আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের অধিকার চিরন্তন by রবার্ট ওয়াটকিন্স
রবার্ট ওয়াটকিন্স |
মানবাধিকার উন্নয়নে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স
১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। দিবসটি সব জাতির, সব মানুষের
জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সাধারণ মানদণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ বছর আমরা
মৌলিক স্বাধীনতা, যা মানবাধিকারকে তুলে ধরে এবং যা এখনো বাংলাদেশসহ সমগ্র
বিশ্বে প্রাসঙ্গিক, যেমন ভয় ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি, বাক্স্বাধীনতা ও নিজ
নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা—এ বিষয়গুলো স্মরণ করি। ২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য ও
স্লোগান হলো ‘আমাদের স্বাধীনতা—আমাদের অধিকার, চিরন্তন’।
বাংলাদেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আটটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এর ফলে দেশটি কোনো প্রকার বৈষম্য ছাড়াই প্রত্যেক ব্যক্তির নাগরিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ নারী ও কিশোরীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং শিশু অধিকার নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনে সম্পৃক্ত ছিল এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের বাংলাদেশ সফরের আয়োজন করে। বাংলাদেশ বর্তমানে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য এবং দেশটি একটি মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছে, যার ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে মানবাধিকার এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের কাজ করার ইচ্ছার প্রকাশ ঘটে।
গত দশকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে জনগণের মানবাধিকারের সুফল ভোগের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। যদিও এই সুফল সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না এবং অনেকেই বেশ পিছিয়ে আছে, বিশেষ করে দেশে যাদের আইনি মর্যাদা নেই। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক ব্যবধান এবং নারীর প্রতি বৈষম্য এখনো বিদ্যমান রয়েছে। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া, যেমন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সবার উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে অসমতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আলোকপাত করেছে। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ণয়ের জন্য এটি একটি পরিষ্কার দিকনির্দেশনা।
বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এই অসমতা দূরীকরণের পথনির্দেশ এবং কাঠামো প্রদর্শন করে। এই পরিকল্পনা সম্প্রতি গৃহীত এসডিজির সঙ্গে সংযুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়াসহ তদারকি পদ্ধতির সঙ্গে একত্র, যা জাতির অগ্রগতির সময় কেউ যেন বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, অধিকারভিত্তিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
কিন্তু মানবাধিকার বলতে শুধু অর্থনৈতিক ও সামাজিক আচরণকেই বোঝায় না। যদি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার না থাকে, তাহলে মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করা যায় না। ভয় থেকে মুক্তি ঠিক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। বাংলাদেশ একটি নবীন রাষ্ট্র, যেটি এখনো তার অতীতের সঙ্গে সংগ্রাম করছে, যা দেশটির নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সামগ্রিক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো ও ব্যক্তিস্বাধীনতা, গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা হেফাজত থেকে সুরক্ষা, বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, চলাফেরার স্বাধীনতা, একত্র হওয়া, দল গঠন ও ধর্ম পালন এবং বিবেক-বুদ্ধি ও বক্তব্য প্রদানের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ আছে। এ বিষয়গুলো যেমন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য, তেমনি আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ ও অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে এবং কিছু বিষয়, যেমন গ্রেপ্তার করার সময় অথবা আটকাবস্থায় মৃত্যু, তদন্তকালীন এবং আইনি প্রক্রিয়া চলার সময় হস্তক্ষেপ, গুম ও নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, সাংবাদিক, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সুশীল সমাজের মানুষের বিধিবহির্ভূত গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, উত্ত্যক্তকরণ ইত্যাদি এখনো রয়ে গেছে। স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য সংস্থার দ্বারা এই অভিযোগগুলোর তদন্ত হওয়া এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কার্যকর জাতীয় নিরাপত্তা পদ্ধতির অংশবিশেষ এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য অনস্বীকার্য।
আজকের দিনটি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে গৃহীত ১৬ দিনব্যাপী কার্যক্রমের শেষ দিবস। মানবাধিকার দিবসের সঙ্গে এই সংযুক্তি এটাই মনে করিয়ে দেয় যে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটায়, যা অবিচল অঙ্গীকার ও শক্তি দিয়ে বন্ধ করা প্রয়োজন। সহিংসতা নারী ও কিশোরীদের সমাজে অবদান রাখার সক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ বিষয়টি যখন উপেক্ষা করি, তখন আমরা সামাজিক মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিই।
মানবাধিকারের সুফল উপভোগ করা একটি প্রক্রিয়া, যা চলমান এবং যার শেষ নেই। আজকের এই দিনে অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পাদন এবং সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ ও অবদানের গুরুত্বের কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আটটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এর ফলে দেশটি কোনো প্রকার বৈষম্য ছাড়াই প্রত্যেক ব্যক্তির নাগরিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ নারী ও কিশোরীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং শিশু অধিকার নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনে সম্পৃক্ত ছিল এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের বাংলাদেশ সফরের আয়োজন করে। বাংলাদেশ বর্তমানে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য এবং দেশটি একটি মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছে, যার ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে মানবাধিকার এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের কাজ করার ইচ্ছার প্রকাশ ঘটে।
গত দশকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে জনগণের মানবাধিকারের সুফল ভোগের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। যদিও এই সুফল সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না এবং অনেকেই বেশ পিছিয়ে আছে, বিশেষ করে দেশে যাদের আইনি মর্যাদা নেই। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক ব্যবধান এবং নারীর প্রতি বৈষম্য এখনো বিদ্যমান রয়েছে। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া, যেমন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সবার উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে অসমতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আলোকপাত করেছে। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ণয়ের জন্য এটি একটি পরিষ্কার দিকনির্দেশনা।
বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এই অসমতা দূরীকরণের পথনির্দেশ এবং কাঠামো প্রদর্শন করে। এই পরিকল্পনা সম্প্রতি গৃহীত এসডিজির সঙ্গে সংযুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়াসহ তদারকি পদ্ধতির সঙ্গে একত্র, যা জাতির অগ্রগতির সময় কেউ যেন বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, অধিকারভিত্তিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
কিন্তু মানবাধিকার বলতে শুধু অর্থনৈতিক ও সামাজিক আচরণকেই বোঝায় না। যদি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার না থাকে, তাহলে মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করা যায় না। ভয় থেকে মুক্তি ঠিক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। বাংলাদেশ একটি নবীন রাষ্ট্র, যেটি এখনো তার অতীতের সঙ্গে সংগ্রাম করছে, যা দেশটির নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সামগ্রিক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো ও ব্যক্তিস্বাধীনতা, গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা হেফাজত থেকে সুরক্ষা, বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, চলাফেরার স্বাধীনতা, একত্র হওয়া, দল গঠন ও ধর্ম পালন এবং বিবেক-বুদ্ধি ও বক্তব্য প্রদানের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ আছে। এ বিষয়গুলো যেমন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য, তেমনি আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ ও অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে এবং কিছু বিষয়, যেমন গ্রেপ্তার করার সময় অথবা আটকাবস্থায় মৃত্যু, তদন্তকালীন এবং আইনি প্রক্রিয়া চলার সময় হস্তক্ষেপ, গুম ও নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, সাংবাদিক, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সুশীল সমাজের মানুষের বিধিবহির্ভূত গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, উত্ত্যক্তকরণ ইত্যাদি এখনো রয়ে গেছে। স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য সংস্থার দ্বারা এই অভিযোগগুলোর তদন্ত হওয়া এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কার্যকর জাতীয় নিরাপত্তা পদ্ধতির অংশবিশেষ এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য অনস্বীকার্য।
আজকের দিনটি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে গৃহীত ১৬ দিনব্যাপী কার্যক্রমের শেষ দিবস। মানবাধিকার দিবসের সঙ্গে এই সংযুক্তি এটাই মনে করিয়ে দেয় যে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটায়, যা অবিচল অঙ্গীকার ও শক্তি দিয়ে বন্ধ করা প্রয়োজন। সহিংসতা নারী ও কিশোরীদের সমাজে অবদান রাখার সক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ বিষয়টি যখন উপেক্ষা করি, তখন আমরা সামাজিক মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিই।
মানবাধিকারের সুফল উপভোগ করা একটি প্রক্রিয়া, যা চলমান এবং যার শেষ নেই। আজকের এই দিনে অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পাদন এবং সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ ও অবদানের গুরুত্বের কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।
No comments