নেত্রী, কি হচ্ছে? by লায়েকুজ্জামান

নেত্রী, এ সব কি হচ্ছে? মানববন্ধন বন্ধ। মৌন প্রতিবাদ বন্ধ। আবার খোলা? দুনিয়া জুড়ে যখন খবর গেল বাংলাদেশে সভাসমাবেশ বন্ধ সেই সময় আবার শাহবাগে এক পশলা মানববন্ধন হয়ে গেল। আপনার দু’জন মন্ত্রী গণমাধ্যমের কাছে বললেন, সভা-সমাবেশ বন্ধ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিনের বেলা চট্টগ্রামে বললেন এক মাসের জন্য সভা-সমাবেশ বন্ধ। ঢাকায় ফিরে রাতে বিবিসিকে বললেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। রাতে তথ্য অধিদপ্তর জানালো, সাধারণ সভাসমাবেশের ওপর বাধা নেই। আবার ওই দিন সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত নিখোঁজদের স্বজনেরা প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করতে এলে তাদেরকে জোর করে বাসে তুলে দেয় পুলিশ। এখনও প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করতে কারও অনুমতি মিলছে না। পুলিশ বলছে, অনুমতি লাগবে। তথ্য অধিদপ্তর বলছে বাধানিষেধ নেই। মন্ত্রী বলছেন, বাধা আছে। তা হলে হচ্ছেটা কি? মন্ত্রীরা কেন এই ছেলেখেলা খেলছেন? ১৪ দল সমাবেশে মাইক লাগিয়েও আবার খুলে ফেললো। মাইকেই ঘোষণা দেয়া হলো, স্বরাষ্টমন্ত্রণালয় এক মাসের জন্য সভাসমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে বলে সমাবেশ হবে না। ১৪ দলের শরিকরা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। এ নিয়ে দলের নেতারাও ক্ষুব্ধ। মোহাম্মদ নাসিম তো বলেই ফেলেছেন, এটা ঠিক নয়। এমন বিভ্রান্তিতে কি সরকার চলে? অনেকেই বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কি সরকারের মধ্যে সরকার কিনা? না হলে তার এজেন্ডাটা কি ?
কি বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে? দেশবাসীর সামনে কোন গোলপোস্ট নেই। মানুষ জানে না কোথায় যাচ্ছে তারা। সামনে কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। কারও জানা নেই কি আছে আপনার মনে? আর খালেদা জিয়াই বা কি ভাবছেন। চারদিকে নানা কথা। নির্বাচন কি হচ্ছে? আর নির্বাচন হলেই বা তার রূপ কি হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে নাকি অন্তবর্তী সরকার? নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান কে হবেন? বিএনপি কি শেখ হাসিনাকে প্রধান মেনে নির্বাচন করবে? নাকি বিএনপিকে বাদ রেখেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে যাচ্ছে? কিছু জানা নেই কারও। নানা আশঙ্কার ডালপালা ছড়াচ্ছে। জোর গুজব হচ্ছে আওয়ামী লীগ একাই নির্বাচন করতে যাচ্ছে। তেমন প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে আওয়ামী লীগ। দলের বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের যারা বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ করে নিয়েছেন তারা আপনাকে একলা চলতে বলেছেন। কঠোর হতে বলেছেন। অনেকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে তাদের কথা, যে কোন মূল্যে তারা আবার ক্ষমতায় আসার পক্ষে। আবার ক্ষমতায় না এলে তাদের সামনে বিপদ, সে তাগিদ থেকেই তারা আপনাকে কঠোর হতে বলেছেন। বর্ধিত সভার পর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়া হলো। যে কোন মূল্যে আগামীর ক্ষমতায় যাওয়ার বার্তাটাই মানুষের কাছে পৌছে গেল।
