বাগাড়ম্বর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না by রবার্ট ফিস্ক
আইসেনহাওয়ার
১৯৫৬ সালে অ্যান্থনি ইডেনকে কিছু অভব্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, যখন তিনি
সিদ্ধান্ত নিলেন, মিসরে ব্রিটেনের প্রতারণামূলক যুদ্ধ শেষ হওয়া উচিত। তিনি
বলেছিলেন, ‘সেনারা, থামো এবার।’ এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় বেশ বিখ্যাত। কথাটি
এখন রাজনীতিবিদ ও ইতিহাসবিদদের জন্য পুনরুচ্চারণ করা জরুরি। একই সঙ্গে সেই
সব নির্বোধ ব্যক্তির উদ্দেশেও এটা পুনরুচ্চারণ করা জরুরি, যারা নিজেদের
অনিঃশেষ যুদ্ধের ভবিষ্যৎ-বক্তা হিসেবে মনে করে।
প্রতিটি সকালেই যেন আরেকটি হলিউডি নিষ্ঠুরতার গল্প শোনার জন্য আমার ঘুম ভাঙে, যার গল্পকার হচ্ছে আমাদের গোপন পুলিশ বা জনসংযোগ প্রভাবিত রাজনৈতিক নেতারা। জার্মানির শীর্ষ গোয়েন্দা আমাদের ‘সন্ত্রাসী বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে’ সতর্ক করে দেন, আমি তাঁর বিশেষজ্ঞ মতামত মেনে নিই, কারণ বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার ব্যাপারে জার্মানির দক্ষতা প্রমাণিত। ওদিকে একজন মেধাবী ও সুস্থ মস্তিষ্কের ইতিহাসবিদ ইউরোপের দুর্দশাকে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেকেই মনে করে, প্যারিস হত্যাকাণ্ড ‘প্যারিসকে চিরদিনের জন্য বদলে’ দিয়েছে বা ‘ফ্রান্সকেই চিরতরে বদলে’ দিয়েছে। কিন্তু প্যারিস হামলাকে ১৯৪০ সালের জার্মান দখলদারির সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। একঘেয়ে প্রকৃতির ফরাসি দার্শনিক বার্নার্ড অঁরি-লেভি বলেই যাচ্ছেন, আইএস হচ্ছে ‘ফ্যাসিস্টইসলামিস্ট’।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৮২ সালে বৈরুতের সাবরা-শাতিলা শরণার্থীশিবিরে যে খ্রিষ্টান খুনিরা ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছিল, তখন কিন্তু অঁরি ইসরায়েলের এই লেবানিজ জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘ফ্যাসিস্টক্রিশ্চিয়ান’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন বলে আমার মনে পড়ে না। সেটা এক সন্ত্রাসী হামলাই ছিল, যার সঙ্গে আমি পরিচিত। দুজন সহকর্মী সাংবাদিককে নিয়ে আমি সেই শরণার্থীশিবিরে গিয়েছিলাম, ধর্ষণের শিকার ও কচুকাটা হওয়া মানুষের সারি সারি লাশ পড়ে আছে। মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত ও সেখানকার টাকায় পরিচালিত ইসরায়েলি সেনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখলেও তারা কিছুই করেনি। কিন্তু তারপরও একজন ফিলিস্তিনি রাজনীতিক বলেননি যে এ কারণে ‘মধ্যপ্রাচ্য চিরদিনের জন্য বদলে গেছে।’ বৈরুতে ১ হাজার ৭০০ বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়ার পরও যদি ‘বিশ্বযুদ্ধ’ ঘোষিত না হয়, তাহলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ১৩০ জন নিরীহ মানুষ মারা যাওয়ার পর কীভাবে বলেন যে ফ্রান্স ‘যুদ্ধে’ লিপ্ত হয়েছে?
