প্রজ্ঞাপনের দাবিতে কর্মসূচি: টালবাহানা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সংবাদ সম্মেলন -মানবজমিনের নিজস্ব ছবি |
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার ঘোষণার ২৭ দিনেও সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিলের
প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কোটা সংস্কারের
দাবিতে গঠিত প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। দাবি
আদায়ে আজ দেশের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে
তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে
আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে
কর্মসূচিটি পালন করা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগের জাতীয়
জাদুঘরের সামনের রাস্তায়। সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন তাদের
সঙ্গে নাটক শুরু হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে কোনো টালবাহানা ছাত্রসমাজ মেনে
নেবে না। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার
সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান। সংবাদ সম্মেলনে
আরো উপস্থিত ছিলেন, আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, যুগ্ম
আহ্বায়ক মাহফুজ খানসহ কয়েক শ’ শিক্ষার্থী। এ সময় অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির
পক্ষে স্লোগান দেয়। নুরুল হক নুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দুই দুইবার কোটা
বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ছাত্র সমাজের মধ্যে
অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শ্রদ্ধাশীল। তাই
প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে ছাত্র
সমাজের মধ্যে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তাদের শান্ত করুন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা
গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। এরই
প্রেক্ষিতে গত ৯ই এপ্রিল আমরা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে
৭ই মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের
ও কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ছাত্র সমাজ আবার ফুঁসে ওঠে। তারপর
প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঐতিহাসিক ঘোষণা দিলে ছাত্র সমাজ প্রজ্ঞাপন
জারির জন্য অপেক্ষা করে এবং আনন্দ মিছিল করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর
বক্তব্যের ২৭ দিন পার হলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।’ নুর বলেন, ‘আমরা
ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে প্রজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করেছি।
কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির জন্য আবার ছাত্র সমাজকে রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন
না। ছাত্র সমাজ আশা করে আগামী দু’একদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন পাবে। কারণ এখনো
সব নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।’ এ সময় আন্দোলনকারীদের
যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘ছাত্র সমাজের সঙ্গে নাটক শুরু হয়েছে।
চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আমরা বলে দিতে চাই ছাত্র সমাজ কোনো চক্রান্ত মেনে
নিবে না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি
করে ছাত্র সমাজকে শান্ত করুন। তারা এখন ক্ষুব্ধ। নতুবা তারা আবার রাজপথে
নেমে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ ‘শান্তিপূর্ণ ও অহিংস।
সামনে যে আন্দোলন চলবে সেটিও শান্তিপূর্ণ হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর অহিংস
আন্দোলনের চেতনায় বিশ্বাসী।’ রাশেদ আরো বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে কোনো
টালবাহানা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১৭ই
ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি
পালন করা হচ্ছে। গত ৮ই এপ্রিল শাহবাগে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলার
সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উসকানিতে পুলিশ রাতভর কাঁদানে গ্যাস,
রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। এর প্রতিবাদে ৯ই এপ্রিল
সারা বাংলার ছাত্রসমাজ ফুঁসে ওঠে। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ১৮ সদস্যের একটি দল
সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করে। সেখানে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, ৭ই মে’র মধ্যে
কোটাপদ্ধতির সংস্কার করা হবে। অথচ এখনো তার বাস্তব কোনো প্রতিফলন দেখা
যাচ্ছে না।’
No comments