ঐক্যের আহবানের মধ্যে অনৈক্যের সুর থাকা সঠিক হবে না by মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন
বর্তমান
ক্রান্তিকালে আমাদের দেশের স্বনামধন্য কয়েকজন সম্মানিত সিনিয়র সিটিজেন
জাতিকে আশার আলো দেখাতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত খুশির খবর।
সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য কাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মানুষকে
মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন বলে সূরা আল-ইমরানের ১১০ নং আয়াতে
বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তাদের এই ভূমিকা স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি
দেয়া এসাইনমেন্টেরই পার্টও বটে। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের এ প্রচেষ্টাকে
কবুল করে দুনিয়া-আখেরাত দু’জাহানে তাদেরকে কামিয়াবি দান করুন। আমীন।
কিন্তু কোন মহৎ উদ্যোগই যাতে সফল না হয় সেজন্য বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের লোকেরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এর পেছনে লেগে থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ ও দূরদৃষ্টিতা বজায় রাখতে হবে। যেকোন উদ্যোগেরই আল্টিমেট গোল নির্ধারণ করতে হয়। আমার মতে, এ সময়ে জাতীয় ঐক্যের আল্টিমেট গোল হল:
একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেখানে সকল নাগরিক স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ লক্ষ্যে দেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে যারাই সহমত পোষণ করবেন তাদেরকে নিয়েই ঐক্য গড়তে হবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে যদি বর্তমান সরকারের সমর্থক কোন ভোটারও এই সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যের মধ্যে শামিল হতে চায় তাকে আপনি কোন যুক্তিতে বাঁধা দিবেন? মানুষের চিন্তা চেতনা কি পরিবর্তনশীল নয়? পূর্বে কোন একটা মত বা আদর্শকে সমর্থন করলে তাকে আজীবন ঐটারই সমর্থক ভাবা কি উচিৎ? এক্ষেত্রে বর্তমান উদ্যোগ গ্রহণকারী সিনিয়র সিটিজেনগণ নিজেদের দিকে তাকালেও বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবেন।
সুতরাং প্রকৃত অর্থে যে ঐক্য গঠন সময়ের অনিবার্য দাবী, সেটা হতে হবে জনগণের ঐক্য। এই ঐক্যের উদ্যোক্তা একজন প্রথিতযশা সিনিয়র সিটিজেন শুরুতে সেই কথাই বলেছিলেন যে, আমি জনগণের ঐক্য চাই। অবশ্য এখন ভিন্ন সুর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ঐক্যের উদ্যোক্তা সম্মানিত নাগরিকগণের বিবেকের কাছে সবিনয় প্রশ্ন রাখতে চাই, বর্তমান সরকার যে অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় আরোহণ করেছিল এবং এখনো ক্ষমতার মসনদ রক্ষায় উঠে পড়ে লেগেছে, সেই একই কৌশলও বক্তব্য যদি ঐক্যের উদ্যোক্তারা প্রয়োগ ও প্রদান করেন তাহলে জনগণ কোন দুঃখে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পরিত্যাগ করে আপনাদের ডাকে সাড়া দেবে? এই সরকার তো জাতির মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টিকারী এ জাতীয় বক্তব্য অনেকদিন ধরে ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার স্বার্থে সরকারি দলের গৃহিত অপকৌশল তাদের দিক থেকে সঠিক বিবেচিত হলেও আপনাদের জন্য তা কিভাবে সঠিক হতে পারে? বিষয়টি সুবিবেচনার দাবি রাখে। তারা তাদের এ অপকৌশল ও অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশবাসীসহ বিশ্বকে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, দেশের আসল সমস্যা জামায়াত।
তাদের বিচার করলেই দেশ সমস্যামুক্ত হয়ে যাবে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, আইন ও যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞগণসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও তারা তো যেভাবেই হোক তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কথা অনুযায়ী দেশ আদৌ সমস্যামুক্ত হয়েছে কি? বরঞ্চ সমস্যা মহামারী আকার ধারণ করেছে যা তাদেরকেসহ গোটা দেশকে গ্রাস করতে চলেছে। সেজন্যই তো আপনাদের মতো বিবেকবান মানুষেরা জীবনের এ পর্যায়ে এসে যখন বিশ্রামে থেকে দেশের উন্নতির দৃশ্য অবলোকন করে চোখ শীতল হওয়ার কথা, তখন শিশু-কিশোর নারীসহ সর্বশ্রেণী ও পেশার মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখে সহ্য করতে না পেরে আপনাদের চোখে অশ্রু বিসর্জন হচ্ছে আর সে কারনেই এই পড়ন্ত বিকেলে জেল-জুলুম, গুম, খুন ও মৃত্যুর খড়গ মাথায় নিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নামার ডাক দিচ্ছেন। চূড়ান্ত আহবানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবারো আল্লাহর দরবারে দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের এ মহতি প্রচেষ্টাকে সফলতায় পৌঁছে দিন। আমীন।
