তারা কেন এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন? -প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ
অনেক বড় সম্পাদক, সাংবাদিকরা বলছেন তাদের কন্ঠরোধ হয়েছে। কন্ঠটা রোধ হলো
কোথায়? কেউ কেউ ব্যক্তি স্বার্থ বা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের
দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মতামত দিয়েছে। কিন্তু সমগ্র দেশের জন্য বিলটি যে কতটা
গুরুত্বপূর্ণ সেটা তাদের মাথায় আসেনি। তারা শুধু তাদের কন্ঠরোধ হলো কি না
সেটাই দেখেন। কিন্তু তাদের তো কন্ঠরোধ হয়নি। গত রাতে দশম জাতীয় সংসদের ২২তম
অধিবেশনের সমাপনি বক্তব্যে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ প্রসঙ্গে
তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮ এটা
যে গুরুত্বপূর্ণ? অথচ এই বিল পাস হওয়ার সাথে সাথে অনেকেই মতামত দিয়েছেন।
দু:খ লাগে কেউ কেউ শুধু ব্যক্তি স্বার্থ থেকে বা তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের
স্বার্থে দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তারা মতামত দিয়েছেন। একবারও চিন্তা করেননি
সমগ্র সমাজ, সমগ্র দেশ তার স্বার্থে যে এই বিলটা কত গুরুত্বপূর্ণ, এই
বিষয়টা তাদের মাথায় আসেনি। দেখলাম কয়েকজন স্বনামধন্য এডিটর, সাংবাদিক বা
সমাজের বিজ্ঞজন তারা এটার বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন। তারা শুধু তাদের কণ্ঠরোধ
হলো কিনা সেটাই দেখে। কই কণ্ঠ তো তাদের রোধ হয়নি, কণ্ঠ আছে বলেই তো তারা
মতামত দিচ্ছেন। কণ্ঠরোধ করলে তো মতামত দেবার মতো ক্ষমতা থাকতো না। আর
কণ্ঠরোধটা যে কি সেটা মার্শাল ‘ল’ যখন ছিল তখন বুঝেছে। এদেশে অবৈধ ক্ষমতা
দখলকারীরা ছিল অবশ্য যারা তাদের পদলেহন করেছে, তোষামোদি করেছে, তাদের
অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যারা তাদের অন্যায় কথা বলতে গেছে তাদের অসুবিধা
হয়েছে। বেশি দূর যেতে হবে না ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের
আমলে কিভাবে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছে সেটা তারা ভুলে গেছেন। এখন তারা
ডিজিটাল আইন করার পরেই তারা তাদের কণ্ঠরোধের কথা বললেন। কণ্ঠরোধ কোথায়? এই
দেশে একটা টেলিভিশন ছিল। কোন সরকার সাহস পেয়েছে এই টেলিভিশনকে বেসরকারি
হাতে তুলে দিতে। কোনো সরকারই সাহস পাইনি। আমরা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন,
এখন মধ্য রাত পর্যন্ত টিভিতে টক ‘শো’ হয় সেখানে যা খুশি আলোচনা করতে
পারছে। কেউ যেয়ে তো তাদের গলা চেঁপে ধরছে না? কেউ তো তাদের বাঁধা দেইনি।
শুধু তাদের সাংবাদিকতার বিষয়টাই তারা দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,
সাংবাদিকতা হবে গঠণমূলক। সাংবাদিকতা থাকবে দায়িত্বশীল, সমাজের জন্য দেশের
জন্য, মানুষের জন্য। নিশ্চয়ই সাংবাদিকতা সংঘাতের জন্য হবে না। সাংবাদিকতা
দেশের অকল্যাণের জন্য হবে না। দেশের ভাবমুর্তি নষ্টের জন্য হবে না। এমন
সাংবাদিকতা থাকতে হবে যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষের ভেতরে আত্মবিশ্বাস
আনবে, মানুষের ভেতরে সন্দেহের সৃষ্টি করবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করবে না।
মানুষের মধ্য সংঘাত সৃষ্টি করবে না। একটা সংঘাত পূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে
সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে উস্কে দেবে না। সেটাই তো হওয়া উচিত। সমাজকে সঠিকভাবে
পরিচালনার দিকেই নিয়ে যাবে। আমরা তো সেরকমই সাংবাদিকতাই চাই। প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ইউটিউব, ফেসবুকের ভালো দিক আছে। আবার খারাপ দিকও আছে। খারাপ
বিষয়গুলো সমাজের জন্য অশুভ বিষয় বয়ে আনে। অনেক ছেলেমেয়ে এর প্রতি এডিকটেড
হয়ে যায়। অপব্যবহার হয়। অপপ্রচার হয়। এমনভাবে অপপ্রচার হয় যে পারিবারিক
অসন্তোষ তৈরি হয়। আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে। এইসব বিষয়তো আমাদের দেখতে হবে। এ
নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা
আমাদের একান্ত দরকার। অনেকে এর মধ্যে এত বেশি ডুবে যায় যে, মানসিক ভারসাম্য
হারিয়ে ফেলে। অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটা অনেক সময় সমাজের জন্য সংসারের
জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। চরিত্রহনন শুরু হয়। এই কুপ্রভাবের ফলটা আমাদের
সমাজের জন্য মোটেই ভালো নয়। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দিকটাও আছে। এসব মাধ্যম
যদি সুস্থভাবে পরিচালিত হয় তাহলে সেটা ভালো হতে পারে। আবার উল্টো হলে সমাজ ও
সংসার ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। সকলের জন্য নিরাপত্তা অত্যন্ত
প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। সে লক্ষ্যই নিয়ে কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল
পাস হয়েছে। এখানে শুধূ গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারের কথা চিন্তা করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে তারা কেন এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন। যেটা করেছি
জাতির উদ্দেশ্যে, দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে করেছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার
কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যে যার মতো লিখছে,কথা বলছে। দেশের এত
উন্নয়ন তারা চোখে দেখে না। এমন কিছু পত্রিকা আছে যেগুলো দেখলে মনে হয় এই
সরকার খুবই খারাপ কাজ করছে। আমার প্রশ্ন সরকার কি খারাপ কাজ করছে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের মতে দেশে উন্নয়ন বলে কিছুই হয়নি। এটাই তাদের
চরিত্র। কিছু মানুষ আছে তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তাই তারা কোনকিছুই ভালো
চোখে দেখতে পারে না। তাই আমি এসব ভেবে সেগুলো দেখি না। আমি দেশের জন্য কাজ
করি, দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। আমার আত্মবিশ^াস আছে। কারও লেখা পড়ে,
পত্রিকা পড়ে আমাকে শিখতে হবে না। আমি জানি। তবে পত্রিকা দেখে আমি তথ্য
সংগ্রহ করি। কেউ কষ্টে থাকলে তাদের লাঘবের করার চেষ্টা করি। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের
পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দিনবদলের সনদ দিয়েছিলাম। মুষ্টিমেয় লোক ছিলো
ক্ষমতাশালী। দেশের বড় একটি অংশ অবহেলিত ছিলো। আমরা ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক দল
হিসেবে যে আর্থিক নীতিমালা করা দরকার তা করেছি। তাই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন
করতে সক্ষম হয়েছি। অর্থনীতিকে যথেষ্ট শক্তিশালি করেছি। বাজেট বাস্তবায়ন
করতে আজ কারও কাছে হাত পাততে হয় না। এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি
পরিকল্পিতভাবে এগোনোর কারণে। তাই বাংলাদেশ আজ বিশে^র কাছে রোল মডেল। সারা
বিশে^ জঙ্গীবাদ একটি সমস্যা। আমরা সন্ত্রাস,জঙ্গীবাদ নির্মুল করতে পেরেছি।
এখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আমাদের পরিকল্পনার মুল টার্গেট
ছিলো গ্রামীন অর্থণীতি। তৃনমূলের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্য ছিলো। সবকিছুতে
বিশে^ একটা নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছি। দেশকে নিজের পায়ে
দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। একসময় বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় নিয়ে এসে
বিলি করা হতো। এখন কিন্তু আর সেই অবস্থা নেই। সংসদ অধিবেশন প্রসঙ্গে তিনি
বলেন, এই সেশন আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ১০ দিন সংসদ চলেছে। এর
মধ্যে ১৮টি বিল পাস করেছি। প্রতিটি বিলে তারা পুংখানুপুংখ ভাবে পড়েছেন।
মতামত দিয়েছেন। এই যে আগ্রহ এটা ভালো। দশম জাতীয় সংসদে কোন অশালীন কথা নেই।
এটা গণতেন্ত্রর ভিতকে শক্তিশালি করেছে, মজবুত করেছে। মানুষের আস্থা অর্জন
করতে সক্ষম হয়েছি। এক সময় এই পার্লামেন্ট অনেক নোংরা ভাষা ব্যবহার হয়েছে।
একসময় মানুষের কাছে সংসদ নিয়ে আগ্রহ কমে গিয়েছিলো। কিন্তু এবার সংসদের ওপর
আস্থা ও বিশ^াস অর্জন হয়েছে। এবার বিলে অনেক বিষয়ের সঙ্গে সামাজিক বিষয়
নিয়েও বিল পাস হয়েছে। যৌতুক নিয়ে বিল পাস হয়েছে। সড়ক পরিবহন বিল প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, এটা দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি করা হয়েছে। সকলের সঙ্গে পরামর্শ করা
হযেছে। প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করা হয়েছে। অনেকে প্রশংসা
করেছেন। কোন খুঁত তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা
দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলো। তারা কিন্তু মেধাবি। কিন্তু তারা কখনও স্বীকৃতি
পায়নি। বা তারাও চায়নি। এটাই হলো বাস্তবতা। কর্মক্ষেত্রে যেনো প্রবেশ করতে
পারে, জীবনটাকে যেনো উন্নতি করতে পারে সেটা চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫
বছরের শেষ বেলা। পড়ন্ত বেলা। আবার নির্বাচন হবে। যারা জয়লাভ করবে তারা
ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রর ভীতকে শক্তিশালি করেছি, মজবুত করেছি।
যারা এটা দেখেন না তাদের আসলে নড়বড়ে অবস্থা। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার
আস্থা আছে,বিশ^াস আছে। সাধারণ জনগণ কিন্তু এসব বোঝে। আবার যদি ক্ষমতায় আসি
তাহলে প্রতিটি গ্রামকে আমি শহরে পরিণত করবো। আমরা সমগ্র দেশের উন্নয়ন করে
যাচ্ছি। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার
মধ্যে উন্নত দেশ।
No comments