দেশব্যাপী যখন এমন গুজব ঠিক সেই সময় সভাসমাবেশ বন্ধ করা হলো এমনকি মানববন্ধনের মতো মৌন প্রতিবাদের কর্মসূচির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। প্রিয় নেত্রী, মেসেজটা কিন্ত ভাল পাচ্ছে না মানুষ। দেশ ও দেশের বাইরে খবরটা গেল দারুণ নেতিবাচক ভাবে। প্রেস ক্লাবের সামনে অসহায় ক’জন মানুষের মৌন প্রতিবাদ বন্ধের খবরটা দুনিয়াতে গেল অনেক বড় আকারে। মানুষ যখন অন্ধকারে থাকে তখন গুজবই তার ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। গুজবকেই তখন সত্যি মনে করা ছাড়া পথ থাকে না। সভাসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর দেশে কিন্ত বলাবলি হচ্ছে আরও পত্রিকা বন্ধ হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা আসছে টক শো’র ওপর। বন্ধ হতে পারে আরও কয়েকটি টিভি চ্যানেল। পত্রিকায় সংবাদ ছাপার ওপর এমবার্গো দেয়া হতে পারে। গ্রেপ্তার হতে পারেন আরও দু’একজন সম্পাদক। হয়তো এর কোনটাই সত্য নয়, তবে গুজব কিন্ত চলছে। গুজবের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ছে দুনিয়াব্যাপী।
জামায়াতের সমাবেশ বন্ধ করা হয়েছে আপত্তি নেই। হেফাজতের সমাবেশ উচ্ছেদ করা হয়েছে বুঝলাম, তারা তাণ্ডব করেছিল, ষড়যন্ত্র করেছিল। বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না তা নিয়েও কোন কথা নেই, বিএনপি আপনার প্রতিপক্ষ। রাজনীতির খেলায় বিএনপির সঙ্গে আপনি খেলছেন, সেটাকে রাজনীতির খেলাই ধরে নিলাম।
আপনার কাছে খবর আছে কিনা জানি না- প্রেসক্লাবের সামনে কারা মানববন্ধন করতে আসে? তাদের বেশির ভাগের পরিচয় কি ? একটি ব্যানার বা একটা হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে নিজেদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে কেবলমাত্র মিডিয়াকে আকর্ষণ করতে প্রেসক্লাবের সামনে ছুটে আসে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। তারা সরকার বদলের জন্য আসে না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে খালেদা জিয়াকে বসানোর জন্য আসে না। তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতার বদল নয়। প্রিয় নেত্রী, প্রেস ক্লাব এলাকায় সরকারের যে সকল গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা দায়িত্ব পালন করে তাদের প্রতিদিনের রিপোর্ট চেক করলেই পাওয়া যাবে কোন শ্রেণীর কত মানুষ এখানে প্রতিদিন মানববন্ধন করতে আসে। তাদের দাবিগুলোই বা কি? তবে হ্যাঁ, রাজনীতিতে কর্মীহীন কিছু পার্টি বা তাদের সমগোত্রীয় ভুঁইফোঁড় কিছু নেতা এখানে এসে মাইকে গলা ফাটিয়ে চ্যানেলগুলোতে তাদের চেহারা দেখায়। তাদের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। একটি ঘটনার কথা বলি। কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে একজন দরিদ্র নারী একটি ব্যানার নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে এসেছিলেন তার একমাত্র সন্তান হত্যার প্রতিবাদ জানাতে। নিজেই ব্যানারটা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন প্রেসক্লাবের সামনে। তার ছেলেটি জড়িত ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। দরিদ্র বলে থানা পুলিশ তার মামলার আসামিদের ধরে না, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। দরিদ্র ওই নারী শুনেছেন ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে গেলে তার খবর টেলিভিশনে দেখা যাবে, পত্রিকায় ছাপা হবে, শেখ হাসিনা তার খবর পড়ে তার একমাত্র ছেলে হত্যার বিচার করবেন। এখনও প্রেসক্লাবের সামনে ওই শ্রেণীর মানুষই আসে প্রতিবাদ জানাতে। তারা কেউ সঙ্গে করে লাঠি আনে না, ইঁটের টুকরাও আনে না। দুনিয়াজুড়ে স্বীকৃত প্রতিবাদের ভদ্র ভাষায়ই তারা প্রতিবাদ করে, প্ল্যাকার্ডে অন্তরের কথাগুলো মানুষকে প্রদর্শন করে বাড়ি ফিরে যায়। পুলিশকে ঢিল ছোড়া তো দূরে থাক একটি কটুবাক্যও বলে না কেউ।
 স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ভাষণ দিয়ে বন্ধ করে দিলেন সভাসমাবেশ মানববন্ধন। এটা কি সম্ভব? দেশে কোন দুর্যোগ হলে ,রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে অবশ্যই সরকার এটা করতে পারে। সাংবিধানিক ভাবেই সরকারকে সে অধিকার দেয়া আছে। কিন্ত নিশ্চয় একজন মন্ত্রীর কথায় দেশবাসীর সে মৌলিক অধিকার নষ্ট হতে পারে না। এ জন্য অন্তত সরকারের একটি পরিপত্র প্রয়োজন। না হলে কাল কেউ আদালতে গেলে সরকারের জবাবটা কি? প্রিয় নেত্রী, এত গেল এক দিকের কথা। অন্যদিকের কথা বলি। এই মুহূর্তে হেফাজত লাপাত্তা, জামায়াত বিধ্বস্ত, বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে, দলকে গ্রাস করে ফেলেছে অবিশ্বাসের কালো ছায়া। নেতায় নেতায় অবিশ্বাস, ফারাক। ঠিক সেই সময় আপনি এমন কি বিপদ আঁচ করলেন যে মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পর্যন্ত বন্ধ করে মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করে দুনিয়াব্যাপী সমালোচনার দায় ঘাড়ে নিলেন। নেত্রী, কাজটা ছোট- দায়টা কিন্ত অনেক বড়। একবার ভেবে দেখুন তো বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর কত বড় বড় চ্যালেঞ্জ আপনাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে! সবগুলোই আপনি সফল ভাবে করেছেন। আপনাকে মানুষের মৌলিক অধিকারে হাত দিতে হয়নি। এখন কেন দিতে হবে? কারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে জানি না। তবে একটি কথা বলতে পারি সর্বনাশের খেলা কিন্ত ভেতর থেকেই হয়। বাইরের কেউ সর্বনাশ করতে পারে না। এখন সময় বড় অসময়। অনেক যড়যন্ত্রের খবরই আপনি জানেন। আপনাকে ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হবে। সবাই আপনার শত্রু নয়। সমালোচনা করলেই শত্রু হয় না। দয়া করে ছোট কাজের বড় দায় নেবেন না। ওয়ান ইলেভেনের সময় আপনি ভেতরে ছিলেন, বাইরে কিন্ত অনেক কিছুই দেখেছি। আজকের অনেক সুবিধাভোগী আপনার পক্ষে একটি লাইনও লেখেননি। এখন শুনি তারাই আপনাকে এটা সেটা পরামর্শ দেয়। কানভারি করার চেষ্টা করে। সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী, প্রিয় নেত্রী- আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, রাজনীতির ভেতরই বেড়ে উঠেছেন, আপনি আরও ভাল জানেন- কথা বলা বাঙালির সহজাত বৈশিষ্ট্য। নানাভাবে বঞ্চনার শিকার বাংলাদেশের মানুষ দু’টি কথা বলে নিজেকে হালকা করে বাড়ি ফেরে। আরেকটি হচ্ছে ভোট । ভোটের সময় নেতানেত্রীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দেন, পরে আর ভোটারদের কথা মনে থাকে না। ওই ভোটাররা অপেক্ষা করতে থাকে আবার ভোটের দিন পর্যন্ত, প্রতিশোধ নিতে। কিছু না পাওয়া লোকগুলোর কাছে ভোটাধিকার একটি বড় পাওয়া। বাঙালির কথা বলার ওপর আর ভোটের ওপর হাত দিয়ে ভাল ফল নিয়ে কেউ ঘরে ফিরতে পারেনি। প্রিয় নেত্রী, বিষয়টি অনেকের চেয়ে আপনিই ভাল বোঝেন। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বাকস্বাধীনতার আন্দোলন আপনাকে করতে হয়েছে একাশি সনে দেশে ফিরে, আওয়ামী লীগের হাল ধরে।

1 comment:

  1. If you disregarded the Ugg guidelines and wore your boots in water, otherwise you dropped liquid
    on your boot, you could have stains along your boots.
    These varieties of Ugg Boots Clearance can be found in 2 colors from a shop
    at fine sand too as saying. So you will find that shoes, clothes, even bags for youngsters
    has be a little more exquisite than before.

    Here is my web page: ヴィトン

    ReplyDelete

Powered by Blogger.