মান্যবর সিনিয়র নাগরিকবৃন্দ, ঐক্যের আহবানের মধ্যে অনৈক্যের সুর থাকা সঠিক হবে না। জোড়াতালির ঐক্য দিয়ে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হবেনা। একটা সুপ্রতিষ্ঠিত ঐক্য ভেঙ্গে আরেকটা ঐক্য গঠন এটা জোড়াতালির মতই। ঐক্যের নামে আপনারা একটি প্রতিষ্ঠিত ঐক্যকে ভাঙ্গতে ভূমিকা রাখাটা কতটুকু সমীচিন কিংবা যথার্থ হচ্ছে মেহেরবাণী করে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। ২০ দলীয় ঐক্যজোট দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থিত ঐক্যজোট। এই জোটের প্রধান দু’ই শরীক হল- বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটেই এ দু’টি দলসহ অন্য দলগুলোকে নিয়ে এই ঐক্যজোট গঠিত হয়। যে প্রেক্ষাপট কিংবা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ জোট গঠন হয়েছিল তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। তার প্রমাণ আপনারাই। কারণ আপনারাও বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। সুতরাং ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে দেশের একটি ব্যাপক সংখ্যক জনগণের মধ্যে যে ঐক্যের বন্ধন তৈরি হয়েছে, সেটাতে কোনভাবে চির না ধরিয়ে কিংবা দূর্বল না করে যতটুকু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে সেখান থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির প্রয়াসই সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত বলে দেশবাসী মনে করেন।
কিন্তু একটা বিষয়ে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর তা হলো: আপনারা জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন এটা আপনাদের অধিকার। কিন্তু ঐক্যের নামে আপনারা একটি দলকে তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ আরেকটি দল ছেড়ে আসার আহবান কতটুকু বিবেচনা প্রসূত তা অনেকের বুঝে আসতেছেনা। বিষয়টি অপ্রত্যাশিত, একেবারেই বেরসিক ও বেমানান বলে দেশের জনগণ মনে করে।
সম্মানিত সিনিয়র নাগরিকবৃন্দ, আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিএনপি যদি বৃহত্তর ঐক্যে যেতে চায়, সেখানে জামায়াত তো কোন বাঁধা দিচ্ছে না। জামায়াত তো আপনাদেরকে কোন শর্ত দিচ্ছে না যে, তাদেরকেও আপনাদের ঐক্যে রাখতে হবে। তবে কেন আগ বাড়িয়ে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করে বহুল প্রত্যাশিত জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে হতাশা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে সমস্যা নয় বরং সম্ভাবনাকে সমস্যা বানিয়ে দেশের কোন কল্যাণ হবে না। অতীতে দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে জামায়াতের গঠনমূলক ভূমিকা ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। দেশের নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে, তারই সমাধান দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা জামায়াতই প্রথম উত্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল দল এ ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানিয়েছিল এবং এখনও আপনারাসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই কেয়ার টেকার তথা তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার আছেন।
তাছাড়া জনগণের মেন্ডেট ছাড়াই গত ৫ বছর যে সরকার দেশ শাসনের নামে জনগণের উপর অত্যাচারের স্টীম রোলার চালিয়ে আসছে, যার বিরুদ্ধে আপনারাও আজকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, সেই স্বৈরাচারী সরকারের হাতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার মজলুম দলের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
