দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলেন জাহিদ: তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে: ফখরুল
দলীয়
সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন জাহিদুর রহমান। একাদশ জাতীয়
নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিজয়ী হন তিনি।
নির্বাচনে বিএনপির ৬ জন নির্বাচিতের মধ্যে তিনি একজন। বৈরী পরিবেশ,
নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রাখাসহ ব্যাপক অনিয়মের
অভিযোগ তুলে ফলাফলসহ ৩০শে ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল। সেই সঙ্গে যৌথ সিদ্ধান্ত
নেয় সংসদে না যাওয়ার। কিন্তু প্রথম সেই সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে গণফোরাম মনোনীত
দুইজন। বিএনপির নির্বাচিতদের কয়েকজনও সংসদে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করে
বক্তব্য দিয়েছেন গণমাধ্যমে। রাজধানীতে একটি হোটেলে বসে নিজেরা চা-চক্র
করেছেন।
তাদের গতিপ্রকৃতি দেখে সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ডেকে সতর্ক করেছেন।
জরুরি বৈঠক করে সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির জাতীয় নির্ধারক ফোরাম। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ সে পথে হাঁটলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সবকিছুকে পাশকাটিয়ে, জল্পনা-কল্পনার পর, নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে বিএনপির প্রথম এমপি হিসেবে একাদশ সংসদে যোগ দিলেন জাহিদুর রহমান। নির্বাচনের পর সংসদীয় রীতি অনুযায়ী শপথ নেয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রাক্কালে গতকাল দুপুরে বেশ গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে নিজ দপ্তরে তাকে শপথ পড়ান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার পর তাকে গণদুষমন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শিগগিরই সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিতরা বারবার বলেছেন তাদের ওপর চাপ তৈরি করছে এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চাপের বিষয়টি সত্য হলেও চাপের ক্ষেত্র ভিন্ন।
নির্বাচিতদের ওপর রয়েছে নানামুখী চাপ। তবে সেটা এলাকার লোকজনের নয়, অন্য কোনোখানের। টোপও রয়েছে তাদের সামনে। বিএনপির নির্বাচিতরা সে চাপ এবং লোভ সামলাতে পারছেন না। রাজনীতিতে জাতীয় বেঈমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ভয়, দলে সাংগঠনিক শাস্তি ও এলাকায় নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও তারা হাঁটছেন সংসদের পথে। জাহিদুর ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন সংসদে, অন্যরাও হচ্ছেন সে পথের যাত্রী। এখন পর্যন্ত সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে একজনই কেবল পরিস্কার অবস্থানে রয়েছেন। আর তিনি হচ্ছেন বগুড়া-৬ আসনে বিজয়ী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচিত অন্য চারজনও গুনছেন অপেক্ষার প্রহর। তারাও শপথের ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর জাহিদুর রহমান গণমাধ্যমকে সে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘মহাসচিব ছাড়া দলের বাকি সদস্যরাও শপথ নিতে পারেন। দেখি তাঁরা আসেন কি না।’ শপথ নিলেও গতকাল সংসদ অধিবেশনে যোগ দেননি তিনি। বলেছেন, ‘অন্যরা এলে একসঙ্গে যোগ দেব।’ তার এমন বক্তব্যে অনেকটাই পরিস্কার অন্যরাও প্রস্তুত। বিএনপির নির্বাচিতদের মধ্যে মহাসচিব ছাড়া বাকি চারজনের সঙ্গে গতকাল মানবজমিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাদের বক্তব্যেও পাওয়া গেছে সংসদে যাওয়ার সুর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিজয়ী দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ বলেছেন- ‘দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি, এখনও সময় আছে’। দল তো সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে, তাহলে নতুন কি সিদ্ধান্ত সেটা জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। অন্যদিকে কয়েকবার চেষ্টা করেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিজয়ী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ব্রাহ্মনবাড়িয়া-২ আসন থেকে বিজয়ী সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার বলেন- ‘দলের সিদ্ধান্তের জন্য তো অপেক্ষা করেছি, কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। এলাকাবাসীর চাপও বাড়ছে।’ এলাকাবাসীর চাপে শেষপর্যন্ত সংসদে যাবেন কিনা জানতে চাইলে প্রবীণ এই নেতা বলেন- ‘হতে পারে, দোয়া করবেন।’ শপথ গ্রহনের ব্যাপারে বগুড়া-৪ আসন থেকে বিজয়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জনগনের চাপ আছে সংসদে যাওয়ার। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত আছে সংসদে না যাওয়ার। এখন দলের সিদ্ধান্তই মানতে হবে।’ জাহিদুর রহমানের শপথের পর প্রশ্ন উঠেছে- বিএনপি কি আদৌ বাকিদের শপথ গ্রহণ নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে?
