শপথ নেবেন না বিএনপির এমপিরা: খালেদাকে নিয়ে লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
শপথ
নেবেন না বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকেই এ
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে শত
নাগরিক আয়োজিত ‘খালেদা জিয়া তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে
বিএনপি নেতারা এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী শুধুমাত্র একটি কারণে আজ কারাগারে। সেটা হলো-
বিএনপিকে নিঃশ্বেস করে দেয়া। বিএনপির রাজনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া এবং
দেশনেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। কিন্তু দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে
রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া সম্ভব হবে না, হতে পারে না। বিএনপি মহাসচিব
বলেন, খালেদা জিয়া একজন জীবন্ত কিংবদন্তি।
কারণ তিনি একজন সেনানায়ককের স্ত্রী। তিনি হঠাৎ ক্ষমতায় বসে পড়েননি। দীর্ঘ ৯ বছর লড়াই সংগ্রাম করে জনগণকে ভালোবেসে, তাদের ভালবাসায় রাষ্ট্র পরিচালার দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে দুই জন মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি।
তার একজন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অপরজন হলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। এই বিষয়টা আমাদের মনে করতে হবে। তিনি বলেন, এখানে মুরুব্বি যারা আছেন তারা জানেন, বিএনপির ঘোষণাপত্র ছিলো প্রেসিডেন্ট শাসিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু যখন স্বৈরাচার এরশাদকে সরাতে জাতীয় ঐক্যের বিষয় আসলো। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করার প্রেক্ষাপট তৈরি হল। তখন এটা একটা বড় বিষয় হয়ে দাড়ালো। ওই সময় প্রেসিডেন্ট শাসিত রাষ্ট্রের ঘোষণার কারণে ঐক্য হচ্ছিল না অথবা ভেঙে যাচ্ছিল। তখন সংসদীয় গণতন্ত্রের ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সুতরাং মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে যা কিছু এর সব অবদান জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপিকে ভেঙে ফেলার জন্য বারবার চেষ্টা হয়েছে। নিশ্চিহ্ন করার জন্য বারবার চেষ্টা হয়েছে। এবারও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি কারণে কারাগারে রাখা হয়েছে। সেটা হলো- বিএনপিকে নিঃশেষ করা। বিএনপিকে ধ্বংস করে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া। কিন্তু সম্ভব হবে না, হতে পারে না। কারণ বিএনপি ও খালেদা জিয়ার রাজনীতি হচ্ছে, এদেশের মানুষের রাজনীতি। তাই কখনো হতাশ হবেন না। হতাশার কথা বলবেনও না। হতাশার কথা শুনতে চাইনা। যারা বলেন, বিএনপি নিঃশেষ হয়ে গেছে- আমি তাদের সঙ্গে একমত না। বিএনপি প্রতিটি সংকটের সময় উঠে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিএনপি দেশের জনগণের দল। আমরা সবাই অত্যান্ত আশাবাদী, আমরা বিশ্বাস করি- আমাদের নেত্রী জেলে থাকুন আর বাইরে থাকুন, তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনিই আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে আনবেন ইনশাআল্লাহ।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। এতো অসুস্থ যা আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। আমরা নববর্ষে দেশনেত্রীকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি হাটতেও পারেন না। চেয়ারেও ঠিকমতো বসতে পারেন না। বিছানা থেকে উঠার জন্য তাকে সাহায্য করতে হয়। তারপরও এতোটুকু মনোবল তিনি হারাননি। এই মনোবল আমাদের মধ্যে সঞ্চার করতে হবে। তরুণদের মধ্যে সঞ্চার করতে হবে। এর মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রকে এবং আমাদের দেশমাতাকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া তাকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জন এমপির সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ শপথ নেবে না। আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নির্বাচিতদের জানিয়ে দেয়া হবে। সুতরাং এখানে কোনো পরিবর্তন ও ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই বিষয়টি এখানে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা অনেকে হতাশ হয়ে যাই। বলি, দেশে তো আর কোনো রাজনীতি নেই। সরকার দেশে বিরোধী দল রাখতে চায় না।
