মাত্রাহীন মুদ্রা পাচার
এক বছরে বিদেশে অর্থ পাচার ৩৩ শতাংশের বেশি বেড়ে যাওয়ার তথ্যটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির যে চিত্রটি বের হয়ে আসছে, তা খুবই হতাশার। প্রমাণ হচ্ছে, দেশে মানুষের হাতে অর্থ রয়েছে কিন্তু তা দেশে কাজে লাগানো হচ্ছে না বা যাচ্ছে না। ফলে তা বিদেশে পাচারের প্রবণতা মাত্রাছাড়াভাবে বাড়ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৬ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। এর আগের বছর (২০১২) অর্থ পাচারের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। মুদ্রা পাচার একটি বাস্তবতা এবং এটা হয়তো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভবও নয়, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে হারে এটা বাড়ছে, তা খুবই অস্বাভাবিক। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৩ সালে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬)
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, পল্লী উন্নয়ন, শিল্প ও ভৌত অবকাঠামো খাতের মোট উন্নয়ন বাজেটের সমান। প্রথম আলো পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংকগুলোতে অলস পড়ে রয়েছে। যাদের হাতে অর্থ রয়েছে তাদের একটি অংশ তা ব্যবহার করছে না, আর অন্য একটি অংশ তা বিদেশে পাচার করছে। দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না, ফলে নতুন কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে মুদ্রা পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর করণীয় সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে নানা আইনি পদক্ষেপ ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে হয়তো কিছু ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু দেশের মানুষের হাতে থাকা বিপুল অর্থ কেন দেশে বিনিয়োগ না হয়ে বিদেশে পাচার হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। জানতে হবে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থাহীনতা তৈরি হলো কেন? এই উত্তরগুলো বের করে এর সমাধানেও মনোযোগী হতে হবে।
No comments