জাহিদুরের পর কে?
সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে তাদের শপথ নিতে হবে। কারণ কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী নির্বাচনে বিজয়ী কোন সংসদ সদস্য ওই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হবে। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন গত ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়। সেই হিসেবে শপথ না নিলে ৩০ এপ্রিলের পর তাদের আসন শুন্য হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে বিএনপি’র আরো দুই জন শপথ নিতে পারেন। তারা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল হক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ। শপথের বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয় জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেই জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার বিষয়ে তার আগ্রহের কথা জানিয়ে স্পিকারের নিকট চিঠি লেখেন। এরপর শপথ গ্রহণের জন্য তাকে সংসদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বেলা ১১টার আগে সংসদে এসে স্পিকারের দপ্তরে বসেন জাহিদুর রহমান। দুপুর ১২টায় তাকে শপথ পড়ান স্পিকার। শপথ নিয়ে নিয়মমাফিক সংসদ সচিবের কক্ষে গিয়ে স্বাক্ষর বইতে সই করেন। পরে সংসদের নিচতলায় সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচয়পত্র নেন। সেখান থেকে বেরিয়ে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
জাহিদকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে: ফখরুল
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাহিদুর রহমান এমপি হিসেবে শপথ নেয়ায় তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইমলাম আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, শপথ গ্রহণ না করা। এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে যদি কেউ শপথ গ্রহণ করে থাকেন, তা নিঃসন্দেহে সাংগঠনিক অপরাধ। অবশ্যই এরকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুতই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা স্পষ্ট করেননি বিএনপি মহাসচিব।
তারা গণদুষমন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে: গয়েশ্বর
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জাহিদের শপথের বিষয়টি জাতীয় প্রেসক্লাবে বসে শুনলাম। এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং দল এটা দেখবে। নেত্রীকে কারাগারে রেখে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ নিচ্ছেন বা নেবেন, তারা গণদুশমন। জনগণই তাদের বিচার করবে। সাংগঠনিকভাবে যা ব্যবস্থা নেয়ার, তাই করা হবে। দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বহিষ্কার করা হতে পারে। অথবা সরাসরি বহিষ্কারও করা হতে পারে। গণমাধ্যমবিরোধী কালো আইন বাতিল, সাংবাদিক হত্যার বিচার, বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এসোসিয়েশন আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন। অন্যদের ব্যাপারে গয়েশ্বর রায় বলেন, তাঁরা দল করেন।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন। একজন ব্যক্তি যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক যে নিয়ম আছে, তা কার্যকর করা হবে। আমরা এই শপথ গ্রহণে ক্লান্তও নই, ভীতও নই। গয়েশ্বর বলেন, আজকে সাংবাদিকরা একটা কথা জানতে চান, জাহিদ হোসেন দাবিদার তিনি পাস করেছেন। ধানের শীষ থেকে পাস করে তিনি আজ শপথ গ্রহণ করছেন। জনগণের সঙ্গে যিনি থাকতে পারেন না তিনি কোথায় শপথ নিলেন আর না নিলেন এটা বিবেচনার বিষয় না। ১৬ কোটি মানুষ ভোট দিতে পারেননি। যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের ৫ শতাংশ লোকও ভোট দিতে পারেনি। একথা আমার না, আপনাদের সকলের কথা। গয়েশ্বর রায় বলেন, ৩০০ আসনের কেউ নির্বাচিত না। এই ৩০০ জনও যদি এক জায়গায় এসে চিৎকার করে বলে আমরা নির্বাচিত তাতেও তো নির্বাচিত হয় না। বরং জনগণ তাদের যে থুথু মারবে, সেই থুথুর ঢলে তারা ভেসে যাবে। সেইদিনই তারা বুঝতে পারবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিণতি কি?