তাই যারাই পরিবর্তন চান, তাদেরকে ন্যূনতম শর্তের ভিত্তিতে যার যার অবস্থান থেকে অনেক কিছু ছাড় দিয়েই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, সেটি হল, বর্তমান সময়ে দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় ঐক্যজোট নেত্রী, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অগ্রসেনানী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের জন্যে তার মতো একজন দেশপ্রেমিক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মুহুর্তে জনগণের পাশে থাকা দরকার। ঐক্যের উদ্যোক্তাদেরকে এই দাবিটিও উপেক্ষা করলে চলবে না বলে দেশের জনগণ মনে করেন।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া। লেখক নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য)
কিন্তু কোন মহৎ উদ্যোগই যাতে সফল না হয় সেজন্য বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের লোকেরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এর পেছনে লেগে থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ ও দূরদৃষ্টিতা বজায় রাখতে হবে। যেকোন উদ্যোগেরই আল্টিমেট গোল নির্ধারণ করতে হয়। আমার মতে, এ সময়ে জাতীয় ঐক্যের আল্টিমেট গোল হল:
একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেখানে সকল নাগরিক স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ লক্ষ্যে দেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে যারাই সহমত পোষণ করবেন তাদেরকে নিয়েই ঐক্য গড়তে হবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে যদি বর্তমান সরকারের সমর্থক কোন ভোটারও এই সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যের মধ্যে শামিল হতে চায় তাকে আপনি কোন যুক্তিতে বাঁধা দিবেন? মানুষের চিন্তা চেতনা কি পরিবর্তনশীল নয়? পূর্বে কোন একটা মত বা আদর্শকে সমর্থন করলে তাকে আজীবন ঐটারই সমর্থক ভাবা কি উচিৎ? এক্ষেত্রে বর্তমান উদ্যোগ গ্রহণকারী সিনিয়র সিটিজেনগণ নিজেদের দিকে তাকালেও বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবেন।
সুতরাং প্রকৃত অর্থে যে ঐক্য গঠন সময়ের অনিবার্য দাবী, সেটা হতে হবে জনগণের ঐক্য। এই ঐক্যের উদ্যোক্তা একজন প্রথিতযশা সিনিয়র সিটিজেন শুরুতে সেই কথাই বলেছিলেন যে, আমি জনগণের ঐক্য চাই। অবশ্য এখন ভিন্ন সুর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ঐক্যের উদ্যোক্তা সম্মানিত নাগরিকগণের বিবেকের কাছে সবিনয় প্রশ্ন রাখতে চাই, বর্তমান সরকার যে অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় আরোহণ করেছিল এবং এখনো ক্ষমতার মসনদ রক্ষায় উঠে পড়ে লেগেছে, সেই একই কৌশলও বক্তব্য যদি ঐক্যের উদ্যোক্তারা প্রয়োগ ও প্রদান করেন তাহলে জনগণ কোন দুঃখে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পরিত্যাগ করে আপনাদের ডাকে সাড়া দেবে? এই সরকার তো জাতির মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টিকারী এ জাতীয় বক্তব্য অনেকদিন ধরে ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার স্বার্থে সরকারি দলের গৃহিত অপকৌশল তাদের দিক থেকে সঠিক বিবেচিত হলেও আপনাদের জন্য তা কিভাবে সঠিক হতে পারে? বিষয়টি সুবিবেচনার দাবি রাখে। তারা তাদের এ অপকৌশল ও অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশবাসীসহ বিশ্বকে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, দেশের আসল সমস্যা জামায়াত।
তাদের বিচার করলেই দেশ সমস্যামুক্ত হয়ে যাবে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, আইন ও যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞগণসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও তারা তো যেভাবেই হোক তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কথা অনুযায়ী দেশ আদৌ সমস্যামুক্ত হয়েছে কি? বরঞ্চ সমস্যা মহামারী আকার ধারণ করেছে যা তাদেরকেসহ গোটা দেশকে গ্রাস করতে চলেছে। সেজন্যই তো আপনাদের মতো বিবেকবান মানুষেরা জীবনের এ পর্যায়ে এসে যখন বিশ্রামে থেকে দেশের উন্নতির দৃশ্য অবলোকন করে চোখ শীতল হওয়ার কথা, তখন শিশু-কিশোর নারীসহ সর্বশ্রেণী ও পেশার মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখে সহ্য করতে না পেরে আপনাদের চোখে অশ্রু বিসর্জন হচ্ছে আর সে কারনেই এই পড়ন্ত বিকেলে জেল-জুলুম, গুম, খুন ও মৃত্যুর খড়গ মাথায় নিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নামার ডাক দিচ্ছেন। চূড়ান্ত আহবানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবারো আল্লাহর দরবারে দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের এ মহতি প্রচেষ্টাকে সফলতায় পৌঁছে দিন। আমীন।
