নোবেল বিজয়ীর শাসনেও রোহিঙ্গা নিশ্চিহ্নকরণ চলবে? by মঈনুল আলম
শান্তির
জন্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ
নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে মিয়ানমারের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার পর কি
হতভাগ্য রোহিঙ্গা মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর ওপর চরম নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটবে?
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা এটা আশা করতে পারছেন না।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের উপসম্পাদকীয় কলামে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এবার একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর শাসনাধীনে বন্দিশিবিরে রাখা রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার অবিশ্বাস্য দৃশ্য হয়তো বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে!
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গার ওপর যে চরম নির্যাতন চলছে, তাকে ‘জাতিগোষ্ঠী নিধন’ (জেনোসাইড) বলে অভিহিত করা যায়। নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘এটাকে (এই নির্যাতনকে) ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন’-এর অধীনে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে পরিগণিত করা যাবে।’’
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় (১৬ জানুয়ারি, ২০১৬) ‘মিয়ানমারের অমানবিক অপরাধ’ শিরোনামে এক বিশ্লেষণধর্মী উপসম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে : ‘অং সান সু চি (রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে) বর্ণবাদের এই মিয়ানমার সংস্করণ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। কারণ (নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হলেও) তিনি এখন একজন রাজনীতিবিদ এবং রোহিঙ্গাদের মতো এক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাওয়া তার বেশির ভাগ বৌদ্ধ ভোটারের কাছে অতি প্রিয় কর্মকাণ্ড।’
মিয়ানমারে ৬৭টি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে (বন্দিশিবিরে) বহু রোহিঙ্গা মুসলিমকে আটক করে রাখা হয়েছে। এক একটি বৃহৎ বন্দিশিবিরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আটক রয়েছে। সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার সব অধিকারই বাতিল করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবাধে চলাফেরা করার অধিকারও বাতিল করা হয়েছে।
বন্দী হওয়ার আগে অনেক সঙ্গতিসম্পন্ন রোহিঙ্গা পরিবারের ব্যাংকে ভালো অঙ্কের সঞ্চয় ছিল। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বন্দিশিবিরে আটক থাকার পর তাদের পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থে তারা হাত দিতে পারছে না।
রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নির্যাতনের ব্যাপারে বিশ্বে সামান্যই প্রতিবাদ উঠছে! এর প্রধান কারণ, মিয়ানমার সরকার বিদেশী সাহায্য সংস্থা এবং সাংবাদিকদের জন্য রোহিঙ্গাদের কাছে যাওয়া দুঃসাধ্য করে রেখেছে।
মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের কার্যকলাপ অচল হয়ে পড়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক নিকোলাস ক্রিস্টফ মিয়ানমার সফরকালে জাতিসঙ্ঘের সমালোচকের এক গোপন দলিল দেখেছেন। এ দলিলে জাতিসঙ্ঘকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে কর্মরত জাতিসঙ্ঘের কর্মচারীরা এক অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে। ফলে ‘মিয়ানমারের এই সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতিসঙ্ঘের হাত রয়েছে কি না, এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে’।
এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ, ফর্টিফাই রাইটস এবং ইউনাইটেড টু এন্ড জেনোসাইডসহ কিছু মানবাধিকার সুরক্ষা সংস্থা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অব্যাহত চরম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর শুধু নির্যাতনই চালাচ্ছে না, রোহিঙ্গা নামে কোনো জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমারে নেই- এই দাবি করে সরকার তাদের অস্তিত্বই মুছে ফেলার অপচেষ্টায় নেমেছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখই করে না। সরকার দাবি করে যে, এরা বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বৈ তো নয়। এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন দলিলপত্রে রোহিঙ্গাদের উল্লেখ রয়েছে।
নভেম্ব^রে সরকার পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে উল্লেখ করে ২০১৬ সালের একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করার কারণে!
অং সান সু চি-ও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেন না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চি’র পার্টি একজন মুসলিমকেও তাদের দলের মনোনয়ন দেয়নি!
এই সাধারণ নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক পরিবর্তন আসার সাথে সাথে গণতন্ত্রের পথেও অগ্রগতি হয়েছে বটে। কিন্তু জোরদার গণতন্ত্র বর্ণবাদীদের কণ্ঠকেও জোরদার করেছে এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতি অনাস্থা এবং তাদের নিয়ে আশঙ্কা জোরদার করেছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়া এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান আরো কঠিন হয়ে পড়ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের উপসম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে : ‘একটি সরকার যখন একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে সরাসরি লক্ষ্য নির্ধারণ করে, ওই জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের বন্দিশিবিরে আটক রাখে এবং তাদেরকে জীবন-জীবিকা, শিক্ষা ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে, সেটা অবশ্যই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং এই অপরাধকে প্রতিহত করা সমগ্র মানবজাতির দায়িত্ব।’
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী
নিউ ইয়র্ক টাইমসের উপসম্পাদকীয় কলামে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এবার একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর শাসনাধীনে বন্দিশিবিরে রাখা রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার অবিশ্বাস্য দৃশ্য হয়তো বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে!