নেত্রীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে দাবি তুলব সংসদে: জাহিদুর
শপথ গ্রহণ শেষে বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, জনগণের চাপে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই শপথ নিতে বাধ্য হয়েছেন। সংসদে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও এলাকাবাসী দাবি নিয়ে কথা বলতে চান। একই সঙ্গে এলাকার হাজার হাজার নিরপরাধ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাবেন। জাহিদুর বলেন, আমি সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে বলব- আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা হয়েছে। আপনি এগুলো দেখেন। এগুলোর বাদী পুলিশ।
পুলিশ যা করেছে সব মিথ্যা মামলা করেছে। আপনার লোক কোন মামলা করেনি। গণতন্ত্রের স্বার্থে সেসব মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে আমি আশাকরি। জাহিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মাঠে লড়াই করেছি। আমি এবার নিয়ে চতুর্থবার নির্বাচন করলাম। এই আসনটি আমাদের বিএনপির ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের। এই প্রথম বিএনপি বিজয়ী হয়েছে। ধানের শীষের জন্মের পর আমিই প্রথম জিতলাম। তাই এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ আমার শপথ নেয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, আমার নেত্রী একজন বয়স্ক নারী, ৭৩ বছর বয়স। উনাকে যেন গণতন্ত্রের স্বার্থে মুক্ত করে দেয়া হয়, সংসদে এই আহ্বান জানাব। এটাই আমার এমপি হিসেবে প্রথম অঙ্গিকার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই শপথ দলের সিদ্ধান্তের বাইরেই। আমি দীর্ঘদিন তো অপেক্ষা করলাম। যেহেতু এমপি নির্বাচিত হয়েছি, এলাকার মানুষের প্রচন্ড চাপ। গত ১৫ দিন ধরে ঢাকায় আছি। এলাকার মানুষের একটাই বক্তব্য, শপথ নিয়ে ফিরে আসেন। শপথ গ্রহণের আগে দলের কোনো পর্যায়ে কথা হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন- না, আগে বলেছি। দেখাও করেছি। কোনো প্রকারে সম্মতি দেয়নি। দল থেকে বহিষ্কার হবেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিষয়ে দল যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। দল যদি মনে করে বহিষ্কার করবে, করতেই পারে। তবে বহিষ্কার করলেও কিন্তু আমি দলে আছি। আমি এই দলের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী।
সেই ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজেই বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি তো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হবো না। আমি বিএনপি’র সঙ্গে আছি-থাকবো। জাহিদুর রহমান বলেন, এমনিতে আমার আর নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। আমি ক্লান্ত। ১৯৯১ সাল থেকেই তো নির্বাচন করে যাচ্ছি। চারবার সংসদ নির্বাচন ও একবার পৌর নির্বাচন। বাপের টাকায় রাজনীতি করি। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা আছে। মামলা চালানোর টাকা তো দল দেয় না। আমাদেরই দিতে হয়। শপথ নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জাহিদুর রহমান বলেন, আমি মনে করি শপথ নেয়া উচিত। কারণ আমাদের নেত্রী কারাগারে। তিনি অসুস্থ। দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তারা জেলে আছে। বাইরে থেকে কিছুই হচ্ছে না। সুতরাং বাইরে থেকে লাভ কী? তার চেয়ে ভেতরেই যাই, অন্তত চিৎকার করে কথা তো বলতে পারবো।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলেও পরিণতি স্পষ্ট নয় সংবিধানে: উল্লেখ্য, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তবে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সুলতান মনসুর, মোকাব্বির খান ও জাহিদুর রহমান দল থেকে পদত্যাগ করেননি। সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগও তাদের নেই। তাই তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিলে এবং ওই অবস্থায় দল তাঁদের বহিষ্কার করলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকতে হবে।
শপথ নেয়ায় জাহিদকে আওয়ামী লীগের অভিনন্দন: এমপি হিসেবে শপথ নিয়ে জাহিদুর রহমান বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তিরস্কৃত হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে অভিনন্দন পেয়েছেন। একাদশ সংসদে বিএনপির প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে জাহিদ গতকাল শপথ নেয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ। বিরোধী দলের এমপির শপথ নেয়ার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি- ভোটারদের দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আপনারা শপথ গ্রহণ করুন। জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে সংসদে আসার জন্য, সেই দায়বদ্ধতা থেকে শপথ নেয়া উচিত। আজকে বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন, তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করি, বাকিরাও খুব শিগগিরই শপথ নেবেন।’
তাদের গতিপ্রকৃতি দেখে সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ডেকে সতর্ক করেছেন।
জরুরি বৈঠক করে সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির জাতীয় নির্ধারক ফোরাম। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ সে পথে হাঁটলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সবকিছুকে পাশকাটিয়ে, জল্পনা-কল্পনার পর, নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে বিএনপির প্রথম এমপি হিসেবে একাদশ সংসদে যোগ দিলেন জাহিদুর রহমান। নির্বাচনের পর সংসদীয় রীতি অনুযায়ী শপথ নেয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রাক্কালে গতকাল দুপুরে বেশ গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে নিজ দপ্তরে তাকে শপথ পড়ান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার পর তাকে গণদুষমন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শিগগিরই সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিতরা বারবার বলেছেন তাদের ওপর চাপ তৈরি করছে এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চাপের বিষয়টি সত্য হলেও চাপের ক্ষেত্র ভিন্ন।
নির্বাচিতদের ওপর রয়েছে নানামুখী চাপ। তবে সেটা এলাকার লোকজনের নয়, অন্য কোনোখানের। টোপও রয়েছে তাদের সামনে। বিএনপির নির্বাচিতরা সে চাপ এবং লোভ সামলাতে পারছেন না। রাজনীতিতে জাতীয় বেঈমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ভয়, দলে সাংগঠনিক শাস্তি ও এলাকায় নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও তারা হাঁটছেন সংসদের পথে। জাহিদুর ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন সংসদে, অন্যরাও হচ্ছেন সে পথের যাত্রী। এখন পর্যন্ত সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে একজনই কেবল পরিস্কার অবস্থানে রয়েছেন। আর তিনি হচ্ছেন বগুড়া-৬ আসনে বিজয়ী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচিত অন্য চারজনও গুনছেন অপেক্ষার প্রহর। তারাও শপথের ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর জাহিদুর রহমান গণমাধ্যমকে সে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘মহাসচিব ছাড়া দলের বাকি সদস্যরাও শপথ নিতে পারেন। দেখি তাঁরা আসেন কি না।’ শপথ নিলেও গতকাল সংসদ অধিবেশনে যোগ দেননি তিনি। বলেছেন, ‘অন্যরা এলে একসঙ্গে যোগ দেব।’ তার এমন বক্তব্যে অনেকটাই পরিস্কার অন্যরাও প্রস্তুত। বিএনপির নির্বাচিতদের মধ্যে মহাসচিব ছাড়া বাকি চারজনের সঙ্গে গতকাল মানবজমিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাদের বক্তব্যেও পাওয়া গেছে সংসদে যাওয়ার সুর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিজয়ী দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ বলেছেন- ‘দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি, এখনও সময় আছে’। দল তো সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে, তাহলে নতুন কি সিদ্ধান্ত সেটা জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। অন্যদিকে কয়েকবার চেষ্টা করেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিজয়ী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ব্রাহ্মনবাড়িয়া-২ আসন থেকে বিজয়ী সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার বলেন- ‘দলের সিদ্ধান্তের জন্য তো অপেক্ষা করেছি, কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। এলাকাবাসীর চাপও বাড়ছে।’ এলাকাবাসীর চাপে শেষপর্যন্ত সংসদে যাবেন কিনা জানতে চাইলে প্রবীণ এই নেতা বলেন- ‘হতে পারে, দোয়া করবেন।’ শপথ গ্রহনের ব্যাপারে বগুড়া-৪ আসন থেকে বিজয়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জনগনের চাপ আছে সংসদে যাওয়ার। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত আছে সংসদে না যাওয়ার। এখন দলের সিদ্ধান্তই মানতে হবে।’ জাহিদুর রহমানের শপথের পর প্রশ্ন উঠেছে- বিএনপি কি আদৌ বাকিদের শপথ গ্রহণ নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে?
জাহিদুরের পর কে?
সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে তাদের শপথ নিতে হবে। কারণ কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী নির্বাচনে বিজয়ী কোন সংসদ সদস্য ওই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হবে। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন গত ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়। সেই হিসেবে শপথ না নিলে ৩০ এপ্রিলের পর তাদের আসন শুন্য হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে বিএনপি’র আরো দুই জন শপথ নিতে পারেন। তারা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল হক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ। শপথের বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয় জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেই জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার বিষয়ে তার আগ্রহের কথা জানিয়ে স্পিকারের নিকট চিঠি লেখেন। এরপর শপথ গ্রহণের জন্য তাকে সংসদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বেলা ১১টার আগে সংসদে এসে স্পিকারের দপ্তরে বসেন জাহিদুর রহমান। দুপুর ১২টায় তাকে শপথ পড়ান স্পিকার। শপথ নিয়ে নিয়মমাফিক সংসদ সচিবের কক্ষে গিয়ে স্বাক্ষর বইতে সই করেন। পরে সংসদের নিচতলায় সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচয়পত্র নেন। সেখান থেকে বেরিয়ে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
জাহিদকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে: ফখরুল
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাহিদুর রহমান এমপি হিসেবে শপথ নেয়ায় তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইমলাম আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, শপথ গ্রহণ না করা। এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে যদি কেউ শপথ গ্রহণ করে থাকেন, তা নিঃসন্দেহে সাংগঠনিক অপরাধ। অবশ্যই এরকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুতই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা স্পষ্ট করেননি বিএনপি মহাসচিব।
তারা গণদুষমন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে: গয়েশ্বর
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জাহিদের শপথের বিষয়টি জাতীয় প্রেসক্লাবে বসে শুনলাম। এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং দল এটা দেখবে। নেত্রীকে কারাগারে রেখে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ নিচ্ছেন বা নেবেন, তারা গণদুশমন। জনগণই তাদের বিচার করবে। সাংগঠনিকভাবে যা ব্যবস্থা নেয়ার, তাই করা হবে। দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বহিষ্কার করা হতে পারে। অথবা সরাসরি বহিষ্কারও করা হতে পারে। গণমাধ্যমবিরোধী কালো আইন বাতিল, সাংবাদিক হত্যার বিচার, বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এসোসিয়েশন আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন। অন্যদের ব্যাপারে গয়েশ্বর রায় বলেন, তাঁরা দল করেন।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন। একজন ব্যক্তি যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক যে নিয়ম আছে, তা কার্যকর করা হবে। আমরা এই শপথ গ্রহণে ক্লান্তও নই, ভীতও নই। গয়েশ্বর বলেন, আজকে সাংবাদিকরা একটা কথা জানতে চান, জাহিদ হোসেন দাবিদার তিনি পাস করেছেন। ধানের শীষ থেকে পাস করে তিনি আজ শপথ গ্রহণ করছেন। জনগণের সঙ্গে যিনি থাকতে পারেন না তিনি কোথায় শপথ নিলেন আর না নিলেন এটা বিবেচনার বিষয় না। ১৬ কোটি মানুষ ভোট দিতে পারেননি। যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের ৫ শতাংশ লোকও ভোট দিতে পারেনি। একথা আমার না, আপনাদের সকলের কথা। গয়েশ্বর রায় বলেন, ৩০০ আসনের কেউ নির্বাচিত না। এই ৩০০ জনও যদি এক জায়গায় এসে চিৎকার করে বলে আমরা নির্বাচিত তাতেও তো নির্বাচিত হয় না। বরং জনগণ তাদের যে থুথু মারবে, সেই থুথুর ঢলে তারা ভেসে যাবে। সেইদিনই তারা বুঝতে পারবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিণতি কি?
নেত্রীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে দাবি তুলব সংসদে: জাহিদুর
শপথ গ্রহণ শেষে বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, জনগণের চাপে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই শপথ নিতে বাধ্য হয়েছেন। সংসদে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও এলাকাবাসী দাবি নিয়ে কথা বলতে চান। একই সঙ্গে এলাকার হাজার হাজার নিরপরাধ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাবেন। জাহিদুর বলেন, আমি সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে বলব- আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা হয়েছে। আপনি এগুলো দেখেন। এগুলোর বাদী পুলিশ।
পুলিশ যা করেছে সব মিথ্যা মামলা করেছে। আপনার লোক কোন মামলা করেনি। গণতন্ত্রের স্বার্থে সেসব মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে আমি আশাকরি। জাহিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মাঠে লড়াই করেছি। আমি এবার নিয়ে চতুর্থবার নির্বাচন করলাম। এই আসনটি আমাদের বিএনপির ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের। এই প্রথম বিএনপি বিজয়ী হয়েছে। ধানের শীষের জন্মের পর আমিই প্রথম জিতলাম। তাই এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ আমার শপথ নেয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, আমার নেত্রী একজন বয়স্ক নারী, ৭৩ বছর বয়স। উনাকে যেন গণতন্ত্রের স্বার্থে মুক্ত করে দেয়া হয়, সংসদে এই আহ্বান জানাব। এটাই আমার এমপি হিসেবে প্রথম অঙ্গিকার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই শপথ দলের সিদ্ধান্তের বাইরেই। আমি দীর্ঘদিন তো অপেক্ষা করলাম। যেহেতু এমপি নির্বাচিত হয়েছি, এলাকার মানুষের প্রচন্ড চাপ। গত ১৫ দিন ধরে ঢাকায় আছি। এলাকার মানুষের একটাই বক্তব্য, শপথ নিয়ে ফিরে আসেন। শপথ গ্রহণের আগে দলের কোনো পর্যায়ে কথা হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন- না, আগে বলেছি। দেখাও করেছি। কোনো প্রকারে সম্মতি দেয়নি। দল থেকে বহিষ্কার হবেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিষয়ে দল যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। দল যদি মনে করে বহিষ্কার করবে, করতেই পারে। তবে বহিষ্কার করলেও কিন্তু আমি দলে আছি। আমি এই দলের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী।
সেই ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজেই বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি তো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হবো না। আমি বিএনপি’র সঙ্গে আছি-থাকবো। জাহিদুর রহমান বলেন, এমনিতে আমার আর নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। আমি ক্লান্ত। ১৯৯১ সাল থেকেই তো নির্বাচন করে যাচ্ছি। চারবার সংসদ নির্বাচন ও একবার পৌর নির্বাচন। বাপের টাকায় রাজনীতি করি। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা আছে। মামলা চালানোর টাকা তো দল দেয় না। আমাদেরই দিতে হয়। শপথ নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জাহিদুর রহমান বলেন, আমি মনে করি শপথ নেয়া উচিত। কারণ আমাদের নেত্রী কারাগারে। তিনি অসুস্থ। দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তারা জেলে আছে। বাইরে থেকে কিছুই হচ্ছে না। সুতরাং বাইরে থেকে লাভ কী? তার চেয়ে ভেতরেই যাই, অন্তত চিৎকার করে কথা তো বলতে পারবো।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলেও পরিণতি স্পষ্ট নয় সংবিধানে: উল্লেখ্য, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তবে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সুলতান মনসুর, মোকাব্বির খান ও জাহিদুর রহমান দল থেকে পদত্যাগ করেননি। সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগও তাদের নেই। তাই তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিলে এবং ওই অবস্থায় দল তাঁদের বহিষ্কার করলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকতে হবে।
শপথ নেয়ায় জাহিদকে আওয়ামী লীগের অভিনন্দন: এমপি হিসেবে শপথ নিয়ে জাহিদুর রহমান বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তিরস্কৃত হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে অভিনন্দন পেয়েছেন। একাদশ সংসদে বিএনপির প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে জাহিদ গতকাল শপথ নেয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ। বিরোধী দলের এমপির শপথ নেয়ার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি- ভোটারদের দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আপনারা শপথ গ্রহণ করুন। জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে সংসদে আসার জন্য, সেই দায়বদ্ধতা থেকে শপথ নেয়া উচিত। আজকে বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন, তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করি, বাকিরাও খুব শিগগিরই শপথ নেবেন।’
No comments