তারপরও আমাদের মহাসচিব প্রতিদিন কিছু না কিছু বলে জানান দেন আমরা বিরোধী দল আছি। সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচার বিএনপিকে আরও মুজবত করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই নির্যাতন দূর্বিচারের কারণে বিএনপি আগামী শত বছর রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে। বিএনপির কিছু হবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় খালেদা জিয়া আজ কারারুদ্ধ। সরকারের ইচ্ছা থাকলে তিনি আরও আগেই মুক্তি পেতেন। তার সবগুলো মামলা জামিন যোগ্য হলেও আমরা তাকে মুক্ত করতে পারছি না। তারপরও বলতে চাই তিনি আমাদের মাঝে যত শিগগিরই ফিরে আসবে ততই আমাদের মঙ্গল। তার ফিরে আসার মানেই হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার একটা ব্যর্থতা আছে, যা আমি আগেও একদিন তাকে বলেছিলাম। আজকেও বলতে চাই। তা হলো, তিনি তার চারপাশে নির্ভীক, সৎ, সাহসী লোক তৈরি করতে পারেননি। এ কারণে আমরা সংকট মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছি। আর সরকার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে উস্কানি দেয়ার সাহস পাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি ঠাট্টা ও মসকরা ছাড়া আর কিছু নয়। আর এ ধরণের অসঙ্গতি প্রস্তাব সরকারের কাছ থেকে আসতে পারে না এবং আসবে না। তিনি বলেন, আজকে বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা বলছেন, এলাকার মানুষের চাপ আছে শপথ নেয়ার বিষয়ে। কিন্তু শুনতে চেয়েছিলাম, তারা বলবেন খালেদা জিয়া আগে মুক্ত হবেন। এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত হলে সংসদে যাওয়ার বিষয় বিবেচনা করবো। কিন্তু তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা সংসদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং তাদের কাপড়-চোপড়ও প্রস্তুত রয়েছে।
সূচনা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এই বইটি বিক্রি করে যে পয়সা হবে, সেই পয়সা আমি নেবো না। এই অঙ্গিকার নিয়ে আমি বইটি লেখেছি। আর এই টাকা দিয়ে আমরা একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করবো।
বিএনপির নেতাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে কিনা: বিএনপির সিনিয়র নেতাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন তুলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের আশাহত হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে একটা আলোচনা হতে পারে। আন্দোলনটা কেনো হচ্ছে না? এই যে আমাদের নেতারা আছেন, তারা অনেক সিনিয়র নেতা, জ্ঞানীগুনী নেতা এবং নিবেদিত। তারা কি নিজেরা চলতে পারছেন না।
না কি তাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে? নেতাদের হাত-পা বেঁধে দিলে কখনো সংগ্রাম হয় না। আমাদের সামনে যারা বসে আছেন, তাদের মধ্যে বিশ্বাস প্রয়োজন। তাদের চলাফেলার সুযোগ করে দেয়া উচিত। তাদের যদি আমরা দল চালানোর সুযোগ করে দেই এবং বাইরে থেকে ওহি না পাঠিয়ে এখানেই বসে আলোচনা করে আন্দোলন করি। কারণ আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা পাবো না। আমাদেরও কারো মঙ্গল হবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে রাস্তার নামতে। তাই আমাদের এখন একমাত্র আলোচনা হবে, আমরা কখন কিভাবে রাস্তায় নামতে পারবো। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এতো বড় একজন নেত্রী কারাগারে। এতো বড় দল, অথচ কোন আন্দোলন নেই। আর একে অপরের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা করে আমাদের খুব বেশী লাভ হবে না।
৯০-এর ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আনতে হবে: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের মতো বয়স্কদের দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। ৯০-এর ছাত্রনেতা ও তরুণদের দলের নেতৃত্বে এনে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কবে থেকে আন্দোলন হবে সেই সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে নিতে হবে।
তারেক রহমানকে ফেরানোর ক্ষমতা সরকারের নেই: সুপ্রিমকোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা সরকার কিংবা দুদকের নেই। এই কারণে সরকার ভিন্ন পথে হাঁটছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজির জন্য সরকার এসব করছে। এছাড়া, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বইয়ের প্রকাশনা উৎসবকে নানা আত্মসমালোচনায় পরিণত করেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি তারা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সফলতাগুলো তুলে ধরেন।
‘খালেদা জিয়া-তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ বইটি সম্পাদনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও কবি আব্দুল হাই শিকদার। তারাসহ আরো ১০ জন লেখক রয়েছে বইটির। মোট ১২ জন লেখকের বইটির বিষয় সূচিও করা হয়েছে ১২ টি। বইটির ১২ জন লেখক হলেন- ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ড. হাসান মোহাম্মদ, ড. আবদুল লতিফ মাসুম, শওকত মাহমুদ, আবদুল হাই শিকদার, ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, ড. মাহফুজ পারভেজ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ড. ফজলুল হক সৈকত, কাজী মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, মাহাবুবুর রহমান। বইটি প্রকাশ করে বুক এভিনিউ। দাম রাখা হয়েছে ২ হাজার টাকা। ৮৬০ পৃষ্ঠার বইটিতে খালেদা জিয়ার ১০ বছরের শাসনামলে শিক্ষার প্রসার, ভিশন-২০৩০, ১/১১ সরকারের সময়ের বিভিন্ন বক্তব্য, বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তার সাক্ষাতের ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
