কাজ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা সমন্বয়হীনতা -বিশেষ সাক্ষাৎকারে: সাঈদ খোকন by এ কে এম জাকারিয়া
দায়িত্ব
নেওয়ার পর ৬ মাসের বেশি সময় পার করেছেন ঢাকার দুই মেয়র। তাঁদের বেশ কিছু
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে তাঁরা কতটুকু এগিয়ে
গেলেন, কী কী করতে যাচ্ছেন, কোনো বাধা বা সমস্যার মুখে পড়ছেন কি না—এসব
নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।
প্রথম আলো : মেয়র হওয়ার আগে কিছু প্রতিশ্রুতি ছিল। মাস ছয়েকের মধ্যে কী বা কতটুকু করতে পারবেন তারও ভাবনা নিশ্চয়ই ছিল। তার কতটুকু করতে পারলেন?
সাঈদ খোকন : এই ছয় মাস আমি প্রতিটি দিন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। খুব কম ছুটির দিনই ব্যক্তিগতভাবে উপভোগ করতে পেরেছি। কোরবানির ঈদের দিনও বাইরে-বাইরে কাটিয়েছি। এসব বলছি এ জন্য, এই সময়ের মধ্যে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। ছয় মাসে অনেক কিছু করে ফেলব, এমন কোনো ম্যাজিক আমার কাছে নেই। এই সময়ের মধ্যে কীভাবে কাজ করব, তার একটি দিকনির্দেশনা ঠিক করার চেষ্টা করেছি।
প্রথম আলো : এই সময়ের মধ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ও চ্যালেঞ্জ কোনটি বলে মনে হচ্ছে?
সাঈদ খোকন : বড় সমস্যা হচ্ছে সেবামূলক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা। ঢাকা শহরের নাগরিক সেবা ও সুবিধা নিশ্চিত করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সংখ্যা ৫৬টি। একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সমন্বয় নেই। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে আমরা একটি সেমিনার করেছি। সেখানে দেখা গেল ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঙ্গে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমি বলব, সমন্বয়হীনতাই সবচেয়ে বড় সমস্যা কাজ করার ক্ষেত্রে।
প্রথম আলো : এই সমস্যাটি পুরোনো। তবে আপনি কীভাবে কাজ করবেন বা এই সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে?
সাঈদ খোকন : আমরা ঢাকার দুই মেয়রই কাজ করতে গিয়ে সমস্যাটির মুখে পড়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার কথা বলেছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি, তিনি যাতে এর নেতৃত্ব দেন। তিনি আমাদের সমস্যাটি বুঝতে পেরেছেন এবং বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেছেন। বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটা হয়ে গেলে সমন্বয়হীনতার সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।
প্রথম আলো : আর কোনো বাধা বা চ্যালেঞ্জ?
সাঈদ খোকন : ঢাকা যেভাবে বিভক্ত হয়েছে তাতে দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে আয় ও ব্যয় দুই ক্ষেত্রেই বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে যে রাজস্ব আয় হতো তার ৬৫ ভাগ এখন পাচ্ছে ঢাকা উত্তর। আর আমার ঢাকা দক্ষিণ পাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আবার ঢাকা দক্ষিণে ব্যয় অনেক বেশি। ঢাকা দক্ষিণ অনেকটা প্রশাসনিক রাজধানীর মতো, ফলে এর অপারেটিং কস্ট অনেক বেশি। অবিভক্ত ঢাকায় আগে রাজস্ব আয়ের ৬৫ ভাগ খরচ হতো ঢাকা দক্ষিণে। এখন বিষয়টি উল্টে গেছে। ফলে সাধারণ পরিচালনা কর্মকাণ্ডের বাইরে নিজস্ব অর্থে নতুন কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
প্রথম আলো : ২০০৯ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী নানা খাতে কর আদায়ের সুযোগ সিটি করপোরেশনের রয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে এসব দিকে নজর দিতে সমস্যা কোথায়?
