আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইসির অধীনে আনা উচিত

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইসির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আনা দরকার  বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গতকাল রিটার্নিং অফিসারদের প্রতি দিকনির্দেশনা প্রদানকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন মাহবুব তালুকদার।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রথম বিষয় হচ্ছে নিশ্চয়তা। এটা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা। এই নিশ্চয়তার অর্থ ভোটার ও রাজনৈতিক দলের আস্থার সৃষ্টি। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে নিরপেক্ষতা। নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান ও কার্যক্রম চালানোর প্রতিশ্রুতি কমিশনের পক্ষে এই নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা।
এই নিরাপত্তা ভোটার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকরভাবে নির্বাচনকালে কমিশনে প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা দরকার। চতুর্থ বিষয় হচ্ছে নিয়মনীতি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর বিধি-বিধান প্রতিপালনের আওতায় আনা প্রয়োজন। পঞ্চম বিষয়টি হলো নিয়ন্ত্রণ। নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। স্বনিয়ন্ত্রণই নির্বাচন কমিশনের মূল কথা। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নিশ্চয়তা, নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা, নিয়ম-নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, আপনারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আপনাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের সঙ্গে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা জড়িত। নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একজন বিচারকের মতো নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে আমরা যে শপথ নিয়েছি আপনারা আমাদের সেই শপথের অংশীদার। কারণ আপনাদের মাধ্যমে আমাদের শপথ বাস্তবায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনাদের কাজের কোনো ব্যত্যয় ঘটার অবকাশ নেই।
তিনি বলেন, ভোট জনগণের পবিত্র আমানত। সে আমানত আপনাদের কাছে রক্ষিত। জনগণের আমানত যাতে খেয়ানত না হয় তার দায়িত্ব আপনাদের। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটারদের ভোটের আমানত ফিরিয়ে দিতে হবে। একজন ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্বীয় ইচ্ছে অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে- এই নিশ্চয়তা দিতে না পারলে জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের এবারের নির্বাচন আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। আমরা কোনোভাবেই এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দিতে পারি না। এজন্য আমরা শূন্য সহিষ্ণু নীতি বা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার শিথিলতা আমরা বরদাশত করবো না।
নির্বাচনে গাফিলতির জন্য যে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে তা প্রয়োগ করতে আমরা মোটেই দ্বিধা করবো না। কমিশনার মাহবুব তালুকদারদের রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, নির্বাচনী কাজে আপনারা ১৬ কোটি মানুষের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি ও আইনকানুনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি চাকরি করলেও আপনাদের এখন দায়িত্ব পালনে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এই মুহূর্তে আপনাদের আনুগত্য কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনের প্রতি। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য হবে এই প্রত্যাশায় সমগ্র জাতি আজ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে ৫ দফা প্রস্তাব রেখেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। প্রস্তাবে তিনি বলেন, সংলাপের সুপারিশে অংশীজনের অনেকে নির্বাচনকালে সার্বিকভাবে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে বলেছেন। কেউ কেউ অর্থ, তথ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনার সুপারিশ করেছেন। বিষয়টি বিতর্কমূলক, সন্দেহ নেই। তবে আমার মনে হয় বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। নির্বাচন কমিশনের কাছে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পিত হলে নির্বাচনে জনগণের আস্থা বেড়ে যাবে এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে তা সহায়ক হবে।

No comments

Powered by Blogger.