এত কিছু সত্ত্বেও আমার বন্ধু নিয়েল ফার্গুসনের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের এই গাদাগাদি করে থাকা গরিব মানুষ প্রাচীন রোমের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ফার্গুসন স্বীকার করেন, তিনি পঞ্চম শতকের রোমান ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না, ফলে এই বিষয়ে তিনি রোমান ইতিহাস থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারবেন না। কিন্তু রোমানরা নতুন দেশ জয় করলে সেখানকার মানুষকে নাগরিকত্ব দিত, আর নিয়েল তৃতীয় শতকের ইতিহাস একটু পড়ে দেখবেন, যখন নতুন রোমান সম্রাট সিজার মার্কাস জুলিয়াস ফিলিপাস সিরিয়া থেকে এসেছিলেন। দামেস্ক থেকে ৩০ মাইল দূরে তাঁর জন্ম হয়েছিল, তাঁকে ‘আরবের ফিলিপ’ বলা হতো। কিন্তু আসুন, আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় আধুনিক ইতিহাসকে বাগড়া দিতে না দিই।
মালির ঘটনাটি লক্ষ করুন। সেখানকার ইসলামপন্থীরা দেশটির উত্তরাঞ্চল দখল করে রাজধানী বামাকোর দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ফরাসি সেনাবাহিনী ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মালিতে অভিযান চালায়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদকে সেখানকার গণমাধ্যমে ব্যঙ্গ করে ‘ফিল্ড মার্শাল’ বলে অভিহিত করা হয়। তিনি মালিতে ‘সন্ত্রাসীদের’ ধ্বংস করার জন্য তাঁর সেনাদের পাঠান, যে সন্ত্রাসীরা সেখানে বেসামরিক মানুষকে ‘ইসলামি’ কায়দায় শাস্তি দিচ্ছিল, যেখানে ইসলাম ছিল তাঁদের বিদ্রোহের তরিকা। কিন্তু ফ্রান্স একবারও বলল না যে এই সহিংসতা সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের যাযাবর গোষ্ঠী তুয়ারেগ ও মালি সরকারের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের অংশ। জানুয়ারির শেষ নাগাদ খবর পাওয়া গেল, ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর মালি-মিত্ররা সেখানে জাতিগত প্রতিশোধের ঢেউয়ে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। তৎকালীন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেছিলেন, ‘শহরাঞ্চলের গেরিলা যুদ্ধ’ সামাল দেওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।
আবার দেখা গেল, মালির যেসব মানুষ ফরাসিদের সহায়তা করেছিল, ইসলামপন্থীরা তাদের মারা শুরু করেছে। ফ্রান্স যেহেতু ইতিমধ্যে বিজয় অর্জন করেছে বলে দাবি করছিল, ফলে সেই ইসলামপন্থীদের মুখপাত্রের কথা কেউ তেমন একটা খেয়াল করতে পারেনি: ‘ফ্রান্স আমাদের শত্রু, যারা মালি, নাইজার, সেনেগাল ও টোগোর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করছে...এই সব দেশই আমাদের শত্রু, আমরা তাদের শত্রুর মতোই গণ্য করব।’
যারা মনে করে, ইউরোপীয় সেনারা আফ্রিকার দেশে দেশে ঠুসঠাস গুলি ছুড়বে, আর কেউ তার প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করবে না, তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, গত জানুয়ারি মাসে প্যারিসে একজন নারী পুলিশ ও সুপার মার্কেটে চারজন ইহুদিকে যে এক আইএস যোদ্ধা হত্যা করল, তার জন্ম কিন্তু প্যারিসের এক মালি মুসলমান পরিবারে। তাঁর নাম আমেদি কুলিবালি।
এখন মালির ওপর ২০১৩ সালের শুরুর দিকের এই প্রতিবেদন পড়া যাক: ‘ফরাসি যুদ্ধবিমানগুলো উত্তর মালির সন্দেহভাজন বিদ্রোহী শিবির, কমান্ড পোস্ট, “সন্ত্রাসীদের যানবাহন” ও মালপত্রের ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কর্মকর্তারা বলছেন, তারা তিমবাকতু ও গাও অঞ্চলে নানা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করছে, এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ডজন খানেক হামলা চালিয়েছে তারা...।’ তিমবাকতু ও গাওয়ের জায়গায় রাকা ও ইদলিব বসান, আজ প্যারিস ও মস্কো আমাদের সেই একই খবর দিচ্ছে।
