ভাঙতে হবে নীরবতা by সালমা খান
১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮ মার্চ
আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো
বাংলাদেশেও আজ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘নারী-পুরুষ সমতা, অগ্রগতির
মূলকথা’। প্রতিপাদ্যে নারী-পুরুষের সম-অধিকারের কথা বলা হলে এই একবিংশ
শতাব্দীতে এসেও আমরা দেখি, বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে নারী-পুরুষের
সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও অনেক দেশে নারীর পক্ষে সংবেদনশীল ও
ইতিবাচক পরিবর্তনের উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ যেন নারীর
মানবাধিকার হরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সালমা খান, জাতিসংঘ সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন
বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো নারীর প্রতি পুুরুষের নির্যাতন বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামী দ্বারা কোনো না কোনো সময়ে কোনো না কোনো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের স্বামী শারীরিক নির্যাতন করেছেন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৫৩ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জরিপের এই ফলাফল দেখে বোঝা যায়, নারী নির্যাতনের হার দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও এনজিওর তথ্য অনুযায়ী দেশে নারী নির্যাতন ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে।
এই জরিপের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো, ৮০ শতাংশের বেশি নারী নিজের ঘরে সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যা নারীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে বিবেচিত। স্বামী ছাড়াও তাঁরা মা, বাবা, ভাই, সৎভাই, দেবরসহ কাছের স্বজনদের হাতেও নির্যাতিত হয়েছেন, যা খুবই ভয়াবহ একটি তথ্য। কারণ, বাইরের চেয়ে ঘর হচ্ছে নিরাপদ স্থান। অথচ আমাদের দেশের নারীরা সেই ঘরেই নিরাপদ নন। যখন নারী নিজের গৃহে নির্যাতিত হন, তখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয় তা হলো, দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। আবার স্বামীর ঘরে থেকে আইনের দ্বারস্থ হওয়াও সম্ভব নয়। অর্থাৎ, প্রতিকারের সব কটি দরজা তাঁর কাছে বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্রটি আমাদের ভাবিত করে তুলেছে। যেসব বিবাহিত নারীর ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, তাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৩৪ বছর। অর্থাৎ, তাঁদের স্বামীরাও বয়সে তরুণ। দেখা যাচ্ছে, দেশের তরুণগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ নারী নির্যাতন করছে। এই তরুণগোষ্ঠী শিক্ষা, পেশা, প্রযুক্তি ও বাহ্যিক আচরণে আধুনিক হলেও মনে মনে মধ্যযুগীয় বিশ্বাস ও প্রথাকে ধারণ করছে। এর চেয়ে হতাশাজনক তথ্য আর কিছুই হতে পারে না। যে বয়সে তাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকার কথা, সেই বয়সে তারা নারী নির্যাতন করছে।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, নারী নির্যাতনের বিষয়টি কখনো সুশীল সমাজের নৈতিক বিতর্কে স্থান পায়নি এবং সেই কারণে এটি এখনো জাতীয় সমস্যায় পরিণত হতে পারেনি। আর এ কারণেই মূলত নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়টি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছে এবং সেটাই সবচেয়ে ভয়ের কথা। চোখের সামনে নির্যাতন দেখলেও সবাই মেনে নিচ্ছে। দুর্বল আইনের শাসনও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এতে শুধু নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না, দেশের উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণও বাধাগ্রস্ত হয়। তাঁদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ব্যাহত হয়। এখন আমাদের সুশীল সমাজকে এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
এ ধরনের সংস্কৃতি যত দিন পরিবর্তন না হবে, তত দিন নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হবে না। সামাজিক রূপান্তর যদি আমরা না ঘটাতে পারি, তাহলে নির্যাতিতের প্রতিকার পাওয়ার সব পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সমাজে নারীর পশ্চাৎপদতার কারণগুলো মোকাবিলা করতে হলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যাবোধে ব্যাপক রূপান্তর ঘটাতে হবে; আনতে হবে পরিবর্তন। পরিবর্তনে উৎসাহিত করতে হবে গোটা সমাজব্যবস্থাকে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার মধ্যে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গোষ্ঠী ও শ্রেণীবৈষম্য নিরসনের যে কথা বলা হয়েছে, এগুলোকে যদি সমাজে নতুনভাবে প্রোথিত করতে না পারি, তাহলে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব হবে না।
