‘সাক্ষী’ সিসিটিভি ক্যামেরা যখন টার্গেট by মারুফ কিবরিয়া
ইস্ট
ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির দেয়ালে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা। ভাঙচুর করছে দুই
যুবক। ক’দিন আগের ছবি। এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অপরাধীদের খুঁজে বের করতে ইদানীং বড় ভূমিকা রাখছে সিসিটিভি ক্যামেরা। যে
কারণে এখন টার্গেটও হয়েছে এটি। অনেকক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে
অপরাধীরা। আবার কখনো কখনো তারা নিয়ে যায় ফুটেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির
বাসায় ভাঙচুরের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনাই ঘটেছে। কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা
পারভেজকে সম্প্রতি ঢাকায় তার মোহাম্মদপুরের বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়
একদল লোক। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে তা। তাকে তুলে নেয়ার পর তৈরি হয়
শোরগোল। সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। পরে অবশ্য রাতেই উদ্ধার হয়
পারভেজ।
অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি ক্যামেরা বড় ভূমিকা রাখলেও আদালতে প্রমাণ হিসাবে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য- এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আইনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ কারণেই অনেক ক্ষেত্রে আসামিরা পার পেয়ে যায়। সিসিটিভির ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুই ব্যক্তি দেয়ালের ভেতরের দিক থেকে বাইরে দাঁড়ানো দু’জনের কাছে একটি মরদেহ তুলে দিচ্ছে। পরে তারা চারজন হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে লাশ পেছনের একটি গলিতে ফেলে দেয়। সিসিটিভি ফুটেজে যে চারজনকে দেখা গেছে তারা হলো- মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার ফিরোজ, আকিজপাড়ার দীপু, আমতলীর সন্ত্রাসী হাসু ও বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক সোহেলের সহযোগী রবি। গত জুলাই মাসের ঘটনা এটি। ১৫ই জুলাই খুন হন মহাখালী এলাকার বাসিন্দা কাজী রাশেদ হোসেন।
পরদিনই পুলিশ ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতেই দেখা যায় এ দৃশ্য। রাশেদ খুনের ব্যাপারে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে রাশেদকে হত্যা করা হতে পারে। এর আগে গত ১৫ই মে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ আলী। ঘটনাস্থলে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকলেও খুনিরা বাড্ডা পুলিশ চৌকিতে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। পরে অবশ্য এই খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত বছর ১৪ই নভেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর বনানীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের মেসার্স এস মুন্সি ওভারসিজে ঢুকে সিদ্দিক হোসাইন মুন্সিকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারা যাওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান (৪২), মোখলেসুর রহমান (৩৮) এবং মির্জা পারভেজ আহমেদকে (২৮) গুলি করে। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে মেসার্স এস ওভারসিজের প্রধান ফটক দিয়ে প্রথমে দুই যুবক ঢুকে পড়ে। তাদের একজনের কাউ বয় হ্যাট পরা (ক্যাপ), আরেকজনের মাস্ক ও চশমা পরা ছিল। এর ২৪ সেকেন্ড পর আরো দুই যুবক ভেতরে ঢোকে। তাদের একজনের পরনে টি-শার্ট, প্যান্ট ও আরেকজনের পরনে ফুলহাতা ফতুয়া ও ফুলপ্যান্ট রয়েছে।
৭টা ৫২ মিনিট ৪ সেকেন্ডে প্রথমে দু’জন, এরপর আরো দুজন বেরিয়ে যায়। বের হওয়ার সময় এক যুবককে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হবে। গত বছর ৩রা জুলাই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে অপহরণ করা হয় শিশু সুমাইয়াকে। কয়েকদিনের মধ্যেই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ অপহরণের বিভিন্ন সূত্র যখন খুঁজতে থাকে পুলিশ তখন সেখানকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় এক যুবতী সুমাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছে।
একই বছর মার্চ মাসে রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় নারী ব্যাংক কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটনের পেছনে সহায়ক ছিল সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরায় ধরা পড়ে ঘটনার সময় তার সাবেক স্বামীর উপস্থিতি ও দৌড়ে পালিয়ে যাবার দৃশ্য। এ সূত্র ধরেই সাবেক স্বামী রবিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তদের দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে। গলির ভেতরের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাদের দৌড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। ঘটনার রাতেই ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে একসঙ্গে চার ব্যক্তি ব্যাগ হাতে দৌড়ে যায়।
কয়েক সেকেন্ড পর আরো এক যুবক তাদের পেছনে দ্রুত দৌড়ায়। তার অল্প সময় পর তাদের পেছন পেছনে প্রথমে ১ জন পরবর্তীতে দু’জন ও আরো একজন দৌড়াচ্ছে। তবে তাদের কারো চেহারাই স্পষ্ট নয়। বছর কয়েক আগে রাজধানীর বনানীতে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ খুন করা হয় যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কীকে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের শনাক্ত করতে একটুও বেগ পেতে হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজই চিনিয়ে দেয় ঘাতকদের।
রাজধানীসহ সারা দেশে একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় সচেতনতার অংশ হিসেবে ২-৩ বছর আগে থেকেই নগরজুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো শুরু হয়। বিভিন্ন স্তরের ক্রেতা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা কিনছেন। এ কারণে এখন বিভিন্ন আলামতের পাশাপাশি অপরাধীদের শনাক্তে ঘটনাস্থল বা আশপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজই পুলিশের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু ঘটলেই পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খোঁজে। সেই ফুটেজ থেকেই আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টায় নামে পুলিশ। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অপরাধীদের অপরাধের চিহ্ন থেকে গেলেও কার্যত অন্য দশটি ঘটনার মতো তদন্ত খুব ধীর গতিতে এগোয় বলেই অনেকের অভিযোগ।
বিশেষ করে ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঘটনার দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কোনো না কোনো কারণে আসামিরা অধরা থেকে যায়। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা বলছেন, আসামি শনাক্তের পর সুষ্ঠু তদন্তে কিছুটা সময় লেগে গেলেও কোনো অপরাধী আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে না। তবে আমাদের দেশে ১৮৭২ সালের আইন অনুযায়ী সিসি টিভি ফুটেজে অপরাধের সাক্ষী হওয়ার ব্যাপারে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ১৮৭২ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী কোথাও বলা নেই যে- এ ধরনের ডিজিটাল এভিডেন্স, এভিডেন্স হবে। এ জন্য অনেকে এ ধরনের প্রমাণ থাকলেও কোর্টে এসে এভিডেন্স একসেপ্ট করতে রাজি হয় না।
কারণ আইনে কোথাও ক্লিয়ার করে বলা নেই। দ্বিতীয়ত হলো- রাস্তায় যেসব সিসি ক্যামেরা আছে সেগুলোতে অনেক কিছু ক্লিয়ার বোঝা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক বছর আগে পহেলা বৈশাখে শাহবাগে যেভাবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে সেটার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট করেও কোনো লাভ হয়নি। কাউকে আইডেন্টিফাই করা যায়নি। চেহারাগুলো খুব স্পষ্ট। বোঝা যায় না। তিন নম্বর হলো- পুলিশের উপর অনেকখানি ভার থাকে, যে একটা এভিডেন্স থাকলে সেটা চার্জশিটে তোলা- তাই সেক্ষেত্রে পুলিশের একটা বড় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। যে ছবিগুলো পাওয়া যায় সেটা খুব ভালোভাবে এক্সপ্লেইন করা। যদি পুলিশ না করে তাহলে ওই ধরনের এভিডেন্সগুলোর আসলে কোনো মূল্য থাকে না।
অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি ক্যামেরা বড় ভূমিকা রাখলেও আদালতে প্রমাণ হিসাবে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য- এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আইনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ কারণেই অনেক ক্ষেত্রে আসামিরা পার পেয়ে যায়। সিসিটিভির ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুই ব্যক্তি দেয়ালের ভেতরের দিক থেকে বাইরে দাঁড়ানো দু’জনের কাছে একটি মরদেহ তুলে দিচ্ছে। পরে তারা চারজন হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে লাশ পেছনের একটি গলিতে ফেলে দেয়। সিসিটিভি ফুটেজে যে চারজনকে দেখা গেছে তারা হলো- মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার ফিরোজ, আকিজপাড়ার দীপু, আমতলীর সন্ত্রাসী হাসু ও বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক সোহেলের সহযোগী রবি। গত জুলাই মাসের ঘটনা এটি। ১৫ই জুলাই খুন হন মহাখালী এলাকার বাসিন্দা কাজী রাশেদ হোসেন।
পরদিনই পুলিশ ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতেই দেখা যায় এ দৃশ্য। রাশেদ খুনের ব্যাপারে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে রাশেদকে হত্যা করা হতে পারে। এর আগে গত ১৫ই মে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ আলী। ঘটনাস্থলে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকলেও খুনিরা বাড্ডা পুলিশ চৌকিতে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। পরে অবশ্য এই খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত বছর ১৪ই নভেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর বনানীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের মেসার্স এস মুন্সি ওভারসিজে ঢুকে সিদ্দিক হোসাইন মুন্সিকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারা যাওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান (৪২), মোখলেসুর রহমান (৩৮) এবং মির্জা পারভেজ আহমেদকে (২৮) গুলি করে। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে মেসার্স এস ওভারসিজের প্রধান ফটক দিয়ে প্রথমে দুই যুবক ঢুকে পড়ে। তাদের একজনের কাউ বয় হ্যাট পরা (ক্যাপ), আরেকজনের মাস্ক ও চশমা পরা ছিল। এর ২৪ সেকেন্ড পর আরো দুই যুবক ভেতরে ঢোকে। তাদের একজনের পরনে টি-শার্ট, প্যান্ট ও আরেকজনের পরনে ফুলহাতা ফতুয়া ও ফুলপ্যান্ট রয়েছে।
