সড়ক দুর্ঘটনার ওপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফরমান by বদরুদ্দীন উমর
সম্প্রতি
বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিবহন মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে
এক বৈঠকে ঘোষণা করেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০২ ধারায়
যেসব হত্যা মামলা করা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা ও প্রত্যাহার করা হবে,
কারণ এ দুর্ঘটনাগুলো ইচ্ছাকৃত নয় এবং সেই হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে
হত্যা হিসেবে চিহ্নিত ও আখ্যায়িত করাও যাবে না! সব দুর্ঘটনা যে ইচ্ছাকৃত নয়
এ কথা কে না জানে? কিন্তু এ কথাও কে না জানে যে, সারা বছর ধরে সড়ক
দুর্ঘটনায় যে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়, তার অধিকাংশই প্রকৃতপক্ষে
দুর্ঘটনা বলতে যা বোঝায় তা নয়। এ তথাকথিত দুর্ঘটনাগুলোর বিপুল অধিকাংশই ঘটে
এমন কারণে, যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। প্রশাসন থেকে নিয়ে পরিবহন মালিক ও
ড্রাইভাররাই এর জন্য দায়ী। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলা দরকার, বাংলাদেশের
সড়কপথে যে লাখ লাখ বাস-ট্রাক চলাচল করে, সেগুলোর ড্রাইভারদের অধিকাংশেরই
প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেই। যে সরকারি সংস্থা থেকে এদের ড্রাইভিং লাইসেন্স
দেয়া হয়, সেগুলো হল দুর্নীতির আখড়া। কাজেই যাদের নামমাত্র কিছু ড্রাইভিং
প্রশিক্ষণ আছে, এমনকি কোনো প্রশিক্ষণই যারা কোথাও গ্রহণ করেনি এমন লোকদেরও
ঘুষ খেয়ে লাইসেন্স দেয়া হয়। এ ধরনের অপ্রশিক্ষিত অথবা সামান্য প্রশিক্ষিত
লোকদের মালিকরা অল্প মজুরিতে নিযুক্ত করে। মজুরি অল্প হওয়ার কারণে অনেক সময়
ড্রাইভারদের ওভারটাইম বা অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। তাদের যথেষ্ট বিশ্রাম
হয় না এবং তার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনাকে ইচ্ছাকৃত হত্যা না বললেও
এটা বোঝার কোনো অসুবিধা নেই যে, দুর্নীতি এবং মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার
লোভের কারণেই এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে এবং এর জন্য উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী
মালিক-শ্রমিক যেই হোক, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দরকার।
বাংলাদেশে হাজার হাজার নতুন বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি নিয়মিত রাস্তায় নামছে। এগুলো চালানোর জন্য উপযুক্ত ড্রাইভার প্রয়োজন। উপযুক্ত ড্রাইভার আকাশ থেকে পড়ে না অথবা ঘুষ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলেই তারা যোগ্যতা অর্জন করে না। তারা যাতে এ যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন সারাদেশে শত শত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যাতে স্থাপিত হয় সেটা দেখা। শুধু তাই নয়, এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ড্রাইভিংয়ের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে কি-না, প্রশিক্ষণের পর তাদের পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে কি-না সেটাও দেখা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বড় আকারে কমিয়ে আনার জন্য এ কাজ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিজের দায়িত্ব মনে করে না। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথাও সরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শোনা যায় না। এ প্রাথমিক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হওয়ার কারণেই অল্পশিক্ষিত ড্রাইভাররা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড বলা না গেলেও এটা যে এক ধরনের হত্যাকাণ্ড তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি ড্রাইভাররা দায়ী হলেও মালিক এবং সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও এর জন্য দায়ী। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং তা যথাযথভাবে কার্যকর করা হলে যে এ দুর্ঘটনার অধিকাংশই রোধ করা যায় এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যত কথাবার্তা হয়, তাতে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হতে কোনোভাবেই দেখা যায় না। এটা যে একটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ব্যাপার এবং এ নিয়ন্ত্রণ যে সরকারের দায়িত্ব, এ বোধ আজ পর্যন্ত কোনো সরকারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি।
প্রায়ই দেখা যায়, দূরপাল্লার সড়কপথে যেসব বাস, ট্রাক, মিনিবাস চলে, সেগুলোর ড্রাইভাররা একে অপরকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়। এ কাজ করতে গিয়ে গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনা তো ঘটেই, কিন্তু তার থেকে বেশি ঘটে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ। মদ খেয়ে বাস-ট্রাক চলাচলের থেকে ড্রাইভারদের এভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালানোই অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এ সমস্যা সমাধানের একটা কার্যকর উপায় হচ্ছে দূরপাল্লার রাস্তা বা হাইওয়েগুলোতে ডিভাইডার দিয়ে যাওয়া-আসার পথকে পৃথক করা। এটা করা হলে সামনাসামনি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা শতভাগ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। ঢাকা, চট্টগ্রাম ইত্যাদি শহরে রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে পথচারীদের দায়িত্বহীন আচরণ অনেক সময় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হয়। তারা ফুটব্রিজ বা জেব্রাক্রসিং ব্যবহারের পরিবর্তে ইচ্ছামতো রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দেশে মোট দুর্ঘটনার তুলনায় এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কম। সড়ক দুর্ঘটনা এবং তা রোধ করার উপায় বিষয়ে অনেক আলোচনা হতে পারে, যা প্রয়োজন। অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু সে সবের ধারেকাছে না গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনার দায়-দায়িত্ব থেকে ড্রাইভারদের একেবারে মুক্ত ঘোষণা করে যা করেছেন তার থেকে দায়িত্বহীন কাজ কমই হতে পারে। এর সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক আছে কিনা সেটাও এক বিচার্য বিষয়।
ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণের অর্থ শুধু গাড়ি চালানোর শিক্ষা নয়। গাড়ি চালানোর সঙ্গে যত কিছুর সম্পর্ক আছে, সব বিষয়ের শিক্ষাও এর অন্তর্গত। গাড়ির ড্রাইভাররা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালায়, যেভাবে সামনের গাড়ি ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে- এসব বিষয়ে তাদের কোনো শিক্ষা ও সচেতনতাই দেখা যায় না। এর কারণ এ নিয়ে কোনো শিক্ষার ব্যবস্থাই তাদের নেই। সেটা থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা যে সংখ্যায় হয় সেটা হতো না। এ কারণে যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলোকে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড না বলা হলেও এগুলো হত্যাকাণ্ড অবশ্যই। এ হত্যাকাণ্ড কীভাবে বড় আকারে কমিয়ে আনা সম্ভব সে বিষয়ে যে সংক্ষিপ্ত ও সামান্য আলোচনা ওপরে করা হল তার থেকেই বোঝা যায় যে, এর জন্য ড্রাইভাররা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী মালিক ও সরকার পক্ষ। মালিক শুধু অদক্ষ ড্রাইভার নিযুক্তির মাধ্যমেই এসব দুর্ঘটনার শর্ত তৈরি করে না, গাড়িগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত এবং সেগুলোকে চলাচলের উপযুক্ত অবস্থায় না রেখে রাস্তায় নামানোর ফলে যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কোনো সরকারি ল’ থাকার বিষয়ে আগেই বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কতকগুলো জটিল কারণে ঘটে চললেও সে ব্যাপারে কোনো উচ্চবাচ্য না করে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করার কোনো চেষ্টা না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ড্রাইভারদের ও সেই সঙ্গে গাড়ির মালিকদেরও যেভাবে দায়মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন, এর থেকে দায়িত্বহীন কাজ সরকারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর আর কী হতে পারে? তা ছাড়া তিনি যেভাবে দুর্ঘটনার জন্য ড্রাইভারদের দায়মুক্ত করেছেন এবং মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার কথা বলেছেন, এটা কোনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নয়। এ হল আদালতের কাজ। দুর্ঘটনা হলে তার জন্য মামলা হতেই পারে এবং সে মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্ব আদালতের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে নিজের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ড্রাইভারদের দায়মুক্ত করার ফরমান জারি করেছেন, তাতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসার পরিবর্তে আরও বেড়ে যাবে। ড্রাইভারদের আইনের আওতার বাইরে এভাবে থাকা সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে এক মহাবিপজ্জনক ব্যাপার। দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি গদিতে বসে থাকা একজন মন্ত্রীর এহেন কাজ যে নৈতিকতাবিহীন এক বড় অপকর্ম এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ ও বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
বাংলাদেশে হাজার হাজার নতুন বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি নিয়মিত রাস্তায় নামছে। এগুলো চালানোর জন্য উপযুক্ত ড্রাইভার প্রয়োজন। উপযুক্ত ড্রাইভার আকাশ থেকে পড়ে না অথবা ঘুষ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলেই তারা যোগ্যতা অর্জন করে না। তারা যাতে এ যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন সারাদেশে শত শত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যাতে স্থাপিত হয় সেটা দেখা। শুধু তাই নয়, এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ড্রাইভিংয়ের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে কি-না, প্রশিক্ষণের পর তাদের পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে কি-না সেটাও দেখা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বড় আকারে কমিয়ে আনার জন্য এ কাজ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিজের দায়িত্ব মনে করে না। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথাও সরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শোনা যায় না। এ প্রাথমিক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হওয়ার কারণেই অল্পশিক্ষিত ড্রাইভাররা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড বলা না গেলেও এটা যে এক ধরনের হত্যাকাণ্ড তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি ড্রাইভাররা দায়ী হলেও মালিক এবং সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও এর জন্য দায়ী। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং তা যথাযথভাবে কার্যকর করা হলে যে এ দুর্ঘটনার অধিকাংশই রোধ করা যায় এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যত কথাবার্তা হয়, তাতে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হতে কোনোভাবেই দেখা যায় না। এটা যে একটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ব্যাপার এবং এ নিয়ন্ত্রণ যে সরকারের দায়িত্ব, এ বোধ আজ পর্যন্ত কোনো সরকারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি।
প্রায়ই দেখা যায়, দূরপাল্লার সড়কপথে যেসব বাস, ট্রাক, মিনিবাস চলে, সেগুলোর ড্রাইভাররা একে অপরকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়। এ কাজ করতে গিয়ে গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনা তো ঘটেই, কিন্তু তার থেকে বেশি ঘটে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ। মদ খেয়ে বাস-ট্রাক চলাচলের থেকে ড্রাইভারদের এভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালানোই অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এ সমস্যা সমাধানের একটা কার্যকর উপায় হচ্ছে দূরপাল্লার রাস্তা বা হাইওয়েগুলোতে ডিভাইডার দিয়ে যাওয়া-আসার পথকে পৃথক করা। এটা করা হলে সামনাসামনি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা শতভাগ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। ঢাকা, চট্টগ্রাম ইত্যাদি শহরে রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে পথচারীদের দায়িত্বহীন আচরণ অনেক সময় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হয়। তারা ফুটব্রিজ বা জেব্রাক্রসিং ব্যবহারের পরিবর্তে ইচ্ছামতো রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দেশে মোট দুর্ঘটনার তুলনায় এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কম। সড়ক দুর্ঘটনা এবং তা রোধ করার উপায় বিষয়ে অনেক আলোচনা হতে পারে, যা প্রয়োজন। অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু সে সবের ধারেকাছে না গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনার দায়-দায়িত্ব থেকে ড্রাইভারদের একেবারে মুক্ত ঘোষণা করে যা করেছেন তার থেকে দায়িত্বহীন কাজ কমই হতে পারে। এর সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক আছে কিনা সেটাও এক বিচার্য বিষয়।
ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণের অর্থ শুধু গাড়ি চালানোর শিক্ষা নয়। গাড়ি চালানোর সঙ্গে যত কিছুর সম্পর্ক আছে, সব বিষয়ের শিক্ষাও এর অন্তর্গত। গাড়ির ড্রাইভাররা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালায়, যেভাবে সামনের গাড়ি ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে- এসব বিষয়ে তাদের কোনো শিক্ষা ও সচেতনতাই দেখা যায় না। এর কারণ এ নিয়ে কোনো শিক্ষার ব্যবস্থাই তাদের নেই। সেটা থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা যে সংখ্যায় হয় সেটা হতো না। এ কারণে যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলোকে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড না বলা হলেও এগুলো হত্যাকাণ্ড অবশ্যই। এ হত্যাকাণ্ড কীভাবে বড় আকারে কমিয়ে আনা সম্ভব সে বিষয়ে যে সংক্ষিপ্ত ও সামান্য আলোচনা ওপরে করা হল তার থেকেই বোঝা যায় যে, এর জন্য ড্রাইভাররা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী মালিক ও সরকার পক্ষ। মালিক শুধু অদক্ষ ড্রাইভার নিযুক্তির মাধ্যমেই এসব দুর্ঘটনার শর্ত তৈরি করে না, গাড়িগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত এবং সেগুলোকে চলাচলের উপযুক্ত অবস্থায় না রেখে রাস্তায় নামানোর ফলে যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কোনো সরকারি ল’ থাকার বিষয়ে আগেই বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কতকগুলো জটিল কারণে ঘটে চললেও সে ব্যাপারে কোনো উচ্চবাচ্য না করে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করার কোনো চেষ্টা না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ড্রাইভারদের ও সেই সঙ্গে গাড়ির মালিকদেরও যেভাবে দায়মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন, এর থেকে দায়িত্বহীন কাজ সরকারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর আর কী হতে পারে? তা ছাড়া তিনি যেভাবে দুর্ঘটনার জন্য ড্রাইভারদের দায়মুক্ত করেছেন এবং মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার কথা বলেছেন, এটা কোনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নয়। এ হল আদালতের কাজ। দুর্ঘটনা হলে তার জন্য মামলা হতেই পারে এবং সে মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্ব আদালতের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে নিজের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ড্রাইভারদের দায়মুক্ত করার ফরমান জারি করেছেন, তাতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসার পরিবর্তে আরও বেড়ে যাবে। ড্রাইভারদের আইনের আওতার বাইরে এভাবে থাকা সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে এক মহাবিপজ্জনক ব্যাপার। দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি গদিতে বসে থাকা একজন মন্ত্রীর এহেন কাজ যে নৈতিকতাবিহীন এক বড় অপকর্ম এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ ও বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments