কী হতে পারে সামনের দিনগুলোতে by ড. তুহিন মালিক
তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে একগুঁয়েমির কারণে এদেশে ১/১১ এসেছিল। এখন
তো পুরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল। বিএনপি বলছে, একতরফা কোনো
নির্বাচন তারা শুধু বয়কটই করবে না, বরং বাংলার মাটিতে তা হতে দেবে না।
নির্বাচন ঠেকাতে প্রতিটি কেন্দ্রে সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন
বিরোধীদলীয় নেতা। পরিকল্পনা ছিল ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে জনসমাবেশ করে ঢাকার
সঙ্গে দেশের সব জেলার নৌ-সড়ক-রেলপথ বিছিন্ন করে দেয়ার। প্রতিরোধ এলে হাতের
কাছে দা-কুড়াল নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ঢাকায় সব ধরনের
সভা-সমাবেশকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে উত্তপ্ত উনুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে সরকার। তাও
আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য। ঈদের পরদিন ভোর থেকেই বিএনপির কার্যালয় অবরুদ্ধ
করে রেখেছে পুলিশ। প্রিজন ভ্যান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অচিরেই ঘরোয়া
রাজনীতি পর্যন্ত বন্ধ করার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই ১৬০০ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে রেখেছে। সঙ্গে পুলিশ-বিডিআর আর লগি-বৈঠা বাহিনী তো প্রস্তুত আছেই। বোঝাই যাচ্ছে, সমঝোতার উদ্যোগ তিরোহিত। আর সংঘাত অতি আসন্ন। মাননীয় মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সোজাসাপ্টাই বলে দিয়েছেন, যারা হরতাল করবে তাদের ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করা হলে তা হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এসব আলটিমেটাম আর রাজনীতির অংকশাস্ত্রে ২৫ অক্টোবরের পরে দেশে ‘কেয়ামত’ হবে বলে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মাদ নাসিম বলেছেন, কেয়ামত হয়ে গেলেও তারা নির্বাচন করে ফেলবেন। ইহলোকের রাজনৈতিক সংঘাত এখন কেয়ামত পর্যন্ত পৌঁছে গেছে! তবে নাসিম সাহেবের কথা না শুনলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। নাসিম সাহেবের নির্দেশমতো তারা নিজেদের কপালে দুঃখ কেন অহেতুক টেনে আনতে যাবেন?
দুঃখ শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের কপালে একা আসবে না। রিকশাওয়ালা-দিনমজুর থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিশুদের জীবন পর্যন্ত প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। একতরফা নির্বাচন করে ফেলা, নির্বাচন বানচালকারীদের প্রতিহত করা এবং নির্বাচনের পর বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় টিকে থাকা- মোটা দাগে এই তিনটি কৌশল নিয়ে মাঠে নামবে সরকারি দল। সোজা কথায় যার অর্থ হচ্ছে, তিনটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কাজই হবে নির্যাতন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।
এই প্রক্রিয়ায় একতরফা কোনো নির্বাচন জায়েজ করতে হলে সরকারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কোনোমতে একটা সার্টিফিকেট জোগাড় করা। তাছাড়া একতরফা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য দেখাতে যে কোনো পন্থায়ই হোক না কেন, ৫১ শতাংশ ভোট পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। ভারতের অন্ধ সমর্থনকে শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সমর্থন আদায়ে জঙ্গি ইস্যুকে আরও ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান প্রমাণ করাটাই হতে হবে সরকারের অন্যতম বহিঃকৌশল। দেশের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত কতটুকু সরকারের হাতে থাকবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। বিগত বিএনপি সরকারও সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েও শেষ রক্ষা পায়নি। ইয়াজউদ্দিন-মঈনউদ্দিন আর জেনারেল মাসুদ তো তাদেরই গুণগ্রাহী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় তো ১৯ জনই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাকশাল মন্ত্রিসভার সদস্য। এই হিসাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো ভুলে গেছেন। এত সতর্কতার পরও যেখানে যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্কাইপ কেলেংকারি বা আগাম রায় ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটতে পারে এবং মন্ত্রীদের পর্যন্ত যেখানে বলতে হয়, ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের লোক মিশে আছে, সেখানে কোথায় কোথায় জামায়াতের লোক মিশে আছে তা কি সরকার জানে?
