মায়ের বুকে সেই ‘ছোট্ট’ মুস্তাফিজেরই ফেরা by রানা আব্বাস
অবশেষে মায়ের বুকে। ছবি: জাহিদুল করিম |
ঢাকা
থেকে আধঘণ্টার সংক্ষিপ্ত যাত্রা শেষে সকালে বিমানটি যখন যশোর বিমানবন্দরের
রানওয়ে যখন ছুঁল, শত শত দৃষ্টি নিবদ্ধ সেদিকে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু
করল একের পর এক যাত্রী। কিন্তু যাঁর জন্য অপেক্ষা, সেই মুস্তাফিজুর রহমান
কোথায়!
মুস্তাফিজের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান ও সেজো ভাই মোখলেসুর রহমানকে ভেতরের ফটকের সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিলেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা। মূল ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ, ভোর পাঁচটায় রওনা দিয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের তেঁতুলিয়া গ্রাম থেকে এসেছে, মুস্তাফিজকে বরণ করে নেবে বলে।
প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিমানের পেট থেকে বেরিয়ে এলেন মুস্তাফিজ। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে কেতাদুরস্ত অন্য যাত্রীদের তুলনায় যিনি একেবারেই সাধারণ। এ সাধারণ তরুণই ২২ গজে হয়ে যান অসাধারণ, অবিশ্বাস্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়েই গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেকে ম্যাচ সেরা হওয়া ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হয়ে তবেই ফিরলেন বাড়ি। তিন মাস পর। তাঁকে এক পলক দেখতে, বরণ করে নিতে জনতার সে কী ব্যাকুলতা!
মুস্তাফিজ যেই না রানওয়ে পেরিয়ে ফটকের সামনে এলেন, অপেক্ষারত জনতাকে ঠেকায় কে! নিরাপত্তাকর্মীদের বাধা ধসে পড়ল বালুর বাঁধের মতো! মুহূর্তেই সবাই ঘিরে ধরল মুস্তাফিজকে। সেই হাসিটার, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের দুর্বোধ্য কাটারে ফিরিয়ে উদযাপনে যে নিষ্পাপ সরল হাসিটা উপহার দেন, দেখা মিলল আরও একবার। ভাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, দূরের-কাছের কত মানুষ! এত মানুষ দেখে নিজেও খানিকটা ভড়কে গেলেন, ‘এত্ত মানুষ কেন? আমি তো রাজনৈতিক নেতা না!’ তবে বহুদিন পর আপন ভুবনের মানুষগুলোকে পেয়ে চোখমুখে খেলে গেল অনির্বচনীয় আনন্দ। ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করা হলো মুস্তাফিজকে। সঙ্গে সেলফি, ছবি তোলার হিড়িক তো ছিলই।
ভারত সিরিজের আগে ১৯ মে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন। এরপর পেরিয়েছে প্রায় তিন মাস। বিমানে আসতে আসতে পাশে বসা বন্ধু ইব্রাহিমকে আঙুলের কড় গুনে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘বাড়ি থেকে এলাম কদ্দিন হলো রে?’ বাড়ি ফিরতে মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পরই ফিরতে চেয়েছিলেন বাড়ি। ফেরার টিকিটও কাটা হয়েছিল ঈদের আগে। কিন্তু আরও একটি আনন্দের সংবাদ পিছিয়ে দিল মুস্তাফিজের বাড়ি ফেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে ডাক পেলেন। আবারও জাদু। উপহার দিলেন আরেক প্রস্থ বিস্ময়, এক ওভারে তিন উইকেট নেওয়ার সেই কীর্তি! অবশেষে মুস্তাফিজের বাড়ি ফেরা। ফেরা মায়ের কোলে।
বাড়ির ছোট ছেলে। আদুরে। মায়েরও সব ভালোবাসা যেন দখল করে আছেন। কিন্তু মায়ের বুকে ফিরতে আরও অপেক্ষা করতে হলো। যশোর থেকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামে পৌঁছানোর আগে যে একের পর এক যাত্রা-বিরতি। যেন বরযাত্রায় বেরিয়েছে শ তিনেক মানুষ! বাসের ভেতরে, ছাদ ভর্তি মানুষের অবিরত হর্ষধ্বনি। যেন মিরপুরের গ্যালারি সঙ্গে নিয়ে চলেছেন মুস্তাফিজ। সঙ্গে মাইকে চলছে ধারা-বিবরণী। মুস্তাফিজকে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করছেন স্থানীয় ধারাভাষ্যকার পবিত্র। ধারাভাষ্য দিতে দিতে কখনো গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। তবুও থামবার নন!
গাড়িবহরে থাকা সবাই যে মুস্তাফিজের পরিচিত, তাও নন। মুস্তাফিজের কাছে তারা পরিচিত না হোক, তাদের কাছে মুস্তাফিজ অতিপরিচিত, বড্ড আপনজন। অনেকেই ব্যক্তিগত জরুরি কাজ ফেলে এসেছেন মুস্তাফিজকে বরণ করতে। তেঁতুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল আজ। সেটি আরেকজনের ওপর কোনোভাবে চাপিয়ে চলে এসেছেন যশোর বিমানবন্দরে। মনিরুল বললেন, ‘এমন সুযোগ কি সব সময় পাওয়া যাবে? ওর সেজো ভাইয়ের সঙ্গে মাছ ধরার জালের সুতো দিয়ে দুই মেহেগনির মাঝে নেট বানিয়ে অনুশীলন করত আমাদের স্কুলের মাঠে। সেই মুস্তাফিজ এখন ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময়। মুস্তাফিজ জীবনে হয়তো আরও বহুবার বাড়িতে ফিরবে। কিন্তু ওয়ানডে-টেস্টে অভিষেকে চমকে এভাবে তো আর ফিরবে না!’
শরীর অসুস্থ থাকার পরও বাড়ি ফেরার পথে হাসিমুখে সইতে হয়েছে সহস্র মানুষের ভালোবাসার ‘যন্ত্রণা’! যশোর থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত মোটামুটি ‘নির্বিঘ্ন’ থাকলেও অভ্যর্থনার হিড়িক পড়ল সাতক্ষীরার পরই। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, হাদিপুর, তারালি—নানা জায়গায় থেমে থেমে নিতে হয়েছে ফুলেল অভ্যর্থনা। আর জায়গায় জায়গায় উৎসুক জনতার আবদার মেটাতে গাড়িয়ে থামিয়ে ছবি তোলা তো ছিলই। যশোর থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা শেষে অবশেষে তেঁতুলিয়া গ্রাম।
নিজ গ্রামে পা রাখতেই হুট করে এক পশলা বৃষ্টি! মিনিট পাঁচেকের এ বৃষ্টি যেন বলতে চাইল, পুরো পথেই তো ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত হয়েছে, এবার না হয় আমারটাও নাও!
বাড়ির সামনে শত জনতার ভিড় ঠেলে মুস্তাফিজ এগিয়ে গেলেন বাবা আবুল কাশেম গাজী ও মা মাহমুদা খাতুনের কাছে। প্রগাঢ় মমতায় মা টেনে নিলেন প্রিয় সন্তানকে। মায়ের বুকে মুখ লুকালেন মুস্তাফিজ। এই মুস্তাফিজ আবির্ভাবেই তারকা হয়ে যাওয়া মুস্তাফিজ নয়, গোটা কয় রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লেখানো মুস্তাফিজ নয়; এই মুস্তাফিজ সেই ছোট্ট, আদুরে মুস্তাফিজই!
মুস্তাফিজের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান ও সেজো ভাই মোখলেসুর রহমানকে ভেতরের ফটকের সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিলেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা। মূল ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ, ভোর পাঁচটায় রওনা দিয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের তেঁতুলিয়া গ্রাম থেকে এসেছে, মুস্তাফিজকে বরণ করে নেবে বলে।
প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিমানের পেট থেকে বেরিয়ে এলেন মুস্তাফিজ। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে কেতাদুরস্ত অন্য যাত্রীদের তুলনায় যিনি একেবারেই সাধারণ। এ সাধারণ তরুণই ২২ গজে হয়ে যান অসাধারণ, অবিশ্বাস্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়েই গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেকে ম্যাচ সেরা হওয়া ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হয়ে তবেই ফিরলেন বাড়ি। তিন মাস পর। তাঁকে এক পলক দেখতে, বরণ করে নিতে জনতার সে কী ব্যাকুলতা!
