বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও জড়িত হবে না কেন? by মনজুরুল ইসলাম
ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমের সহায়তায় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সবাই অবগত যে, সম্প্রতি মন্ত্রিসভা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধনী-২০০৯ খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। এ আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন ও শর্ত সাপেক্ষে আউটার ক্যাম্পাস স্থাপন ও দূরশিক্ষণ পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধনীতে দূরশিক্ষণ অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে অনেক লেখালেখি হয়েছে। অনেকেই পক্ষে বলেছেন আবার দু-একজন বিপক্ষে বলেছেন। যার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এ শিক্ষা পদ্ধতির অপব্যবহার। ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি অভিমত কলাম পড়লাম। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ প্রোগ্রাম নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে—সরকারি তদারকির অনুপস্থিতি, ইউজিসির মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি, অনভিজ্ঞতা, ই-মিডিয়া ব্যবহার না করা ইত্যাদি। সুতরাং বেসরকারি খাতকে ঢালাওভাবে দোষারোপ না করে বরং এই কারণগুলো দূরীকরণে মনোযোগী হতে পারলে সরকারি-বেসরকারি যেকোনোভাবেই দূরশিক্ষণ পরিচালনা করা যেতে পারে।
১. যেহেতু সরকার দূরশিক্ষণ শিক্ষা পদ্ধতি বন্ধ করেও আবার চালু করতে চাইছে, সেহেতু তা নিশ্চয়ই অত্যাবশ্যকীয় বিবেচিত হয়েছে। কারণ, দেশকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে একটি সংযোজনী বা অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে এখন এর বিকল্প নেই। দেশের বৃহত্ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত আসন যথেষ্ট নয়। তড়িঘড়ি করে শত শত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা সম্ভব নয়—এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের দূরশিক্ষণ পদ্ধতির অনুমোদন দেওয়া উচিত।
২. যাঁরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগানে বিশ্বাস করেন না, যাঁরা উন্মুক্ত শিক্ষা পরিচালনা-প্রসার সম্বন্ধে সীমিত জ্ঞান রাখেন, যাঁরা প্রযুক্তি ও আইসিটিকে কাজে লাগিয়ে কর্মজীবী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুবিধামতো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিপক্ষে এবং যাঁরা আইসিটি ও এর প্রয়োগের সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁরাই কেবল দূরশিক্ষণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততাকে অসমর্থন করবেন। কারণ, উন্মুক্ত দূরশিক্ষণে উন্নত প্রযুক্তির (যেমন-ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও নিজেদের interactive যোগাযোগ, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং, সিডি, ওয়েবসাইট ইত্যাদি) ব্যবহারকে অন্যতম সহায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়।
৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রচলিত (conventional) পদ্ধতিতে শিক্ষা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ভালো করছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও কেউ ভালো করে, কেউ খারাপ করে। তাই বলে সবগুলোকেই একত্রে বন্ধ করা সমীচীন নয়। সুতরাং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির মতো দূরশিক্ষণ পদ্ধতির জন্যও অনুমতি দেওয়া উচিত। কারণ, শিক্ষা নিয়ে ঘৃণ্য ব্যবসা করতে চাইলে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায়ও করা সম্ভব ছিল। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
৪. দূরশিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষার একটি পদ্ধতি মাত্র, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি সুপরিচিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। মান নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই তা পরিচালিত করতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) মতো বেসরকারি খাতেও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যেতে পারে। কারণ, মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় বৃহত্ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। নতুন পাবলিক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা অনেক সময়সাপেক্ষ। সুতরাং যাচাই-বাছাই করে শর্ত সাপেক্ষে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বৈত পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের অনুমতি দেওয়া উচিত।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ ব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষাদানে ও গবেষণায় দেশে-বিদেশে আমার বেশ কয়েক বছর কাজ করার সুযোগ হয়েছে। গত এক দশকে পাঁচ-পাঁচটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান ও পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয়েছে। কিছুকাল বাউবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি প্রোগ্রাম কোর্স বাদ দিলে তাদের উচ্চশিক্ষায় অবদান খুবই নগণ্য। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বল্পসময়ের প্রোগ্রাম হওয়ায় ও কাঙ্ক্ষিত মানের অধিকসংখ্যক প্রোগ্রাম না হওয়ায় অনেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিগত কয়েক বছরের উপাত্ত দেখলেই এটা পরিষ্কার হবে। তা ছাড়া, গত ১৭ বছরে তাদের এখনো শিক্ষার্থী-শিক্ষক সার্বক্ষণিক অনলাইনে যোগাযোগ, সিডি/ভিসিডি, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং কিছুই তেমন নেই। শুধু ভর্তির শুরুতে কতগুলো পুস্তক দেওয়া হয়। কেবল বাংলাদেশ টেলিভিশনে স্বল্পসময়ের জন্য ব্রডকাস্টের ব্যবস্থা আছে প্রশংসনীয়ভাবেই। সে তুলনায় দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেকখানি এগিয়ে ছিল।