আর আমাদের প্রতিক্রিয়া কী? তার সবই অবশ্যই বাগাড়ম্বর, আমাদের অজ্ঞতা, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি কী অন্যায় করা হচ্ছে, সেটা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের অনাগ্রহ এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যযুক্ত দ্বন্দ্ব-বিবাদ আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আলস্য। আমরা যদি আজও ‘সেনারা, থামো এবার’ গোছের উপদেশ দিই, তাহলে একদম নতুন মনোভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। এই অঞ্চলকে নিয়ে ১৯৪৫ সালের আদলে বিশ্ব সম্মেলন করা যেতে পারে, যখন বিশ্বনেতারা একত্রে বসে জাতিসংঘ গঠন করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল পৃথিবীতে আর যেন বিশ্বযুদ্ধ না লাগে, সেটা নিশ্চিত করা। আর শরণার্থীদের জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যেমন নানসেন শরণার্থী পাসপোর্ট প্রণয়ন করা হয়েছিল, সে রকম কিছু একটা করা যেতে পারে, সেবার ৫০টি জাতি তা গ্রহণ করেছিল।
প্রতিটি সকালেই যেন আরেকটি হলিউডি নিষ্ঠুরতার গল্প শোনার জন্য আমার ঘুম ভাঙে, যার গল্পকার হচ্ছে আমাদের গোপন পুলিশ বা জনসংযোগ প্রভাবিত রাজনৈতিক নেতারা। জার্মানির শীর্ষ গোয়েন্দা আমাদের ‘সন্ত্রাসী বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে’ সতর্ক করে দেন, আমি তাঁর বিশেষজ্ঞ মতামত মেনে নিই, কারণ বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার ব্যাপারে জার্মানির দক্ষতা প্রমাণিত। ওদিকে একজন মেধাবী ও সুস্থ মস্তিষ্কের ইতিহাসবিদ ইউরোপের দুর্দশাকে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেকেই মনে করে, প্যারিস হত্যাকাণ্ড ‘প্যারিসকে চিরদিনের জন্য বদলে’ দিয়েছে বা ‘ফ্রান্সকেই চিরতরে বদলে’ দিয়েছে। কিন্তু প্যারিস হামলাকে ১৯৪০ সালের জার্মান দখলদারির সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। একঘেয়ে প্রকৃতির ফরাসি দার্শনিক বার্নার্ড অঁরি-লেভি বলেই যাচ্ছেন, আইএস হচ্ছে ‘ফ্যাসিস্টইসলামিস্ট’।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৮২ সালে বৈরুতের সাবরা-শাতিলা শরণার্থীশিবিরে যে খ্রিষ্টান খুনিরা ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছিল, তখন কিন্তু অঁরি ইসরায়েলের এই লেবানিজ জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘ফ্যাসিস্টক্রিশ্চিয়ান’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন বলে আমার মনে পড়ে না। সেটা এক সন্ত্রাসী হামলাই ছিল, যার সঙ্গে আমি পরিচিত। দুজন সহকর্মী সাংবাদিককে নিয়ে আমি সেই শরণার্থীশিবিরে গিয়েছিলাম, ধর্ষণের শিকার ও কচুকাটা হওয়া মানুষের সারি সারি লাশ পড়ে আছে। মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত ও সেখানকার টাকায় পরিচালিত ইসরায়েলি সেনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখলেও তারা কিছুই করেনি। কিন্তু তারপরও একজন ফিলিস্তিনি রাজনীতিক বলেননি যে এ কারণে ‘মধ্যপ্রাচ্য চিরদিনের জন্য বদলে গেছে।’ বৈরুতে ১ হাজার ৭০০ বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়ার পরও যদি ‘বিশ্বযুদ্ধ’ ঘোষিত না হয়, তাহলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ১৩০ জন নিরীহ মানুষ মারা যাওয়ার পর কীভাবে বলেন যে ফ্রান্স ‘যুদ্ধে’ লিপ্ত হয়েছে?
এত কিছু সত্ত্বেও আমার বন্ধু নিয়েল ফার্গুসনের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের এই গাদাগাদি করে থাকা গরিব মানুষ প্রাচীন রোমের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ফার্গুসন স্বীকার করেন, তিনি পঞ্চম শতকের রোমান ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না, ফলে এই বিষয়ে তিনি রোমান ইতিহাস থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারবেন না। কিন্তু রোমানরা নতুন দেশ জয় করলে সেখানকার মানুষকে নাগরিকত্ব দিত, আর নিয়েল তৃতীয় শতকের ইতিহাস একটু পড়ে দেখবেন, যখন নতুন রোমান সম্রাট সিজার মার্কাস জুলিয়াস ফিলিপাস সিরিয়া থেকে এসেছিলেন। দামেস্ক থেকে ৩০ মাইল দূরে তাঁর জন্ম হয়েছিল, তাঁকে ‘আরবের ফিলিপ’ বলা হতো। কিন্তু আসুন, আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় আধুনিক ইতিহাসকে বাগড়া দিতে না দিই।
মালির ঘটনাটি লক্ষ করুন। সেখানকার ইসলামপন্থীরা দেশটির উত্তরাঞ্চল দখল করে রাজধানী বামাকোর দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ফরাসি সেনাবাহিনী ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মালিতে অভিযান চালায়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদকে সেখানকার গণমাধ্যমে ব্যঙ্গ করে ‘ফিল্ড মার্শাল’ বলে অভিহিত করা হয়। তিনি মালিতে ‘সন্ত্রাসীদের’ ধ্বংস করার জন্য তাঁর সেনাদের পাঠান, যে সন্ত্রাসীরা সেখানে বেসামরিক মানুষকে ‘ইসলামি’ কায়দায় শাস্তি দিচ্ছিল, যেখানে ইসলাম ছিল তাঁদের বিদ্রোহের তরিকা। কিন্তু ফ্রান্স একবারও বলল না যে এই সহিংসতা সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের যাযাবর গোষ্ঠী তুয়ারেগ ও মালি সরকারের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের অংশ। জানুয়ারির শেষ নাগাদ খবর পাওয়া গেল, ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর মালি-মিত্ররা সেখানে জাতিগত প্রতিশোধের ঢেউয়ে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। তৎকালীন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেছিলেন, ‘শহরাঞ্চলের গেরিলা যুদ্ধ’ সামাল দেওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।
আবার দেখা গেল, মালির যেসব মানুষ ফরাসিদের সহায়তা করেছিল, ইসলামপন্থীরা তাদের মারা শুরু করেছে। ফ্রান্স যেহেতু ইতিমধ্যে বিজয় অর্জন করেছে বলে দাবি করছিল, ফলে সেই ইসলামপন্থীদের মুখপাত্রের কথা কেউ তেমন একটা খেয়াল করতে পারেনি: ‘ফ্রান্স আমাদের শত্রু, যারা মালি, নাইজার, সেনেগাল ও টোগোর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করছে...এই সব দেশই আমাদের শত্রু, আমরা তাদের শত্রুর মতোই গণ্য করব।’
যারা মনে করে, ইউরোপীয় সেনারা আফ্রিকার দেশে দেশে ঠুসঠাস গুলি ছুড়বে, আর কেউ তার প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করবে না, তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, গত জানুয়ারি মাসে প্যারিসে একজন নারী পুলিশ ও সুপার মার্কেটে চারজন ইহুদিকে যে এক আইএস যোদ্ধা হত্যা করল, তার জন্ম কিন্তু প্যারিসের এক মালি মুসলমান পরিবারে। তাঁর নাম আমেদি কুলিবালি।
এখন মালির ওপর ২০১৩ সালের শুরুর দিকের এই প্রতিবেদন পড়া যাক: ‘ফরাসি যুদ্ধবিমানগুলো উত্তর মালির সন্দেহভাজন বিদ্রোহী শিবির, কমান্ড পোস্ট, “সন্ত্রাসীদের যানবাহন” ও মালপত্রের ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কর্মকর্তারা বলছেন, তারা তিমবাকতু ও গাও অঞ্চলে নানা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করছে, এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ডজন খানেক হামলা চালিয়েছে তারা...।’ তিমবাকতু ও গাওয়ের জায়গায় রাকা ও ইদলিব বসান, আজ প্যারিস ও মস্কো আমাদের সেই একই খবর দিচ্ছে।
আর আমাদের প্রতিক্রিয়া কী? তার সবই অবশ্যই বাগাড়ম্বর, আমাদের অজ্ঞতা, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি কী অন্যায় করা হচ্ছে, সেটা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের অনাগ্রহ এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যযুক্ত দ্বন্দ্ব-বিবাদ আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আলস্য। আমরা যদি আজও ‘সেনারা, থামো এবার’ গোছের উপদেশ দিই, তাহলে একদম নতুন মনোভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। এই অঞ্চলকে নিয়ে ১৯৪৫ সালের আদলে বিশ্ব সম্মেলন করা যেতে পারে, যখন বিশ্বনেতারা একত্রে বসে জাতিসংঘ গঠন করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল পৃথিবীতে আর যেন বিশ্বযুদ্ধ না লাগে, সেটা নিশ্চিত করা। আর শরণার্থীদের জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যেমন নানসেন শরণার্থী পাসপোর্ট প্রণয়ন করা হয়েছিল, সে রকম কিছু একটা করা যেতে পারে, সেবার ৫০টি জাতি তা গ্রহণ করেছিল।
রবার্ট ফিস্ক |
আমরা সে রকম কিছু না করে
উদ্দেশ্যহীনভাবে কেয়ামত, সন্ত্রাসী বিশ্বযুদ্ধ ও প্রাচীন রোমের বিষয়ে কথা
বলে যাচ্ছি। আমাদের জনসংযোগপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আমি পুনরুচ্চারণ
করব: ‘বাছা, এবার থামো।’
দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি।
দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি।
No comments