‘৮৪,০০০ ধাঁধাঁ’: এশিয়ার সবচেয়ে বড় পরিচয়হীনদের গোরস্থান by কাসিম সাঈদ
৪০
বছর বয়সী নাদিম বালুচ কুয়া থেকে বালতিতে পানি তুলে একটা পাত্রে ভরলেন।
মধ্যদিনের তাপদাহের মধ্যে পাখিদের তৃষ্ণা মিটবে ওই পানিতে। খাঁ খাঁ
চারপাশটাতে নজর বুলান তিনি। বাতাস বয়ে যায়, ধুলোয় ঢাকা পড়ে মাথার চুল আর
গোফ। ৮৪ হাজারেরও বেশি কবরের এক গোরস্তানে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এখানে যাদের
কবর, তাদের পরিচয় নেই কোন, শুধু একটা নাম্বার দেয়া আছে। এই সব কবরগুলো
নাদিম আর বাবার হাতে তৈরি। অজানা মৃতদেহের জন্য কবর খুঁড়েন নাদিম।
করাচির উপকণ্ঠে মোওয়াচ গোথের কাছি এধি কবরস্থানে নাদিম একা একাই কোনরকমে তৈরি একটা ঘরে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছেন।
প্রতিটি কবরে কাঠের একটি টুকরো দিয়ে চিহ্ন দেয়া। ওটাই কবরের ফলক। প্রতিটি কাঠের টুকরায় তিনটা করে চিহ্ন: উপরে কবরের নাম্বার, কবর দেয়ার দিন আর একটি সিরিয়াল নাম্বার। ৮৪ হাজার কবরের মধ্যে কিছু সিমেন্টে বাধানো কবর চোখে পড়বে। এগুলো হলো তাদের যাদের ছবি দেখে কবর দেয়ার সময় তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে পরিবারের সদস্যরা। এগুলোতে কাঠের বদলে সিমেন্টের ফলক দেয়া। আর সাথে রয়েছে নিহতের নাম।
নাদিম বললেন, ‘এগুলো ৮৪ হাজার পরিচয়হীন মৃতদেহ নয়, এগুলো ৮৪ হাজার ধাঁধাঁ’।
“বিগত তিন দশক ধরে কাজ করছি আমি এখানে।যখন ছোট ছিলাম, বাবার সাথে তখন এখানে আসতাম। প্রতি বছর এখানে কবরের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু করাচির আর দশটা কবরস্থানের মতো ধর্মীয় দিনগুলোতে বা পবিত্র অনুষ্ঠানে এখানে কেউ আসে না”।
নাদিম জানান, তিনি টুকরো টুকরো মৃতদেহ, পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত সন্ত্রাসী এবং যারা পুড়ে মারা যান – যাদের পরিচয় উদ্ধার করা যায় না – এ রকম বহু মানুষের জন্য কবর খুঁড়েছেন তিনি।
তিনি বললেন, “সাধারণত তিন ফুট গভীর, দুই ফুট চওড়া এবং ছয় ফুট লম্বা কবর খুঁড়ি আমি। কিন্তু যখনই কোন পানিতে ডুবে মরা ব্যক্তির লাশ আসে, আমাদেরকে কবর আরও চওড়া করতে হয়, কারণ শরীরগুলো ফুলে থাকে”।
হাজার হাজার কবরের মধ্যে আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে আছে কাঠের একটা ক্রুশ। বোঝা যাচ্ছে নিহত ব্যক্তিটি ছিল খ্রিস্টান। তার পরিবার আলাদাভাবে কিছু করতে চায়নি, তাই শুধু কাঠের একটা ক্রুশ বসিয়ে দিয়ে গেছে।
প্রয়াত আব্দুস সাত্তার এধির ছেলে এবং এধি ফাউন্ডেশানের প্রধান ফয়সাল এধি বলেন, “পরিচয়হীন মৃতদেহ কবর দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। ধর্মের ভিত্তিতে আমরা কবর আলাদা করি না। আমরা সবাই মানুষ আর অন্তত মৃত্যুর পর কোন বৈষম্য থাকা উচিত নয়”।
এধি বলেন, “বালদিয়া কারখানায় আগুন লেগে যারা মারা গিয়েছিল, তাদের কবর দিয়েছি আমরা। এনকাউন্টারে নিহত কথিত সন্ত্রাসীদের কবর দিই আমরা। এদের কারো কারো মৃতদেহ চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল, কিন্তু তাদের পরিবারের কেউই এগিয়ে আসেনি কারণ পুলিশি ঝামেলার ভয় পাচ্ছিল তারা”।
এধি বললেন, “নব্বইয়ের দশকের করাচি অপারেশান এবং ২০১৩ সালে আমরা বহু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন মৃতদেহ পেয়েছি। তাদের পরিবারের সদস্যরা সম্ভবত তাদের মৃত্যু সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল এবং কেউই সেগুলোর পরিচয় চিহ্নিত করতে আসেনি। আমরা তাদের এখানে কবর দিয়েছি”।