আমাদের জাতীয় চেতনার মূল কথা ছিল সব ধরনের বৈষম্য নিরসন। দুর্ভাগ্যবশত স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যে সমৃদ্ধ স্বকীয় সংস্কৃতি সৃষ্টি করার প্রয়াস পেয়েছি, সেখানে লিঙ্গবৈষম্য ইস্যু হিসেবে উদ্ভূত হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সমাজের মূলধারা তেমন একটা বিচলিত নয়। তরুণ সমাজ নারীর প্রতি সহিংসতাকে ‘না’ বলেনি। পুরুষতান্ত্রিকতাকে আমাদের সমাজ কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করেনি।
আমাদের নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবাই মিলে একটি নৈতিক যুদ্ধ শুরু করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়ে সুশীল সমাজকে মুখ খুলতে হবে। চুপ করে বসে থাকলে চলবে না, আমাদের নীরবতা ভাঙতে হবে। নারী নির্যাতনকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। তাহলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ একটি নতুন সমাজ বিনির্মাণে সফল হব। এ ক্ষেত্রে অবশ্য মানসিকতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও যথাযথ প্রয়োগ এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, তার বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও), জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি) এবং নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে সনদে (সিএটি) স্বাক্ষর করেছে। এসব সনদের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের প্রচলিত আইনগুলোকে সংশোধন করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের ১৬টি বিশেষ আইন ও নীতি থাকার পরও এসব আইন তেমন কোনো কাজে আসছে না। নারীর মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য যুদ্ধ করতে হবে। তরুণ সমাজের জন্য এটি একটি নৈতিক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমাদের জয়লাভ করতে হবে।
নারীর এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে হলে নারীকেও নীরবতার দেয়াল ভাঙতে হবে, প্রতিবাদী হতে হবে। নিজের বুদ্ধি, মেধা ও শ্রম দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের বিষয়ে সচেতন হয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সামাজিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৈষম্য ও সহিংসতাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। আত্মশক্তিতে বলীয়ান নারীই হবেন সামাজিক পরিবর্তনের মূল দিশারি।
বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো নারীর প্রতি পুুরুষের নির্যাতন বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামী দ্বারা কোনো না কোনো সময়ে কোনো না কোনো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের স্বামী শারীরিক নির্যাতন করেছেন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৫৩ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জরিপের এই ফলাফল দেখে বোঝা যায়, নারী নির্যাতনের হার দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও এনজিওর তথ্য অনুযায়ী দেশে নারী নির্যাতন ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে।
এই জরিপের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো, ৮০ শতাংশের বেশি নারী নিজের ঘরে সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যা নারীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে বিবেচিত। স্বামী ছাড়াও তাঁরা মা, বাবা, ভাই, সৎভাই, দেবরসহ কাছের স্বজনদের হাতেও নির্যাতিত হয়েছেন, যা খুবই ভয়াবহ একটি তথ্য। কারণ, বাইরের চেয়ে ঘর হচ্ছে নিরাপদ স্থান। অথচ আমাদের দেশের নারীরা সেই ঘরেই নিরাপদ নন। যখন নারী নিজের গৃহে নির্যাতিত হন, তখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয় তা হলো, দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। আবার স্বামীর ঘরে থেকে আইনের দ্বারস্থ হওয়াও সম্ভব নয়। অর্থাৎ, প্রতিকারের সব কটি দরজা তাঁর কাছে বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্রটি আমাদের ভাবিত করে তুলেছে। যেসব বিবাহিত নারীর ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, তাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৩৪ বছর। অর্থাৎ, তাঁদের স্বামীরাও বয়সে তরুণ। দেখা যাচ্ছে, দেশের তরুণগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ নারী নির্যাতন করছে। এই তরুণগোষ্ঠী শিক্ষা, পেশা, প্রযুক্তি ও বাহ্যিক আচরণে আধুনিক হলেও মনে মনে মধ্যযুগীয় বিশ্বাস ও প্রথাকে ধারণ করছে। এর চেয়ে হতাশাজনক তথ্য আর কিছুই হতে পারে না। যে বয়সে তাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকার কথা, সেই বয়সে তারা নারী নির্যাতন করছে।