চার্চিল-স্ট্যালিনের ফলপ্রসূ আড্ডা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল ও রাশিয়ার নেতা জোসেফ স্ট্যালিন বারবার আলোচনায় বসছেন। তবে শুধু কথাই হচ্ছে, কিছুই এগোচ্ছে না। এভাবে কয়েক দিন চলার পর এক রাতে শলাপরামর্শ চলল ভোর তিনটা পর্যন্ত। তার পরই আলোচনা ফলপ্রসূ হতে শুরু করে। জানা গেছে, রাত জাগা সেই বৈঠকে আলাপ চাঙা রেখেছিল নানা চর্বচোষ্যলেহ্য এবং পেয়! যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের নতুন প্রকাশিত নথিপত্র থেকে ওই আড্ডার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সরকারের প্রায় ৬০০ পুরোনো নথিপত্র সম্প্রতি অবমুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে স্নায়ুযুদ্ধের প্রথম দিককার নথিগুলো অবমুক্ত করেছে জাতীয় সংগ্রহশালা। এর মধ্যে রয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি স্যার আলেক্সান্ডার ক্যাডোগানের একটি চিঠি। তাতে তিনি ১৯৪২ সালের শেষের দিকে চার্চিলের মস্কো সফরের নানা ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন। আলেক্সান্ডার লিখেছেন, ডিসেম্বর মাসে স্ট্যালিনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠক ‘পুলকিত’ করে চার্চিলকে। তবে দ্বিতীয় বৈঠকে রাশিয়ার নেতা যে বিষয়টির অবতারণা করেন, তা ছিল যারপরনাই অপ্রীতিকর ও প্রতিকূল। এ কারণে আলোচনায় যে নৈরাশ্যের মেঘ ঘনীভূত হয়, তা পরের রাতের ভুরিভোজেও দূর হয়নি। তবে তার পরদিন সন্ধ্যায় নতুন করে শুরু হওয়া বৈঠকে বরফ গলতে শুরু করে। নথিতে বলা হয়েছে, বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটায়। টানা ছয় ঘণ্টা পর রাত একটার সময় ‘ক্রেমলিনে স্ট্যালিনের কক্ষে অতিসত্বর হাজির হওয়ার ডাক পড়ে’ স্যার আলেক্সান্ডারের। আলেক্সান্ডার লিখেছেন, সেখানে তিনি চার্চিল ও স্ট্যালিনের মাঝে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভকে (যিনি পরে যোগ দিয়েছিলেন) বসা দেখতে পান। তাঁদের সামনে সাজানো ছিল ‘সব ধরনের খাবার... এবং বেশ কিছু বোতল’। তিনি আরও লিখেছেন, ‘স্ট্যালিন আমাকে যে মদ পান করতে দিয়েছিলেন, তা রীতিমতো বিস্বাদ লেগেছিল।’ আলেক্সান্ডার লিখেছেন, ‘নিশ্চিতভাবেই চার্চিল মুগ্ধ হয়েছিলেন। আর আমি মনে করি, সেই অনুভূতিটা ছিল পারস্পরিক আদান-প্রদানের উপযোগী। আলোচনার বিষয়বস্তু দোভাষীদের মাধ্যমে হুবহু বোঝা কঠিন ছিল।’ তবে একটি বিষয়ে চার্চিলের বক্তব্যের জবাবে স্ট্যালিন বলেন, ‘আমি এটার সঙ্গে একমত নই। তবে এর পেছনে যে অভিপ্রায় রয়েছে, তাকে আমি পছন্দ করি।’ ওই চিঠিতে আলেক্সান্ডার জানিয়েছেন, রাত তিনটা পার হওয়ার পরপরই বৈঠক শেষ করতে হয়। কেননা, বৈঠক শেষ করে তাঁদের হোটেলে ফিরে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বিমান ধরতে হয়েছিল। ফিরতি ফ্লাইটটি ছিল ভোর সোয়া চারটায়।
No comments