আমাদের অর্জন ও ব্যর্থতার কিছু কথা by আবুল কালাম আজাদ পাটওয়ারী
বাংলাদেশের
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির অহংকার এবং সবচেয়ে
গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা সবাই গর্বিত। তাই ১৯৭১-এর
আবেগ দমিয়ে রাখতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু লেখার কথা অনেকে বলেন।
কিন্তু লিখতে পারিনি বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক প্রতিকূলতা, শিষ্টাচার-বর্জিত
আচরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী গোষ্ঠীর অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে। সত্য
কথা লেখা যে কত কঠিন, তার সাক্ষী তো আমি নিজেই। মুক্তিযোদ্ধারা নানাভাবে
বিভক্ত থাকায় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আজ বিকৃত করা হচ্ছে
বিভিন্নভাবে। মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখতে হলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথা
লিখতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নয়। আমরা বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি একটি স্বাধীন
সার্বভৌম দেশ এবং অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন সমাজব্যবস্থার জন্য। ষাটের দশকে
বাংলা ও বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার
জন্য দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নির্ভীক, প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা অত্যাবশ্যক
হয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির মুক্তির
সনদ ৬ দফা দাবি ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্র“য়ারি লাহোরে সর্বদলীয় রাজনৈতিক
নেতাদের গোলটেবিল বৈঠকে তিনি উপস্থাপন করেছিলেন বলেই ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৬৮,
১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ সালে বাঙালিরা ধাপে ধাপে স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশের সাহস
অর্জন করেছিল।
আজ বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরব জাগানিয়া ইতিহাস নিয়ে বিশ্বে বীরের জাতি হিসেবে সুপরিচিত। পৃথিবীতে যত দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিরই নেতৃত্বে ছিলেন এক বা একাধিক দেশপ্রেমিক অবিসংবাদিত নেতা। জর্জ ওয়াশিংটন, লেনিন, আব্রাহাম লিঙ্কন, মাও সেতুং, উইনস্টন চার্চিল, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পেট্রিক হেনরি, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ড. সুকর্ন, হো চি মিন, আলেন্দে, মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশের জন্য, জাতির জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়ে, আÍবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ ও জাতির চিন্তা করেছেন, দেশ ও জাতির কল্যাণ করেছেন। এর ফলেই তারা জাতীয় নেতায় পরিণত হয়েছেন। বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কয়েকজনই হয়েছেন এ রকম বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, যাদের গুণে তাদের নিজ নিজ দেশকে সমগ্র পৃথিবী চেনে, জানে ও সম্মান করে।
২.
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেরণা থেকেই আমাদের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের (সে সময় গাজীপুরে অবস্থিত) সৈনিকরা তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর কেএম সফিউল্লাহর নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিল ১৯ মার্চ, ১৯৭১-এ জয়দেবপুরে। অবশেষে ২৫ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটের আগেই বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। ১৯৭১-এর ৪ এপ্রিল ভারতে ইন্দিরা-তাজউদ্দীন বৈঠক, ৭, ৮ ও ৯ এপ্রিল ১৯৭১-এ আগরতলার ধোবাউড়াতে বাঙালি এমএনএ ও এমপিএদের সমন্বয়ে বৈঠক হয়। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় আগরতলায়। ১৭ এপ্রিল সেই সরকার কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করে।