সাঈদ খোকন : এটা আমাদের জন্য এক বড় সুযোগ। আইনগত অধিকার থাকলেও এটা কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আইন হয়েছে কিন্তু বিধিবিধান হয়নি। সিটি করপোরেশনের মধ্যে নানাভাবে কর ও রাজস্ব আদায় হচ্ছে, যার একটি ভাগ সিটি করপোরেশনের পাওয়ার কথা। আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমি আইনে দেওয়া অধিকার ও সুযোগের বিষয়টি তাঁর কাছে তুলে ধরেছি। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন। এটা করা গেলে আমরা অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়ে যাব। সরকারের কাছে থোক বরাদ্দ চাওয়া ও তা অনুমোদন পাওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আমরা নিজেদের অর্থেই নিজেরা চলার পরিস্থিতি তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছি।
প্রথম আলো : জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করতে তো কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
সাঈদ খোকন : আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। শান্তিনগরের জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ার পর আমি সেখানে গিয়েছি। সমস্যাটির কিছু দিক আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি, আগামী বর্ষার আগেই পুরো না হলেও এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করে ফেলা যাবে।
প্রথম আলো : নির্বাচনী ইশতেহারে আপনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাঁচটি বিষয় আপনি অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছিলেন। যানজট এর মধ্যে ১ নম্বরে ছিল। এ ক্ষেত্রে তো কোনো অগ্রগতি নেই। পরিস্থিতি তো দিনে দিনে শোচনীয় হচ্ছে।
সাঈদ খোকন : এ ক্ষেত্রেও সেই সমন্বয়হীনতার কথাই বলতে হয়। যানজট দূর করতে এককভাবে সিটি করপোরেশনের পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখা কঠিন। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা যার যার মতো করে প্রকল্প নিচ্ছে। শান্তিনগর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার কিছু আমার সিটি করপোরেশন জানে না। এটা তো হওয়া উচিত না। অথচ একটি কার্যকর পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য ঢাকা ট্রান্সপোর্ট সমন্বয় বোর্ড রয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও নানা সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম আলো : তা হলে তো যানজটের ক্ষেত্রে কোনো আশার কথা শোনা যাচ্ছে না।
সাঈদ খোকন : বিভিন্ন চলমান প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে উন্নয়ন কার্যক্রম চলার সময় কিছু ভোগান্তিও নিতে হয়। ঢাকায় মেট্রোরেল তৈরির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এটা হলে নগরবাসীর গণপরিবহনের ক্ষেত্রে একটা বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তবে এর কাজ শুরু হলে জনদুর্ভোগ হবেই। শান্তিনগর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত যে ফ্লাইওভার হবে, তার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। আমি বুঝতে পারছি যে আগামী তিন-চার বছর একটা বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাবে।
প্রথম আলো : গুলিস্তান এলাকার বিশৃঙ্খলা, হকারদের রাস্তা দখল, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বাসের দখলে চলে যাওয়া—এসব দূর করার ক্ষেত্রেও তো কিছু হয়নি।
সাঈদ খোকন : হকারদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা কাজ শুরু করেছি। তালিকা করে পুনর্বাসন করা হবে। গুলিস্তান থেকে বাস স্টপেজ সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি বলব যে এই নিয়ে হোমওয়ার্ক চলছে। আপনাদের কথা দিচ্ছি, শিগগিরই ক্লিন গুলিস্তানের জন্য কাজ শুরু করব।
প্রথম আলো : আপনার অগ্রাধিকারের মধ্যে আরও একটি বিষয় ছিল ‘দূষণমুক্ত নাব্য ও নিরাপদ বুড়িগঙ্গা’। এ ব্যাপারে কিছু এগোল?
সাঈদ খোকন : আমরা আপাতত বুড়িগঙ্গা নদীর সামনের জায়গা মানে ওয়াটার ফ্রন্ট উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। আমরা নদীর পাড় পরিষ্কার করা ও সেখানে নানা কিছু করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। নকশা তৈরির কাজ চলছে। অনুমোদনের পর আগামী বছরের শেষে কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।
প্রথম আলো : পৌরকর নির্ধারণ ও আদায় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্সসহ এ ধরনের সেবা নিতে পয়সা গুনতে হয় বলেও অভিযোগ আছে। আপনি মেয়র হওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
সাঈদ খোকন : পরিস্থিতির আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এই দাবি করব না যে দুর্নীতি একদম চলে গেছে। আমি নিজে নিয়মিত কার্যালয়গুলোতে যাই। যেকোনো অভিযোগ পাওয়ামাত্র তা বিবেচনায় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করি, ব্যবস্থা নিই। দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে কিছু জিনিস আমরা অনলাইনভিত্তিক করে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছি। যেমন: জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স—এসব অনলাইনে করা যাবে। হোল্ডিং ট্যাক্সের ক্ষেত্রে স্বনির্ধারণী পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি এবং তা অনলাইনে করা যাবে। এসব কার্যকর হলে দুর্নীতি আরও কমে আসবে।
প্রথম আলো : নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করার জন্য সামনে আর কী কী উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন?
সাঈদ খোকন : আমরা শিগগিরই রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে দেখবেন কাজের ধুম শুরু হয়ে গেছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে আমরা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। পরে তা অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও সম্প্রসারণ করার ইচ্ছা রয়েছে। ৫০টি স্থানে ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। আমরা সেগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসব। সেখানে অভিযোগ বক্স থাকবে। আমরা শক্ত হাতে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করব। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
প্রথম আলো : আপনি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র, কিন্তু থাকেন ঢাকা উত্তরে। এতে সমস্যা হয় না। আপনার ভোটারদের এ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই?
সাঈদ খোকন : যানজটের কারণে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হয়। আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবছি কী করা যায়। তবে আমার ভোটারদের অভিযোগ নেই। কারণ, আমি অফিসের বাইরেও সপ্তাহে দু-তিন দিন মানুষের সঙ্গে কাটাই।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
সাঈদ খোকন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রথম আলো : মেয়র হওয়ার আগে কিছু প্রতিশ্রুতি ছিল। মাস ছয়েকের মধ্যে কী বা কতটুকু করতে পারবেন তারও ভাবনা নিশ্চয়ই ছিল। তার কতটুকু করতে পারলেন?
সাঈদ খোকন : এই ছয় মাস আমি প্রতিটি দিন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। খুব কম ছুটির দিনই ব্যক্তিগতভাবে উপভোগ করতে পেরেছি। কোরবানির ঈদের দিনও বাইরে-বাইরে কাটিয়েছি। এসব বলছি এ জন্য, এই সময়ের মধ্যে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। ছয় মাসে অনেক কিছু করে ফেলব, এমন কোনো ম্যাজিক আমার কাছে নেই। এই সময়ের মধ্যে কীভাবে কাজ করব, তার একটি দিকনির্দেশনা ঠিক করার চেষ্টা করেছি।
প্রথম আলো : এই সময়ের মধ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ও চ্যালেঞ্জ কোনটি বলে মনে হচ্ছে?
সাঈদ খোকন : বড় সমস্যা হচ্ছে সেবামূলক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা। ঢাকা শহরের নাগরিক সেবা ও সুবিধা নিশ্চিত করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সংখ্যা ৫৬টি। একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সমন্বয় নেই। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে আমরা একটি সেমিনার করেছি। সেখানে দেখা গেল ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঙ্গে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমি বলব, সমন্বয়হীনতাই সবচেয়ে বড় সমস্যা কাজ করার ক্ষেত্রে।
প্রথম আলো : এই সমস্যাটি পুরোনো। তবে আপনি কীভাবে কাজ করবেন বা এই সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে?
সাঈদ খোকন : আমরা ঢাকার দুই মেয়রই কাজ করতে গিয়ে সমস্যাটির মুখে পড়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার কথা বলেছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি, তিনি যাতে এর নেতৃত্ব দেন। তিনি আমাদের সমস্যাটি বুঝতে পেরেছেন এবং বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেছেন। বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটা হয়ে গেলে সমন্বয়হীনতার সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।
প্রথম আলো : আর কোনো বাধা বা চ্যালেঞ্জ?
সাঈদ খোকন : ঢাকা যেভাবে বিভক্ত হয়েছে তাতে দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে আয় ও ব্যয় দুই ক্ষেত্রেই বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে যে রাজস্ব আয় হতো তার ৬৫ ভাগ এখন পাচ্ছে ঢাকা উত্তর। আর আমার ঢাকা দক্ষিণ পাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আবার ঢাকা দক্ষিণে ব্যয় অনেক বেশি। ঢাকা দক্ষিণ অনেকটা প্রশাসনিক রাজধানীর মতো, ফলে এর অপারেটিং কস্ট অনেক বেশি। অবিভক্ত ঢাকায় আগে রাজস্ব আয়ের ৬৫ ভাগ খরচ হতো ঢাকা দক্ষিণে। এখন বিষয়টি উল্টে গেছে। ফলে সাধারণ পরিচালনা কর্মকাণ্ডের বাইরে নিজস্ব অর্থে নতুন কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
প্রথম আলো : ২০০৯ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী নানা খাতে কর আদায়ের সুযোগ সিটি করপোরেশনের রয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে এসব দিকে নজর দিতে সমস্যা কোথায়?
