকে এক থাকতে হবে। আপনাদের ওপর যে নির্যাতন দেড় দশক চালিয়েছে সেটা আপনারা ভুলে যাইয়েন না।
এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের পুনর্জন্ম হতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে পারে না। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করেছিল। তারা গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি মাখিয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবো না। বাংলাদেশে মুজিববাদী আদর্শের রাজনীতি আর পুনর্বাসন হবে না। সাত মাসে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কোনো বিচার শুরু করে নাই। অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন অল্প সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে। তা না হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে এসে বাতিল করিয়ে ছাড়বে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো ভালো নেতৃত্ব নাই। পিলখানা, শাপলা, মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, জুলাই হত্যাকাণ্ডর দায় স্বীকার করে নাই। কেউ যদি তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তাদের প্রতিহত করবো। আজ আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।
শাহবাগে সমাবেশ শেষ করে এনসিপি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যায়। এর আগে শাহবাগে একই দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেয় জুলাই মঞ্চ। তারা শাহবাগ চৌরাস্তার মাঝে অবস্থান নেয়। চারদিক থেকে যানবাহন চলাচল করে।
শনিবার বেলা ২টার দিকে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। পূর্বঘোষিত ‘গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের’ দাবিতে শাহবাগ ব্লকেডের ঘোষণা দেন। তারা ‘দফা এক দাবি এক, লীগ নট কাম ব্যাক’ স্লোগান দেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, এ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে জাহান্নামে পরিণত করেছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। কেউ যদি ইনিয়ে বিনিয়ে আওয়ামী লীগের পাশে থাকার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। জুলাই মঞ্চ শুধু নয় অনেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে। তাদের বিচার দাবিতে, নিষিদ্ধের দাবিতে আমরা রাজপথে থাকবো। সরকারের কাছে দাবি থাকবে অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করুন। নিবন্ধন বাতিল করুন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, আপনি জনগণের ভাষা বুঝুন। না বুঝলে আপনার পরিণতিও শেখ হাসিনার মতো হবে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও বিচারের দাবি জানানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
No comments