আলোকশিখা গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস- আদিয়োস্, মায়েস্ত্রো গাবো by রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী
এই দুনিয়া ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন বিংশ
শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। ১৯৮২ সালে নোবেল
সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত কলম্বিয়ান এই ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও সাংবাদিক
ছিলেন সিয়েন আনিয়োস দে সোলেদাদ (হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিচ্যুড), এল আমোর এন
লোস তিয়েম্পোস দেল কলেরা (লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা), এল কোরোনেল নো তিয়েনে
কিয়েন লা এস্ক্রিবা (নো ওয়ান রাইটস টু কর্নেল), এল ওতোনিয়ো দেল
পাত্রিয়ার্কা (অটাম অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক) আর ক্রোনিকা দে উনা মুয়ের্তে
আনুন্সিয়াদা (ক্রনিকেল অব এ ডেথ ফোরটোল্ড) ইত্যাদি ক্লাসিক উপন্যাসের
স্রষ্টা।
>>গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, জন্ম: ৬ মার্চ ১৯২৭, মৃত্যু: ১৭ এপ্রিল ২০১৪
দোন কিহোতে উপন্যাসের লেখক মিগেল দে সের্বান্তেস (১৫৬৪-১৬১৬)-এর পর এস্পানিয়োল ভাষায় সবচেয়ে বেশি পঠিত লেখক হলেন গার্সিয়া মার্কেস। বিশ্বের সব কটি প্রধান ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর রচনাসমগ্র। তর্জমার মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের সর্বাধিক পঠিত লেখকটির নামও গার্সিয়া মার্কেস। তিনি আর তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মই একটা আলাদা দুনিয়া, একটা অনন্য জাদুকরি ভুবন। শৈশবের গ্রাম আরাকাতাকার আদলে একটা নিজস্ব কাল্পনিক জগৎ নির্মাণ করেছিলেন তিনি, তাঁর অন্যতম সাহিত্যগুরু ফকনারের সৃষ্ট ইয়োকনোপাথাউপা কাউন্টির মতো, যার নাম দিয়েছিলেন মাকোন্দো। এই মাকোন্দো নামের জনপদই তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি, স্বর্গমর্ত্য তোলপাড় করা উপন্যাস সিয়েন আনিয়োস দে সোলেদাদ-এর (নির্জনতার ১০০ বছর) আখ্যানভূমি। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর এ উপন্যাসটি আর এর স্রষ্টাকে ঘিরে হিস্পানি, ইংরেজিসহ তাবৎ ভাষী দুনিয়ায় যা যা হয়েছে তা এক মহাকাব্য। কথাসাহিত্যের ভুবনটাই গেল পাল্টে সেই ষাট-সত্তরের দশক থেকে। গার্সিয়া মার্কেস হয়ে উঠলেন এক কিংবদন্তি আর তাঁর স্বদেশ কলম্বিয়া এবং মহাদেশ লাতিন আমেরিকা বিশ্বের সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক মানচিত্রে হাজির হলো নতুন বার্তা নিয়ে। আপন মহাদেশকে নিয়ে সিমোন বোলিবার, চে গুয়েভারা আর পাবলো নেরুদার দেখা বিপ্লবী স্বপ্নকে প্রসারিত করার প্রয়াস করলেন তিনি। এ বোবা মহাদেশের মুখে জবান দেওয়ার কথা বলেছিলেন নেরুদা। গার্সিয়া মার্কেস লাতিন আমেরিকাকে বিশ্বমঞ্চে শুধু তুলেই ধরেননি, ঘুম ভাঙিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন। লাতিন আমেরিকার ইতিহাস বহু অর্থহীন প্রয়াস আর মহতী নাটকের দ্বারা গঠিত। গার্সিয়া মার্কেস আশা করেছেন, তাঁর মহাদেশ হাহাকার, হতাশা আর একাকিত্ব থেকে মুক্তি পাবে একদিন। নোবেলের পাওয়া অর্থ দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন দুটি প্রতিষ্ঠান: সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণবিষয়ক ‘ফুন্দাসিয়োন নুয়েবো পেরিয়োদিসমো ইবেরোআমেরিকানো’ (নিউ আইবেরোআমেরিকান জার্নালিজম ফাউন্ডেশন, মেহিকো) আর সিনেমার কৃৎকৌশল শেখানোর ‘এস্কুয়েলা ইন্তেরনাসিয়োনাল দে সিনে ই তেলিবিসিয়োন’ (ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন, কুবা)।
