অবৈধভাবে বিদেশ যেতে

রবিবার শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলে একটি ভাসমান মাছধরা নৌকায় অত্যন্ত করুণ অবস্থায় ১৩৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। জনকণ্ঠসহ অন্যান্য পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে ১২৮ জন বাংলাদেশী।
এছাড়া ১১ জন মিয়ানমারের নাগরিক। এদের মধ্যে রয়েছে ৩ নারী ও ৩ শিশু। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী এদের উদ্ধার করেছে। বলা হয়েছে, নৌকাটির ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য সেটা আর এগোতে পারছিল না। দিন দশেক নৌকাটি সাগরে ভাসছিল। এদের কাছে কোন খাদ্য ছিল না। এতদিন ধরে ওরা সমুদ্রের নোনা পানি ছাড়া আর কিছু খায়নি। শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী তাদের উদ্ধার করে খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে বলে জনা গেছে।
উদ্ধারকৃতরা আসলে কয়জন বাংলাদেশী তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও বাংলাদেশের অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে আগেও একাধিকবার অবৈধপথে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা আটক হয়েছে। আটক হয়ে জেলে যেতে হয়েছে অনেককে। দেশে কাজের সঙ্কট একদিকে, অন্যদিকে বিদেশে সোনার হরিণের হাতছানি। বাংলাদেশের বহু লোক বিদেশে গিয়ে কাজ করে অনেক টাকা কামাই করছে এই বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে একটি কুচক্রী মহল অনেক নিরীহ মানুষকে অবৈধ পন্থায় বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিচ্ছে। সমুদ্রপথেও লোক পাঠানোর ব্যাপারে এই দালালেরা তৎপর। এমন অনেক ঘটনা অতীতে উদ্ঘাটিত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার উপকূলে সম্প্রতি যাদের উদ্ধার করা হচ্ছে তাদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য জেনে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সমুদ্রপথেই হোক বা যে পথেই হোক, দালালদের অবৈধ তৎপরতার শিকার যাতে কোন নিরীহ নাগরিক না হয় সেটা নিশ্চিত রাখা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, এ দেশের বহু মানুষ বিদেশে কাজ করছেন। তাদের আয় করা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসায় তারা পরিবারগতভাবে যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি দেশের অর্থনীতির ওপরও এর অনুকূল প্রভাব পড়ছে। বিদেশে জনশক্তি রফতানি সব সময় যে বৈধভাবে হয়, তা নয়। বলা হয়ে থাকে আনুষ্ঠানিকতার নানা ঝামেলা এড়ানো এবং কম খরচে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সম্পর্কিত চটকদার প্রলোভনে পড়ে গ্রাম-গঞ্জের সরল-সহজ অনেক মানুষ প্রায়ই প্রতারিত হচ্ছেন দালালদের হাতে। এভাবে অবৈধ পন্থায় বিদেশে যাওয়ার সময় অনেকে জীবনহানির মতো মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হচ্ছেন। স্পেন বা ইতালিতে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবিতে বাংলাদেশী যুবকদের মৃত্যু ঘটনা কয়েক বছর আগের। এখনও সাগরপথে গোপনে বিদেশ পাড়ি দেয়ার সময় প্রাণহানির ঘটনা প্রকাশিত হয় পত্রপত্রিকার পাতায়।
দালালচক্রের কালো হাত যে কতটা প্রসারিত এবং তারা যে কতটা সংঘবদ্ধ এবং বেপরোয়া এসব ঘটনা তার প্রমাণ। দালালদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সমাজের বিভিন্ন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত। সাধারণ মানুষ এদের প্রতারণা বুঝতে না পেরে এবং চটকদার কথায় বিশ্বাস করে এক অনিশ্চিত অন্ধকারে পা বাড়ায়, যার ফল সাগরে সলিল সমাধিসহ নানামাত্রিক দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগ-সর্বনাশ।
বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া দরকার। বিদেশে বৈধপন্থায় জনশক্তি প্রেরণ যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী অবৈধভাবে লোক পাঠানো প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

No comments

Powered by Blogger.