আইসিসের সঙ্গে আলোচনায় চাই মধ্যস্থতাকারী by রবার্ট ফিস্ক
আহা!
এই গলাকাটা ‘ইসলামিক স্টেটের’ খুনিদের তুলনায় তিনি কতই-না নরমপন্থী ছিলেন।
কালো ব্যানারধারী এই খুনিরা রামাদি ও পালমেইরায় ফিরে এসেছে। আর তারপরও
সেই বুড়ো বিন লাদেনের যেন পুনর্জন্ম হয়েছে। শেষবারের মতো আবির্ভূত
করানোর লক্ষ্যে তাঁকে যেন ভারত মহাসাগরে (যদি তিনি কখনো সেখানে থেকে
থাকেন) জাল ফেলে টেনে তোলা হয়েছে। তিনি তাঁর স্ত্রীকে ভালোবাসেন। তিনি
চান, তাঁর ছেলে পুরো আল-কায়েদার দায়িত্ব নিক। আর যদি তিনি ইংরেজি পড়তে
পারেন, তাহলে তিনি নোয়াম চমস্কিও পড়েন।
নিশ্চিতভাবেই তাঁর সঙ্গে ব্যবসা করা যায়। আমরা যে ‘মধ্যপন্থীর’ খোঁজে আছি, তিনি সেই মানুষ। যখন আমরা শত্রু বিনাশ করতে পারি না, তখন আমরা এমন মানুষের খোঁজ করি। আইসিসের (আইএসআইএস) মতো অবাধ্য শক্তির সঙ্গে ‘আলোচনা’ করার জন্য আমাদের ‘মধ্যস্থতাকারীর’ দরকার হয়। কিন্তু ফরাসিরা এফএলএনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারীর খোঁজ করতে গিয়ে দেখেছিল, সম্ভাব্য সব মানুষকেই তারা মেরে ফেলেছে। আর লাদেনকে মেরে ফেলায় আমাদের অবস্থাও ঠিক তা-ই হয়েছে। বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের পুরোধা ব্যক্তিকে ২০১১ সালে মেরে ফেলার কারণে আজ ২০১৫ সালে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের নতুন নেতার সঙ্গে আলোচনার জন্য আমাদের আর কোনো মধ্যস্থতাকারীই নেই।
কিন্তু। আমার মনে সন্দেহ আছে, আমাদের বোকা বানানো হয়েছিল। অ্যাবোটাবাদের বুড়ো মানুষটির বিষয়ে সিআইএ সম্প্রতি যে অনুসন্ধান চালিয়েছে, সে বিষয়ে আমার কথা নেই, আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এখন কেন, বিন লাদেন ও তাঁর ইয়েমেনি শিষ্যদের মধ্যকার মনোমুগ্ধকর ও সময় সময় বিরক্তিকর আঁতাতের কাহিনির প্রথম কিস্তি প্রকাশের এত বছর পর কি এখনো বিন লাদেনের জাঙ্ক মেইল আসে? কারণ, সিমোর হার্শ বিন লাদেন রূপকথার আরও বিশৃঙ্খল এক ভাষ্য পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সেই কর্মকর্তাকে মার্কিন খুনিরা টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল, আর সেই খণ্ডের কিছু নাকি হিন্দুকুশ পর্বতমালায় ফেলে দিয়েছিল তারা? (সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি মিথ্যা, হার্শের মতে)
নিশ্চিতভাবেই এর আগের মেইলগুলো পড়ে বোঝা যায়, বুড়ো মানুষটি ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনার কথা ভাবছিলেন। সর্বশেষ সংগ্রহে তেমন কিছু নেই। আমাদের পশ্চিম ঘৃণ্য আইএসের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু মধ্যপন্থী আবিষ্কার করবে, সে ক্ষেত্রে কি তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারতেন না?
