ধ্বংসের পথে ঢাকার যত মোঘল স্থাপনা by শফিক রহমান
হাই
কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ঈদের দিন রাতে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে পুরান ঢাকার
চকবাজারের নানা কারুকার্য সমৃদ্ধ ‘জাহাজ বাড়ি’ খ্যাত দোতলা একটি ভবন।
স্থাপনাটি ব্রিটিশ আমলের (১৮৭০)। কিন্তু একইভাবে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে বা
অযত্ন ও অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঢাকায় মোঘল স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত
স্থাপনাগুলোও। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে অধীনে যে স্থাপনাগুলো আছে
সেগুলোও সঠিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ না করায় মৌলিকত্ব হারিয়েছে মোঘল স্থাপত্য
রীতি।
রাজধানী হিসেবে ঢাকা ৪০০ বছর পার করেছে ২০১০ সালে। মোঘল সুবেদার ইসলাম খাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীই এই ঐতিহ্যের ইতিহাস ধারন করছে। বলা হয়, গোটা ইউরোপে স্থাপত্য কলা ও নির্মাণ শৈলীর জন্য যেমন প্রসিদ্ধ রোমান যুগ তেমনি এই উপমহাদেশের নির্মাণ শৈলীতে সমৃদ্ধ মোঘল আমল। বাংলায় বিশেষ করে ঢাকায়ও যার ছোঁয়া লেগেছিল। ঢাকায় লাহোরের হুমায়ুন শাহী মসজিদ কিংবা তাজমহলের মতো মিনার সম্বলিত কোন স্থাপনা নির্মাণ করা না হলেও এখানকার মাটি, পানি, পরিবেশ-প্রকৃতি, ঝড়-ঘুর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের কথা বিবেচনায় রেখে স্থানীয় উপাদান পোড়া মাটির ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে স্বল্প উচ্চতার মিনার ও গম্বুজ নিয়ে একে একে নির্মাণ হয়েছিল মসজিদ-মন্দির, ভবন, সরাইখানা। সঙ্গে ছিল ঘাট, পুল ইত্যাদি। যার বেশিরভাগের অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলিন হয়ে গেছে। ধারাবাহিক ধ্বংসের মধ্যেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যে কয়টি স্থাপনা আজও মোঘল নীর্মাণ রীতির সাক্ষ্য বহন করছে সেগুলোও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দখল-বেদখলে সচেতনভাবেই ধ্বংস করা হচ্ছে। যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে লালবাগের শাহী মসজিদ।
১৬৭৮ সালে ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে এবং তৎকালীন বাংলার সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহের তত্ত্বাবধানে নির্মিত কিলা আওরঙ্গবাদ বা লালবাগ কেল্লার দক্ষিণের সীমানা প্রাচীরের কয়েক গজের মধ্যে লালবাগ শাহী মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র এবং তৎকালীন ঢাকার উপ-শাসক ফররুখ শিয়ার। কিন্তু বেদখল, বেপরোয়া সংস্কার আর সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানে শুধু বাইরে থেকেই নয় ভেতর থেকেও বোঝার উপায় নেই মসজটি আদৌ মোঘল স্থাপনা কিনা। চওড়া দেয়ালে লাগানো হয়েছে গ্লাস টাইলস, ছাদ-গম্বুজ ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে নতুন করে ছাদ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান মনিটরের পক্ষ থেকে সরেজমিনে দেখতে গেলে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা আদি মসজিদের। খোঁজ নেয়া হয় মসজিদ কম্পাউন্ডের মধ্যেই অবস্থিত মসজিদ পরিচালনা কমিটির কক্ষে। সেখানে তখন গল্প করছিলেন কয়েজন বয়স্ক সদস্য। আদি মসজিদের অস্তিত্ব জানতে চাইলে একজন মাথার ওপর দেয়ালে ঝুলতে থাকা একটি ফটোগ্রাফ দেখিয়ে ঢাকাইয়া উচ্চারণে বললেন, ‘আদি মসজিদের ডিজাইন ওই। আমরা ছাদ ভেঙে ফেলে দিয়েছি। বাইরের সাড়ে চারফুট চওড়া দেয়াল টাইলস দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। মসজিদের মাঝখানে আর্চওয়েসহ দুটি দেয়াল ছিল তা ভেঙ্গে ৮টি পিলার বসানো হয়েছে।’
রাজধানী হিসেবে ঢাকা ৪০০ বছর পার করেছে ২০১০ সালে। মোঘল সুবেদার ইসলাম খাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীই এই ঐতিহ্যের ইতিহাস ধারন করছে। বলা হয়, গোটা ইউরোপে স্থাপত্য কলা ও নির্মাণ শৈলীর জন্য যেমন প্রসিদ্ধ রোমান যুগ তেমনি এই উপমহাদেশের নির্মাণ শৈলীতে সমৃদ্ধ মোঘল আমল। বাংলায় বিশেষ করে ঢাকায়ও যার ছোঁয়া লেগেছিল। ঢাকায় লাহোরের হুমায়ুন শাহী মসজিদ কিংবা তাজমহলের মতো মিনার সম্বলিত কোন স্থাপনা নির্মাণ করা না হলেও এখানকার মাটি, পানি, পরিবেশ-প্রকৃতি, ঝড়-ঘুর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের কথা বিবেচনায় রেখে স্থানীয় উপাদান পোড়া মাটির ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে স্বল্প উচ্চতার মিনার ও গম্বুজ নিয়ে একে একে নির্মাণ হয়েছিল মসজিদ-মন্দির, ভবন, সরাইখানা। সঙ্গে ছিল ঘাট, পুল ইত্যাদি। যার বেশিরভাগের অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলিন হয়ে গেছে। ধারাবাহিক ধ্বংসের মধ্যেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যে কয়টি স্থাপনা আজও মোঘল নীর্মাণ রীতির সাক্ষ্য বহন করছে সেগুলোও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দখল-বেদখলে সচেতনভাবেই ধ্বংস করা হচ্ছে। যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে লালবাগের শাহী মসজিদ।
১৬৭৮ সালে ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে এবং তৎকালীন বাংলার সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহের তত্ত্বাবধানে নির্মিত কিলা আওরঙ্গবাদ বা লালবাগ কেল্লার দক্ষিণের সীমানা প্রাচীরের কয়েক গজের মধ্যে লালবাগ শাহী মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র এবং তৎকালীন ঢাকার উপ-শাসক ফররুখ শিয়ার। কিন্তু বেদখল, বেপরোয়া সংস্কার আর সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানে শুধু বাইরে থেকেই নয় ভেতর থেকেও বোঝার উপায় নেই মসজটি আদৌ মোঘল স্থাপনা কিনা। চওড়া দেয়ালে লাগানো হয়েছে গ্লাস টাইলস, ছাদ-গম্বুজ ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে নতুন করে ছাদ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান মনিটরের পক্ষ থেকে সরেজমিনে দেখতে গেলে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা আদি মসজিদের। খোঁজ নেয়া হয় মসজিদ কম্পাউন্ডের মধ্যেই অবস্থিত মসজিদ পরিচালনা কমিটির কক্ষে। সেখানে তখন গল্প করছিলেন কয়েজন বয়স্ক সদস্য। আদি মসজিদের অস্তিত্ব জানতে চাইলে একজন মাথার ওপর দেয়ালে ঝুলতে থাকা একটি ফটোগ্রাফ দেখিয়ে ঢাকাইয়া উচ্চারণে বললেন, ‘আদি মসজিদের ডিজাইন ওই। আমরা ছাদ ভেঙে ফেলে দিয়েছি। বাইরের সাড়ে চারফুট চওড়া দেয়াল টাইলস দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। মসজিদের মাঝখানে আর্চওয়েসহ দুটি দেয়াল ছিল তা ভেঙ্গে ৮টি পিলার বসানো হয়েছে।’
খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ |
সংস্কারের
নামে ধ্বংসযজ্ঞের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ দেখাতে কক্ষের বাইরে নিয়ে এলেন কমিটির
হিসাব রক্ষক সেলিম বাবু। আসর নামাজ শেষে মাগরিবের জন্য অপেক্ষারত
মুসল্লিদের মাঝখানে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন কোথায় কোথায় ভাঙ্গা হয়েছে।
তাদের এ কাজে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভূমিকা কি ছিল জানতে চাওয়া হলে
হাসি দিয়ে ডান হাত তুলে জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের ভূমিকা ওই দেয়াল পর্যন্ত। ওটা লালবাগ কেল্লার দেয়াল।
তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমরা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে ডেকেছিলাম। তারা আমাদের
কাজে খুশি।’