বইয়ের লেখক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, আজকের প্রকাশনা উৎসব প্রতিবাদ সমাবেশে পরিণত হয়েছে। এই বইয়ের নাম খালেদা জিয়া নিজে পছন্দ করে দিয়েছেন। আমরা বেশক’টি নাম নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে তিনি এই নামটি পছন্দ করেন।
শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
কারণ তিনি একজন সেনানায়ককের স্ত্রী। তিনি হঠাৎ ক্ষমতায় বসে পড়েননি। দীর্ঘ ৯ বছর লড়াই সংগ্রাম করে জনগণকে ভালোবেসে, তাদের ভালবাসায় রাষ্ট্র পরিচালার দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে দুই জন মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি।
তার একজন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অপরজন হলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। এই বিষয়টা আমাদের মনে করতে হবে। তিনি বলেন, এখানে মুরুব্বি যারা আছেন তারা জানেন, বিএনপির ঘোষণাপত্র ছিলো প্রেসিডেন্ট শাসিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু যখন স্বৈরাচার এরশাদকে সরাতে জাতীয় ঐক্যের বিষয় আসলো। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করার প্রেক্ষাপট তৈরি হল। তখন এটা একটা বড় বিষয় হয়ে দাড়ালো। ওই সময় প্রেসিডেন্ট শাসিত রাষ্ট্রের ঘোষণার কারণে ঐক্য হচ্ছিল না অথবা ভেঙে যাচ্ছিল। তখন সংসদীয় গণতন্ত্রের ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সুতরাং মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে যা কিছু এর সব অবদান জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপিকে ভেঙে ফেলার জন্য বারবার চেষ্টা হয়েছে। নিশ্চিহ্ন করার জন্য বারবার চেষ্টা হয়েছে। এবারও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি কারণে কারাগারে রাখা হয়েছে। সেটা হলো- বিএনপিকে নিঃশেষ করা। বিএনপিকে ধ্বংস করে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া। কিন্তু সম্ভব হবে না, হতে পারে না। কারণ বিএনপি ও খালেদা জিয়ার রাজনীতি হচ্ছে, এদেশের মানুষের রাজনীতি। তাই কখনো হতাশ হবেন না। হতাশার কথা বলবেনও না। হতাশার কথা শুনতে চাইনা। যারা বলেন, বিএনপি নিঃশেষ হয়ে গেছে- আমি তাদের সঙ্গে একমত না। বিএনপি প্রতিটি সংকটের সময় উঠে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিএনপি দেশের জনগণের দল। আমরা সবাই অত্যান্ত আশাবাদী, আমরা বিশ্বাস করি- আমাদের নেত্রী জেলে থাকুন আর বাইরে থাকুন, তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনিই আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে আনবেন ইনশাআল্লাহ।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। এতো অসুস্থ যা আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। আমরা নববর্ষে দেশনেত্রীকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি হাটতেও পারেন না। চেয়ারেও ঠিকমতো বসতে পারেন না। বিছানা থেকে উঠার জন্য তাকে সাহায্য করতে হয়। তারপরও এতোটুকু মনোবল তিনি হারাননি। এই মনোবল আমাদের মধ্যে সঞ্চার করতে হবে। তরুণদের মধ্যে সঞ্চার করতে হবে। এর মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রকে এবং আমাদের দেশমাতাকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া তাকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জন এমপির সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ শপথ নেবে না। আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নির্বাচিতদের জানিয়ে দেয়া হবে। সুতরাং এখানে কোনো পরিবর্তন ও ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই বিষয়টি এখানে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা অনেকে হতাশ হয়ে যাই। বলি, দেশে তো আর কোনো রাজনীতি নেই। সরকার দেশে বিরোধী দল রাখতে চায় না।
তারপরও আমাদের মহাসচিব প্রতিদিন কিছু না কিছু বলে জানান দেন আমরা বিরোধী দল আছি। সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচার বিএনপিকে আরও মুজবত করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই নির্যাতন দূর্বিচারের কারণে বিএনপি আগামী শত বছর রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে। বিএনপির কিছু হবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় খালেদা জিয়া আজ কারারুদ্ধ। সরকারের ইচ্ছা থাকলে তিনি আরও আগেই মুক্তি পেতেন। তার সবগুলো মামলা জামিন যোগ্য হলেও আমরা তাকে মুক্ত করতে পারছি না। তারপরও বলতে চাই তিনি আমাদের মাঝে যত শিগগিরই ফিরে আসবে ততই আমাদের মঙ্গল। তার ফিরে আসার মানেই হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার একটা ব্যর্থতা আছে, যা আমি আগেও একদিন তাকে বলেছিলাম। আজকেও বলতে চাই। তা হলো, তিনি তার চারপাশে নির্ভীক, সৎ, সাহসী লোক তৈরি করতে পারেননি। এ কারণে আমরা সংকট মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছি। আর সরকার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে উস্কানি দেয়ার সাহস পাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি ঠাট্টা ও মসকরা ছাড়া আর কিছু নয়। আর এ ধরণের অসঙ্গতি প্রস্তাব সরকারের কাছ থেকে আসতে পারে না এবং আসবে না। তিনি বলেন, আজকে বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা বলছেন, এলাকার মানুষের চাপ আছে শপথ নেয়ার বিষয়ে। কিন্তু শুনতে চেয়েছিলাম, তারা বলবেন খালেদা জিয়া আগে মুক্ত হবেন। এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত হলে সংসদে যাওয়ার বিষয় বিবেচনা করবো। কিন্তু তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা সংসদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং তাদের কাপড়-চোপড়ও প্রস্তুত রয়েছে।
সূচনা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এই বইটি বিক্রি করে যে পয়সা হবে, সেই পয়সা আমি নেবো না। এই অঙ্গিকার নিয়ে আমি বইটি লেখেছি। আর এই টাকা দিয়ে আমরা একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করবো।
বিএনপির নেতাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে কিনা: বিএনপির সিনিয়র নেতাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন তুলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের আশাহত হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে একটা আলোচনা হতে পারে। আন্দোলনটা কেনো হচ্ছে না? এই যে আমাদের নেতারা আছেন, তারা অনেক সিনিয়র নেতা, জ্ঞানীগুনী নেতা এবং নিবেদিত। তারা কি নিজেরা চলতে পারছেন না।
না কি তাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে? নেতাদের হাত-পা বেঁধে দিলে কখনো সংগ্রাম হয় না। আমাদের সামনে যারা বসে আছেন, তাদের মধ্যে বিশ্বাস প্রয়োজন। তাদের চলাফেলার সুযোগ করে দেয়া উচিত। তাদের যদি আমরা দল চালানোর সুযোগ করে দেই এবং বাইরে থেকে ওহি না পাঠিয়ে এখানেই বসে আলোচনা করে আন্দোলন করি। কারণ আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা পাবো না। আমাদেরও কারো মঙ্গল হবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে রাস্তার নামতে। তাই আমাদের এখন একমাত্র আলোচনা হবে, আমরা কখন কিভাবে রাস্তায় নামতে পারবো। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এতো বড় একজন নেত্রী কারাগারে। এতো বড় দল, অথচ কোন আন্দোলন নেই। আর একে অপরের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা করে আমাদের খুব বেশী লাভ হবে না।
৯০-এর ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আনতে হবে: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের মতো বয়স্কদের দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। ৯০-এর ছাত্রনেতা ও তরুণদের দলের নেতৃত্বে এনে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কবে থেকে আন্দোলন হবে সেই সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে নিতে হবে।
তারেক রহমানকে ফেরানোর ক্ষমতা সরকারের নেই: সুপ্রিমকোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা সরকার কিংবা দুদকের নেই। এই কারণে সরকার ভিন্ন পথে হাঁটছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজির জন্য সরকার এসব করছে। এছাড়া, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বইয়ের প্রকাশনা উৎসবকে নানা আত্মসমালোচনায় পরিণত করেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি তারা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সফলতাগুলো তুলে ধরেন।
‘খালেদা জিয়া-তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ বইটি সম্পাদনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও কবি আব্দুল হাই শিকদার। তারাসহ আরো ১০ জন লেখক রয়েছে বইটির। মোট ১২ জন লেখকের বইটির বিষয় সূচিও করা হয়েছে ১২ টি। বইটির ১২ জন লেখক হলেন- ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ড. হাসান মোহাম্মদ, ড. আবদুল লতিফ মাসুম, শওকত মাহমুদ, আবদুল হাই শিকদার, ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, ড. মাহফুজ পারভেজ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ড. ফজলুল হক সৈকত, কাজী মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, মাহাবুবুর রহমান। বইটি প্রকাশ করে বুক এভিনিউ। দাম রাখা হয়েছে ২ হাজার টাকা। ৮৬০ পৃষ্ঠার বইটিতে খালেদা জিয়ার ১০ বছরের শাসনামলে শিক্ষার প্রসার, ভিশন-২০৩০, ১/১১ সরকারের সময়ের বিভিন্ন বক্তব্য, বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তার সাক্ষাতের ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
বইয়ের লেখক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, আজকের প্রকাশনা উৎসব প্রতিবাদ সমাবেশে পরিণত হয়েছে। এই বইয়ের নাম খালেদা জিয়া নিজে পছন্দ করে দিয়েছেন। আমরা বেশক’টি নাম নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে তিনি এই নামটি পছন্দ করেন।
শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
No comments