সুড়ঙ্গের অপর প্রান্তে আবছা আলো by আলী ইদ্‌রিস

জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দু’দলের মধ্যে মতানৈক্য, বাগবিতণ্ডা, সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটাকে ক্রান্তিকাল বা সুড়ঙ্গ পারাপার বল্লে ভুল হবে না। সুড়ঙ্গের অপর প্রান্তের আলোটি কখনও জ্বলে উঠে, আবার কখনও নিভে যায়।
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সংলাপের জন্য বিরোধী দলের নেতাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান জনমানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু ঘটনা বিপরীত দিকে মোড় নিল তখনই যখন বিরোধী দলের নেতা সংলাপে আসা তো দূরে থাক, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেন। ঘটনা আরও খারাপের দিকে গেল যখন বিএনপি নেত্রী হেফাজতে ইসলামের পাশে দাঁড়াতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানালেন। এর পরের ঘটনা কাম্য ছিল না। কিন্তু সহিংসতা, সংঘাতই  মৃত্যু অনিবার্য করে তুলে। ২০১৩ সালে অনেক অঘটনের মধ্যেও কিছু কিছু ঘটনা  জন মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে। পয়লা বৈশাখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় একটি উৎসাহ-ব্যঞ্জক ঘটনা। কিন্তু সৌজন্য আর এগোল না। সাভার দুর্ঘটনায় উদ্ধার কার্যের সুবিধার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিরোধী দলের নেতা হরতাল প্রত্যাহার করেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। কি সুন্দর সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতা। আমরা সাধারণ জনগণ শান্তিতে বসবাস করার জন্য এটুকু সৌজন্য, সৌহার্দ্য ও পরস্পর সম্মানবোধ দেখে ধন্য হয়েছিলাম। রানা প্লাজা ধসে মৃত্যুমুখী শাহীনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে উদ্ধারকর্মী আজিজ জীবন দিল। শাহীনার মতো এক অজানা অচেনা তুচ্ছ গার্মেন্টকর্মীকে বাঁচানোর প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু বিবেক ও মানবতাবোধ, অসহায় মানুষের আকুতি আজিজকে জীবন বাজি রেখে শাহীনাকে উদ্ধার করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাই আজিজের মহত্ব আমাদের মনে চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ দেশের রাজনীতির মাঠে এরকম হাজারো আজিজ জন্মগ্রহণ করুক। রানা প্লাজা ধসের  ১৭তম দিনে এক রেশমাকে জীবিত উদ্ধার করা হলো। অলৌকিক এ ঘটনায় অভিভৃত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা উদ্ধারকর্মীদের অভিনন্দন জানালেন এবং ছুটে গেলেন রেশমাকে দেখতে। এখানেও দুই নেত্রীর মানবতার প্রতি অকৃত্রিম দরদ ফুটে উঠে। আমরা জনগণ দেখে আনন্দিত হই, মুগ্ধ হই। এখন আবার সুরঙ্গের অপর প্রান্তে একটি আলোর ঝলক দেখা দিয়েছে। এ দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা, সংঘাত ও সহিংসতা দেখে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকায় চার দিনের সফরে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার সংগে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি মন্তব্য করেছেন যে রাজনৈতিক নেতাদের  মধ্যে এখনই সংলাপ শুরু করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন সংস্থার মহাসচিব বান কি মুন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্টায় বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেন বলেই তিনি  এ দেশে সহিংসতা, হানাহানি দেখতে চান না। অত্যন্ত  সুখের বিষয় যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারও সংলাপের  আহ্বান জানিয়েছেন এবং বিরোধী দলের নেতারা সংলাপে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এমনকি সংলাপের মাধ্যমেই যে সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে  সে আশা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু ১৫ই মে তারিখে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেয়ায় এবং তাদের আর এক নেতাকে গ্রেপ্তার করায়  বিএনপি ১৯শে মে হরতাল ডেকেছে। এর পর কি বিএনপি সংলাপে যোগ দেবে? এছাড়াও জোট সরকারের জনৈক মন্ত্রী ঘোষনা করেছেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন মাননীয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, এ ব্যপারে আপস  করা হবে না। তাহলে মননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিঃশর্ত আহ্বান বড়, না মন্ত্রী মহোদয়ের ভাষ্য অধিক শক্তিশালী, এটা প্রশ্ন-সাপেক্ষ। তাছাড়া সংলাপের জন্য সরকারের  আনুষ্ঠানিক  লিখিত প্রস্তাব যত শিগগিরই পাঠানো হবে তত শিগগিরই বলটি বিএনপির কোর্টে চালান দিয়ে দায়িত্ব তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু শোনা যাচ্ছে সরকারের অভ্যন্তরে এ ব্যপারে এখনও দ্বিমত আছে। আমরা অসহায় জনগণ কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি দুই নেত্রীর মনে প্রকৃত দেশপ্রেম জেগে উঠুক। নির্বাচন খুব দূরে নয়। হরতাল, সহিংতায় ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতির অনেক  ক্ষতি হয়েছে, জনগণের অনেক ভোগান্তি ঘটেছে। এখন প্রয়োজন দুই প্রধান দলের মধ্যে কিছুটা সমঝোতা ও সহনশীলতা। এক মতবিনিময় সভায় সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সমঝোতা  না  হলে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণের গণভোট নেয়া হোক এবং সে অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। সরকার তার  পরামর্শ গ্রহণ করে দেশটিকে বাঁচাতে এবং জনগণকে শান্তি দিতে পারেন।

aliidris446@yahoo.com 

No comments

Powered by Blogger.