বিদ্বেষ উষ্কে দিতে ইন্টারনেটে বিজেপি’র মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা
দু’বছরের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে অবশেষে এসব অন্ধকারের জীবদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন সাথি চতুর্বেদি। অনলাইনে যারা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় ট্রল। আর লেখিকার মতে ভারতের যেসব ট্রলের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হতে হবে তারা হলো: ডান-পন্থী ট্রল।
এরা বিপজ্জনক। এরা যৌনকাতর ও স্ত্রীবিদ্বেষী। এরা মোহাচ্ছন্ন। ভারতের সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে এখন ডানপন্থী ট্রলদের উপচে পড়া ভীড়। এদের সারাদিনের কাজ হলো ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো; সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উষ্কে দেয়া, নারী সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের যৌন হয়রানির এবং বিরোধী রাজনীতিক, সমালোচক ও সরকার বা সরকারি দলের বিরুদ্ধে কথা বলে এমন যে কাউকে হত্যার হুমকি।
তারা যেসব কাজ করছে তা যে দলকে ভালোবেসে করছে তা নয়। দলের আদর্শেও হয়তো তাদের বিশ্বাস নেই। তারা করছে কারণ তাদেরকে তা করতে বলা হয়েছে। তারা এ কাজের জন্য টাকা পাচ্ছে। ট্রলিং হলো তাদের রুটি-রুজির উৎস।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এরা সবাই ওয়াকিফহাল। তারা জানে এই দেশে ভিন্নমত কোনভাবেই সহ্য করা হয় না। শক্তি প্রয়োগ করে তক্ষুনি তা অবদমন করা হয়। কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকার কোনভাবেই সমালোচনা সহ্য করতে পারে না বা প্রমাণসহ সমালোচনার জবাব দেয়ার সাধ্যও তাদের নেই।
চোখের পলকে তথ্য জানা ও জানানোর শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সামাজিক গণমাধ্যম আবির্ভুত হওয়ার পরপরই বিজেপি এর অপার সম্ভাবনাটি বুঝতে পেরেছিলো। একই সঙ্গে তারা এই গণমাধ্যমটি পুঁজি করতে শুরু করে। সাংবাদিক সাথি চতুর্বেদি ঠিক এই কথাটিই বলেছেন তার – আই এম এ ট্রল: ইনসাইড দ্যা সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অব দ্যা বিজেপি’র ডিজিটাল আর্মি (আমি এক ট্রল: বিজেপি’র ডিজিটাল আর্মির গোপন জগতের অন্তপুর) বইয়ে।
লেখিকা দেখিয়েছেন আর কোন রাজনৈতিক দল বা তার সদস্যরা অনলাইনে এতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কিন্তু রাজনৈতিক সচেতনতা, কল্যাণধর্মী কাজ বিস্তারের বদলে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারের বদলে সরকার তার ট্রল বাহিনী দিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
অনলাইনে এই দুষ্ট ট্রলিংয়ের শিকার হয়ে চতুর্বেদি এই জগতের গভীরে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি উদঘাটন করেন কারা এই শক্তি, তাদের কাজের ধরনটিই বা কেমন।
এই প্রবণতার প্রতিটি ‘হ্যাসট্যাগ’ একেকটি গল্প। রাতারাতি জন্ম নেয়া প্রতিটি সাম্প্রদায়িক ইস্যুর পেছনেই একটি সুসংঘবদ্ধ প্রচারণা রয়েছে। লেখিকার এ কাজে বিজেপি’র এই ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ও দুষ্ট প্রচারণা সম্পর্কে একমাত্র সধবি খোসলা নামে এক সাবেক স্বেচ্ছাসেবক প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হন। বিজেপি’র সোস্যাল মিডিয়া সেল-এ তার কাজের অভিজ্ঞতা বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। খোসলা বলেন কিভাবে এই ভার্চুয়াল জগতের বিদ্বেষ বাস্তব জগতকে ছাপিয়ে যায়, আর সহিংসতা উষ্কে দেয়। সরকার তখন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে ট্রল লেখিকার কাছে বিজেপি’র সোস্যাল মিডিয়া ইউনিট নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
চতুর্বেদি ধৈর্য্য নিয়ে ট্রলদের পর্যবেক্ষণ করেন এবং অনলাইনে তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। অতি সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তিনি দেখান কিভাবে বিজেপি এই ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর আশির্বাদপুষ্ট।
প্রাঞ্জল ভাষা ও প্রচুর ছবির কারণে যারা সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে পরিচিত নয় তাদের জন্যও বইটি সহজে পাঠযোগ্য।
সাথি চতুর্বেদি |
পেপারব্যাক, ১৯২ পৃষ্ঠা
প্রকাশ: জানুয়ারি ২০১৭, প্রকাশক: জগন্নাথদেব বুকস
মূল্য: ২৫০ রুপি
No comments