সেলিম বাবুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মসজিদের মূল ফটকে এসে দাঁড়ালে দেখা গেল টাইলসে মোড়ানো একটি গেট। যেখান ইলেক্ট্রনিক সাইনবোর্ডে বাংলা, ইংরেজি ও আরবী হরফে লেখা মসজিদটির নাম ও পরিচয়। তথ্যের ধারাবাহিকতায় একটু পরেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো প্রতিষ্ঠার সাল ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দ।
১৫০ ফুট দৈর্ঘ এবং ৫৬ ফুট চওড়া এই মসজিদটিকে বলা হয় বাংলায় বিদ্যমান মোঘল মসজিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।
লালবাগ কেল্লার সামনের পথ ধরে পশ্চিম দিকে একটু এগুলে আতশখানা এলাকার রাস্তার পাশেই খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ। ফররুখ শিয়ারের শাসনামলে ১৭০৬ সালে ঢাকার প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই মসজিদটির গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক সাক্ষরিত ‘সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ’ উল্লেখ করা একটি সাইনবোর্ড। যেখানে এই প্রত্নসম্পদের বিকৃতি বা ভেঙ্গে ফেললে, এমনকি এর কোন অংশে দাগ কাটলেও সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যত স্থাপনাটির সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগই তার শর্ত ভঙ্গ করেছে। মসজিদটির আদি স্থাপনার চুন-সুরকির আস্তরের ওপর সিমেন্ট-বালুর পাতলা একটি আস্তর দেয়া হয়েছে। লাল এবং গোলাপির মাঝামাঝি অদ্ভুত একটি রঙ করা হয়েছে। জানালায় লাগানো হয়েছে গ্রীল। যা মোঘল স্থাপনার সঙ্গে শুধু বেমানানই নয় বেখাপ্পাও। যাকে ‘পাকা হাতে কাঁচা কাজ’ বলে অবহিত করেছেন আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এ স্থপতি সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, লালবাগ কেল্লা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সিগনেচার প্রজেক্ট। তার কয়েক গজের মধ্যেই অবস্থিত লালবাগ শাহী মসজিদটিকে খুব বাজেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু মসজিদটির আদি অস্থিত্ব রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কার্যকর কোন ভূমিকা আমরা দেখিনি। একটু দূরের খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদটিকে তারা তালিকাভূক্ত করে সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু দায়সারাভাবে।
সেলিম বাবুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মসজিদের মূল ফটকে এসে দাঁড়ালে দেখা গেল টাইলসে মোড়ানো একটি গেট। যেখান ইলেক্ট্রনিক সাইনবোর্ডে বাংলা, ইংরেজি ও আরবী হরফে লেখা মসজিদটির নাম ও পরিচয়। তথ্যের ধারাবাহিকতায় একটু পরেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো প্রতিষ্ঠার সাল ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দ।
১৫০ ফুট দৈর্ঘ এবং ৫৬ ফুট চওড়া এই মসজিদটিকে বলা হয় বাংলায় বিদ্যমান মোঘল মসজিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।
লালবাগ কেল্লার সামনের পথ ধরে পশ্চিম দিকে একটু এগুলে আতশখানা এলাকার রাস্তার পাশেই খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ। ফররুখ শিয়ারের শাসনামলে ১৭০৬ সালে ঢাকার প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই মসজিদটির গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক সাক্ষরিত ‘সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ’ উল্লেখ করা একটি সাইনবোর্ড। যেখানে এই প্রত্নসম্পদের বিকৃতি বা ভেঙ্গে ফেললে, এমনকি এর কোন অংশে দাগ কাটলেও সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যত স্থাপনাটির সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগই তার শর্ত ভঙ্গ করেছে। মসজিদটির আদি স্থাপনার চুন-সুরকির আস্তরের ওপর সিমেন্ট-বালুর পাতলা একটি আস্তর দেয়া হয়েছে। লাল এবং গোলাপির মাঝামাঝি অদ্ভুত একটি রঙ করা হয়েছে। জানালায় লাগানো হয়েছে গ্রীল। যা মোঘল স্থাপনার সঙ্গে শুধু বেমানানই নয় বেখাপ্পাও। যাকে ‘পাকা হাতে