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, নারী নির্যাতনের বিষয়টি কখনো সুশীল সমাজের নৈতিক বিতর্কে স্থান পায়নি এবং সেই কারণে এটি এখনো জাতীয় সমস্যায় পরিণত হতে পারেনি। আর এ কারণেই মূলত নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়টি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছে এবং সেটাই সবচেয়ে ভয়ের কথা। চোখের সামনে নির্যাতন দেখলেও সবাই মেনে নিচ্ছে। দুর্বল আইনের শাসনও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এতে শুধু নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না, দেশের উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণও বাধাগ্রস্ত হয়। তাঁদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ব্যাহত হয়। এখন আমাদের সুশীল সমাজকে এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
এ ধরনের সংস্কৃতি যত দিন পরিবর্তন না হবে, তত দিন নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হবে না। সামাজিক রূপান্তর যদি আমরা না ঘটাতে পারি, তাহলে নির্যাতিতের প্রতিকার পাওয়ার সব পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সমাজে নারীর পশ্চাৎপদতার কারণগুলো মোকাবিলা করতে হলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যাবোধে ব্যাপক রূপান্তর ঘটাতে হবে; আনতে হবে পরিবর্তন। পরিবর্তনে উৎসাহিত করতে হবে গোটা সমাজব্যবস্থাকে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার মধ্যে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গোষ্ঠী ও শ্রেণীবৈষম্য নিরসনের যে কথা বলা হয়েছে, এগুলোকে যদি সমাজে নতুনভাবে প্রোথিত করতে না পারি, তাহলে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব হবে না।
আমাদের জাতীয় চেতনার মূল কথা ছিল সব ধরনের বৈষম্য নিরসন। দুর্ভাগ্যবশত স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যে সমৃদ্ধ স্বকীয় সংস্কৃতি সৃষ্টি করার প্রয়াস পেয়েছি, সেখানে লিঙ্গবৈষম্য ইস্যু হিসেবে উদ্ভূত হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সমাজের মূলধারা তেমন একটা বিচলিত নয়। তরুণ সমাজ নারীর প্রতি সহিংসতাকে ‘না’ বলেনি। পুরুষতান্ত্রিকতাকে আমাদের সমাজ কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করেনি।
আমাদের নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবাই মিলে একটি নৈতিক যুদ্ধ শুরু করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়ে সুশীল সমাজকে মুখ খুলতে হবে। চুপ করে বসে থাকলে চলবে না, আমাদের নীরবতা ভাঙতে হবে। নারী নির্যাতনকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। তাহলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ একটি নতুন সমাজ বিনির্মাণে সফল হব। এ ক্ষেত্রে অবশ্য মানসিকতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও যথাযথ প্রয়োগ এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, তার বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও), জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি) এবং নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে সনদে (সিএটি) স্বাক্ষর করেছে। এসব সনদের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের প্রচলিত আইনগুলোকে সংশোধন করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের ১৬টি বিশেষ আইন ও নীতি থাকার পরও এসব আইন তেমন কোনো কাজে আসছে না। নারীর মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য যুদ্ধ করতে হবে। তরুণ সমাজের জন্য এটি একটি নৈতিক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমাদের জয়লাভ করতে হবে।
নারীর এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে হলে নারীকেও নীরবতার দেয়াল ভাঙতে হবে, প্রতিবাদী হতে হবে। নিজের বুদ্ধি, মেধা ও শ্রম দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের বিষয়ে সচেতন হয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সামাজিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৈষম্য ও সহিংসতাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। আত্মশক্তিতে বলীয়ান নারীই হবেন সামাজিক পরিবর্তনের মূল দিশারি।
No comments