মুস্তাফিজ যেই না রানওয়ে পেরিয়ে ফটকের সামনে এলেন, অপেক্ষারত জনতাকে ঠেকায় কে! নিরাপত্তাকর্মীদের বাধা ধসে পড়ল বালুর বাঁধের মতো! মুহূর্তেই সবাই ঘিরে ধরল মুস্তাফিজকে। সেই হাসিটার, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের দুর্বোধ্য কাটারে ফিরিয়ে উদযাপনে যে নিষ্পাপ সরল হাসিটা উপহার দেন, দেখা মিলল আরও একবার। ভাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, দূরের-কাছের কত মানুষ! এত মানুষ দেখে নিজেও খানিকটা ভড়কে গেলেন, ‘এত্ত মানুষ কেন? আমি তো রাজনৈতিক নেতা না!’ তবে বহুদিন পর আপন ভুবনের মানুষগুলোকে পেয়ে চোখমুখে খেলে গেল অনির্বচনীয় আনন্দ। ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করা হলো মুস্তাফিজকে। সঙ্গে সেলফি, ছবি তোলার হিড়িক তো ছিলই।
ভারত সিরিজের আগে ১৯ মে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন। এরপর পেরিয়েছে প্রায় তিন মাস। বিমানে আসতে আসতে পাশে বসা বন্ধু ইব্রাহিমকে আঙুলের কড় গুনে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘বাড়ি থেকে এলাম কদ্দিন হলো রে?’ বাড়ি ফিরতে মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পরই ফিরতে চেয়েছিলেন বাড়ি। ফেরার টিকিটও কাটা হয়েছিল ঈদের আগে। কিন্তু আরও একটি আনন্দের সংবাদ পিছিয়ে দিল মুস্তাফিজের বাড়ি ফেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে ডাক পেলেন। আবারও জাদু। উপহার দিলেন আরেক প্রস্থ বিস্ময়, এক ওভারে তিন উইকেট নেওয়ার সেই কীর্তি! অবশেষে মুস্তাফিজের বাড়ি ফেরা। ফেরা মায়ের কোলে।
বাড়ির ছোট ছেলে। আদুরে। মায়েরও সব ভালোবাসা যেন দখল করে আছেন। কিন্তু মায়ের বুকে ফিরতে আরও অপেক্ষা করতে হলো। যশোর থেকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামে পৌঁছানোর আগে যে একের পর এক যাত্রা-বিরতি। যেন বরযাত্রায় বেরিয়েছে শ তিনেক মানুষ! বাসের ভেতরে, ছাদ ভর্তি মানুষের অবিরত হর্ষধ্বনি। যেন মিরপুরের গ্যালারি সঙ্গে নিয়ে চলেছেন মুস্তাফিজ। সঙ্গে মাইকে চলছে ধারা-বিবরণী। মুস্তাফিজকে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করছেন স্থানীয় ধারাভাষ্যকার পবিত্র। ধারাভাষ্য দিতে দিতে কখনো গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। তবুও থামবার নন!
গাড়িবহরে থাকা সবাই যে মুস্তাফিজের পরিচিত, তাও নন। মুস্তাফিজের কাছে তারা পরিচিত না হোক, তাদের কাছে মুস্তাফিজ অতিপরিচিত, বড্ড আপনজন। অনেকেই ব্যক্তিগত জরুরি কাজ ফেলে এসেছেন মুস্তাফিজকে বরণ করতে। তেঁতুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল আজ। সেটি আরেকজনের ওপর কোনোভাবে চাপিয়ে চলে এসেছেন যশোর বিমানবন্দরে। মনিরুল বললেন, ‘এমন সুযোগ কি সব সময় পাওয়া যাবে? ওর সেজো ভাইয়ের সঙ্গে মাছ ধরার জালের সুতো দিয়ে দুই মেহেগনির মাঝে নেট বানিয়ে অনুশীলন করত আমাদের স্কুলের মাঠে। সেই মুস্তাফিজ এখন ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময়। মুস্তাফিজ জীবনে হয়তো আরও বহুবার বাড়িতে ফিরবে। কিন্তু ওয়ানডে-টেস্টে অভিষেকে চমকে এভাবে তো আর ফিরবে না!’
শরীর অসুস্থ থাকার পরও বাড়ি ফেরার পথে হাসিমুখে সইতে হয়েছে সহস্র মানুষের ভালোবাসার ‘যন্ত্রণা’! যশোর থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত মোটামুটি ‘নির্বিঘ্ন’ থাকলেও অভ্যর্থনার হিড়িক পড়ল সাতক্ষীরার পরই। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, হাদিপুর, তারালি—নানা জায়গায় থেমে থেমে নিতে হয়েছে ফুলেল অভ্যর্থনা। আর জায়গায় জায়গায় উৎসুক জনতার আবদার মেটাতে গাড়িয়ে থামিয়ে ছবি তোলা তো ছিলই। যশোর থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা শেষে অবশেষে তেঁতুলিয়া গ্রাম।
নিজ গ্রামে পা রাখতেই হুট করে এক পশলা বৃষ্টি! মিনিট পাঁচেকের এ বৃষ্টি যেন বলতে চাইল, পুরো পথেই তো ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত হয়েছে, এবার না হয় আমারটাও নাও!
বাড়ির সামনে শত জনতার ভিড় ঠেলে মুস্তাফিজ এগিয়ে গেলেন বাবা আবুল কাশেম গাজী ও মা মাহমুদা খাতুনের কাছে। প্রগাঢ় মমতায় মা টেনে নিলেন প্রিয় সন্তানকে। মায়ের বুকে মুখ লুকালেন মুস্তাফিজ। এই মুস্তাফিজ আবির্ভাবেই তারকা হয়ে যাওয়া মুস্তাফিজ নয়, গোটা কয় রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লেখানো মুস্তাফিজ নয়; এই মুস্তাফিজ সেই ছোট্ট, আদুরে মুস্তাফিজই!
No comments