৭টা ৫২ মিনিট ৪ সেকেন্ডে প্রথমে দু’জন, এরপর আরো দুজন বেরিয়ে যায়। বের হওয়ার সময় এক যুবককে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হবে। গত বছর ৩রা জুলাই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে অপহরণ করা হয় শিশু সুমাইয়াকে। কয়েকদিনের মধ্যেই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ অপহরণের বিভিন্ন সূত্র যখন খুঁজতে থাকে পুলিশ তখন সেখানকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় এক যুবতী সুমাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছে।
একই বছর মার্চ মাসে রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় নারী ব্যাংক কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটনের পেছনে সহায়ক ছিল সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরায় ধরা পড়ে ঘটনার সময় তার সাবেক স্বামীর উপস্থিতি ও দৌড়ে পালিয়ে যাবার দৃশ্য। এ সূত্র ধরেই সাবেক স্বামী রবিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তদের দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে। গলির ভেতরের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাদের দৌড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। ঘটনার রাতেই ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে একসঙ্গে চার ব্যক্তি ব্যাগ হাতে দৌড়ে যায়।
কয়েক সেকেন্ড পর আরো এক যুবক তাদের পেছনে দ্রুত দৌড়ায়। তার অল্প সময় পর তাদের পেছন পেছনে প্রথমে ১ জন পরবর্তীতে দু’জন ও আরো একজন দৌড়াচ্ছে। তবে তাদের কারো চেহারাই স্পষ্ট নয়। বছর কয়েক আগে রাজধানীর বনানীতে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ খুন করা হয় যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কীকে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের শনাক্ত করতে একটুও বেগ পেতে হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজই চিনিয়ে দেয় ঘাতকদের।
রাজধানীসহ সারা দেশে একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় সচেতনতার অংশ হিসেবে ২-৩ বছর আগে থেকেই নগরজুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো শুরু হয়। বিভিন্ন স্তরের ক্রেতা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা কিনছেন। এ কারণে এখন বিভিন্ন আলামতের পাশাপাশি অপরাধীদের শনাক্তে ঘটনাস্থল বা আশপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজই পুলিশের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু ঘটলেই পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খোঁজে। সেই ফুটেজ থেকেই আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টায় নামে পুলিশ। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অপরাধীদের অপরাধের চিহ্ন থেকে গেলেও কার্যত অন্য দশটি ঘটনার মতো তদন্ত খুব ধীর গতিতে এগোয় বলেই অনেকের অভিযোগ।
বিশেষ করে ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঘটনার দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কোনো না কোনো কারণে আসামিরা অধরা থেকে যায়। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা বলছেন, আসামি শনাক্তের পর সুষ্ঠু তদন্তে কিছুটা সময় লেগে গেলেও কোনো অপরাধী আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে না। তবে আমাদের দেশে ১৮৭২ সালের আইন অনুযায়ী সিসি টিভি ফুটেজে অপরাধের সাক্ষী হওয়ার ব্যাপারে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ১৮৭২ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী কোথাও বলা নেই যে- এ ধরনের ডিজিটাল এভিডেন্স, এভিডেন্স হবে। এ জন্য অনেকে এ ধরনের প্রমাণ থাকলেও কোর্টে এসে এভিডেন্স একসেপ্ট করতে রাজি হয় না।
কারণ আইনে কোথাও ক্লিয়ার করে বলা নেই। দ্বিতীয়ত হলো- রাস্তায় যেসব সিসি ক্যামেরা আছে সেগুলোতে অনেক কিছু ক্লিয়ার বোঝা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক বছর আগে পহেলা বৈশাখে শাহবাগে যেভাবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে সেটার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট করেও কোনো লাভ হয়নি। কাউকে আইডেন্টিফাই করা যায়নি। চেহারাগুলো খুব স্পষ্ট। বোঝা যায় না। তিন নম্বর হলো- পুলিশের উপর অনেকখানি ভার থাকে, যে একটা এভিডেন্স থাকলে সেটা চার্জশিটে তোলা- তাই সেক্ষেত্রে পুলিশের একটা বড় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। যে ছবিগুলো পাওয়া যায় সেটা খুব ভালোভাবে এক্সপ্লেইন করা। যদি পুলিশ না করে তাহলে ওই ধরনের এভিডেন্সগুলোর আসলে কোনো মূল্য থাকে না।
No comments