মান্যবর সিনিয়র নাগরিকবৃন্দ, ঐক্যের আহবানের মধ্যে অনৈক্যের সুর থাকা সঠিক হবে না। জোড়াতালির ঐক্য দিয়ে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হবেনা। একটা সুপ্রতিষ্ঠিত ঐক্য ভেঙ্গে আরেকটা ঐক্য গঠন এটা জোড়াতালির মতই। ঐক্যের নামে আপনারা একটি প্রতিষ্ঠিত ঐক্যকে ভাঙ্গতে ভূমিকা রাখাটা কতটুকু সমীচিন কিংবা যথার্থ হচ্ছে মেহেরবাণী করে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। ২০ দলীয় ঐক্যজোট দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থিত ঐক্যজোট। এই জোটের প্রধান দু’ই শরীক হল- বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটেই এ দু’টি দলসহ অন্য দলগুলোকে নিয়ে এই ঐক্যজোট গঠিত হয়। যে প্রেক্ষাপট কিংবা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ জোট গঠন হয়েছিল তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। তার প্রমাণ আপনারাই। কারণ আপনারাও বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। সুতরাং ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে দেশের একটি ব্যাপক সংখ্যক জনগণের মধ্যে যে ঐক্যের বন্ধন তৈরি হয়েছে, সেটাতে কোনভাবে চির না ধরিয়ে কিংবা দূর্বল না করে যতটুকু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে সেখান থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির প্রয়াসই সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত বলে দেশবাসী মনে করেন।
কিন্তু একটা বিষয়ে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর তা হলো: আপনারা জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন এটা আপনাদের অধিকার। কিন্তু ঐক্যের নামে আপনারা একটি দলকে তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ আরেকটি দল ছেড়ে আসার আহবান কতটুকু বিবেচনা প্রসূত তা অনেকের বুঝে আসতেছেনা। বিষয়টি অপ্রত্যাশিত, একেবারেই বেরসিক ও বেমানান বলে দেশের জনগণ মনে করে।
সম্মানিত সিনিয়র নাগরিকবৃন্দ, আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিএনপি যদি বৃহত্তর ঐক্যে যেতে চায়, সেখানে জামায়াত তো কোন বাঁধা দিচ্ছে না। জামায়াত তো আপনাদেরকে কোন শর্ত দিচ্ছে না যে, তাদেরকেও আপনাদের ঐক্যে রাখতে হবে। তবে কেন আগ বাড়িয়ে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করে বহুল প্রত্যাশিত জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে হতাশা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে সমস্যা নয় বরং সম্ভাবনাকে সমস্যা বানিয়ে দেশের কোন কল্যাণ হবে না। অতীতে দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে জামায়াতের গঠনমূলক ভূমিকা ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। দেশের নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে, তারই সমাধান দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা জামায়াতই প্রথম উত্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল দল এ ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানিয়েছিল এবং এখনও আপনারাসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই কেয়ার টেকার তথা তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার আছেন।
তাছাড়া জনগণের মেন্ডেট ছাড়াই গত ৫ বছর যে সরকার দেশ শাসনের নামে জনগণের উপর অত্যাচারের স্টীম রোলার চালিয়ে আসছে, যার বিরুদ্ধে আপনারাও আজকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, সেই স্বৈরাচারী সরকারের হাতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার মজলুম দলের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
তাই যারাই পরিবর্তন চান, তাদেরকে ন্যূনতম শর্তের ভিত্তিতে যার যার অবস্থান থেকে অনেক কিছু ছাড় দিয়েই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, সেটি হল, বর্তমান সময়ে দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় ঐক্যজোট নেত্রী, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অগ্রসেনানী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের জন্যে তার মতো একজন দেশপ্রেমিক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মুহুর্তে জনগণের পাশে থাকা দরকার। ঐক্যের উদ্যোক্তাদেরকে এই দাবিটিও উপেক্ষা করলে চলবে না বলে দেশের জনগণ মনে করেন।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া। লেখক নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য)
No comments