এশিয়ার শিরায় শিরায় ব্লক থাকলে হার্ট কাজ করবে না

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও উন্নয়ন সহযোগিতায় মিলেমিশে কাজ করার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শেষ হল পঞ্চম ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলন। আফগানিস্তানবিষয়ক এ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করে ইসলামাবাদ ও কাবুল। মোট ৩১টি দেশ এবং ১২টি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বৃহস্পতিবার দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে (বুধবার) মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী কবি আল্লামা ইকবালের ‘হার্ট অব এশিয়া’ কবিতাটির কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। ইকবালের ওই কবিতায় সমগ্র এশিয়াকে শরীর ধরে কাবুলকে তার ‘হার্ট অব এশিয়া’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এশিয়ায় আফগানিস্তানের গুরুত্ব বোঝাতে ইকবালের এ কবিতাটিই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন ঘানি। পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ওই কবিতার সূত্র ধরে বলেন, এশিয়ার শিরায় শিরায় ব্লক থাকলে হার্ট কাজ করবে না। ইকবালের উপমা ব্যবহার করে সুষমা আঞ্চলিক সংঘাত ও সন্ত্রাসবাদকে ইঙ্গিত করেন। এ সম্মেলনে সুষমা স্বরাজ আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ দমন ও আফিগানিস্তানে স্থিতিশীলতা-উন্নয়নে ভারতের অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন। প্রতিবেশী বৈরী পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে সুষমা স্বরাজ বলেন, পাকিস্তান যখন চাইবে তখনই তাদের সহায়তা করতে ভারত প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীরা যাতে ঘাঁটি বা আবাস গড়তে না পারে তার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ সময় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে সুষমা বলেন,
‘আমরা এখন অনেক পরিণত হয়েছি। দু’দেশের আত্মবিশ্বাসও যথেষ্ট বেড়েছে। দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককেও আরও জোরদার করে তুলতে হবে।’ ভারত পাকিস্তানের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দু’দেশ আবার শান্তি আলোচনা শুরু করবে। এ ছাড়া আগামী বছর সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদ যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যা গত ১২ বছরে প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তান সফর বলে বিবেচিত হবে। এদিকে হার্ট অব এশিয়া সম্মেলনে তেমন কোনো অগ্রগতি না হলেও আঞ্চলিক উন্নয়নের স্বার্থে ৩টি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এক. আফগানিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা। দুই. পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠায় (সিবিএম) ক্রমবর্ধমান টেকসই পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং তিন. আঞ্চলিক বিভিন্ন সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় বৃহত্তর সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা। পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যস্থতায় তালেবানদের সঙ্গে বৈঠকে সম্মত হয়েছে আফগান সরকার। এর আগে ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গেও বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে দুই নেতা সন্ত্রাস ও কাশ্মীর সমস্যাসহ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন সুষমা।

No comments

Powered by Blogger.