পুলিশ খারাপ হলো কিভাবে? by আলফাজ আনাম
পুলিশের
ওপর ক্ষেপেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। গত ১৩
ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন ‘কিছু কিছু পুলিশের স্পর্ধা
বেড়ে গেছে; কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িও করছে তারা। পুলিশ নিজেদের আইনের
ঊর্ধ্বে মনে করছে।’ কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ নিজেরাই তদন্ত করছে- উল্লেখ করে
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘তদন্তে অপরাধী সদস্যদের তেমন কোনো
শাস্তি না হওয়ায় পুলিশের কিছু কিছু সদস্য অপরাধ করে পুরো বাহিনীর সুনাম
ক্ষুণ্ন করছে। (১৩ ফেব্রুয়ারি, বিডিনিউজ ২৪ডট কম)। শুধু মানবাধিকার কমিশনের
চেয়ারম্যান নন কিছু দিন থেকে সরকার সমর্থক গণমাধ্যমে পুলিশ কতটা খারাপ তা
তুলে ধরার এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। নিস্তরঙ্গ রাজনীতিতে পুলিশের
ওপর মানুষের ক্ষোভের খবর বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাংলাদেশে পুলিশবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। পুলিশ সদস্যদের অপরাধের সংখ্যা ও মাত্রা দিন দিন বাড়ছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আবার পুলিশের অনেক সাফল্যও আছে। সেসব সাফল্যর খবর খুব একটা গুরুত্বের সাথে প্রচার পায় না। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুলিশের স্পর্ধা বেড়ে গেছে এবং তারা বাড়াবাড়ি করছে বলে যে মন্তব্য করেছেন তাতে পুলিশের ওপর তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এর আগে পুলিশের প্রবল প্রতাপশালী কর্মকর্তা বেনজীর আহমদের সাথে ড. মিজানুর রহমানের বাগ্যুদ্ধ হয়েছে। এসব কারণে পুলিশের ওপর তার খানিকটা রাগ-ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে কি পুলিশের বাড়াবাড়ি ঠেকানো যাবে?
আমরা দেখছি গত কয়েক সপ্তাহে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির জন্য নির্যাতন এমনকি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ বড় ধরনের কিছু অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীকে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় পুলিশ আটক করে। তার কাছে বিপুল অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে তার পকেটে ইয়াবা ঢুকানোর চেষ্টা করা হয়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশচন্দ্র দাসকে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। ৩১ জানুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তা করে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ৩ ফেব্রুয়ারি। এক চা দোকানি চাঁদা না দেয়ায় গরম কেটলি তার দিকে ছুড়ে মারা হয়। গরম পানিতে পুড়ে মারা যান চা দোকানি বাবুল মাতব্বর। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ভাষায় বলতে হয়, পুলিশের আগুন সন্ত্রাসে এক নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়।
পুলিশের এসব অমানবিক ঘটনায় নিঃসন্দেহে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তিনি সাংবিধানিক পদে আসীন আছেন। মানবাধিকার রক্ষার মহান দায়িত্ব তার কাঁধে। তিনি অবশ্যই কঠোর ভাষায় যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিন্দা জানাবেন। যে বা যারা এর সাথে জড়িত থাকবে তাদের অন্যায় কাজের তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু শুধু পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সস্তা বাহাবা নেয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই তার কাজ নয়। মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের এখন খুঁজে বের করতে হবে পুলিশ কেন চাঁদার দাবিতে এমন অন্যায় কাজ করছে। পুলিশ কেন এতটা নির্মম হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ আছে; কিন্তু এত নির্মম তো পুলিশ ছিল না। কেন পুলিশ এতটা নির্মম হচ্ছে। পুলিশকে কারা এবং কিভাবে দানবে পরিণত করছে। ফলে পুলিশের অনেক ভালো কাজের সাফল্য এখন কেন ঢাকা পড়ছে?
পুলিশের অর্থ আদায়ের জন্য এই নির্মমতার মূলে রয়েছে নিয়োগের শুরুতে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের অবাধ লাইসেন্স দেয়া। পুলিশের কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য ঘুষ নেয়া এখন ওপেন সিক্রেট। পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের যোগসাজশে এসব নিয়োগ হয়ে থাকে। সম্প্রতি সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশে এখন পুলিশ হতে হলে ১০ লাখ এবং স্কুলশিক্ষক হতে হলে পাঁচ লাখ টাকা লাগে। একজন পুলিশ কনস্টেবল বা এসআই যদি ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি নিয়ে থাকে, স্বাভাবিকভাবে তিনি আগে এই ১০ লাখ টাকা রোজগারের চেষ্টা করবেন। বেতন থেকে তো আর ১০ লাখ টাকা জমানো যাবে না! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, নিয়োগের জন্য যেখানে ঘুষ দিতে হচ্ছে সেখানে ঘুষ না খাওয়ার বা অন্যের কাছ থেকে জবরদস্তিমূলক অর্থ আদায় না করার নৈতিক অবস্থান আর এই পুলিশ সদস্যদের থাকছে না। ফলে গোড়ায় যে গলদ তৈরি হয়েছে তার কুফল ধীরে ধীরে পুরো বাহিনীকে গ্রাস করেছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের উচিত প্রথমে পুলিশ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার দাবি করা। তিনি জোরালোভাবে পুলিশ নিয়োগে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বন্ধের দাবি জানাতে পারেন আর এ মাধ্যমে কেবল পুলিশ নিয়োগে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হবে। চাকরি যদি অনৈতিকভাবে শুরু হয় তাহলে কোনোভাবেই একজন পুলিশ সদস্যের কাছে নৈতিক আচরণ আশা করা যায় না।
বাংলাদেশে পুলিশবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। পুলিশ সদস্যদের অপরাধের সংখ্যা ও মাত্রা দিন দিন বাড়ছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আবার পুলিশের অনেক সাফল্যও আছে। সেসব সাফল্যর খবর খুব একটা গুরুত্বের সাথে প্রচার পায় না। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুলিশের স্পর্ধা বেড়ে গেছে এবং তারা বাড়াবাড়ি করছে বলে যে মন্তব্য করেছেন তাতে পুলিশের ওপর তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এর আগে পুলিশের প্রবল প্রতাপশালী কর্মকর্তা বেনজীর আহমদের সাথে ড. মিজানুর রহমানের বাগ্যুদ্ধ হয়েছে। এসব কারণে পুলিশের ওপর তার খানিকটা রাগ-ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে কি পুলিশের বাড়াবাড়ি ঠেকানো যাবে?
আমরা দেখছি গত কয়েক সপ্তাহে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির জন্য নির্যাতন এমনকি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ বড় ধরনের কিছু অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীকে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় পুলিশ আটক করে। তার কাছে বিপুল অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে তার পকেটে ইয়াবা ঢুকানোর চেষ্টা করা হয়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশচন্দ্র দাসকে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। ৩১ জানুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তা করে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ৩ ফেব্রুয়ারি। এক চা দোকানি চাঁদা না দেয়ায় গরম কেটলি তার দিকে ছুড়ে মারা হয়। গরম পানিতে পুড়ে মারা যান চা দোকানি বাবুল মাতব্বর। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ভাষায় বলতে হয়, পুলিশের আগুন সন্ত্রাসে এক নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়।
পুলিশের এসব অমানবিক ঘটনায় নিঃসন্দেহে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তিনি সাংবিধানিক পদে আসীন আছেন। মানবাধিকার রক্ষার মহান দায়িত্ব তার কাঁধে। তিনি অবশ্যই কঠোর ভাষায় যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিন্দা জানাবেন। যে বা যারা এর সাথে জড়িত থাকবে তাদের অন্যায় কাজের তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু শুধু পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সস্তা বাহাবা নেয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই তার কাজ নয়। মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের এখন খুঁজে বের করতে হবে পুলিশ কেন চাঁদার দাবিতে এমন অন্যায় কাজ করছে। পুলিশ কেন এতটা নির্মম হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ আছে; কিন্তু এত নির্মম তো পুলিশ ছিল না। কেন পুলিশ এতটা নির্মম হচ্ছে। পুলিশকে কারা এবং কিভাবে দানবে পরিণত করছে। ফলে পুলিশের অনেক ভালো কাজের সাফল্য এখন কেন ঢাকা পড়ছে?
পুলিশের অর্থ আদায়ের জন্য এই নির্মমতার মূলে রয়েছে নিয়োগের শুরুতে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের অবাধ লাইসেন্স দেয়া। পুলিশের কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য ঘুষ নেয়া এখন ওপেন সিক্রেট। পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের যোগসাজশে এসব নিয়োগ হয়ে থাকে। সম্প্রতি সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশে এখন পুলিশ হতে হলে ১০ লাখ এবং স্কুলশিক্ষক হতে হলে পাঁচ লাখ টাকা লাগে। একজন পুলিশ কনস্টেবল বা এসআই যদি ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি নিয়ে থাকে, স্বাভাবিকভাবে তিনি আগে এই ১০ লাখ টাকা রোজগারের চেষ্টা করবেন। বেতন থেকে তো আর ১০ লাখ টাকা জমানো যাবে না! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, নিয়োগের জন্য যেখানে ঘুষ দিতে হচ্ছে সেখানে ঘুষ না খাওয়ার বা অন্যের কাছ থেকে জবরদস্তিমূলক অর্থ আদায় না করার নৈতিক অবস্থান আর এই পুলিশ সদস্যদের থাকছে না। ফলে গোড়ায় যে গলদ তৈরি হয়েছে তার কুফল ধীরে ধীরে পুরো বাহিনীকে গ্রাস করেছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের উচিত প্রথমে পুলিশ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার দাবি করা। তিনি জোরালোভাবে পুলিশ নিয়োগে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বন্ধের দাবি জানাতে পারেন আর এ মাধ্যমে কেবল পুলিশ নিয়োগে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হবে। চাকরি যদি অনৈতিকভাবে শুরু হয় তাহলে কোনোভাবেই একজন পুলিশ সদস্যের কাছে নৈতিক আচরণ আশা করা যায় না।
প্রথম আলোর এক ফটোসাংবাদিকের ওপর পুলিশের কিল-ঘুষি |
পুলিশের
বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও নির্যাতন নিয়েও গণমাধ্যমে নানা ধরনের খবর প্রকাশিত
হয়েছে। কিন্তু এই চাঁদাবাজি হঠাৎ করে শুরু হয়নি। আমরা দেখেছি ২০১২ ও ২০১৩
সালে সারা দেশে বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে পুলিশ হত্যা করেছে। ঢাকার রাজপথে
রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের শত শত মানুষের সামনে পায়ে গুলি করে ফেলে রাখা হয়েছে।
মাসের পর মাস রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এসব ঘটনার অনেক ছবি
সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে। একই সাথে বিরোধী রাজনৈতিক দলের
নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারে হত্যা কিংবা পায়ে গুলি করে পঙ্গু বানানোর হুমকি
দিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে সেসব
নেতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এমনকি নেতাকর্মীদের
না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন পুলিশি অত্যাচার থেকে
নারীরা পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। মামলার আসামিকে না পেয়ে তার বাড়ি ভাঙচুর করা
কিংবা স্ত্রী- ছেলে-মেয়েকে গ্রেফতার করা কোনো সভ্য দেশে ঘটতে পারে না।
গ্রেফতার কিংবা গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়নি এমন বিরোধী
নেতাকর্মী কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ছিল আইনের
শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
রাজনৈতিক অস্থিরতার সে সময় গ্রেফতার, গুম আর পঙ্গু বাণিজ্যে পুলিশের নিম্নপর্যায় থেকে ঊর্ধ্বতনপর্যায়ের বহু কর্মকর্তা কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন অনেক নেতাকর্মী পুলিশকে অর্থ দেয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। এদের অনেকে জেল খেটে শেষ পর্যন্ত জামিনে বেরিয়ে এসেছে আবার কেউ কেউ এখনো জেলে আছেন। এই বাণিজ্যের ফলে পুলিশ সদস্যদের যে আয় বেড়েছিল তার ধারাবাহিকতা এখন আর নেই। স্বাভাবিকভাবে পুলিশকে তার আয়ের জন্য ভিন্ন পথ দেখতে হচ্ছে। টাকার চাহিদা তো রাজনৈতিক পরিচয় দেখে না। ফলে পুলিশকে ব্যাংক কর্মকর্তা হোক বা চায়ের দোকানি হোক যেখানে টাকা পাওয়া যাবে সেখানে তারা যাবে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও আগামীতে পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
পুলিশের এসব অত্যাচারের ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যেমন জানত তেমনি গণমাধ্যম কিংবা মানবাধিকার কমিশনেরও অজানা ছিল না। এভাবে বিচার ছাড়া মানুষকে হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশন তখন নিশ্চুপ ছিল। আর গণমাধ্যমের একটি অংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিপীড়নে পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছে। পুলিশকে যে আইনের মধ্যে থেকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে তখন গণমাধ্যমে কেউ সতর্ক করেনি, কোনো টকশো হয়নি। বরং পুলিশের এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডকে বিশাল সাফল্য হিসেবে গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে পুলিশের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে পুলিশ। অবশ্য এই ধারণার বাস্তবতাও রয়েছে। কার্যত একদলীয় শাসনে সরকার এখনো পুরোপুরিভাবে পুলিশের ওপর নির্ভরশীল। ফলে মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে আমিই সরকার। যেমন একজন পুলিশ সদস্য বলেছেন দেশের রাজা পুলিশ। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের ভেতরে পুলিশ জবাবদিহিতাবিহীন আরেকটি রাষ্ট্র তৈরি করেছে। বিপজ্জনক দিক হচ্ছে পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে এখন তা ঢুকে পড়েছে। পুলিশ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। পুলিশের একাধিক সুপার মার্কেট গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সাথে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে পুলিশের পরিচালনায় ব্যাংক ও মেডিক্যাল কলেজ চালুর দাবি জানানো হয়েছে। একটি বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা সংস্থান করতে পারলে পুলিশ ব্যাংক দেয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আমরা জানি সশস্ত্রবাহিনী ব্যাংক, মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। সম্ভবত পুলিশও সশস্ত্রবাহিনীর মতো সুবিধা চাইছে। একই সাথে একধরনের প্রতিযোগিতার মনোভাবও কাজ করতে পারে। সশস্ত্রবাহিনীর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে বিতর্ক রয়েছে। পাকিস্তান ও মিসরের মতো সেনাবাহিনী এ ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। পেশাদারিত্বের দিক থেকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। সশস্ত্রবাহিনীর এমন উদহারণ থাকলেও পুলিশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নজির বিশ্বে বিরল। কার্যত এভাবে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাব ও শক্তি বাড়ছে।
দুনিয়ার সব দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের প্রধান কাজ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও অপরাধ দমন করা। পুলিশের কাজ মূলত সেবামূলক। এ কারণে উন্নত দেশগুলোতে পুলিশের সেবা দেয়ার দিকটি সব সময় গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশে পুলিশের কাজের পরিধি এখন ভিন্ন রকম হয়ে পড়ছে। পুলিশের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে দমন করা। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে প্রতিপক্ষ দমনের কাজ পুলিশ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। পুলিশ ক্ষমতাসীন দলকে সার্ভিস দিয়েছে। মানবাধিকার কমিশন ও সরকার সমর্থক গণমাধ্যম এখন পুলিশের কাছে সেবা চাইছে। কিন্তু এত দিন ক্ষমতাসীনেরা পুলিশের কাছ থেকে যে সেবা নিয়েছে সেই সেবার বিপরীতে এখন পুলিশের প্রতিদান পাওয়ার সময়। চা দোকানি বাবুল মাতুব্বর আর ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রব্বানিরাও সেই প্রতিদান দিচ্ছেন।
alfazanambd@yahoo.com
রাজনৈতিক অস্থিরতার সে সময় গ্রেফতার, গুম আর পঙ্গু বাণিজ্যে পুলিশের নিম্নপর্যায় থেকে ঊর্ধ্বতনপর্যায়ের বহু কর্মকর্তা কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন অনেক নেতাকর্মী পুলিশকে অর্থ দেয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। এদের অনেকে জেল খেটে শেষ পর্যন্ত জামিনে বেরিয়ে এসেছে আবার কেউ কেউ এখনো জেলে আছেন। এই বাণিজ্যের ফলে পুলিশ সদস্যদের যে আয় বেড়েছিল তার ধারাবাহিকতা এখন আর নেই। স্বাভাবিকভাবে পুলিশকে তার আয়ের জন্য ভিন্ন পথ দেখতে হচ্ছে। টাকার চাহিদা তো রাজনৈতিক পরিচয় দেখে না। ফলে পুলিশকে ব্যাংক কর্মকর্তা হোক বা চায়ের দোকানি হোক যেখানে টাকা পাওয়া যাবে সেখানে তারা যাবে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও আগামীতে পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
পুলিশের এসব অত্যাচারের ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যেমন জানত তেমনি গণমাধ্যম কিংবা মানবাধিকার কমিশনেরও অজানা ছিল না। এভাবে বিচার ছাড়া মানুষকে হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশন তখন নিশ্চুপ ছিল। আর গণমাধ্যমের একটি অংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিপীড়নে পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছে। পুলিশকে যে আইনের মধ্যে থেকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে তখন গণমাধ্যমে কেউ সতর্ক করেনি, কোনো টকশো হয়নি। বরং পুলিশের এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডকে বিশাল সাফল্য হিসেবে গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে পুলিশের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে পুলিশ। অবশ্য এই ধারণার বাস্তবতাও রয়েছে। কার্যত একদলীয় শাসনে সরকার এখনো পুরোপুরিভাবে পুলিশের ওপর নির্ভরশীল। ফলে মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে আমিই সরকার। যেমন একজন পুলিশ সদস্য বলেছেন দেশের রাজা পুলিশ। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের ভেতরে পুলিশ জবাবদিহিতাবিহীন আরেকটি রাষ্ট্র তৈরি করেছে। বিপজ্জনক দিক হচ্ছে পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে এখন তা ঢুকে পড়েছে। পুলিশ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। পুলিশের একাধিক সুপার মার্কেট গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সাথে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে পুলিশের পরিচালনায় ব্যাংক ও মেডিক্যাল কলেজ চালুর দাবি জানানো হয়েছে। একটি বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা সংস্থান করতে পারলে পুলিশ ব্যাংক দেয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আমরা জানি সশস্ত্রবাহিনী ব্যাংক, মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। সম্ভবত পুলিশও সশস্ত্রবাহিনীর মতো সুবিধা চাইছে। একই সাথে একধরনের প্রতিযোগিতার মনোভাবও কাজ করতে পারে। সশস্ত্রবাহিনীর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে বিতর্ক রয়েছে। পাকিস্তান ও মিসরের মতো সেনাবাহিনী এ ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। পেশাদারিত্বের দিক থেকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। সশস্ত্রবাহিনীর এমন উদহারণ থাকলেও পুলিশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নজির বিশ্বে বিরল। কার্যত এভাবে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাব ও শক্তি বাড়ছে।
দুনিয়ার সব দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের প্রধান কাজ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও অপরাধ দমন করা। পুলিশের কাজ মূলত সেবামূলক। এ কারণে উন্নত দেশগুলোতে পুলিশের সেবা দেয়ার দিকটি সব সময় গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশে পুলিশের কাজের পরিধি এখন ভিন্ন রকম হয়ে পড়ছে। পুলিশের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে দমন করা। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে প্রতিপক্ষ দমনের কাজ পুলিশ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। পুলিশ ক্ষমতাসীন দলকে সার্ভিস দিয়েছে। মানবাধিকার কমিশন ও সরকার সমর্থক গণমাধ্যম এখন পুলিশের কাছে সেবা চাইছে। কিন্তু এত দিন ক্ষমতাসীনেরা পুলিশের কাছ থেকে যে সেবা নিয়েছে সেই সেবার বিপরীতে এখন পুলিশের প্রতিদান পাওয়ার সময়। চা দোকানি বাবুল মাতুব্বর আর ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রব্বানিরাও সেই প্রতিদান দিচ্ছেন।
alfazanambd@yahoo.com
No comments