কাঁচা কাজ’ বলে অবহিত করেছেন আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এ স্থপতি সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, লালবাগ কেল্লা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সিগনেচার প্রজেক্ট। তার কয়েক গজের মধ্যেই অবস্থিত লালবাগ শাহী মসজিদটিকে খুব বাজেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু মসজিদটির আদি অস্থিত্ব রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কার্যকর কোন ভূমিকা আমরা দেখিনি। একটু দূরের খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদটিকে তারা তালিকাভূক্ত করে সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু দায়সারাভাবে।
ফ্রেমে বাঁধানো লালবাগ শাহী মসজিদের আসল রূপ |
তিনি
বলেন, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও এলাকা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় হিস্টোরিক্যাল সেটিংস ও
বাফার জোন নিয়ে আমরা কথা বলছি। লালবাগ কেল্লা এলাকায় এই সেটিংসটা নিয়ে কাজ
করা দরকার ছিল। তাহলে এলাকাটির ঐতিহাসিক চরিত্রটা ধরে রাখা যেত। কিন্তু
সরকার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, প্রত্নতত্ত্ব
বিভাগ কাউকেই সেই উদ্যোগটা নিতে দেখিনি।
খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদের স্থাপত্য রীতির মৌলিকত্ব তুলে ধরে তাইমুর ইসলাম বলেন, ১৭ ফুট উচু একটি বেইজের ওপর তিন গম্বুজের এই মসজিদটি নির্মিত। বলা যায় এটা একটি ইউনিক স্টাইল। যে স্টাইলটা আমরা দেখতে পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের মধ্যে অবস্থিত মুসা খাঁর মসজিদে, আজিমপুর এতিমখানার মধ্যে গোর শহীদ এতিমখানা মসজিদে এবং আজিমপুর গোরস্থানের পাশের মসজিদটিতে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আজিমপুর গোরস্থানের পাশের মসজিদটি ভাঙ্গা শুরু করলে অনেক হৈ চৈ করে আটকানো হলো।
১৭৪৬ সালে নির্মিত আজিমপুর শাহী মসজিদ খ্যাত ওই মসজিদটি ২০১৭ সালে ভাঙ্গা শুরু হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে ভাঙ্গা হয় পুরান ঢাকার উমেশ চন্দ্র দত্ত লেন ও হায়দার বকশ লেনের মুখে অবস্থিত প্রাচীন চুড়িহাট্টা মসজিদটি। ২০১৪ সালে ভাঙ্গা হয় আরমানিটোলার কে পি ঘোষ রোডের হিঙ্গা বিবি মসজিদটি।
এদিকে মোঘল আমলের স্থাপনা দখল-বেদখল আর ধ্বংসের তালিকায় আরও রয়েছে নলগোলা শাহী মসজিদ। নতুন নতুন স্থাপনায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ফলে বাইরে থেকে মসজিদটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বুড়িগঙ্গার তীরে নির্মিত এই মসজিদটিকে মোহাম্মদপুরের সাত গম্বুজ মসজিদের ‘আইডেনটিক্যাল’ উল্লেখ করে তাইমুর ইসলাম বলেন, নদীর তীরে চমৎকার একটি পরিবেশে এটি নির্মিত হয়েছিল। যেখানে সকালে-বিকেলে বসে থাকলে অসাধারণ একটি ফিলিংস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দখল-বেদখলে সব হারিয়ে গেছে।
মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায় ১৬৮০ সালে মোঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর ছেলে উমিদ খাঁর তত্ত্বাবধানে নির্মিত সাত গম্বুজ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষণে থাকলেও নতুন স্থাপনায় চারদিক থেকে ঢেকে ফেলা হয়েছে। যা প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আইনেরও পরিপন্থী।
খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদের স্থাপত্য রীতির মৌলিকত্ব তুলে ধরে তাইমুর ইসলাম বলেন, ১৭ ফুট উচু একটি বেইজের ওপর তিন গম্বুজের এই মসজিদটি নির্মিত। বলা যায় এটা একটি ইউনিক স্টাইল। যে স্টাইলটা আমরা দেখতে পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের মধ্যে অবস্থিত মুসা খাঁর মসজিদে, আজিমপুর এতিমখানার মধ্যে গোর শহীদ এতিমখানা মসজিদে এবং আজিমপুর গোরস্থানের পাশের মসজিদটিতে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আজিমপুর গোরস্থানের পাশের মসজিদটি ভাঙ্গা শুরু করলে অনেক হৈ চৈ করে আটকানো হলো।
১৭৪৬ সালে নির্মিত আজিমপুর শাহী মসজিদ খ্যাত ওই মসজিদটি ২০১৭ সালে ভাঙ্গা শুরু হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে ভাঙ্গা হয় পুরান ঢাকার উমেশ চন্দ্র দত্ত লেন ও হায়দার বকশ লেনের মুখে অবস্থিত প্রাচীন চুড়িহাট্টা মসজিদটি। ২০১৪ সালে ভাঙ্গা হয় আরমানিটোলার কে পি ঘোষ রোডের হিঙ্গা বিবি মসজিদটি।
এদিকে মোঘল আমলের স্থাপনা দখল-বেদখল আর ধ্বংসের তালিকায় আরও রয়েছে নলগোলা শাহী মসজিদ। নতুন নতুন স্থাপনায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ফলে বাইরে থেকে মসজিদটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বুড়িগঙ্গার তীরে নির্মিত এই মসজিদটিকে মোহাম্মদপুরের সাত গম্বুজ মসজিদের ‘আইডেনটিক্যাল’ উল্লেখ করে তাইমুর ইসলাম বলেন, নদীর তীরে চমৎকার একটি পরিবেশে এটি নির্মিত হয়েছিল। যেখানে সকালে-বিকেলে বসে থাকলে অসাধারণ একটি ফিলিংস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দখল-বেদখলে সব হারিয়ে গেছে।
মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায় ১৬৮০ সালে মোঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর ছেলে উমিদ খাঁর তত্ত্বাবধানে নির্মিত সাত গম্বুজ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষণে থাকলেও নতুন স্থাপনায় চারদিক থেকে ঢেকে ফেলা হয়েছে। যা প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আইনেরও পরিপন্থী।
সংস্কারের পর বর্তমান লালবাগ শাহী মসজিদের অভ্যন্তরভাগ |
এদিকে
বাবুবাজার এলাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছনে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে
অবস্থিত শায়েস্তা খাঁর মসজিদও একইভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। মসজিদটির
কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উপরে একটি ফারসি শিলালিপি দেখা যায়। গবেষকরা
বলছেন, শিলালিপি অনুযায়ী সুবেদার শায়েস্তা খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে
নির্মাণ তারিখ এবং শিলালিপির অন্য শব্দগুলোর পাঠোদ্ধার সম্ভব হয় নি। তা
সত্ত্বেও শায়েস্তা খাঁর প্রথম সুবেদারিকালে (১৬৬৩-১৬৭৮) মসজিদটি নির্মিত
হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি শায়েস্তা খাঁর প্রাসাদ এলাকার ভেতরে
অবস্থিত ছিল। তাইমুর ইসলাম বলেন, মোঘল স্থাপনায় শায়েস্তা খাঁ রীতি বলে একটি
স্থাপত্য রীতি আমরা দেখতে পাই। মসজিদটিতে সেই শায়েস্তা খাঁ রীতিতো পাওয়াই
যায় না এমনকি মোঘল স্থাপনা বলে চেনাটাও মুসকিল।
ধ্বংসের পথে ঢাকার দুটি পান্থশালাও
এদিকে অযত্ন-অবহেলা আর দখল-বেদখলে ধ্বংসের পথে ঢাকার দুটি পান্থশালাও। স্থানীয়ভাবে ‘কাটরা’ (বড় কাটরা ও ছোট কাটরা) হিসেবে পরিচিত এ স্থাপনা দুটি ঢাকায় মোঘল যুগের সূচনার চার থেকে পাঁচ দশকের মাথায় বুড়িগঙ্গা নদির তীর ঘেষে দক্ষিণমুখী করে নির্মাণ করা হয়। নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা চারদিক থেকে যেমন স্থাপনা দুটির গলা টিপে ধরেছে তেমনি ভবনের মধ্যেও চেপে বসেছে দখলদাররা।
বড় কাটরা ১৬৪৪ সালে নির্মিত হয় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সুবেদার শাহ সুজার নির্দেশে। নির্মাণ করেন তারই প্রধান স্থপতি (মীর-ই-ইমারত) মীর মুহম্মদ আবুল কাসেম। বলা হয়, প্রথমে এটি প্রাসাদ হিসেবে নির্মিত হয় এবং এখানে শাহ সুজার বসবাস করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি এখানে থাকেননি। পরে এটি পান্থশালায় রূপান্তর করা হয়।
বড় কাটরায় ফারসি ভাষায় লিখিত দুটি শিলালিপির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর একটিতে ভবনটির নির্মাণ সাল হিসেবে ১৬৪৪ সাল উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটিতে স্থাপনাটির নির্মাতা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্বাহের উপায় হিসেবে ২২টি দোকান ঘর থেকে আয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ফলকে উল্লেখ করা দোকান কাঠামোগুলো বড় কাটরায় এখনও আছে কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়েছে সেলুন, খাবারের দোকান, মুদি দোকান, এম্ব্রয়ডারি কারখানাসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাতে হারিয়ে যাচ্ছে মোঘল স্থাপত্য কলার নির্মাণ শৈলী।
ধ্বংসের পথে ঢাকার দুটি পান্থশালাও
এদিকে অযত্ন-অবহেলা আর দখল-বেদখলে ধ্বংসের পথে ঢাকার দুটি পান্থশালাও। স্থানীয়ভাবে ‘কাটরা’ (বড় কাটরা ও ছোট কাটরা) হিসেবে পরিচিত এ স্থাপনা দুটি ঢাকায় মোঘল যুগের সূচনার চার থেকে পাঁচ দশকের মাথায় বুড়িগঙ্গা নদির তীর ঘেষে দক্ষিণমুখী করে নির্মাণ করা হয়। নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা চারদিক থেকে যেমন স্থাপনা দুটির গলা টিপে ধরেছে তেমনি ভবনের মধ্যেও চেপে বসেছে দখলদাররা।
বড় কাটরা ১৬৪৪ সালে নির্মিত হয় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সুবেদার শাহ সুজার নির্দেশে। নির্মাণ করেন তারই প্রধান স্থপতি (মীর-ই-ইমারত) মীর মুহম্মদ আবুল কাসেম। বলা হয়, প্রথমে এটি প্রাসাদ হিসেবে নির্মিত হয় এবং এখানে শাহ সুজার বসবাস করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি এখানে থাকেননি। পরে এটি পান্থশালায় রূপান্তর করা হয়।
বড় কাটরায় ফারসি ভাষায় লিখিত দুটি শিলালিপির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর একটিতে ভবনটির নির্মাণ সাল হিসেবে ১৬৪৪ সাল উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটিতে স্থাপনাটির নির্মাতা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্বাহের উপায় হিসেবে ২২টি দোকান ঘর থেকে আয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ফলকে উল্লেখ করা দোকান কাঠামোগুলো বড় কাটরায় এখনও আছে কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়েছে সেলুন, খাবারের দোকান, মুদি দোকান, এম্ব্রয়ডারি কারখানাসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাতে হারিয়ে যাচ্ছে মোঘল স্থাপত্য কলার নির্মাণ শৈলী।
সাত গম্বুজ মসজিদ |
বড়
কাটরার উত্তরাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। পূর্ব ও পশ্চিমাংশের সামান্য কিছু
এখনও আছে। দক্ষিণাংশের কাঠামো এখনও আছে। দক্ষিণাংশের দৈর্ঘ ৬৭.৯৭ মিটার। এ
অংশের মাঝখানে রয়েছে তিন তলা গেট হাউজ।
গেট হাউজের নিচ তলায় দুই পাশে চারটি করে মোট ৮টি বিশাল আকারের চেম্বার রয়েছে। যেগুলোতেও রয়েছে মোঘল স্থাপত্য রীতির ফোর পয়েন্ট আর্চের অনুকরণে পয়েন্টেড ভল্ট। যে চেম্বারগুলোর উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট এবং প্রতিটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রায় ৬০ ও ৫০ ফুট। যেগুলোতে বর্তমানে সাদা পলেস্তরা করা হয়েছে। উভয় দিকেরই শেষ দুটি কক্ষ থেকে উত্তর দিকের কিছু অংশ কেটে নিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে ১টি করে আলাদা কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া বড় কাটরার মূল কাঠামো জুড়ে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলূম বড় কাটারা নামের মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের দাবি, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকায় বড় কাটরার অবয়বটা এখনও আছে। না হলে এটির অবস্থা ছোট কাটরার চেয়েও খারাপ হতো।’
বড় কাটরা হতে প্রায় ১৮৩ মি. পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে শায়েস্তা খাঁর সময় নির্মিত হয়েছিল ছোট কাটরা। ১৬৬৩ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৬৬৬ সালের দিকে শেষ হয়।
বড় কাটরার সঙ্গে ছোট কাটরার নির্মাণ শৈলীর পার্থক্য টেনে তাইমুর ইসলাম বলেন, বড় কাটরার প্রত্যেকটি চেম্বারে যেমন পয়েন্টেড ভল্ট পাওয়া যায় ছোট কাটরায় সেগুলো পাওয়া যায় না। সেখান স্লিংটা ফ্লাট আর কর্ণারগুলো কার্ভ করা। যাকে ‘শায়েস্তা খাঁ স্টাইল’ হিসেবেই উল্লেখ করলেন স্থপতি তাইমুর ইসলাম।
কিন্তু দখল আর বেদখলে ছোট কাটরার অস্তিত্ব আজ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। চারদিকেই রয়েছে নানা ধরনের স্থাপনা। এসব ঠেলে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে উত্তর ও দক্ষিণ অংশে রয়েছে দুটি প্রবেশপথ। এর মধ্যে দক্ষিণেরটি প্রধান গেট হাউজ। সম্প্রতি ওই তিন তলা গেট হাউজের ভাঙ্গা-নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা গেল দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। তিন তলায় রয়েছে ‘সাপ লুডু’ তৈরির কারখানা। এছাড়া নিচ তলাও রয়েছে ভাঙ্গারির দোকানসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তবে শুধু বিশেষ স্থাপনা নয় পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লার আবাসিক ভবনেও শায়েস্তা খাঁর নির্মাণ রীতির নিদর্শনের কথা জানালেন তাইমুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখনও হাজারিবাগ, নবাবপুর, পান্নিটোলা, তাঁতিবাজার, শাখারিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওই নমুনাটা আমরা দেখতে পাই। জোর গলায় বলা যায় শাখারিবাজারের ৩০/৪০টি বাড়িতে ওর নমুনা এখনও আছে।’ বিশেষ ভাবে তিনি উল্লেখ করেন শাখারিবাজারের ৯, ১৫, ২৩, ৩০, ৬২-৬৩, ১২৫, ১২৬, ১২৭ ও ১৩৫ নং ভবনের কথা। কিন্তু অযত্ন, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে সব নিদর্শনই হারিয়ে যাচ্ছে। তাইমুর ইসলাম বলেন, আরবান স্টাডি গ্রুপের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ২০১৭ সালে পুরান ঢাকার ২২০০ ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপনার ধ্বংস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রায়ে অবিলম্বে এই বভনগুলোকে এসেসমেন্ট করে তালিভূক্ত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং প্রতি তিন মাস অন্তর অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে । কিন্তু আদালতের ওই আদেশও বাস্তবায়নের কোন উদ্যেগ আমরা দেখছি না। সেটা যেমন আদালতের রায়ের বরখেলাপ তেমনি রায়কে অমান্য করেই ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ভবনগুলোক। ধ্বংস করা হচ্ছে ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহ।
ঘাট ও পুল
ঢাকায় মোঘল আমলে নির্মিত ২২টি ব্রিজ বা পুলের তথ্য জানান তাইমুর ইসলাম। তিনি বলেন, সর্বশেষ আমাদের দেখা পুলটি ছিল বর্তমানের এলিফ্যান্ট রোডের হাতিরপুলটি। বাকিগুলো এর আনেক আগেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। আর ঘাট প্রসঙ্গে চাঁদনিঘাটের কথা উল্লেখ করেন তাইমুর ইসলাম। তিনি বলেন, চাঁদনিঘাটে থাকতো ইসলাম খাঁর বজরা। আর অশ্বারোহীদের জন্য ছিল আলাদা ঘাট। যার নাম ছিল সোয়ারী ঘাট। ইতিহাসের সেই খ্যাতি ছাপিয়ে সোয়ারী ঘাটকেন্দ্রীক মাছের বড় পাইকারি বাজারের খ্যাতিই এখন সবার মুখে মুখে।
গেট হাউজের নিচ তলায় দুই পাশে চারটি করে মোট ৮টি বিশাল আকারের চেম্বার রয়েছে। যেগুলোতেও রয়েছে মোঘল স্থাপত্য রীতির ফোর পয়েন্ট আর্চের অনুকরণে পয়েন্টেড ভল্ট। যে চেম্বারগুলোর উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট এবং প্রতিটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রায় ৬০ ও ৫০ ফুট। যেগুলোতে বর্তমানে সাদা পলেস্তরা করা হয়েছে। উভয় দিকেরই শেষ দুটি কক্ষ থেকে উত্তর দিকের কিছু অংশ কেটে নিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে ১টি করে আলাদা কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া বড় কাটরার মূল কাঠামো জুড়ে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলূম বড় কাটারা নামের মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের দাবি, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকায় বড় কাটরার অবয়বটা এখনও আছে। না হলে এটির অবস্থা ছোট কাটরার চেয়েও খারাপ হতো।’
বড় কাটরা হতে প্রায় ১৮৩ মি. পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে শায়েস্তা খাঁর সময় নির্মিত হয়েছিল ছোট কাটরা। ১৬৬৩ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৬৬৬ সালের দিকে শেষ হয়।
বড় কাটরার সঙ্গে ছোট কাটরার নির্মাণ শৈলীর পার্থক্য টেনে তাইমুর ইসলাম বলেন, বড় কাটরার প্রত্যেকটি চেম্বারে যেমন পয়েন্টেড ভল্ট পাওয়া যায় ছোট কাটরায় সেগুলো পাওয়া যায় না। সেখান স্লিংটা ফ্লাট আর কর্ণারগুলো কার্ভ করা। যাকে ‘শায়েস্তা খাঁ স্টাইল’ হিসেবেই উল্লেখ করলেন স্থপতি তাইমুর ইসলাম।
কিন্তু দখল আর বেদখলে ছোট কাটরার অস্তিত্ব আজ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। চারদিকেই রয়েছে নানা ধরনের স্থাপনা। এসব ঠেলে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে উত্তর ও দক্ষিণ অংশে রয়েছে দুটি প্রবেশপথ। এর মধ্যে দক্ষিণেরটি প্রধান গেট হাউজ। সম্প্রতি ওই তিন তলা গেট হাউজের ভাঙ্গা-নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা গেল দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। তিন তলায় রয়েছে ‘সাপ লুডু’ তৈরির কারখানা। এছাড়া নিচ তলাও রয়েছে ভাঙ্গারির দোকানসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তবে শুধু বিশেষ স্থাপনা নয় পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লার আবাসিক ভবনেও শায়েস্তা খাঁর নির্মাণ রীতির নিদর্শনের কথা জানালেন তাইমুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখনও হাজারিবাগ, নবাবপুর, পান্নিটোলা, তাঁতিবাজার, শাখারিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওই নমুনাটা আমরা দেখতে পাই। জোর গলায় বলা যায় শাখারিবাজারের ৩০/৪০টি বাড়িতে ওর নমুনা এখনও আছে।’ বিশেষ ভাবে তিনি উল্লেখ করেন শাখারিবাজারের ৯, ১৫, ২৩, ৩০, ৬২-৬৩, ১২৫, ১২৬, ১২৭ ও ১৩৫ নং ভবনের কথা। কিন্তু অযত্ন, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে সব নিদর্শনই হারিয়ে যাচ্ছে। তাইমুর ইসলাম বলেন, আরবান স্টাডি গ্রুপের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ২০১৭ সালে পুরান ঢাকার ২২০০ ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপনার ধ্বংস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রায়ে অবিলম্বে এই বভনগুলোকে এসেসমেন্ট করে তালিভূক্ত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং প্রতি তিন মাস অন্তর অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে । কিন্তু আদালতের ওই আদেশও বাস্তবায়নের কোন উদ্যেগ আমরা দেখছি না। সেটা যেমন আদালতের রায়ের বরখেলাপ তেমনি রায়কে অমান্য করেই ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ভবনগুলোক। ধ্বংস করা হচ্ছে ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহ।
ঘাট ও পুল
ঢাকায় মোঘল আমলে নির্মিত ২২টি ব্রিজ বা পুলের তথ্য জানান তাইমুর ইসলাম। তিনি বলেন, সর্বশেষ আমাদের দেখা পুলটি ছিল বর্তমানের এলিফ্যান্ট রোডের হাতিরপুলটি। বাকিগুলো এর আনেক আগেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। আর ঘাট প্রসঙ্গে চাঁদনিঘাটের কথা উল্লেখ করেন তাইমুর ইসলাম। তিনি বলেন, চাঁদনিঘাটে থাকতো ইসলাম খাঁর বজরা। আর অশ্বারোহীদের জন্য ছিল আলাদা ঘাট। যার নাম ছিল সোয়ারী ঘাট। ইতিহাসের সেই খ্যাতি ছাপিয়ে সোয়ারী ঘাটকেন্দ্রীক মাছের বড় পাইকারি বাজারের খ্যাতিই এখন সবার মুখে মুখে।
No comments