বিন লাদেনের নতুন ভিডিও বার্তাগুলো নীরব কেন? আর আগের মতো এসব নথিপত্রের কিছু কিছু অংশ সেন্সর করা হয়েছে কেন? এর জন্য সিআইয়ের প্যাঁচানো শব্দবন্ধ ‘সম্পাদিত’ পড়ুন। সিআইএ মনে করে, ওসামা বিন লাদেনকে সেন্সর করা গুরুত্বপূর্ণ? অস্বাভাবিক ব্যাপার হচ্ছে, কেউই এর কারণ জিজ্ঞেস করেনি। সাংবাদিকেরা সম্পদ নিয়ে বাগাড়ম্বর করেছেন। আমি এতটা নিশ্চিত নই। কী এমন ব্যাপার যে সিআইএ ও বিন লাদেন জানত, যা আমাদের জানা অবশ্যই বারণ?
বিন লাদেনের সঙ্গে বহু আগে সেই ১৯৯৩, ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে আমি দেখা করেছিলাম। এটা আমার ক্ষেত্রে অ্যালবাট্রস হয়ে আছে, তা যেন এক প্রতিবেদকের সিভির ওজন বাড়িয়েছে। ব্যাপারটা যেন এমন যে আমি এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি, যিনি নাইন–ইলেভেনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অনুমোদন (যদি তিনি সেটার পরিকল্পনা না করে থাকেন) করেছেন। এতে বরং ইতিহাস আরও পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু আমার মনে আছে, আমাদের দ্বিতীয় বৈঠকে তিনি সৌদি আরবের দুর্নীতির ব্যাপারে আচ্ছন্ন ছিলেন, কীভাবে দেশটির রাজপরিবার ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। পরবর্তী সময়ে আমি জানলাম, তিনি সে দেশে ফিরে গেলে সৌদি আরব তাকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেবে, তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দেবে। এক কূটনীতিকের মাধ্যমে দেশটি তাঁকে এ প্রস্তাব দিয়েছিল।
হার্শের ভাষ্যে এক কৌতূহলোদ্দীপক প্যারা রয়েছে। আমার সহকর্মীরা বলেন, এটা হচ্ছে ‘পাল্টা আখ্যান’। তাতে দেখা যায়, হার্শের ‘অবসরপ্রাপ্ত উৎস’ তাঁকে বলেছেন, বিন লাদেনের খোঁজ করার সময় সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। কারণ, পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ার পর এই রাজ্য ‘তাঁকে টাকাপয়সা দিয়ে যাচ্ছিল’। হার্শের সেই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভাষ্য হচ্ছে, সৌদি আরব ভয় পাচ্ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে চাপ দিয়ে বিন লাদেনের সঙ্গে কথা বলে আল-কায়েদার সঙ্গে সৌদি আরবের যোগসাজশের বিষয়ে জেনে ফেলবে। আর তারা টাকাও ঢালছিল, প্রচুর পরিমাণে।
বিন লাদেনের সর্বশেষ মেইলের বিষয়ে আমার মনে প্রচুর প্রশ্ন আছে। এটা কে অনুবাদ করেছে তা আমরা জানি না, আর কে-ইবা তা সেন্সর করেছে, তার কথা না হয় বাদই দিলাম। এর কিছু প্যারা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। তাঁর এক স্ত্রী খাইরিয়াহ সাবেরকে লেখা চিঠিতে লাদেনের আবেগ ঝরে পড়েছে। সেই চিঠিতে তিনি এই নারীর সঙ্গে মৃত্যুর পরও মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন, সেখানেও তিনি তঁার স্বামী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন (এমনকি এই জগতের তাঁর ‘শাহাদতবরণের’ পর তিনি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তা-ও)। তিনি চেয়েছিলেন, খাইরিয়াহর ছেলে হামজাই আল-কায়েদার পরবর্তী নেতা হোক। কিন্তু মার্কিন ড্রোন হামলার আশঙ্কা, বিপ্লবের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন—শেষ সময়ের এই বোধোদয় ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পুতুলরাষ্ট্রে হামলা না চালিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর সংকল্প—এসব থেকে এটা বোঝা যায় না যে তিনি অ্যাবোটাবাদের নির্জনবাসে বসে ‘সন্ত্রাস’ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র পরিচালনা করছিলেন।
