প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হচ্ছেন না রাহুল
শেষ পর্যন্ত মোদি-রাহুল দ্বৈরথ নিয়ে যাবতীয় জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটছে। ভারতের আগামী নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হচ্ছেন না রাহুল গান্ধী। গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী জানিয়ে দিয়েছেন এ কথা। আজ শুক্রবার তালকাটোরা স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় কার্যকরি কমিটির (এআইসিসি) অধিবেশনে রাহুল গান্ধীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হবে কি না, তা নিয়ে গতকাল দিনভর গুঞ্জন চলে। গতকাল রাতে খবর বেরিয়ে যায় যে রাহুলের মা, ভারতের ক্ষমতাসীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকারের ‘নেপথ্যের বড় শক্তি’ সোনিয়া এ ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নেতারা বলেছেন, দলের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী বলেন, সহসভাপতি রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হবে না। কারণ কংগ্রেসের ঐতিহ্য অনুযায়ী নির্বাচনের আগে কখনোই প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে রাহুল দলের নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই ৪৩ বছর বয়সী রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে তাঁরা শেষ পর্যন্ত সোনিয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। এই প্রেক্ষাপটে আজ এআইসিসি অধিবেশনে কংগ্রেস এখন কীভাবে বিজেপি ও এএপিকে মোকাবিলা করবে, তা-ই হবে মূল আলোচ্য। এক দিনের এ অধিবেশনে লোকসভা নির্বাচনে দলের রণনীতি স্থির হবে। নির্বাচনী রাজনীতি-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও গৃহীত হবে। সেই প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত করতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসে। এতে রাহুল গান্ধীও যোগ দেন। এর আগে বুধবার দলের কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়ে চমক সৃষ্টি করেন রাহুল। কারণ, কোর কমিটির সদস্য তিনি নন। রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কাও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, কংগ্রেসের রাজনীতি এই মুহূর্তে আরও বেশি গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।
শেষ মুহূর্তে রাহুলের বিষয়ে সোনিয়ার ‘না’ তাই অনেককেই বিস্মিত করবে। কে কতটা ক্ষুব্ধ বা উৎফুল্ল হলেন, তা-ও জানা যাবে শিগগিরই। এআইসিসি অধিবেশনের ঠিক আগে আগেই অবশ্য এর একটা আভাস বাতাসে ভাসছিল। অধিবেশনকে রাহুলময় করে তোলা ঠিক হবে কি না, রাহুলের নাম ঘোষণা করে কংগ্রেসের রাজনৈতিক আদর্শের ‘বিচ্যুতি’ ঘটানো হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। একেবারে শুরু থেকেই ‘রাহুল লাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগান যিনি তুলেছিলেন এবং যাঁকে রাহুলের অঘোষিত মুখপাত্র বলে মনে করা হয়, সেই দিগ্বিজয় সিংই এই প্রশ্ন তুলে দেন। তিনি ও তাঁর মতোই কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছিলেন, কংগ্রেস আগে কখনো এভাবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে নির্বাচনে লড়েনি। এবার করলে সেটার বিচ্যুতি ঘটবে। তা ছাড়া, কংগ্রেস দুর্বল হয়ে ভোটে যাচ্ছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে দলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল নয়। এ অবস্থায় রাহুলের নাম ঘোষিত হওয়ার অর্থ, ফল খারাপ হলে তার পূর্ণ দায়ভার তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়া। সেটি রাহুলের জন্য খারাপ হবে। দৃশ্যত এ যুক্তিটাই মনে ধরেছে সোনিয়ার। অন্যদিকে রাহুলকে প্রার্থী করার পক্ষে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার অর্থ দলকে চাঙা করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশকেও একটা বার্তা দেওয়া। এটা না করলে বিজেপি তাদের প্রচারে অন্যভাবে এগিয়ে যাবে।
No comments