পাকিস্তান যাচ্ছেন উইলিয়াম ও কেট, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত by কাসওয়ার ক্লাসরা
![]() |
প্রিন্স উেইলিয়াম ও ডাচেস অব ক্যাম্ব্রিজ |
চলতি শরতে ডিউক ও ডাচেস অব ক্যাম্ব্রিজের আগমনকে সামনে রেখে দক্ষিণ
এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ
পর্যবেক্ষকের মনে একটি প্রশ্ন জাগছে। তা হলো এই রাজদম্পতির নিরাপত্তা
নিশ্চিত করার জন্য ব্রিটেন কী ব্যবস্থা করছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর তাদের ওয়েবসাইটে পাকিস্তানের কয়েকটি এলাকায়
সফরের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে যে ইসলামাবাদ, লাহোর ও করাচির
মতো নগরীসহ সারা পাকিস্তানেই সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার
হুমকি রয়েছে।
গত মে মাসে বেলুচিস্তানের একটি হোটেলে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ এবং মধ্য
লাহোরে একটি বোমা বিস্ফোরণের পর পরামর্শ দেয়া হয় যে বিদেশীরা, বিশেষ করে
পাশ্চাত্যের লোকজনকে সরাসরি টার্গেট করা হতে পারে।
ব্রিটিশ মিডিয়া গত শনিবার কেনসিঙটন প্যালেসের ঘোষণা কভারেজের সময়
নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে। তারা উল্লেখ করে যে এটা হবে ১৩ বছরের
মধ্যে রাজপরিবারের প্রথম পাকিস্তান সফর। ওই সময় প্রিন্সেস ডায়ানা ও প্রিন্স
চার্লস পাকিস্তান সফর করেছিলেন।
সফরের ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি, তবে খবরে বলা হয়, এই দম্পতির তিন সন্তান সফরে তাদের সাথে থাকবেন না।
ব্রিটেনে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার মোহাম্মদ নাফিস জাকারিয়া একে
‘দারুণ খবর’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, পাকিস্তানের সাথে ব্রিটেনের
সম্পৃক্ততার গুরুত্ব এতে প্রতিফলিত হয়েছে।
দুই দফায় ব্রিটেনে পাকিস্তানের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালনকারী ওয়াজিদ
শামসুল হাসান বলেন, ডিউক ও ডাচেসের পাকিস্তান সফরে দুই দেশের সম্পর্ক আরো
জোরদার হবে।
নিরাপত্তা উদ্বেগ
দি নিউজের ভাষ্যকার ও সম্পাদক আমির ঘুরি বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে টানাপোড়েনের মধ্যেই এই রাজদম্পতির সফরের খবর এলো।
গত মার্চে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক চরম আকার ধারণ করে। এর
আগে পাকিস্তানভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ কাশ্মিরে একটি আত্মঘাতী হামলা
চালিয়ে অন্তত ৪০ জন ভারতীয় সৈন্যকে হত্যা করার দাবি করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশটি যখন অন্যায়ভাবে মিত্রদের কাছে পাকিস্তানকে
নিঃসঙ্গ করার চেষ্টা করছে, তখন এই সফর পাকিস্তানের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হবে।
তিনি বলেন, ১৩ বছরের মধ্যে রাজপরিবারের কারো পাকিস্তান সফর না করার জন্য নিরাপত্তা ইস্যুকেই মূলত দায়ী করেন তিনি।
তিনি বলেন, নিরাপত্তাগত কারণেই ১৯৯৭ সালের পর রাজপরিবারের কেউ পাকিস্তান সফর করেনি। এখন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ লন্ডন থেকে ইসলামাবাদ ফ্লাইট আবার শুরু
করেছে, কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা উন্নত করা হয়েছে। পাকিস্তান এখন নিরাপদ স্থান
হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত মাসে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ একমাত্র পাশ্চাত্য এয়ারলাইন হিসেবে পাকিস্তানে
বিমান পরিচালনা করে। ১০ বছর আগে ইসলামাবাদের ম্যারিয়ট হোটেলে সন্ত্রাসী
হামলায় ব্রিটিশ নাগরিকসহ অন্তত ৫৪ জন নিহত হওয়ার পর ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
ওয়াজিদ বলেন, তবে এখনো ডিউক ও ডাচেসের নিরাপত্তার জন্য উভয় পক্ষের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ইসলামাবাদভিত্তিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোস্তানসার আব্বাস
ক্লাসরা বলেন, এই সফরের সময়সূচি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সাফল্যতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজদম্পতি এখানে নিরাপত্তা ও স্বস্তি বোধ করবে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক
ওয়াজিদ বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ।
স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে নানা চড়াই-উৎড়াই দেখা গেছে।
ক্রিকেট প্রিয় এ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক
রয়েছে। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোও
ছিলেন অক্সফোর্ডের ছাত্রী। ব্রিটেনে প্রায় ১৪ লাখ পাকিস্তানি বসবাস করে।
এমনকি লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।
![]() |
১৯৯৭ সালের অক্টোবরে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ পাকিস্তান সফরকালে রাওয়ালপিন্ডিতে কমনওয়েলথ ওয়্যার গ্রেভস সিমেটারি পরিদর্শন করেন |
No comments