সাঈদ খোকন : এটা আমাদের জন্য এক বড় সুযোগ। আইনগত অধিকার থাকলেও এটা কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আইন হয়েছে কিন্তু বিধিবিধান হয়নি। সিটি করপোরেশনের মধ্যে নানাভাবে কর ও রাজস্ব আদায় হচ্ছে, যার একটি ভাগ সিটি করপোরেশনের পাওয়ার কথা। আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমি আইনে দেওয়া অধিকার ও সুযোগের বিষয়টি তাঁর কাছে তুলে ধরেছি। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন। এটা করা গেলে আমরা অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়ে যাব। সরকারের কাছে থোক বরাদ্দ চাওয়া ও তা অনুমোদন পাওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আমরা নিজেদের অর্থেই নিজেরা চলার পরিস্থিতি তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছি।
প্রথম আলো : জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করতে তো কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
সাঈদ খোকন : আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। শান্তিনগরের জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ার পর আমি সেখানে গিয়েছি। সমস্যাটির কিছু দিক আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি, আগামী বর্ষার আগেই পুরো না হলেও এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করে ফেলা যাবে।
প্রথম আলো : নির্বাচনী ইশতেহারে আপনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাঁচটি বিষয় আপনি অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছিলেন। যানজট এর মধ্যে ১ নম্বরে ছিল। এ ক্ষেত্রে তো কোনো অগ্রগতি নেই। পরিস্থিতি তো দিনে দিনে শোচনীয় হচ্ছে।
সাঈদ খোকন : এ ক্ষেত্রেও সেই সমন্বয়হীনতার কথাই বলতে হয়। যানজট দূর করতে এককভাবে সিটি করপোরেশনের পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখা কঠিন। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা যার যার মতো করে প্রকল্প নিচ্ছে। শান্তিনগর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার কিছু আমার সিটি করপোরেশন জানে না। এটা তো হওয়া উচিত না। অথচ একটি কার্যকর পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য ঢাকা ট্রান্সপোর্ট সমন্বয় বোর্ড রয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও নানা সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম আলো : তা হলে তো যানজটের ক্ষেত্রে কোনো আশার কথা শোনা যাচ্ছে না।
সাঈদ খোকন : বিভিন্ন চলমান প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে উন্নয়ন কার্যক্রম চলার সময় কিছু ভোগান্তিও নিতে হয়। ঢাকায় মেট্রোরেল তৈরির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এটা হলে নগরবাসীর গণপরিবহনের ক্ষেত্রে একটা বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তবে এর কাজ শুরু হলে জনদুর্ভোগ হবেই। শান্তিনগর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত যে ফ্লাইওভার হবে, তার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। আমি বুঝতে পারছি যে আগামী তিন-চার বছর একটা বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাবে।
প্রথম আলো : গুলিস্তান এলাকার বিশৃঙ্খলা, হকারদের রাস্তা দখল, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বাসের দখলে চলে যাওয়া—এসব দূর করার ক্ষেত্রেও তো কিছু হয়নি।
সাঈদ খোকন : হকারদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা কাজ শুরু করেছি। তালিকা করে পুনর্বাসন করা হবে। গুলিস্তান থেকে বাস স্টপেজ সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি বলব যে এই নিয়ে হোমওয়ার্ক চলছে। আপনাদের কথা দিচ্ছি, শিগগিরই ক্লিন গুলিস্তানের জন্য কাজ শুরু করব।
প্রথম আলো : আপনার অগ্রাধিকারের মধ্যে আরও একটি বিষয় ছিল ‘দূষণমুক্ত নাব্য ও নিরাপদ বুড়িগঙ্গা’। এ ব্যাপারে কিছু এগোল?
সাঈদ খোকন : আমরা আপাতত বুড়িগঙ্গা নদীর সামনের জায়গা মানে ওয়াটার ফ্রন্ট উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। আমরা নদীর পাড় পরিষ্কার করা ও সেখানে নানা কিছু করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। নকশা তৈরির কাজ চলছে। অনুমোদনের পর আগামী বছরের শেষে কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।
প্রথম আলো : পৌরকর নির্ধারণ ও আদায় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্সসহ এ ধরনের সেবা নিতে পয়সা গুনতে হয় বলেও অভিযোগ আছে। আপনি মেয়র হওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
সাঈদ খোকন : পরিস্থিতির আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এই দাবি করব না যে দুর্নীতি একদম চলে গেছে। আমি নিজে নিয়মিত কার্যালয়গুলোতে যাই। যেকোনো অভিযোগ পাওয়ামাত্র তা বিবেচনায় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করি, ব্যবস্থা নিই। দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে কিছু জিনিস আমরা অনলাইনভিত্তিক করে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছি। যেমন: জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স—এসব অনলাইনে করা যাবে। হোল্ডিং ট্যাক্সের ক্ষেত্রে স্বনির্ধারণী পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি এবং তা অনলাইনে করা যাবে। এসব কার্যকর হলে দুর্নীতি আরও কমে আসবে।
প্রথম আলো : নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করার জন্য সামনে আর কী কী উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন?
সাঈদ খোকন : আমরা শিগগিরই রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে দেখবেন কাজের ধুম শুরু হয়ে গেছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে আমরা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। পরে তা অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও সম্প্রসারণ করার ইচ্ছা রয়েছে। ৫০টি স্থানে ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। আমরা সেগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসব। সেখানে অভিযোগ বক্স থাকবে। আমরা শক্ত হাতে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করব। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
প্রথম আলো : আপনি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র, কিন্তু থাকেন ঢাকা উত্তরে। এতে সমস্যা হয় না। আপনার ভোটারদের এ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই?
সাঈদ খোকন : যানজটের কারণে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হয়। আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবছি কী করা যায়। তবে আমার ভোটারদের অভিযোগ নেই। কারণ, আমি অফিসের বাইরেও সপ্তাহে দু-তিন দিন মানুষের সঙ্গে কাটাই।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
সাঈদ খোকন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments