ক্ষুধা দূরীকরণে বৈশ্বিক লড়াই ব্যর্থ কেন?
আজ থেকে নয় বছর আগে মোট ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ করে জাতিসংঘ। যার মধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ ছিল অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা। বৈশ্বিকভাবে দরিদ্রতা ও ক্ষুধা মোকাবিলায় জাতিসংঘের এমন দৃঢ় পদক্ষেপের পরেও গত বছর বিশ্বের প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ ক্ষুধার মধ্যে জীবন কাটিয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ১৫ কোটি ২০ লাখ বেশি মানুষ ক্ষুধায় ভুগেছেন বা পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে অভুক্ত থেকেছেন। এ বছরের নভেম্বরে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলো। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জি-২০ এর শীর্ষ সম্মেলনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র নির্মূল করার লক্ষ্যে এক হয়েছেন তারা। ‘২০৩০ স্প্রিন্টস’ নামে পরিচিত অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে আগামী ৬ বছরের মধ্যে ৫০ কোটি মানুষের কাছে নগদ অর্থ এবং ১৫ কোটি শিশুর কাছে পুষ্টিকর খাদ্য পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এমন উদ্যোগ সত্ত্বেও কেন ক্ষুধা ও দরিদ্রতা মোকাবিলায় আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না বিশ্ব- সে বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তবে অনেকেই মনে করছেন, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে ক্ষুধা মুক্ত বিশ্ব গড়তে বার বার হোঁচট খাচ্ছে বিশ্ব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রহীনতাকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্রাজিলের সামাজিক উন্নয়ন ও সহায়তা বিষয়ক মন্ত্রী ওয়েলিংটন ডায়াস। সাক্ষাৎকারে তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবিলার গুরুত্ব এবং করণীয় তুলে ধরেছেন তিনি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা কী- এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়েলিংটন বলেছেন, ২০১৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল বিশ্ব। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে দরিদ্রতা দূর করে ক্ষুধা মুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলবে দেশগুলো। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন ওয়েলিংটন। তিনি বলেন, দূর হওয়ার পরিবর্তে দরিদ্রতা, দুর্দশা এবং ক্ষুধা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি। এর জন্য মূল কারণ হিসেবে অভিবাসন সংকটকে দায়ী করেছেন ব্রাজিলের ওই মন্ত্রী। তিনি মনে করেন, ক্ষুধা ও দরিদ্রতা একটি দেশের গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি স্বরূপ। এমন পরিস্থিতিতে ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কার্যকর প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করতে হবে। বুদ্ধি পরামর্শের পাশাপাশি আর্থিকভাবেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ধনী দেশগুলোকে। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও অধিক ভূমিকা পালন করতে হবে তাদের।
No comments