মাওয়াচ গোথ কবরস্থানে করাচির ৮৪ হাজারেরও বেশি পুরুষ আর নারীর গল্পের কবর হয়েছে, বিদেহী আত্মা যেখানে এখনও পরিচয় খুঁজে ফেরে। জন্মের সময় তাদের নাম দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন মাটির নিচে নামহীন ঘুমিয়ে আছে তারা।
করাচির উপকণ্ঠে মোওয়াচ গোথের কাছি এধি কবরস্থানে নাদিম একা একাই কোনরকমে তৈরি একটা ঘরে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছেন।
প্রতিটি কবরে কাঠের একটি টুকরো দিয়ে চিহ্ন দেয়া। ওটাই কবরের ফলক। প্রতিটি কাঠের টুকরায় তিনটা করে চিহ্ন: উপরে কবরের নাম্বার, কবর দেয়ার দিন আর একটি সিরিয়াল নাম্বার। ৮৪ হাজার কবরের মধ্যে কিছু সিমেন্টে বাধানো কবর চোখে পড়বে। এগুলো হলো তাদের যাদের ছবি দেখে কবর দেয়ার সময় তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে পরিবারের সদস্যরা। এগুলোতে কাঠের বদলে সিমেন্টের ফলক দেয়া। আর সাথে রয়েছে নিহতের নাম।
নাদিম বললেন, ‘এগুলো ৮৪ হাজার পরিচয়হীন মৃতদেহ নয়, এগুলো ৮৪ হাজার ধাঁধাঁ’।
“বিগত তিন দশক ধরে কাজ করছি আমি এখানে।যখন ছোট ছিলাম, বাবার সাথে তখন এখানে আসতাম। প্রতি বছর এখানে কবরের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু করাচির আর দশটা কবরস্থানের মতো ধর্মীয় দিনগুলোতে বা পবিত্র অনুষ্ঠানে এখানে কেউ আসে না”।
নাদিম জানান, তিনি টুকরো টুকরো মৃতদেহ, পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত সন্ত্রাসী এবং যারা পুড়ে মারা যান – যাদের পরিচয় উদ্ধার করা যায় না – এ রকম বহু মানুষের জন্য কবর খুঁড়েছেন তিনি।
তিনি বললেন, “সাধারণত তিন ফুট গভীর, দুই ফুট চওড়া এবং ছয় ফুট লম্বা কবর খুঁড়ি আমি। কিন্তু যখনই কোন পানিতে ডুবে মরা ব্যক্তির লাশ আসে, আমাদেরকে কবর আরও চওড়া করতে হয়, কারণ শরীরগুলো ফুলে থাকে”।
হাজার হাজার কবরের মধ্যে আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে আছে কাঠের একটা ক্রুশ। বোঝা যাচ্ছে নিহত ব্যক্তিটি ছিল খ্রিস্টান। তার পরিবার আলাদাভাবে কিছু করতে চায়নি, তাই শুধু কাঠের একটা ক্রুশ বসিয়ে দিয়ে গেছে।
প্রয়াত আব্দুস সাত্তার এধির ছেলে এবং এধি ফাউন্ডেশানের প্রধান ফয়সাল এধি বলেন, “পরিচয়হীন মৃতদেহ কবর দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। ধর্মের ভিত্তিতে আমরা কবর আলাদা করি না। আমরা সবাই মানুষ আর অন্তত মৃত্যুর পর কোন বৈষম্য থাকা উচিত নয়”।
এধি বলেন, “বালদিয়া কারখানায় আগুন লেগে যারা মারা গিয়েছিল, তাদের কবর দিয়েছি আমরা। এনকাউন্টারে নিহত কথিত সন্ত্রাসীদের কবর দিই আমরা। এদের কারো কারো মৃতদেহ চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল, কিন্তু তাদের পরিবারের কেউই এগিয়ে আসেনি কারণ পুলিশি ঝামেলার ভয় পাচ্ছিল তারা”।
এধি বললেন, “নব্বইয়ের দশকের করাচি অপারেশান এবং ২০১৩ সালে আমরা বহু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন মৃতদেহ পেয়েছি। তাদের পরিবারের সদস্যরা সম্ভবত তাদের মৃত্যু সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল এবং কেউই সেগুলোর পরিচয় চিহ্নিত করতে আসেনি। আমরা তাদের এখানে কবর দিয়েছি”।
মাওয়াচ গোথ কবরস্থানে করাচির ৮৪ হাজারেরও বেশি পুরুষ আর নারীর গল্পের কবর হয়েছে, বিদেহী আত্মা যেখানে এখনও পরিচয় খুঁজে ফেরে। জন্মের সময় তাদের নাম দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন মাটির নিচে নামহীন ঘুমিয়ে আছে তারা।
No comments