সরকারের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কঠিন জায়গাটি হচ্ছে নিজ জোটের বড়-ছোট দলগুলোকে যে কোনো মূল্যে নিজেদের আয়ত্তে রাখা। কিন্তু মহাজোটের মধ্যে দৃশ্যমান শরিক দল তো বলতে গেলে একটাই। আর তা হচ্ছে এরশাদের জাতীয় পার্টি। কিন্তু এরশাদ সাহেব তো প্রায় প্রতিদিনই মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। তাই তাদের মহাজোটে থাকার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। এর মধ্যে সরকার সমর্থক বাম দলগুলো রামপাল ইস্যুতে ইতিমধ্যেই সরকারকে লালকার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। শুধু ইনু আর দীলিপ বড়–য়ার ওপর ভর দিয়ে কি আর জোট টেকানো যাবে?
বাকি রইল গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতারের ভয় সবার মনেই রয়েছে। মুখে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না এখন। ক’দিন আগে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েদের নামে পোস্ট দেয়ার অপরাধে। যে কাউকে এই আইনে গ্রেফতার করতে এখন আর পুলিশের জন্য কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। আমার দেশ, দিগন্ত, ইসলামিক টিভি কিংবা আদিলুর রহমান বা মাহমুদুর রহমানের পরিণতি কারও হয়তো কাম্য নয়। কিন্তু ২৫ অক্টোবরের পর নির্যাতনকালীন গণমাধ্যম যে ঘুরে দাঁড়াবে না, তার নিশ্চয়তা সরকার দিতে পারবে কি? প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেনই, রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে টিভিগুলোতে টকশোর নামে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু হয়ে যায়। তাই তিনি ওই সময়ে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু এটা হয়তো তিনি সত্যি সত্যি মিন করেননি। তবে নির্যাতনকালীন সময়ে টকশোর ওপরে সর্বপ্রথম কালো নিষেধাজ্ঞা বা অলিখিত সেন্সর যে আসবে না তা বলা কঠিন।
তাহলে কী হতে পারে সামনের দিনগুলোতে? সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল হিসেবে দেশে সংঘাত সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে ব্যবহার করে সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়ে সংবিধানের মৌলিক অধিকার স্থগিত করে ব্যাপক নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হতে পারে। কিংবা সরকার যদি তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই ফেলে, তখন পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী আইন-শৃংখলার মারাত্মক অবনতি ঘটিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করে তাদের দিয়ে চালানো হতে পারে নির্যাতনের স্টিম রোলার। তাই এককথায় বলা যায়, আলোচনায় সমঝোতা হলে হয়তো আমরা একটা প্রত্যাশিত নির্বাচনকালীন সরকারের দেখা পাব। অন্যথায় সংঘাতের বিনিময়ে শুধুই পাব নির্যাতনকালীন সরকার। কারণ যুগে যুগে একরোখা জনবিচ্যুত সরকারগুলো টিকে থাকতে এমন মরণ কামড়ই দিয়ে থাকে।
ড. তুহিন মালিক : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই ১৬০০ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে রেখেছে। সঙ্গে পুলিশ-বিডিআর আর লগি-বৈঠা বাহিনী তো প্রস্তুত আছেই। বোঝাই যাচ্ছে, সমঝোতার উদ্যোগ তিরোহিত। আর সংঘাত অতি আসন্ন। মাননীয় মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সোজাসাপ্টাই বলে দিয়েছেন, যারা হরতাল করবে তাদের ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করা হলে তা হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এসব আলটিমেটাম আর রাজনীতির অংকশাস্ত্রে ২৫ অক্টোবরের পরে দেশে ‘কেয়ামত’ হবে বলে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মাদ নাসিম বলেছেন, কেয়ামত হয়ে গেলেও তারা নির্বাচন করে ফেলবেন। ইহলোকের রাজনৈতিক সংঘাত এখন কেয়ামত পর্যন্ত পৌঁছে গেছে! তবে নাসিম সাহেবের কথা না শুনলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। নাসিম সাহেবের নির্দেশমতো তারা নিজেদের কপালে দুঃখ কেন অহেতুক টেনে আনতে যাবেন?
দুঃখ শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের কপালে একা আসবে না। রিকশাওয়ালা-দিনমজুর থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিশুদের জীবন পর্যন্ত প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। একতরফা নির্বাচন করে ফেলা, নির্বাচন বানচালকারীদের প্রতিহত করা এবং নির্বাচনের পর বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় টিকে থাকা- মোটা দাগে এই তিনটি কৌশল নিয়ে মাঠে নামবে সরকারি দল। সোজা কথায় যার অর্থ হচ্ছে, তিনটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কাজই হবে নির্যাতন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।
এই প্রক্রিয়ায় একতরফা কোনো নির্বাচন জায়েজ করতে হলে সরকারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কোনোমতে একটা সার্টিফিকেট জোগাড় করা। তাছাড়া একতরফা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য দেখাতে যে কোনো পন্থায়ই হোক না কেন, ৫১ শতাংশ ভোট পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। ভারতের অন্ধ সমর্থনকে শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সমর্থন আদায়ে জঙ্গি ইস্যুকে আরও ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান প্রমাণ করাটাই হতে হবে সরকারের অন্যতম বহিঃকৌশল। দেশের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত কতটুকু সরকারের হাতে থাকবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। বিগত বিএনপি সরকারও সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েও শেষ রক্ষা পায়নি। ইয়াজউদ্দিন-মঈনউদ্দিন আর জেনারেল মাসুদ তো তাদেরই গুণগ্রাহী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় তো ১৯ জনই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাকশাল মন্ত্রিসভার সদস্য। এই হিসাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো ভুলে গেছেন। এত সতর্কতার পরও যেখানে যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্কাইপ কেলেংকারি বা আগাম রায় ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটতে পারে এবং মন্ত্রীদের পর্যন্ত যেখানে বলতে হয়, ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের লোক মিশে আছে, সেখানে কোথায় কোথায় জামায়াতের লোক মিশে আছে তা কি সরকার জানে?
সরকারের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কঠিন জায়গাটি হচ্ছে নিজ জোটের বড়-ছোট দলগুলোকে যে কোনো মূল্যে নিজেদের আয়ত্তে রাখা। কিন্তু মহাজোটের মধ্যে দৃশ্যমান শরিক দল তো বলতে গেলে একটাই। আর তা হচ্ছে এরশাদের জাতীয় পার্টি। কিন্তু এরশাদ সাহেব তো প্রায় প্রতিদিনই মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। তাই তাদের মহাজোটে থাকার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। এর মধ্যে সরকার সমর্থক বাম দলগুলো রামপাল ইস্যুতে ইতিমধ্যেই সরকারকে লালকার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। শুধু ইনু আর দীলিপ বড়–য়ার ওপর ভর দিয়ে কি আর জোট টেকানো যাবে?
বাকি রইল গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতারের ভয় সবার মনেই রয়েছে। মুখে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না এখন। ক’দিন আগে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েদের নামে পোস্ট দেয়ার অপরাধে। যে কাউকে এই আইনে গ্রেফতার করতে এখন আর পুলিশের জন্য কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। আমার দেশ, দিগন্ত, ইসলামিক টিভি কিংবা আদিলুর রহমান বা মাহমুদুর রহমানের পরিণতি কারও হয়তো কাম্য নয়। কিন্তু ২৫ অক্টোবরের পর নির্যাতনকালীন গণমাধ্যম যে ঘুরে দাঁড়াবে না, তার নিশ্চয়তা সরকার দিতে পারবে কি? প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেনই, রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে টিভিগুলোতে টকশোর নামে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু হয়ে যায়। তাই তিনি ওই সময়ে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু এটা হয়তো তিনি সত্যি সত্যি মিন করেননি। তবে নির্যাতনকালীন সময়ে টকশোর ওপরে সর্বপ্রথম কালো নিষেধাজ্ঞা বা অলিখিত সেন্সর যে আসবে না তা বলা কঠিন।
তাহলে কী হতে পারে সামনের দিনগুলোতে? সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল হিসেবে দেশে সংঘাত সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে ব্যবহার করে সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়ে সংবিধানের মৌলিক অধিকার স্থগিত করে ব্যাপক নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হতে পারে। কিংবা সরকার যদি তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই ফেলে, তখন পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী আইন-শৃংখলার মারাত্মক অবনতি ঘটিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করে তাদের দিয়ে চালানো হতে পারে নির্যাতনের স্টিম রোলার। তাই এককথায় বলা যায়, আলোচনায় সমঝোতা হলে হয়তো আমরা একটা প্রত্যাশিত নির্বাচনকালীন সরকারের দেখা পাব। অন্যথায় সংঘাতের বিনিময়ে শুধুই পাব নির্যাতনকালীন সরকার। কারণ যুগে যুগে একরোখা জনবিচ্যুত সরকারগুলো টিকে থাকতে এমন মরণ কামড়ই দিয়ে থাকে।
ড. তুহিন মালিক : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
No comments