সিলেট ছাত্রলীগে অস্থিরতা
কমিটি
গঠনকে কেন্দ্র করে সিলেটে মারমুখী হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। একপক্ষ কমিটি
বাতিলের দাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডেকেছে। আর নতুন কমিটির নেতারা
সিলেট নগরীতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। এতে নগরে আতঙ্কও বিরাজ
করছে। আর এ নিয়ে বিব্রত সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতারা। এদিকে, গতকাল পদবঞ্চিত
অংশের ছাত্রলীগ নেতারা সিলেটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের পাশাপাশি
শোডাউন করেছেন। ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার প্রায় ১৫ মাস পর শুক্রবার
দিবাগত রাতে জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। কমিটি
অনুমোদনের জন্য জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই সপ্তাহেরও
বেশি সময় ধরে ঢাকায় অবস্থান করেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ত্যাগী, প্রকৃত ছাত্র
এবং বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের হাতে নির্যাতিতদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে
মন্তব্য করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু শনিবার
পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা ছাত্রলীগের একপক্ষ
বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। রোববার জেলা ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ ৫২ নেতা এবং তাদের
অনুসারীরা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের জন্য নগরীর আম্বরখানাস্থ হোটেল পলাশে
জড়ো হন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
হিরন মাহমুদ নিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন খান, ছাত্রলীগ নেতা
সঞ্জয় চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মওদুদ আহমদ আকাশ,
গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কনকপাল অরূপ, পাঠাগার সম্পাদক মেহেদী হাসান উজ্জল
প্রমুখ। হোটেল পলাশে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা
পদত্যাগ করতে উদ্যত হলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরন
মাহমুদ নিপু তাদের নিবৃত করেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে
বলে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন তিনি। এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য
পূর্ণাঙ্গ হওয়া কমিটি প্রত্যাখ্যান করে এবং কমিটি বাতিলের দাবিতে সোমবার
বিকালে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। মিছিল
পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ
কমিটিতে ছাত্রশিবির, ছিনতাইকারী, ছাত্রদল, অছাত্র, বিবাহিতদের স্থান দেয়া
হয়েছে।’ তারা কমিটি বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মঙ্গলবার সিলেট জেলা সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজেছাত্র
ধর্মঘট, বুধবার সকল উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল। একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে জেলা
ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীকে
সিলেটে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার বিকালে আবার নগরীতে জেলা
ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মাজার জিয়ারতের পর সশস্ত্র
মহড়া করতে দেখাযায়। এখানেও নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদধারী নেতারা উপস্থিত
ছিলেন। তবে জেলা ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের এই কমিটি
প্রত্যাখ্যানকে গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ব্যাপারে
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের মন্তব্য হচ্ছে, ‘তারা
পদত্যাগ করতে চাইলে করতে পারে। ঢাকায় এসে পদত্যাগপত্র জমা দিলে তা গ্রহণ
করা হবে।’ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে
ছাত্র ধর্মঘট পালন করছে সংগঠনের একাংশের নেতারা। মঙ্গলবার সকাল ১১টায়
সিলেটের বিভিন্ন কলেজে অবস্থান নিয়ে তারা এ ধর্মঘট পালন করছে বলে জানিয়েছেন
জেলা ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব কান্তি দাস। বিকাল ৪ টা
পর্যন্ত এ ধর্মঘট পালন করছেন। বিপ্লব কান্তি দাস জানান, সিলেট জেলা
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনতিবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়ে ঘোষিত ২ দিনের
কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হয়েছে। এমসি কলেজ,
সরকারি কলেজ, মদন মোহন কলেজ ও দক্ষিণ সুরমা কলেজসহ সিলেট জেলার সকল
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এ ছাত্র ধর্মঘট পালনের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ
নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছে।
No comments