আমি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের আহ্বানেই মুজিবনগর সরকারের অধীনে কে ফোর্সের ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে চাঁদপুর মহকুমার (চাঁদপুর জেলা) এফএফ বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে রণাঙ্গনে দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা বেশকিছু সম্মুখযুদ্ধ করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তখন থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও মেঘনা পাড়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। আবার কিছু লোক পাকিস্তানিদের দালাল হয়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাহাজানিতে ব্যস্ত ছিল। সব বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা পাকিস্তানের এ অঞ্চলের অধিনায়ক মেজর জেনারেল আবদুর রহিমের সেনাবাহিনীকে ‘হিট অ্যান্ড রান পলিসি’, রেইড, অ্যাম্বুশ ও ফ্রন্টফাইটের মাধ্যমে সর্বদা ব্যস্ত রেখেছিলাম। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সম্মুখযুদ্ধ হয়েছে ৩৮-৩৯টির মতো। যেসব জায়গায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, তার কয়েকটির মাত্র নাম এখানে উল্লেখ করছি- চাষী আলীর যুদ্ধ, পাইকপাড়ার যুদ্ধ, কালির বাজারের যুদ্ধ, রঘুনাথপুর বাজারের যুদ্ধ, লাকমারার যুদ্ধ, বলাখালের যুদ্ধ, মহামায়া বাজারের পূর্বদিকের জমজমিয়া ব্রিজ ডেমোলেশান অ্যান্ড ফায়ারের যুদ্ধ, ঘোগরার যুদ্ধ, ফুলচোঁয়ার যুদ্ধ, কালিয়াতলার যুদ্ধ, মেহার কালীবাড়ীর যুদ্ধ, উঘারিয়ার যুদ্ধ, সূচিপাড়ার যুদ্ধ, ঠাকুর বাজারের যুদ্ধ, পানিয়ালার যুদ্ধ, গোয়ালমারীর যুদ্ধ, মুকুন্দসারের যুদ্ধ, নাগদার যুদ্ধ, চেঙ্গাচরের যুদ্ধ, কচুয়া থানা আক্রমণের যুদ্ধ, মোহনপুরের যুদ্ধ, গজারিয়া মতলবের মাঝামাঝি মধ্যনদীতে যুদ্ধ, চরাচ্ছরের যুদ্ধ, গন্ধরপুরের যুদ্ধ, বাবুরহাটের যুদ্ধ, পুরান বাজারের যুদ্ধ ইত্যাদি।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মেজর জেনারেল আবদুর রহিম তার কিছু বেঁচে যাওয়া সৈন্যককে নিয়ে ঢাকা অভিমুখে জলপথে পালিয়ে যায়। চাঁদপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পতন ঘটে ৭ ডিসেম্বর ভোররাতে, অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর সূর্য উদয়ের আগেই। এখানে একটি কথা অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন- আমাদের চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, সম্পদ লুটপাট করেছে, হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং প্রায় ৭০-৮০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। এর জন্য দায়ী যেমন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তেমনি কিছু বাঙালি রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ ও শান্তি কমিটির লোক।
আমরা ৯ মাস ১১ দিনের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজিকে ৯৩ হাজার সৈনিক ও অস্ত্রধারী সহযোগী বাহিনীসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করি।
এখানে মনে রাখা দরকার, কাপুরুষের মৃত্যু হয় বারবার, কিন্তু বীরের মৃত্যু হয় একবারই। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জাতীয় বীর। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। সুতরাং তারা কারও করুণার পাত্র
আজ বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরব জাগানিয়া ইতিহাস নিয়ে বিশ্বে বীরের জাতি হিসেবে সুপরিচিত। পৃথিবীতে যত দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিরই নেতৃত্বে ছিলেন এক বা একাধিক দেশপ্রেমিক অবিসংবাদিত নেতা। জর্জ ওয়াশিংটন, লেনিন, আব্রাহাম লিঙ্কন, মাও সেতুং, উইনস্টন চার্চিল, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পেট্রিক হেনরি, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ড. সুকর্ন, হো চি মিন, আলেন্দে, মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশের জন্য, জাতির জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়ে, আÍবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ ও জাতির চিন্তা করেছেন, দেশ ও জাতির কল্যাণ করেছেন। এর ফলেই তারা জাতীয় নেতায় পরিণত হয়েছেন। বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কয়েকজনই হয়েছেন এ রকম বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, যাদের গুণে তাদের নিজ নিজ দেশকে সমগ্র পৃথিবী চেনে, জানে ও সম্মান করে।
২.
