ফুল- সাগরকলমি by সৌরভ মাহমুদ

সাগরের বেলাভূমিতে সাগরকলমি। কুয়াকাটা
সমুদ্রসৈকত থেকে তোলা ছবি l লেখক
সাগরের বেলাভূমিতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ মানুষের মনকে ভাবনায় ফেলে দেয়। দূর থেকে দূরতর আকাশের নীলের আভায়, সাগরের বিশাল জলরাশির নীলিমায় আত্মহারা হয়ে যায় মন। বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্ত ছুঁয়ে বঙ্গোপসাগরের যে বেলাভূমি আছে, তাতে নানা ধরনের গাছপালার সমাবেশ ঘটেছে। এসব গাছ নোনাজলে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে। এসব গাছপালার মধ্যে সাগরকলমি সহজদৃষ্ট এক বনফুলের লতা। সাগরের বেলাভূমির গা বেয়ে যে লতার বেড়ে ওঠা। পৃথিবীতে এ লতা সমুদ্রপথে অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ, এ লতার বীজ লোনাজল সহনীয় এবং জলে ভেসে থাকে। মহাসাগরীয় বিস্তার যেসব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, সাগরকলমি তার মধ্যে অন্যতম। আটলান্টিক, প্রশান্ত, ভারত মহাসাগর, নিউসাউথ ওয়েলস, কুইন্সল্যান্ড উপকূল, হাওয়াই দ্বীপ, মেক্সিকো, আফ্রিকা, ফ্লোরিডা উপকূলে আছে এটি!
অনেক সময় এ লতার ঝোপ বেলাভূমির অনেক জায়গা নিয়ে বেড়ে ওঠে। লতা প্রায় ৭ থেকে ১৫ ফুট লম্বায় বাড়ে এবং প্রায় পাঁচ বছর বেঁচে থাকতে পারে। লতা যখন গোলাপি রঙের ফুলে ভরে যায়, সে দৃশ্য কখনো ভোলার নয়। সাধারণত সকালে রোদের আলোয় ফুল ফোটে। বিকেলের দিকে ফুল নেতিয়ে পড়ে এবং পরের দিন লতা থেকে ফুল ঝরে পড়ে। তবে ছায়া পেলে দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত সজীব থাকে গোলাপি রঙের ফুল।
এ লতার পাতার অবয়ব ছাগলের পায়ের খুরের আকৃতি, এ জন্য এ লতার অপর নাম ছাগলখুর। শুধু সাগরের বালুকাময় ভূমিতে এ কলমি জন্মে বলে নাম হয়েছে সাগরকলমি। সাগর কলমি ক্রিপিং লতা। পাতা পুরো, উজ্জ্বল সবুজ। ফল বড়, মাইকের মতো। প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। কুয়াকাটা, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত (হিমছড়ি থেকে টেকনাফ), সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গেলে এ লতা সহজদৃষ্ট।
কাণ্ড কাটিং ও বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটে। বেলাভূমির ভূমি ক্ষয়রোধ করে এবং বেলাভূমির মাটিকে স্থায়ী করে এ লতা। এ লতার বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea pes-caprae, পরিবার Convolvulaceae, ইংরেজি নাম Bayhops, Beach morning glory, Goat’s foot।

No comments

Powered by Blogger.