লাতিন আমেরিকার আপামর জনগণের জীবন আর তাদের লড়াইকে স্যালুট জানিয়ে তাদের মাটি, ঘরবাড়ি, স্বপ্ন-কল্পনা, পৌরাণিক বিশ্বাস, হাসি-কান্নাকে উপজীব্য করে গার্সিয়া মার্কেস লিখেছেন অসামান্য সব গল্পগাথা। প্রবাদপ্রতিম হোর্হে লুইস বোর্হেস বা ২০১০ সালের নোবেলজয়ী মারিয়ো বার্গাস ইয়োসার মতো তিনি অ্যাকাডেমিক লেখক নন, তিনি গণমানুষের লেখক, তাঁর উৎস গণসংস্কৃতি। লাতিন আমেরিকার কাব্যিক ইতিহাসবিদ তিনি, যাঁকে নিকটজন স্নেহভরে ডাকতেন গাবো। অব্যর্থ অতুলনীয় কারিগরি-দক্ষতা আর আসুরিক কল্পনাশক্তি লেখক ও সাংবাদিক গাবোর মূল হাতিয়ার। স্বপ্নের প্রতিরূপ এক বাস্তবতাকে নির্মাণের মধ্য দিয়ে তিনি যে ফ্যান্টাসিমাখা আখ্যানজগৎ সৃষ্টি করেছেন তা একই সঙ্গে বহুস্বারিক আর মহাকাব্যিক।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের জন্ম ১৯২৭ সালের ৬ মার্চ, কলম্বিয়ার আরাকাতাকা গ্রামে। লেখালেখি আর সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, যদিও কোনো দলের সদস্য ছিলেন না। সমাজতন্ত্রের চিরসমর্থক গাবো ফিদেল কাস্ত্রোর বন্ধু ছিলেন। কলম্বিয়ার বিভিন্ন জাতীয় সংকটকালে তিনি অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন কখনো কখনো, শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার চাপ থাকলেও তা থেকে তিনি সরে আসেন। লাতিন আমেরিকার সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তাঁর প্রভাব ছিল অপরিসীম। যদিও নিজের পারিবারিক জীবনে তার প্রভাব পড়তে দেননি তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন নিভৃতচারী। গত চার দশক তিনি মেহিকোতে বসবাস করে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় মেহিকো সিটির দক্ষিণাংশে অবস্থিত তাঁর বাসার সামনে উপস্থিত মিডিয়ার কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুর খবরটি জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় বেশ কয়েক দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ গাবোকে ঘিরে সব উৎকণ্ঠা। চিরতরে চলে গেলেন, মৃত্যু তাঁকে কেড়ে নিল আমাদের কাছ থেকে, কিন্তু তাঁর রচনাবলি আমাদের মধ্যে বেঁচে রইল। আমাদের কালের এক পৌরাণিক মহানায়ককে হারালাম আমরা। তাঁর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে জগতের সবচেয়ে অদ্ভুত সুন্দর অলৌকিক লেখকটি হারিয়ে গেলেন।
দোন কিহোতে উপন্যাসের লেখক মিগেল দে সের্বান্তেস (১৫৬৪-১৬১৬)-এর পর এস্পানিয়োল ভাষায় সবচেয়ে বেশি পঠিত লেখক হলেন গার্সিয়া মার্কেস। বিশ্বের সব কটি প্রধান ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর রচনাসমগ্র। তর্জমার মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের সর্বাধিক পঠিত লেখকটির নামও গার্সিয়া মার্কেস। তিনি আর তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মই একটা আলাদা দুনিয়া, একটা অনন্য জাদুকরি ভুবন। শৈশবের গ্রাম আরাকাতাকার আদলে একটা নিজস্ব কাল্পনিক জগৎ নির্মাণ করেছিলেন তিনি, তাঁর অন্যতম সাহিত্যগুরু ফকনারের সৃষ্ট ইয়োকনোপাথাউপা কাউন্টির মতো, যার নাম দিয়েছিলেন মাকোন্দো। এই মাকোন্দো নামের জনপদই তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি, স্বর্গমর্ত্য তোলপাড় করা উপন্যাস সিয়েন আনিয়োস দে সোলেদাদ-এর (নির্জনতার ১০০ বছর) আখ্যানভূমি। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর এ উপন্যাসটি আর এর স্রষ্টাকে ঘিরে হিস্পানি, ইংরেজিসহ তাবৎ ভাষী দুনিয়ায় যা যা হয়েছে তা এক মহাকাব্য। কথাসাহিত্যের ভুবনটাই গেল পাল্টে সেই ষাট-সত্তরের দশক থেকে। গার্সিয়া মার্কেস হয়ে উঠলেন এক কিংবদন্তি আর তাঁর স্বদেশ কলম্বিয়া এবং মহাদেশ লাতিন আমেরিকা বিশ্বের সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক মানচিত্রে হাজির হলো নতুন বার্তা নিয়ে। আপন মহাদেশকে নিয়ে সিমোন বোলিবার, চে গুয়েভারা আর পাবলো নেরুদার দেখা বিপ্লবী স্বপ্নকে প্রসারিত করার প্রয়াস করলেন তিনি। এ বোবা মহাদেশের মুখে জবান দেওয়ার কথা বলেছিলেন নেরুদা। গার্সিয়া মার্কেস লাতিন আমেরিকাকে বিশ্বমঞ্চে শুধু তুলেই ধরেননি, ঘুম ভাঙিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন। লাতিন আমেরিকার ইতিহাস বহু অর্থহীন প্রয়াস আর মহতী নাটকের দ্বারা গঠিত। গার্সিয়া মার্কেস আশা করেছেন, তাঁর মহাদেশ হাহাকার, হতাশা আর একাকিত্ব থেকে মুক্তি পাবে একদিন। নোবেলের পাওয়া অর্থ দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন দুটি প্রতিষ্ঠান: সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণবিষয়ক ‘ফুন্দাসিয়োন নুয়েবো পেরিয়োদিসমো ইবেরোআমেরিকানো’ (নিউ আইবেরোআমেরিকান জার্নালিজম ফাউন্ডেশন, মেহিকো) আর সিনেমার কৃৎকৌশল শেখানোর ‘এস্কুয়েলা ইন্তেরনাসিয়োনাল দে সিনে ই তেলিবিসিয়োন’ (ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন, কুবা)।
লাতিন আমেরিকার আপামর জনগণের জীবন আর তাদের লড়াইকে স্যালুট জানিয়ে তাদের মাটি, ঘরবাড়ি, স্বপ্ন-কল্পনা, পৌরাণিক বিশ্বাস, হাসি-কান্নাকে উপজীব্য করে গার্সিয়া মার্কেস লিখেছেন অসামান্য সব গল্পগাথা। প্রবাদপ্রতিম হোর্হে লুইস বোর্হেস বা ২০১০ সালের নোবেলজয়ী মারিয়ো বার্গাস ইয়োসার মতো তিনি অ্যাকাডেমিক লেখক নন, তিনি গণমানুষের লেখক, তাঁর উৎস গণসংস্কৃতি। লাতিন আমেরিকার কাব্যিক ইতিহাসবিদ তিনি, যাঁকে নিকটজন স্নেহভরে ডাকতেন গাবো। অব্যর্থ অতুলনীয় কারিগরি-দক্ষতা আর আসুরিক কল্পনাশক্তি লেখক ও সাংবাদিক গাবোর মূল হাতিয়ার। স্বপ্নের প্রতিরূপ এক বাস্তবতাকে নির্মাণের মধ্য দিয়ে তিনি যে ফ্যান্টাসিমাখা আখ্যানজগৎ সৃষ্টি করেছেন তা একই সঙ্গে বহুস্বারিক আর মহাকাব্যিক।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের জন্ম ১৯২৭ সালের ৬ মার্চ, কলম্বিয়ার আরাকাতাকা গ্রামে। লেখালেখি আর সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, যদিও কোনো দলের সদস্য ছিলেন না। সমাজতন্ত্রের চিরসমর্থক গাবো ফিদেল কাস্ত্রোর বন্ধু ছিলেন। কলম্বিয়ার বিভিন্ন জাতীয় সংকটকালে তিনি অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন কখনো কখনো, শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার চাপ থাকলেও তা থেকে তিনি সরে আসেন। লাতিন আমেরিকার সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তাঁর প্রভাব ছিল অপরিসীম। যদিও নিজের পারিবারিক জীবনে তার প্রভাব পড়তে দেননি তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন নিভৃতচারী। গত চার দশক তিনি মেহিকোতে বসবাস করে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় মেহিকো সিটির দক্ষিণাংশে অবস্থিত তাঁর বাসার সামনে উপস্থিত মিডিয়ার কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুর খবরটি জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় বেশ কয়েক দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ গাবোকে ঘিরে সব উৎকণ্ঠা। চিরতরে চলে গেলেন, মৃত্যু তাঁকে কেড়ে নিল আমাদের কাছ থেকে, কিন্তু তাঁর রচনাবলি আমাদের মধ্যে বেঁচে রইল। আমাদের কালের এক পৌরাণিক মহানায়ককে হারালাম আমরা। তাঁর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে জগতের সবচেয়ে অদ্ভুত সুন্দর অলৌকিক লেখকটি হারিয়ে গেলেন।
No comments