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেরণা থেকেই আমাদের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের (সে সময় গাজীপুরে অবস্থিত) সৈনিকরা তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর কেএম সফিউল্লাহর নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিল ১৯ মার্চ, ১৯৭১-এ জয়দেবপুরে। অবশেষে ২৫ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটের আগেই বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। ১৯৭১-এর ৪ এপ্রিল ভারতে ইন্দিরা-তাজউদ্দীন বৈঠক, ৭, ৮ ও ৯ এপ্রিল ১৯৭১-এ আগরতলার ধোবাউড়াতে বাঙালি এমএনএ ও এমপিএদের সমন্বয়ে বৈঠক হয়। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় আগরতলায়। ১৭ এপ্রিল সেই সরকার কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করে।
আমি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের আহ্বানেই মুজিবনগর সরকারের অধীনে কে ফোর্সের ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে চাঁদপুর মহকুমার (চাঁদপুর জেলা) এফএফ বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে রণাঙ্গনে দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা বেশকিছু সম্মুখযুদ্ধ করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তখন থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও মেঘনা পাড়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। আবার কিছু লোক পাকিস্তানিদের দালাল হয়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাহাজানিতে ব্যস্ত ছিল। সব বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা পাকিস্তানের এ অঞ্চলের অধিনায়ক মেজর জেনারেল আবদুর রহিমের সেনাবাহিনীকে ‘হিট অ্যান্ড রান পলিসি’, রেইড, অ্যাম্বুশ ও ফ্রন্টফাইটের মাধ্যমে সর্বদা ব্যস্ত রেখেছিলাম। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সম্মুখযুদ্ধ হয়েছে ৩৮-৩৯টির মতো। যেসব জায়গায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, তার কয়েকটির মাত্র নাম এখানে উল্লেখ করছি- চাষী আলীর যুদ্ধ, পাইকপাড়ার যুদ্ধ, কালির বাজারের যুদ্ধ, রঘুনাথপুর বাজারের যুদ্ধ, লাকমারার যুদ্ধ, বলাখালের যুদ্ধ, মহামায়া বাজারের পূর্বদিকের জমজমিয়া ব্রিজ ডেমোলেশান অ্যান্ড ফায়ারের যুদ্ধ, ঘোগরার যুদ্ধ, ফুলচোঁয়ার যুদ্ধ, কালিয়াতলার যুদ্ধ, মেহার কালীবাড়ীর যুদ্ধ, উঘারিয়ার যুদ্ধ, সূচিপাড়ার যুদ্ধ, ঠাকুর বাজারের যুদ্ধ, পানিয়ালার যুদ্ধ, গোয়ালমারীর যুদ্ধ, মুকুন্দসারের যুদ্ধ, নাগদার যুদ্ধ, চেঙ্গাচরের যুদ্ধ, কচুয়া থানা আক্রমণের যুদ্ধ, মোহনপুরের যুদ্ধ, গজারিয়া মতলবের মাঝামাঝি মধ্যনদীতে যুদ্ধ, চরাচ্ছরের যুদ্ধ, গন্ধরপুরের যুদ্ধ, বাবুরহাটের যুদ্ধ, পুরান বাজারের যুদ্ধ ইত্যাদি।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মেজর জেনারেল আবদুর রহিম তার কিছু বেঁচে যাওয়া সৈন্যককে নিয়ে ঢাকা অভিমুখে জলপথে পালিয়ে যায়। চাঁদপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পতন ঘটে ৭ ডিসেম্বর ভোররাতে, অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর সূর্য উদয়ের আগেই। এখানে একটি কথা অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন- আমাদের চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, সম্পদ লুটপাট করেছে, হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং প্রায় ৭০-৮০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। এর জন্য দায়ী যেমন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তেমনি কিছু বাঙালি রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ ও শান্তি কমিটির লোক।
আমরা ৯ মাস ১১ দিনের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজিকে ৯৩ হাজার সৈনিক ও অস্ত্রধারী সহযোগী বাহিনীসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করি।
এখানে মনে রাখা দরকার, কাপুরুষের মৃত্যু হয় বারবার, কিন্তু বীরের মৃত্যু হয় একবারই। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জাতীয় বীর। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। সুতরাং তারা কারও করুণার পাত্র
No comments