৬. বেসরকারি খাতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ ও অভিজ্ঞদের প্রচলিত প্রথার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার অনুমতি দিয়ে উত্সাহিত করা উচিত। সৃজনশীলতা ও গতিশীলতার জন্য বেসরকারি খাত সর্বদাই প্রশংসিত। সুতরাং হয় বেসরকারি খাতকে কোনো পদ্ধতিতেই শিক্ষা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়, নতুবা মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিচিত যেকোনো পদ্ধতিতেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত। তাহলে কি সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব? সম্ভব নয়। ইউজিসি ও সরকারি তদারকি এবং অভিজ্ঞদের দ্বারা দূরশিক্ষণের পাঠ্যতালিকা প্রণয়ন ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক এই দেশে বঞ্চিত ও কর্মজীবীসহ সবার সর্বোচ্চ উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। দূরশিক্ষণকে যদি এভাবে সংকুচিত করেই রাখা হয়, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই ছড়িয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে দেশের শিক্ষা অবশ্যই ব্যাহত হবে। আজ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো দূরশিক্ষণে অনেক এগিয়ে গেছে। দ্রুত উন্নয়নশীল মালয়েশিয়ায় ইতিমধ্যে দুটি বেসরকারি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করছে। সেখান থেকে আমাদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। সবকিছুতেই দেরিতে সিদ্ধান্ত নিলে জাতি হিসেবে আমরা সারাজীবন পিছিয়েই থাকব। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর দেরি করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশেও মান নিয়ন্ত্রণ এবং সার্থকভাবে দূরশিক্ষণ পরিচালনা করা সম্ভব—প্রয়োজন যথোপযুক্ত নিয়ন্ত্রণের, উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছা ও উদ্যোগের (সবাই খারাপ অর্থে ‘ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির’ নন) এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার।
অধ্যাপক ড. মনজুরুল ইসলাম: সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ওপেন, ভার্চুয়াল অ্যান্ড ডিসট্যান্স লার্নিং।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধনীতে দূরশিক্ষণ অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে অনেক লেখালেখি হয়েছে। অনেকেই পক্ষে বলেছেন আবার দু-একজন বিপক্ষে বলেছেন। যার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এ শিক্ষা পদ্ধতির অপব্যবহার। ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি অভিমত কলাম পড়লাম। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ প্রোগ্রাম নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে—সরকারি তদারকির অনুপস্থিতি, ইউজিসির মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি, অনভিজ্ঞতা, ই-মিডিয়া ব্যবহার না করা ইত্যাদি। সুতরাং বেসরকারি খাতকে ঢালাওভাবে দোষারোপ না করে বরং এই কারণগুলো দূরীকরণে মনোযোগী হতে পারলে সরকারি-বেসরকারি যেকোনোভাবেই দূরশিক্ষণ পরিচালনা করা যেতে পারে।
১. যেহেতু সরকার দূরশিক্ষণ শিক্ষা পদ্ধতি বন্ধ করেও আবার চালু করতে চাইছে, সেহেতু তা নিশ্চয়ই অত্যাবশ্যকীয় বিবেচিত হয়েছে। কারণ, দেশকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে একটি সংযোজনী বা অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে এখন এর বিকল্প নেই। দেশের বৃহত্ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত আসন যথেষ্ট নয়। তড়িঘড়ি করে শত শত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা সম্ভব নয়—এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের দূরশিক্ষণ পদ্ধতির অনুমোদন দেওয়া উচিত।
২. যাঁরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগানে বিশ্বাস করেন না, যাঁরা উন্মুক্ত শিক্ষা পরিচালনা-প্রসার সম্বন্ধে সীমিত জ্ঞান রাখেন, যাঁরা প্রযুক্তি ও আইসিটিকে কাজে লাগিয়ে কর্মজীবী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুবিধামতো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিপক্ষে এবং যাঁরা আইসিটি ও এর প্রয়োগের সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁরাই কেবল দূরশিক্ষণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততাকে অসমর্থন করবেন। কারণ, উন্মুক্ত দূরশিক্ষণে উন্নত প্রযুক্তির (যেমন-ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও নিজেদের interactive যোগাযোগ, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং, সিডি, ওয়েবসাইট ইত্যাদি) ব্যবহারকে অন্যতম সহায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়।
৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রচলিত (conventional) পদ্ধতিতে শিক্ষা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ভালো করছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও কেউ ভালো করে, কেউ খারাপ করে। তাই বলে সবগুলোকেই একত্রে বন্ধ করা সমীচীন নয়। সুতরাং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির মতো দূরশিক্ষণ পদ্ধতির জন্যও অনুমতি দেওয়া উচিত। কারণ, শিক্ষা নিয়ে ঘৃণ্য ব্যবসা করতে চাইলে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায়ও করা সম্ভব ছিল। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
৪. দূরশিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষার একটি পদ্ধতি মাত্র, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি সুপরিচিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। মান নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই তা পরিচালিত করতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) মতো বেসরকারি খাতেও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যেতে পারে। কারণ, মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় বৃহত্ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। নতুন পাবলিক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা অনেক সময়সাপেক্ষ। সুতরাং যাচাই-বাছাই করে শর্ত সাপেক্ষে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বৈত পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের অনুমতি দেওয়া উচিত।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ ব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষাদানে ও গবেষণায় দেশে-বিদেশে আমার বেশ কয়েক বছর কাজ করার সুযোগ হয়েছে। গত এক দশকে পাঁচ-পাঁচটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান ও পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয়েছে। কিছুকাল বাউবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি প্রোগ্রাম কোর্স বাদ দিলে তাদের উচ্চশিক্ষায় অবদান খুবই নগণ্য। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বল্পসময়ের প্রোগ্রাম হওয়ায় ও কাঙ্ক্ষিত মানের অধিকসংখ্যক প্রোগ্রাম না হওয়ায় অনেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিগত কয়েক বছরের উপাত্ত দেখলেই এটা পরিষ্কার হবে। তা ছাড়া, গত ১৭ বছরে তাদের এখনো শিক্ষার্থী-শিক্ষক সার্বক্ষণিক অনলাইনে যোগাযোগ, সিডি/ভিসিডি, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং কিছুই তেমন নেই। শুধু ভর্তির শুরুতে কতগুলো পুস্তক দেওয়া হয়। কেবল বাংলাদেশ টেলিভিশনে স্বল্পসময়ের জন্য ব্রডকাস্টের ব্যবস্থা আছে প্রশংসনীয়ভাবেই। সে তুলনায় দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেকখানি এগিয়ে ছিল।
৬. বেসরকারি খাতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ ও অভিজ্ঞদের প্রচলিত প্রথার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার অনুমতি দিয়ে উত্সাহিত করা উচিত। সৃজনশীলতা ও গতিশীলতার জন্য বেসরকারি খাত সর্বদাই প্রশংসিত। সুতরাং হয় বেসরকারি খাতকে কোনো পদ্ধতিতেই শিক্ষা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়, নতুবা মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিচিত যেকোনো পদ্ধতিতেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত। তাহলে কি সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব? সম্ভব নয়। ইউজিসি ও সরকারি তদারকি এবং অভিজ্ঞদের দ্বারা দূরশিক্ষণের পাঠ্যতালিকা প্রণয়ন ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক এই দেশে বঞ্চিত ও কর্মজীবীসহ সবার সর্বোচ্চ উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। দূরশিক্ষণকে যদি এভাবে সংকুচিত করেই রাখা হয়, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই ছড়িয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে দেশের শিক্ষা অবশ্যই ব্যাহত হবে। আজ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো দূরশিক্ষণে অনেক এগিয়ে গেছে। দ্রুত উন্নয়নশীল মালয়েশিয়ায় ইতিমধ্যে দুটি বেসরকারি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করছে। সেখান থেকে আমাদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। সবকিছুতেই দেরিতে সিদ্ধান্ত নিলে জাতি হিসেবে আমরা সারাজীবন পিছিয়েই থাকব। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর দেরি করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশেও মান নিয়ন্ত্রণ এবং সার্থকভাবে দূরশিক্ষণ পরিচালনা করা সম্ভব—প্রয়োজন যথোপযুক্ত নিয়ন্ত্রণের, উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছা ও উদ্যোগের (সবাই খারাপ অর্থে ‘ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির’ নন) এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার।
অধ্যাপক ড. মনজুরুল ইসলাম: সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ওপেন, ভার্চুয়াল অ্যান্ড ডিসট্যান্স লার্নিং।
No comments