তাহলে সবকিছু ভেঙে ভেঙে আসছে কেন? গত সপ্তাহে বের হওয়া ১০৩টি চিঠি, ভিডিও প্রতিবেদন প্রভৃতি বেরিয়েছে ওয়েস্ট পয়েন্টের ‘কমব্যাটিং টেররিজম সেন্টার’ প্রকাশিত বিন লাদেনের কথোপকথনের ১৭৫ পৃষ্ঠা রেকর্ড বেরোনোর তিন বছর পর। সেটাও ছিল একইভাবে ভাঙা ভাঙা, এর অনুবাদও ছিল অদ্ভুত। যেমন: বিন লাদেনের একজন ইয়েমেনি এজেন্ট যখন তাঁকে আমার এক নিবন্ধের কপি পাঠান, যেখানে আমি আল-কায়েদাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলাম। এর দ্বিতীয় অংশটি মার্কিনরা আবার আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিল। দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এ আমি যে ইংরেজি লিখেছিলাম, সেটা থেকে এটার বিচ্যুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এর প্রথম অংশটি একদম দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে মেরে দেওয়া, সেটা আরবি থেকে অনুবাদের চেষ্টা করা হয়নি।
অ্যাবোটাবাদে নাকি পর্নোগ্রাফির স্তূপ পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে আমি মাথা ঘামাব না। আর এটা প্রকাশ করার আগে সিআইএকে চার বছর ধরে তা দেখতে হয়েছে। যে সংস্থাটি বন্দীদের পানিতে চুবিয়ে রাখে ও পায়ুপথে খাবার ঢোকায়, তারা কি আসলেই এতটা নাদান? এরপর সেখানে নোয়াম চমস্কি থেকে শুরু করে বব উডওয়ার্ডের বই পাওয়া গিয়েছে। ইশ্! বিন লাদেন যদি ইংরেজি পড়তে পারতেন। তাঁর কি অ্যাবোটাবাদে ভাষাশিক্ষক ছিল? তিনি আরবি বই পড়তেন। তঁার কোনটি মার্কিনরা সেখানে পেয়েছে? নাকি সেখানে সৌদি আরববিষয়ক অনেক কিছু ছিল?
নিশ্চিতভাবেই এর আগের মেইলগুলো পড়ে বোঝা যায়, বুড়ো মানুষটি ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনার কথা ভাবছিলেন। সর্বশেষ সংগ্রহে তেমন কিছু নেই। আমাদের পশ্চিম ঘৃণ্য আইএসের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু মধ্যপন্থী আবিষ্কার করবে, সে ক্ষেত্রে কি তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারতেন না? আর আমরা যদি ‘ইসলামিক স্টেট’-এর অভিলেখাগারে ঢুকতে পারতাম। কিন্তু হয়তো সেটাও সেন্সর করার প্রয়োজন হতে পারে। সে কারণে আমি আইসিসের সঙ্গে আলোচনার জন্য একজনকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রাখার পরামর্শ দেব, সৌদি আরব, যদিও বিন লাদেন মারা পড়েছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা।
নিশ্চিতভাবেই তাঁর সঙ্গে ব্যবসা করা যায়। আমরা যে ‘মধ্যপন্থীর’ খোঁজে আছি, তিনি সেই মানুষ। যখন আমরা শত্রু বিনাশ করতে পারি না, তখন আমরা এমন মানুষের খোঁজ করি। আইসিসের (আইএসআইএস) মতো অবাধ্য শক্তির সঙ্গে ‘আলোচনা’ করার জন্য আমাদের ‘মধ্যস্থতাকারীর’ দরকার হয়। কিন্তু ফরাসিরা এফএলএনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারীর খোঁজ করতে গিয়ে দেখেছিল, সম্ভাব্য সব মানুষকেই তারা মেরে ফেলেছে। আর লাদেনকে মেরে ফেলায় আমাদের অবস্থাও ঠিক তা-ই হয়েছে। বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের পুরোধা ব্যক্তিকে ২০১১ সালে মেরে ফেলার কারণে আজ ২০১৫ সালে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের নতুন নেতার সঙ্গে আলোচনার জন্য আমাদের আর কোনো মধ্যস্থতাকারীই নেই।
কিন্তু। আমার মনে সন্দেহ আছে, আমাদের বোকা বানানো হয়েছিল। অ্যাবোটাবাদের বুড়ো মানুষটির বিষয়ে সিআইএ সম্প্রতি যে অনুসন্ধান চালিয়েছে, সে বিষয়ে আমার কথা নেই, আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এখন কেন, বিন লাদেন ও তাঁর ইয়েমেনি শিষ্যদের মধ্যকার মনোমুগ্ধকর ও সময় সময় বিরক্তিকর আঁতাতের কাহিনির প্রথম কিস্তি প্রকাশের এত বছর পর কি এখনো বিন লাদেনের জাঙ্ক মেইল আসে? কারণ, সিমোর হার্শ বিন লাদেন রূপকথার আরও বিশৃঙ্খল এক ভাষ্য পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সেই কর্মকর্তাকে মার্কিন খুনিরা টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল, আর সেই খণ্ডের কিছু নাকি হিন্দুকুশ পর্বতমালায় ফেলে দিয়েছিল তারা? (সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি মিথ্যা, হার্শের মতে)
নিশ্চিতভাবেই এর আগের মেইলগুলো পড়ে বোঝা যায়, বুড়ো মানুষটি ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনার কথা ভাবছিলেন। সর্বশেষ সংগ্রহে তেমন কিছু নেই। আমাদের পশ্চিম ঘৃণ্য আইএসের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু মধ্যপন্থী আবিষ্কার করবে, সে ক্ষেত্রে কি তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারতেন না?
বিন লাদেনের নতুন ভিডিও বার্তাগুলো নীরব কেন? আর আগের মতো এসব নথিপত্রের কিছু কিছু অংশ সেন্সর করা হয়েছে কেন? এর জন্য সিআইয়ের প্যাঁচানো শব্দবন্ধ ‘সম্পাদিত’ পড়ুন। সিআইএ মনে করে, ওসামা বিন লাদেনকে সেন্সর করা গুরুত্বপূর্ণ? অস্বাভাবিক ব্যাপার হচ্ছে, কেউই এর কারণ জিজ্ঞেস করেনি। সাংবাদিকেরা সম্পদ নিয়ে বাগাড়ম্বর করেছেন। আমি এতটা নিশ্চিত নই। কী এমন ব্যাপার যে সিআইএ ও বিন লাদেন জানত, যা আমাদের জানা অবশ্যই বারণ?
বিন লাদেনের সঙ্গে বহু আগে সেই ১৯৯৩, ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে আমি দেখা করেছিলাম। এটা আমার ক্ষেত্রে অ্যালবাট্রস হয়ে আছে, তা যেন এক প্রতিবেদকের সিভির ওজন বাড়িয়েছে। ব্যাপারটা যেন এমন যে আমি এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি, যিনি নাইন–ইলেভেনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অনুমোদন (যদি তিনি সেটার পরিকল্পনা না করে থাকেন) করেছেন। এতে বরং ইতিহাস আরও পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু আমার মনে আছে, আমাদের দ্বিতীয় বৈঠকে তিনি সৌদি আরবের দুর্নীতির ব্যাপারে আচ্ছন্ন ছিলেন, কীভাবে দেশটির রাজপরিবার ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। পরবর্তী সময়ে আমি জানলাম, তিনি সে দেশে ফিরে গেলে সৌদি আরব তাকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেবে, তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দেবে। এক কূটনীতিকের মাধ্যমে দেশটি তাঁকে এ প্রস্তাব দিয়েছিল।
হার্শের ভাষ্যে এক কৌতূহলোদ্দীপক প্যারা রয়েছে। আমার সহকর্মীরা বলেন, এটা হচ্ছে ‘পাল্টা আখ্যান’। তাতে দেখা যায়, হার্শের ‘অবসরপ্রাপ্ত উৎস’ তাঁকে বলেছেন, বিন লাদেনের খোঁজ করার সময় সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। কারণ, পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ার পর এই রাজ্য ‘তাঁকে টাকাপয়সা দিয়ে যাচ্ছিল’। হার্শের সেই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভাষ্য হচ্ছে, সৌদি আরব ভয় পাচ্ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে চাপ দিয়ে বিন লাদেনের সঙ্গে কথা বলে আল-কায়েদার সঙ্গে সৌদি আরবের যোগসাজশের বিষয়ে জেনে ফেলবে। আর তারা টাকাও ঢালছিল, প্রচুর পরিমাণে।
বিন লাদেনের সর্বশেষ মেইলের বিষয়ে আমার মনে প্রচুর প্রশ্ন আছে। এটা কে অনুবাদ করেছে তা আমরা জানি না, আর কে-ইবা তা সেন্সর করেছে, তার কথা না হয় বাদই দিলাম। এর কিছু প্যারা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। তাঁর এক স্ত্রী খাইরিয়াহ সাবেরকে লেখা চিঠিতে লাদেনের আবেগ ঝরে পড়েছে। সেই চিঠিতে তিনি এই নারীর সঙ্গে মৃত্যুর পরও মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন, সেখানেও তিনি তঁার স্বামী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন (এমনকি এই জগতের তাঁর ‘শাহাদতবরণের’ পর তিনি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তা-ও)। তিনি চেয়েছিলেন, খাইরিয়াহর ছেলে হামজাই আল-কায়েদার পরবর্তী নেতা হোক। কিন্তু মার্কিন ড্রোন হামলার আশঙ্কা, বিপ্লবের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন—শেষ সময়ের এই বোধোদয় ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পুতুলরাষ্ট্রে হামলা না চালিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর সংকল্প—এসব থেকে এটা বোঝা যায় না যে তিনি অ্যাবোটাবাদের নির্জনবাসে বসে ‘সন্ত্রাস’ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র পরিচালনা করছিলেন।
তাহলে সবকিছু ভেঙে ভেঙে আসছে কেন? গত সপ্তাহে বের হওয়া ১০৩টি চিঠি, ভিডিও প্রতিবেদন প্রভৃতি বেরিয়েছে ওয়েস্ট পয়েন্টের ‘কমব্যাটিং টেররিজম সেন্টার’ প্রকাশিত বিন লাদেনের কথোপকথনের ১৭৫ পৃষ্ঠা রেকর্ড বেরোনোর তিন বছর পর। সেটাও ছিল একইভাবে ভাঙা ভাঙা, এর অনুবাদও ছিল অদ্ভুত। যেমন: বিন লাদেনের একজন ইয়েমেনি এজেন্ট যখন তাঁকে আমার এক নিবন্ধের কপি পাঠান, যেখানে আমি আল-কায়েদাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলাম। এর দ্বিতীয় অংশটি মার্কিনরা আবার আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিল। দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এ আমি যে ইংরেজি লিখেছিলাম, সেটা থেকে এটার বিচ্যুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এর প্রথম অংশটি একদম দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে মেরে দেওয়া, সেটা আরবি থেকে অনুবাদের চেষ্টা করা হয়নি।
অ্যাবোটাবাদে নাকি পর্নোগ্রাফির স্তূপ পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে আমি মাথা ঘামাব না। আর এটা প্রকাশ করার আগে সিআইএকে চার বছর ধরে তা দেখতে হয়েছে। যে সংস্থাটি বন্দীদের পানিতে চুবিয়ে রাখে ও পায়ুপথে খাবার ঢোকায়, তারা কি আসলেই এতটা নাদান? এরপর সেখানে নোয়াম চমস্কি থেকে শুরু করে বব উডওয়ার্ডের বই পাওয়া গিয়েছে। ইশ্! বিন লাদেন যদি ইংরেজি পড়তে পারতেন। তাঁর কি অ্যাবোটাবাদে ভাষাশিক্ষক ছিল? তিনি আরবি বই পড়তেন। তঁার কোনটি মার্কিনরা সেখানে পেয়েছে? নাকি সেখানে সৌদি আরববিষয়ক অনেক কিছু ছিল?
নিশ্চিতভাবেই এর আগের মেইলগুলো পড়ে বোঝা যায়, বুড়ো মানুষটি ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনার কথা ভাবছিলেন। সর্বশেষ সংগ্রহে তেমন কিছু নেই। আমাদের পশ্চিম ঘৃণ্য আইএসের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু মধ্যপন্থী আবিষ্কার করবে, সে ক্ষেত্রে কি তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারতেন না? আর আমরা যদি ‘ইসলামিক স্টেট’-এর অভিলেখাগারে ঢুকতে পারতাম। কিন্তু হয়তো সেটাও সেন্সর করার প্রয়োজন হতে পারে। সে কারণে আমি আইসিসের সঙ্গে আলোচনার জন্য একজনকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রাখার পরামর্শ দেব, সৌদি আরব, যদিও বিন লাদেন মারা পড়েছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা।
No comments