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গার ওপর যে চরম নির্যাতন চলছে, তাকে ‘জাতিগোষ্ঠী নিধন’ (জেনোসাইড) বলে অভিহিত করা যায়। নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘এটাকে (এই নির্যাতনকে) ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন’-এর অধীনে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে পরিগণিত করা যাবে।’’
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় (১৬ জানুয়ারি, ২০১৬) ‘মিয়ানমারের অমানবিক অপরাধ’ শিরোনামে এক বিশ্লেষণধর্মী উপসম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে : ‘অং সান সু চি (রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে) বর্ণবাদের এই মিয়ানমার সংস্করণ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। কারণ (নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হলেও) তিনি এখন একজন রাজনীতিবিদ এবং রোহিঙ্গাদের মতো এক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাওয়া তার বেশির ভাগ বৌদ্ধ ভোটারের কাছে অতি প্রিয় কর্মকাণ্ড।’
মিয়ানমারে ৬৭টি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে (বন্দিশিবিরে) বহু রোহিঙ্গা মুসলিমকে আটক করে রাখা হয়েছে। এক একটি বৃহৎ বন্দিশিবিরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আটক রয়েছে। সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার সব অধিকারই বাতিল করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবাধে চলাফেরা করার অধিকারও বাতিল করা হয়েছে।
বন্দী হওয়ার আগে অনেক সঙ্গতিসম্পন্ন রোহিঙ্গা পরিবারের ব্যাংকে ভালো অঙ্কের সঞ্চয় ছিল। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বন্দিশিবিরে আটক থাকার পর তাদের পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থে তারা হাত দিতে পারছে না।
রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নির্যাতনের ব্যাপারে বিশ্বে সামান্যই প্রতিবাদ উঠছে! এর প্রধান কারণ, মিয়ানমার সরকার বিদেশী সাহায্য সংস্থা এবং সাংবাদিকদের জন্য রোহিঙ্গাদের কাছে যাওয়া দুঃসাধ্য করে রেখেছে।
মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের কার্যকলাপ অচল হয়ে পড়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক নিকোলাস ক্রিস্টফ মিয়ানমার সফরকালে জাতিসঙ্ঘের সমালোচকের এক গোপন দলিল দেখেছেন। এ দলিলে জাতিসঙ্ঘকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে কর্মরত জাতিসঙ্ঘের কর্মচারীরা এক অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে। ফলে ‘মিয়ানমারের এই সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতিসঙ্ঘের হাত রয়েছে কি না, এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে’।
এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ, ফর্টিফাই রাইটস এবং ইউনাইটেড টু এন্ড জেনোসাইডসহ কিছু মানবাধিকার সুরক্ষা সংস্থা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অব্যাহত চরম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর শুধু নির্যাতনই চালাচ্ছে না, রোহিঙ্গা নামে কোনো জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমারে নেই- এই দাবি করে সরকার তাদের অস্তিত্বই মুছে ফেলার অপচেষ্টায় নেমেছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখই করে না। সরকার দাবি করে যে, এরা বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বৈ তো নয়। এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন দলিলপত্রে রোহিঙ্গাদের উল্লেখ রয়েছে।
নভেম্ব^রে সরকার পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে উল্লেখ করে ২০১৬ সালের একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করার কারণে!
অং সান সু চি-ও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেন না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চি’র পার্টি একজন মুসলিমকেও তাদের দলের মনোনয়ন দেয়নি!
এই সাধারণ নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক পরিবর্তন আসার সাথে সাথে গণতন্ত্রের পথেও অগ্রগতি হয়েছে বটে। কিন্তু জোরদার গণতন্ত্র বর্ণবাদীদের কণ্ঠকেও জোরদার করেছে এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতি অনাস্থা এবং তাদের নিয়ে আশঙ্কা জোরদার করেছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়া এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান আরো কঠিন হয়ে পড়ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের উপসম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে : ‘একটি সরকার যখন একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে সরাসরি লক্ষ্য নির্ধারণ করে, ওই জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের বন্দিশিবিরে আটক রাখে এবং তাদেরকে জীবন-জীবিকা, শিক্ষা ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে, সেটা অবশ্যই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং এই অপরাধকে প্রতিহত করা সমগ্র মানবজাতির দায়িত্ব।’
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী
No comments