ডিএনএর সম্পাদকীয় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে মোদির নীরবতা
বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের সফররত প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি দেশের বৃহৎ বিরোধীদলীয় নেতা গণতন্ত্রহীনতার কথা বলছেন- এমনটা সচরাচর ঘটে না। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ঠিক এসবই বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক শ্রেণীর আস্থা অর্জন করেছেন নরেন্দ্র মোদি। পার্লামেন্টে বাংলাদেশ-ভারতের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদন করানোর সফলতাই মোদির এ ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জনের প্রাথমিক কারণ। এমনকি বাংলাদেশের ডানপন্থি জামায়াতে ইসলামীও মোদির সফর ও ঐতিহাসিক স্থলসীমান্ত চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। হাস্যকরভাবে, দলটির একমাত্র হতাশার কারণ হলো, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে মোদির নীরবতা। এক সমপাদকীয়তে এমনটিই লিখেছে ভারতের পত্রিকা ডিএনএ। সেখানে বলা হয়েছে, মোদির সফর নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দীপনার আরেকটি কারণ হলো ব্যবসা। জানা কথা, মোদি বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পেতে আগ্রহী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ভারতের মাঝে পরিবর্তনের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন। সেটি হলো, ভারত বর্তমানে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে বিদ্যমান কৌশলগত অনড় অবস্থানকে পেছনে ফেলে সামনে আগানোর দিকে মনোযোগী। যাই হোক, প্রকাশ্যে উদ্দীপনা প্রদর্শনকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করাটাও সাধারণ হতাশার অনুভূতি জন্ম দেয়। তিস্তা ও মুহুরি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা না হওয়ায় এটাই ঘটেছে। ভারতের কথা যদি বলি, দেশটি লাভবান হয়েছে। ২২টি সমঝোতা স্মারক ও ২০০ কোটি ডলারের ঋণ থেকে ভারতের বাণিজ্য খাত লাভবান হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে প্রবেশও করতে পারবে দেশটি। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারেরও অনুমতি পেয়েছে ভারত। ঢাকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপরীতে বাংলাদেশ তেমন লাভবান হয়নি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে এখন অবশ্যই কাজ করতে হবে ভারতের ব্যবসা খাতকে। খোলা মনে ভারতের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করছে ঢাকা। তাই প্রতিবেশীর সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করার দায়িত্ব ভারতের। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে সফল সফরে মোদি পাকিস্তানকে একটি বার্তা দিয়েছেন। সেটি হলো, দীর্ঘ দিনের দ্বিপক্ষীয় অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করলে পাকিস্তানও লাভবান হবে, যেমনটি হয়েছে বাংলাদেশের। ঢাকায় নিজের এক বক্তৃতায় এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছেন মোদি। এমনকি মোদি বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতির সুরে বলেছেন যে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী আচরণের কারণে বাংলাদেশকেও প্রায়ই ভুগতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে পাকিস্তান খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেবে, তার সম্ভাবনা কম। কেননা, ইসলামাবাদ মনে করে, তারা কৌশলগতভাবে বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন এমনকি রাশিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের সামর্থ্যও তাদের আছে। এটি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে সমপর্ক শক্তিশালী করতে চান। ঠিক যেভাবে তিনি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে করেছেন। এ প্রচেষ্টার কারণ হচ্ছে, পাকিস্তানকে দেখানো যে, সার্কের বাকি সদস্যরাষ্ট্রসমূহ ভারতের সঙ্গে লেনদেন করতে রাজি। তাই ইসলামাবাদের উচিত হবে না, এতদিন ধরে যেভাবে সবকিছুতে তারা বাধ সেদেছে, সেটি অব্যাহত রাখার আশা করা। একটি কৌশল হিসেবে এটি সফল হতে পারে। কিন্তু নয়া দিল্লির জন্য আরও ভালো হবে, যদি ভারত পাকিস্তানকে অপদস্থ করার জন্য ঢাকা, থিমপু ও কাঠমান্ডুর সঙ্গে সমপর্কোন্নয়ন না করে, দেশগুলোর নিজেদের স্বার্থে করে। কোনো সন্দেহ নেই যে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতবেশী দেশটি উপেক্ষিত হয়েছে। কেবলমাত্র পাকিস্তানের দিকেই এতদিন মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্য প্রতিবেশী দেশগুলো। ঢাকায় মোদি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, পশ্চিমাঞ্চলীয় বিরোধপূর্ণ প্রতিবেশী দেশটির সমান বা তারও বেশি মনোযোগ অন্য দেশগুলোর দিকে তিনি দেবেন। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
No comments