ভারতীয় টিভিতে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আলোচনা
ভারতের
প্রখ্যাত সাংবাদিক ভারত ভূষণের উপস্থাপনায় ইন্ডিয়াজ আই অনুষ্ঠানে সম্প্রতি
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি টকশো হয়। এতে
অংশ নেন বাংলাদেশে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। ছিলেন
ড. শ্রুতি পাত্নায়েক। তিনি আইডিএসে’র রিসার্চ ফেলো। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া
ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ বাংলাদেশ স্টাডিজ প্রোগ্রামেরও পরিচালক ছিলেন
তিনি। ছিলেন সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরী। এই প্রখ্যাত সাংবাদিক কলকাতার দ্য
টেলিগ্রাফের জ্যৈষ্ঠ সম্পাদক। এই আলোচনার ঈষৎ অনূদিত বিবরণ মানবজমিনের
পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো-
ভারত ভূষণ: সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে স্কুলশিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভে বাংলাদেশ গত সপ্তাহে অচল হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ শুরু হয় একটি গতিশীল গাড়ির চাপায় দুই স্কুলশিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর। এই ছাত্রবিক্ষোভ নয়দিন ধরে ছিল। কর্তৃপক্ষ লাঠিপেটা, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করলে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়লে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিভাবক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয় প্রতিবাদে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এই জনবিক্ষোভকে অপব্যবহার করার চেষ্টায় লিপ্ত। সাংবাদিকরাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে আইসিটি আইন।
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, আপনাকে দিয়েই শুরু করি। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে স্কুলশিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ কতটা নজিরবিহীন ছিল? কীভাবে ঢাকা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে? এই বিক্ষোভ নিয়ে শুধু দেশীয় মিডিয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
পিনাক: আমি মনে করি এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে যে কারণে, সেটা হলো বেপরোয়া গাড়ি চালনা। এটা ঢাকায় অনেক স্বাভাবিক যে এই মানুষবাহী বাসগুলো রাস্তায় একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে। যারাই একবার হলেও ঢাকায় গেছেন, তারা বুঝে থাকবেন, এত বাস, রিকশা ও অন্যান্য গাড়ি বেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। আমি মনে করি, বাসচালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ অনেক বছর ধরেই কেবল বাড়ছিল। এ কারণে দুই শিক্ষার্থীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে মানুষ ফুঁসে ওঠে। আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা আর নিতে পারছিল না। এ কারণেই তারা রাজপথে নেমে আসে।
ভারত ভূষণ: ড. পত্নায়েক, যেভাবে এই বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে, তা নিয়ে আপনি কী মনে করেন? সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার, এটা শেখ হাসিনার জন্য কত বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল? শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন? এটা কি এই কারণে যে, তিনি আল-জাজিরায় তুলে ধরেছেন যে, এই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ ছাত্রলীগ গুন্ডাদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছে?
পত্নায়েক: আমি মনে করি সরকার এটাকে আরও অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারতো। যেমন, যেই বিবৃতি প্রথমে এক মন্ত্রীর কাছ থেকে এলো যে, এধরনের দুর্ঘটনা অনেক স্বাভাবিক বিষয়- তা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। সরকারের উচিত ছিল তাকে ক্ষমা চাইতে বলা। তিনি অবশ্য করেছেন, তবে দেরিতে। সরকার এই বছরের শেষে নির্বাচনে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সরকার এই মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বললে ক্ষোভ থেকে কিছু জনসমর্থনও আদায় করতে পারতো। এই বিক্ষোভের সঙ্গে সরকার যেভাবে বিরোধীপক্ষকে জড়ালো, সেটা ছিল বেশ অবাক করার মতো। আমার মনে হয়, সরকার অনেক নার্ভাস ছিল। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। একের পর এক সমস্যা আসছিল খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে। এ কারণেই সরকার হয়তো অনেক নার্ভাস হয়ে ওঠে। আমি মনে করি, সরকার এই বিষয়টি বুঝে যে, তারা খুব একটা জনপ্রিয় নয় এই মুহূর্তে।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, এই বিক্ষোভে অনেকেই হতাহত হয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের হটাতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করাটা আওয়ামী লীগের কতটা রাজনৈতিকভাবে সুবিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল? পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলেই কি পারতো না? মানুষ তখন পুলিশকে দায়ী করতো শুধু। এর আগে কোটা আন্দোলনের সময়ও এই ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
জয়ন্ত: আমি মনে করি সুশাসনের অভাব এখানে দায়ী। আর বাংলাদেশের রাজনীতির উভয়পক্ষই এক ধরনের আতঙ্কে ভোগে। শেখ হাসিনার সরকার সবসময় ভয় পায় যে, এ ধরনের বিক্ষোভের নেপথ্যে বুঝি বিরোধী দল, এমনকি বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত হলেও। অপরদিকে বিরোধীপক্ষ ভাবে, যা-ই হোক না কেন সেটা সরকারি দলের চাল, কিংবা ভারতের। ভারতকে অনেক কিছু নিয়েই দায়ী করা হয়।
ভারত ভূষণ: কিন্তু দল আর সরকারকে এক করা কেন?
জয়ন্ত: ছাত্রলীগকে ডাকা হয়েছিল আমার মনে হয় এ কারণে যে, সরকার ভেবেছিল বিক্ষোভে বিরোধীপক্ষের ক্যাডাররা অনুপ্রবেশ করেছে। এ কারণেই নিজেদের অ্যাক্টিভিস্টদের আনা হয়েছে এদের মোকাবিলা করতে। যেটা পুরোপুরিই ভুল ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় থাকে, তারাই এই কাজ করে। আওয়ামী লীগও করছে, বিএনপিও করেছে। কোনো পক্ষেরই হাত পরিষ্কার নয়। কিন্তু বেপরোয়া গাড়ি চালনা, মফঃস্বল দূরে থাক, রাজধানীতেই গাড়িচালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমি মনে করি এজন্য দায়ী সুশাসনের অভাব।
শ্রুতি: আমি যদি কিছু বলি। বাংলাদেশে সবকিছুই নির্ধারিত হয় রাজপথে। আর ছাত্রলীগ এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই প্রথম জড়িত হয়ছে তা নয়। বিরোধী পক্ষ যখন ২০১৫ সালে এই সরকারের এক বছর পূর্তিতে বিক্ষোভ শুরু করে তখন ছাত্রদল ও জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শিবিরকে ব্যবহার করা হয়েছে সহিংসতা সংঘটনের কাজে। এই সংগঠনগুলো সবসময়ই রাজনৈতিক দলগুলোর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভারত ভূষণ: তবে সমস্যা হলো এবার ছাত্রলীগ সরাসরি রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কিংবা পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছিল।
শ্রুতি: অতীতেও এমনটা হয়েছে।
ভারত ভূষণ: পিনাক, আওয়ামী লীগের এই দাবিতে কতটা ভিত্তি আছে যে, বিক্ষোভ উস্কে দিয়েছে বাংলাদেশের বিরোধীপক্ষ?
পিনাক: আমার মনে হয়, এটি প্রথমে হয়নি। যদি আদৌ হয়ে থাকে, এটা হয়েছে পরে। কারণ, কোনো বিরোধীপক্ষই এ ধরনের পরিস্থিতিতে চুপ থাকবে কিংবা পরিস্থিতি ব্যবহার করতে চাইবে না। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অনেকে মনে করছিল যে, এই বিক্ষোভে বিএনপি কিংবা জামায়াতের ক্যাডাররা ঢুকে পড়েছে।
ভারত ভূষণ: কিন্তু এখানে সবাই স্কুলের বাচ্চা। কিন্তু ক্যাডাররা তো প্রাপ্তবয়স্ক।
পিনাক: আমাকে বলা হয়েছে, অনেকে ভুয়া ইউনিফর্ম পরে ছিল। একজন আমাকে বলেছে যে, এক হাজারেরও বেশি ইউনিফর্ম রাতারাতি সেলাই করা হয়েছে।
ভারত ভূষণ: তার মানে আপনি বলছেন, অনেক অছাত্ররাও এই বিক্ষোভে ছিল।
পিনাক: আমি সেটাই মনে করি। প্রথমে না হলেও, পরে হয়েছে। প্রথমে অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল বিক্ষোভ।
ভারত ভূষণ: আপনি যা বলছেন এরকম কিছু বাংলা পত্রিকায় পড়িনি।
পিনাক: না, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে।
ভারত ভূষণ: পাত্নায়েক, বিরোধী দলের জন্য এই প্রতিবাদে যোগ দেয়াটা ভুল হবে কেন? তারা কেন যোগ দেবে না? বিরোধীদের কাজই তো হলো বিরোধিতা করা। যদি মানুষ বলে যে সড়ক নিরাপত্তা বাড়াও, গাড়িচালকদের লাইসেন্স থাকতে হবে, তাহলে বিরোধীদল কেন যোগ দেবে না?
শ্রুতি: আমি পুরোপুরি একমত এ ব্যাপারে। আমার কোনো দ্বিমত নেই এ ব্যাপারে। দ্বিতীয় ইস্যু হলো, ছাত্রলীগের এরা কেউই কিন্তু ছাত্র নয়। তারা অনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ এরপরও হল দখল করে আছে। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা মানুষের মনে ছাপ ফেলেছে। এ কারণেই সরকার এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। শাহবাগের কথা ভাবুন। শুরু হয়েছিল খুব অল্প মানুষ নিয়ে। পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কোটা আন্দোলনও একই ছিল। এই আন্দোলনও একই। তো, সরকার বেশ নার্ভাস ছিল। আবার একই সঙ্গে আমি মনে করি, বিরোধী দল পরিস্থিতি অতটা ব্যবহার করতে পারেনি যতটা তাদের করা উচিত ছিল। আমি যদি বিরোধী দলে থাকতাম আমি নিজেকে বলতাম, তুমি খুব ভালো কাজ করে দেখাতে পারনি।
ভারত ভূষণ: তাহলে বিএনপিকে ব্যর্থ বলা যায়? (হাসি)
শ্রুতি: হ্যাঁ। (হাসি)।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, আপনি কেন মনে করেন, হাসিনা সরকার এই আন্দোলন নিয়ে এতটা সংবেদনশীল ছিল। এই ধরনের সড়ক সংশ্লিষ্ট বিক্ষোভ কী এর চেয়ে বড় কিছুর ইঙ্গিত বহন করে? ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সরকারের পতন হয় যখন সেনাদের গাড়ির চাপায় বিক্ষোভকারী মারা যায়। ১৯৯২ সালেও বাস ও শিক্ষার্থী নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সুতরাং, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা শুধু ব্যবস্থাপনার ইস্যু নয়। এটি কি অন্য কোনো মাত্রা বহন করে?
জয়ন্ত: আমি প্রথমে যেমনটা বলেছি, এটি দুর্বল শাসনের প্রশ্ন। অনেক মানুষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে চিন্তিত। আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা যে-ই সড়ক নিয়ে আন্দোলন করছিল, এটা স্রেফ স্ফুলিঙ্গ। মানুষ পুরো পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে চলছে, চাকরির কোটা, ইত্যাদি নিয়ে মানুষ অসন্তুষ্ট, তবে এই অসন্তোষ দানা বাঁধছে কিছু একটা নিয়ে।
শেখ হাসিনার সরকার বিএনপির মতোই এক ধরনের আতঙ্কে ভোগে। তিনি হয়তো ভেবেছেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে আগে তার সরকারকে অজনপ্রিয় হিসেবে তুলে ধরা, তাকে অজনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছিল। ফলে তিনি যেভাবে একে মোকাবিলা করেছেন, সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক অনুমেয় হলেও, সেটা ছিল সংকটের বাজে ব্যবস্থাপনা।
ভারত ভূষণ: পিনাক, বাংলাদেশে যখন ভিন্নমতালম্বীদের নিয়ে কথা বলা হয়, তখন এটাকে তৎক্ষণাৎ ব্লগারদের মৃত্যুর সঙ্গে লিঙ্ক করা হয়। তখন আপনি বলবেন, ও আচ্ছা, এটা তো চরমপন্থিরা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি যে রাষ্ট্রের দিক থেকে আসছে, সেটা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। সবকিছুকে চরমপন্থিদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই ধরনের বিশ্লেষণে কি এটা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে না যে, বাংলাদেশে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থীদের প্রতি অসহিষ্ণুতা বিরাজ করছে? এমনকি বিরোধী দলও। তাদের দেশের শত্রু বলা হচ্ছে।
পিনাক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটাই এমন যে, আমি যদি ক্ষমতায় থাকি, তাহলে আমার কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার অধিকার আছে। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকটা প্রোথিত। আপনি যে-ই দলের কথাই বলেন না কেন। সামরিক একনায়কতন্ত্রের কথা বাদ দিলাম, তাদের প্রকৃতিই হলো কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়া। কিন্তু এমনকি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দলগুলোও। আর আপনি যদি এক পরিবারের শাসনের দিকে তাকান, যেমনটা বিএনপিও, আমি মনে করি, এ ধরনের প্রবণতা দুই দলের মধ্যেই আছে। বিএনপি আমলেও দেখেছি সব ক্ষমতা খালেদার ছেলে তারেকের কুক্ষিগত ছিল। কিছুই হতো না তার অনুমতি ছাড়া। এখন আপনি দেখছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই সব ক্ষমতা। তিনি যদি কিছু না করেন, তাহলে কিছুই হয় না।
ভারত ভূষণ: শ্রুতি, এই বিষয়টা আমাকে অবাক করে যে, কেন শেখ হাসিনা মিডিয়াকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছেন? তিনি এমনও বলেছেন অনেক সম্পাদক যুদ্ধাপরাধী ছিলেন! যুদ্ধাপরাধীদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে যে এতগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা হলো, সেই ব্যাপারে কী বলবেন? আপনি তার মতো এত ভালো সম্পাদক কিংবা ভদ্রমানুষ সহজে পাবেন না। কিংবা বিরোধীদলীয় ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মুক্ত গণমাধ্যম মানে তো এ-ও যে, বিরোধীদলীয় পত্রিকাকেও চলতে দিতে হবে। এছাড়া সামপ্রতিক বিক্ষোভে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। আপনি মিডিয়াকে কেন প্রতিপক্ষ বানাচ্ছেন? আপনি ভালো রাজনীতিক হলে, তাদেরকে নিজের পাশে রাখতে বা নিরপেক্ষ রাখতে চাইবেন?
শ্রুতি: আমি মনে করি, এটা এসেছে সংশয় ও অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি থেকে। দেশের মধ্যে কী হচ্ছে, সেই ব্যাপারে কোনো সমালোচনা আপনি সহ্য করছেন না। অনেক সমালোচনা ভীষণ গঠনমূলক। মাহফুজ আনামের ইস্যু অনেক অবাক করার মতো বিষয়। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা তার আগের সরকারগুলোর সবচেয়ে কড়া সমালোচক ছিলেন তিনি। এ বিষয়টা আসলেই বিস্ময় জাগানিয়া, যেমনটা আপনি বলেছেন।
আমি মনে করি, সরকার এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যদিও এটি বিরোধী দলকে পুরোপুরি দমন করেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। এটা তাই বেশ আশ্চর্যজনক যে, সরকার এখনও দুশ্চিন্তায় ভোগে। আপনি গণমাধ্যমের ওপরও দমনপীড়ন চালাচ্ছেন। যেই আইসিটি আইন করা হয়েছে, যেটা খুব বিপজ্জনক। ধরা যাক, আপনি একজন ব্লগার আর আপনি চরমপন্থিদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। আপনি যদি পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে যান, উল্টো আপনাকে বিপদে পড়তে হতে পারে। আপনি ইন্টারনেটে কী লিখেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বেন। আমি মনে করি সাধারণ অর্থে, সমালোচনা অনেক গঠনমূলক হলেও, অসহিষ্ণুতা আছে ব্যাপক।
ভারত ভূষণ: সরকার নিজেই কিছু ধরনের বক্তব্য বা ব্লগিংকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত করেছে। চরমপন্থিরা যদি এসব লেখার কারণে কোনো ব্লগারকে মারতে যায়, সেক্ষেত্রে সেখানে সরকারেরও এক ধরনের দায় থাকে। কারণ, রাষ্ট্র নিজেই কিছু বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত করেছে। অনেকটা যেন এমন যে, নিজের পরিণতির দায় ওই ব্লগারেরই।
জয়ন্ত: এমনটা অনেক দেশেই হয়েছে। ভারতেও হয়েছে। তবে আসল কথা হলো, সমাজ নিজেও আগের চেয়ে অসহিষ্ণু হয়েছে। এ কারণে উভয়পক্ষের জন্যই সবকিছু সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এটা একটা সমস্যা। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্ন যখন আসছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম বেশ সরব, অনেক মুক্ত। তবে যে ধরনের আইন আছে, সেগুলো বেশ বিস্তৃত। তবে তার (শেখ হাসিনার) এখানে একটা সমস্যা আছে। ডেইলি স্টার সম্পাদক নিজে স্বীকার করেছেন তিনি মাইনাস টু ফর্মুলা সমর্থন করেছিলেন।
ভারত ভূষণ: তবে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। এটা করা যে উচিত হয়নি সেটা বলেছেন। এটা অনেক ভদ্রোচিত বক্তব্য...
জয়ন্ত: হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন এটা ভদ্রোচিত আচরণ। তার (প্রধানমন্ত্রী) উচিত ছিল তার এই বক্তব্যের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকানো। হেসে উড়িয়ে দেয়া। কিন্তু সমস্যা হলো, এক ধরনের সন্দেহ কাজ করে, দুই নেত্রীর মধ্যেই।
ভারত ভূষণ: তাই বলে ৮৩ মামলা সারা দেশজুড়ে?
পিনাক: এটা বাড়াবাড়ি ছিল...
ভারত ভূষণ: পিনাক, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে কথা বলি। এটা কি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে প্রণয়ন করা হয়েছে? বিএনপির সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে। ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলমের বিরুদ্ধেও এই ধারায় মামলা করা হয়েছে। ৫৭ ধারার বিপজ্জনক দিক হলো, অনলাইনে নানা কারণে, ধরুন, কাউকে মানহানি করলে, কুৎসা ছড়ালে, দাঙ্গা ছড়ালে, ইত্যাদি কারণে ৭-১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তাহলে বাংলাদেশে স্মার্টফোন সমেত সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারী যে কাউকেই তো এই মামলায় কারাগারে ঢুকানো যাবে?
পিনাক: আমি মনে করি, এটা এতটা বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত ও বাজেভাবে লেখা একটি ধারা যে, ধরুন আমি কালকে লিখলাম, আমি রসগোল্লার চেয়ে সন্দেশ বেশি পছন্দ করি, তাহলে হয়তো আমার বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন করা হবে! কারণ, আমি তো রসগোল্লার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছি!
ভারত ভূষণ: রসগোল্লা তো কোনো মানুষই নয়...
পিনাক: রসগোল্লা কোনো মানুষ নয়, তবে কে না জানে যে, বাঙালিরা নিজেদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বেশ সংবেদনশীল। অথবা আমি বললাম যে, আমি ইলিশ মাছ পছন্দ করি না! কেউ হয়তো বলতে পারে, আরে দেখ, সে কুৎসা রটাচ্ছে। আমি মনে করি, এটা খুব বাজেভাবে লেখা একটি ধারা।
ভারত ভূষণ: আপনার যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেগুলেট করতে হবে, আপনার প্রয়োজন নেই একে এভাবে অতিমাত্রায় রেগুলেট করা যে এটা সমালোচকদের দমাতে আপনার অস্ত্র হয়ে উঠে...
পিনাক: তবে একটি কথা আমাকে অবশ্যই বলতে হবে। যেসব সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে রেগুলেট করতে চায়, তাদের পক্ষে একটা কথা আমি বলবো। আসলে, এটা হলো নিউ মিডিয়া। এ ধরনের ডিজিটাল মিডিয়া মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা কোনো সরকারেরই নেই। আসলে, পুরো বিশ্বই এ নিয়ে কসরত করছে যে কীভাবে সাইবারজাগরণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমি মনে করি, এখানে কিছু সমস্যা আছে। তবে যারা এই ধরনের ধারা যারা প্রণয়ন করেন তাদের বোঝা উচিত এসবের কিছু সীমা আছে। কিছু সীমা আছে যেগুলো আমাদের অতিক্রম করা উচিত নয়।
ভারত ভূষণ: শ্রুতি, এই বছরের জানুয়ারি নাগাদ, একটি দল বিএনপি থেকেই প্রায় ১২ লাখ লোকের বিরুদ্ধে ৫০ হাজারেরও বেশি মামলা করা হয়েছে। দলটির হাজার হাজার কর্মী কারাগারে। যেমনটা আপনি বললেন, খালেদা জিয়াও পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা চলছে। আমির খসরু মাহমুদ কিংবা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। এটা কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিক? নাকি নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ন্যূনমাত্রায় প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে?
শ্রুতি: আমি মনে করি এটি কিছুটা স্বাভাবিকই বাংলাদেশে। এমন নয় যে, অতীতে এতটা হয়নি। কিন্তু এবার এই ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে, বিশেষ করে গ্রেপ্তারের বেলায়। এটা হতে পারে এ কারণে যে, সরকার সেখানে টানা দুবার ক্ষমতায়। ফলে মানুষের স্মৃতি শুধু এই সরকারকে নিয়েই। ফলে, এটি এমন কিছু নয় যেটা অতীতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, বিরোধীপক্ষের ওপর আক্রমণ, পুলিশ ব্যবহার, সবই হয়েছে। তবে আপনি যেমনটা শিক্ষার্থী বিক্ষোভের কথা বললেন, এছাড়া মাদকবিরোধী যুদ্ধেও অনেকে নিহত হয়েছে। জয়ন্ত যেমনটা বলছিলেন, এসব হলো স্ফুলিঙ্গের মতো। আপনার কোনো মুক্ত গণমাধ্যম নেই, আপনি ব্লগেও লিখতে পারবেন না। আপনি হয়তো আইসিটি অ্যাক্টে মামলা খাবেন। আপনার ক্ষোভ তাহলে প্রশমিত হবে কীভাবে? এই ক্ষোভকে তো কোথাও যেতে হবে। আমি মনে করি, সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়ছে, এটা নজিরবিহীন নয়। এটা হলো বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। তবে এটা ধীরে ধীরে খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
ভারত ভূষণ: তাহলে এটা আসলে ন্যূনমাত্রার?
শ্রুতি: হ্যাঁ।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা ও বিরোধীপক্ষকে ওই নির্বাচন বয়কট করাতে বাধ্য করা কি হাসিনা সরকারের জন্য এটি রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক? এটা তো তার জন্য সহায়ক নয়, কারণ এর ফলে যত আসনই তিনি জিতুন না কেন, সেই জয়ের গ্রহণযোগ্যতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আমার সঙ্গে একজনের কথা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ট্রেনে আগুন লাগানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই লোক সিগারেটও খান না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন কিভাবে ট্রেনে আগুন লাগায়? আমি বললাম, আমি জানি না। তাহলে কি বিরোধীদলের সামর্থ্য ভেঙে দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনে গেলেও জিততে না পারে? এর ফলে তো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু হলো না।
জয়ন্ত: আমি মনে করি না এসবের পরিকল্পনা তিনি করে ফেলেছেন।
ভারত ভূষণ: কিন্তু ছয় মাস আগেই যদি এসব না করেন, তাহলে করবেন কখন?
জয়ন্ত: তা ঠিক আছে, তবে আমি মনে করি না, তারা পরিকল্পনা করেছে, বিরোধী দলের সামর্থ্য ভেঙে দিয়ে নির্বাচনে জিতে যাওয়ার। আমি মনে করি এটা অনেকটা তার (শেখ হাসিনা) তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া। তারা (বিরোধী দল) এসবের জন্য দায়ী, তারা মানুষকে উস্কে দিচ্ছে, সুতরাং আমাকে পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। তবে আমার মনে হয়, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এক ধরনের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, যেটা কিছুটা সুষ্ঠুও।
ভারত ভূষণ: তবে দুই জিনিস তো আলাদা। পিনাক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বনাম সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনে সবাই প্রচারণা চালাতে পারবে, সবাই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারবে ভোটারের কাছে। এটা শুধু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চেয়ে আলাদা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আধামরা দলও অংশ নেবে, পুর্নদ্যোমে শক্তিশালী দলও অংশ নেবে।
পিনাক: আমি মনে করি, শাসক দল আওয়ামী লীগের একটা বড় ট্রাম্পকার্ড হলো, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। যদি আপনি দুবার নির্বাচনে অংশ না নেন, তাহলে এটা হবে। ফলে বিএনপি বেশ উভয় সংকটে আছে। একটা সমস্যা হলো, এত মামলা, বিরোধী পক্ষকে নানাভাবে দুর্বল করা। আরেক সমস্যা হলো, আপনি যদি নির্বাচনে অংশ না নেন, তাহলে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।
ভারত ভূষণ: আমি সেটা বুঝতে পারছি। তবে শেখ হাসিনা কী চান?
পিনাক: দেখুন, তিনি চান যে অংশগ্রহণ করুক। তবে সেক্ষেত্রে খুবই দুর্বল বিরোধী দল চান তিনি। যাতে করে তিনি জিতে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন। এটা বাংলাদেশে খুবই সাধারণ রাজনৈতিক খেলা। তবে বিএনপি হয়তো বলবে, আমরা এসব করিনি। তবে আমি আসলে তাদেরকে এ ব্যাপারে খুব ক্রেডিট দিতে প্রস্তুত নই। আমি মনে করি, উভয় দলই ক্ষমতায় গেলে এই কাজ করে। আপনার যদি মনে থাকে, এ কারণেই তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। কারণ, কোনো পক্ষই একে অপরকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু ওই সিস্টেম এখন নেই। ফলে নির্বাচন হবে এই সরকারের অধীনে, যেটি নির্বাচনের সময় ক্ষমতায় থাকবে।
ভারত ভূষণ: শ্রতি, আমার শেষ প্রশ্ন। এক কোটি বিশ লাখ নতুন ভোটার আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করবে। আপনি কি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের সামপ্রতিক যেসব বিক্ষোভ আমরা দেখেছি, সেসব নির্বাচনী ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলবে?
শ্রুতি: আমি মনে করি এটি নির্ভর করবে কী ধরনের প্রার্থী বিরোধীপক্ষ দাঁড় করায়। কারণ, সবকিছু সত্ত্বেও সরকারের কিছু অর্জন আছে। যেমন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই বাড়ছে। অনেক মানুষ হয়তো তাই রাজনৈতিকভাবে ক্ষুব্ধ হলেও, অর্থনৈতিকভাবে খুশি। তাই আমি মনে করি, কী ধরনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরকারকে লড়াই করতে হবে, সেটাই এই নির্বাচনের ফল নির্ধারক হবে।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, তরুণ গোষ্ঠী নিয়ে আপনার মত কী?
জয়ন্ত: আমি মনে করি তরুণরা বিরোধী দলের পক্ষে বড় ফ্যাক্টর হবে। কারণ, তারা ক্ষুব্ধ। তবে, যেমনটা শ্রুতি বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধিও খুব ভালো ছিল। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলও অনেক কিছু নির্ধারণ করবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন তাই হয়তো শাসক দলের পক্ষে যাবে।
ভারত ভূষণ: পিনাক, আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন। তরুণরা কোনদিকে যাবে?
পিনাক: আমি নির্বাচন নিয়ে আগাম অনুমান করবো না। তবে আমার মনে হয়, তরুণদের ভোট ভাগ হবে। এখানে নির্ভর করবে তাদের পরিবার, অঞ্চলের ওপর। তবে শহুরে তরুণরা মোটা দাগে আওয়ামী লীগের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। আপনি দেখেছেন সব বিক্ষোভ। আমি মনে করি, তরুণদের ভোট তাই ভাগ হবে।
ভারত ভূষণ: আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এই আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য।
ভারত ভূষণ: সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে স্কুলশিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভে বাংলাদেশ গত সপ্তাহে অচল হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ শুরু হয় একটি গতিশীল গাড়ির চাপায় দুই স্কুলশিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর। এই ছাত্রবিক্ষোভ নয়দিন ধরে ছিল। কর্তৃপক্ষ লাঠিপেটা, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করলে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়লে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিভাবক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয় প্রতিবাদে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এই জনবিক্ষোভকে অপব্যবহার করার চেষ্টায় লিপ্ত। সাংবাদিকরাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে আইসিটি আইন।
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, আপনাকে দিয়েই শুরু করি। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে স্কুলশিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ কতটা নজিরবিহীন ছিল? কীভাবে ঢাকা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে? এই বিক্ষোভ নিয়ে শুধু দেশীয় মিডিয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
পিনাক: আমি মনে করি এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে যে কারণে, সেটা হলো বেপরোয়া গাড়ি চালনা। এটা ঢাকায় অনেক স্বাভাবিক যে এই মানুষবাহী বাসগুলো রাস্তায় একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে। যারাই একবার হলেও ঢাকায় গেছেন, তারা বুঝে থাকবেন, এত বাস, রিকশা ও অন্যান্য গাড়ি বেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। আমি মনে করি, বাসচালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ অনেক বছর ধরেই কেবল বাড়ছিল। এ কারণে দুই শিক্ষার্থীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে মানুষ ফুঁসে ওঠে। আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা আর নিতে পারছিল না। এ কারণেই তারা রাজপথে নেমে আসে।
ভারত ভূষণ: ড. পত্নায়েক, যেভাবে এই বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে, তা নিয়ে আপনি কী মনে করেন? সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার, এটা শেখ হাসিনার জন্য কত বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল? শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন? এটা কি এই কারণে যে, তিনি আল-জাজিরায় তুলে ধরেছেন যে, এই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ ছাত্রলীগ গুন্ডাদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছে?
পত্নায়েক: আমি মনে করি সরকার এটাকে আরও অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারতো। যেমন, যেই বিবৃতি প্রথমে এক মন্ত্রীর কাছ থেকে এলো যে, এধরনের দুর্ঘটনা অনেক স্বাভাবিক বিষয়- তা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। সরকারের উচিত ছিল তাকে ক্ষমা চাইতে বলা। তিনি অবশ্য করেছেন, তবে দেরিতে। সরকার এই বছরের শেষে নির্বাচনে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সরকার এই মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বললে ক্ষোভ থেকে কিছু জনসমর্থনও আদায় করতে পারতো। এই বিক্ষোভের সঙ্গে সরকার যেভাবে বিরোধীপক্ষকে জড়ালো, সেটা ছিল বেশ অবাক করার মতো। আমার মনে হয়, সরকার অনেক নার্ভাস ছিল। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। একের পর এক সমস্যা আসছিল খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে। এ কারণেই সরকার হয়তো অনেক নার্ভাস হয়ে ওঠে। আমি মনে করি, সরকার এই বিষয়টি বুঝে যে, তারা খুব একটা জনপ্রিয় নয় এই মুহূর্তে।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, এই বিক্ষোভে অনেকেই হতাহত হয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের হটাতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করাটা আওয়ামী লীগের কতটা রাজনৈতিকভাবে সুবিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল? পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলেই কি পারতো না? মানুষ তখন পুলিশকে দায়ী করতো শুধু। এর আগে কোটা আন্দোলনের সময়ও এই ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
জয়ন্ত: আমি মনে করি সুশাসনের অভাব এখানে দায়ী। আর বাংলাদেশের রাজনীতির উভয়পক্ষই এক ধরনের আতঙ্কে ভোগে। শেখ হাসিনার সরকার সবসময় ভয় পায় যে, এ ধরনের বিক্ষোভের নেপথ্যে বুঝি বিরোধী দল, এমনকি বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত হলেও। অপরদিকে বিরোধীপক্ষ ভাবে, যা-ই হোক না কেন সেটা সরকারি দলের চাল, কিংবা ভারতের। ভারতকে অনেক কিছু নিয়েই দায়ী করা হয়।
ভারত ভূষণ: কিন্তু দল আর সরকারকে এক করা কেন?
জয়ন্ত: ছাত্রলীগকে ডাকা হয়েছিল আমার মনে হয় এ কারণে যে, সরকার ভেবেছিল বিক্ষোভে বিরোধীপক্ষের ক্যাডাররা অনুপ্রবেশ করেছে। এ কারণেই নিজেদের অ্যাক্টিভিস্টদের আনা হয়েছে এদের মোকাবিলা করতে। যেটা পুরোপুরিই ভুল ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় থাকে, তারাই এই কাজ করে। আওয়ামী লীগও করছে, বিএনপিও করেছে। কোনো পক্ষেরই হাত পরিষ্কার নয়। কিন্তু বেপরোয়া গাড়ি চালনা, মফঃস্বল দূরে থাক, রাজধানীতেই গাড়িচালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমি মনে করি এজন্য দায়ী সুশাসনের অভাব।
শ্রুতি: আমি যদি কিছু বলি। বাংলাদেশে সবকিছুই নির্ধারিত হয় রাজপথে। আর ছাত্রলীগ এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই প্রথম জড়িত হয়ছে তা নয়। বিরোধী পক্ষ যখন ২০১৫ সালে এই সরকারের এক বছর পূর্তিতে বিক্ষোভ শুরু করে তখন ছাত্রদল ও জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শিবিরকে ব্যবহার করা হয়েছে সহিংসতা সংঘটনের কাজে। এই সংগঠনগুলো সবসময়ই রাজনৈতিক দলগুলোর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভারত ভূষণ: তবে সমস্যা হলো এবার ছাত্রলীগ সরাসরি রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কিংবা পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছিল।
শ্রুতি: অতীতেও এমনটা হয়েছে।
ভারত ভূষণ: পিনাক, আওয়ামী লীগের এই দাবিতে কতটা ভিত্তি আছে যে, বিক্ষোভ উস্কে দিয়েছে বাংলাদেশের বিরোধীপক্ষ?
পিনাক: আমার মনে হয়, এটি প্রথমে হয়নি। যদি আদৌ হয়ে থাকে, এটা হয়েছে পরে। কারণ, কোনো বিরোধীপক্ষই এ ধরনের পরিস্থিতিতে চুপ থাকবে কিংবা পরিস্থিতি ব্যবহার করতে চাইবে না। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অনেকে মনে করছিল যে, এই বিক্ষোভে বিএনপি কিংবা জামায়াতের ক্যাডাররা ঢুকে পড়েছে।
ভারত ভূষণ: কিন্তু এখানে সবাই স্কুলের বাচ্চা। কিন্তু ক্যাডাররা তো প্রাপ্তবয়স্ক।
পিনাক: আমাকে বলা হয়েছে, অনেকে ভুয়া ইউনিফর্ম পরে ছিল। একজন আমাকে বলেছে যে, এক হাজারেরও বেশি ইউনিফর্ম রাতারাতি সেলাই করা হয়েছে।
ভারত ভূষণ: তার মানে আপনি বলছেন, অনেক অছাত্ররাও এই বিক্ষোভে ছিল।
পিনাক: আমি সেটাই মনে করি। প্রথমে না হলেও, পরে হয়েছে। প্রথমে অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল বিক্ষোভ।
ভারত ভূষণ: আপনি যা বলছেন এরকম কিছু বাংলা পত্রিকায় পড়িনি।
পিনাক: না, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে।
ভারত ভূষণ: পাত্নায়েক, বিরোধী দলের জন্য এই প্রতিবাদে যোগ দেয়াটা ভুল হবে কেন? তারা কেন যোগ দেবে না? বিরোধীদের কাজই তো হলো বিরোধিতা করা। যদি মানুষ বলে যে সড়ক নিরাপত্তা বাড়াও, গাড়িচালকদের লাইসেন্স থাকতে হবে, তাহলে বিরোধীদল কেন যোগ দেবে না?
শ্রুতি: আমি পুরোপুরি একমত এ ব্যাপারে। আমার কোনো দ্বিমত নেই এ ব্যাপারে। দ্বিতীয় ইস্যু হলো, ছাত্রলীগের এরা কেউই কিন্তু ছাত্র নয়। তারা অনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ এরপরও হল দখল করে আছে। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা মানুষের মনে ছাপ ফেলেছে। এ কারণেই সরকার এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। শাহবাগের কথা ভাবুন। শুরু হয়েছিল খুব অল্প মানুষ নিয়ে। পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কোটা আন্দোলনও একই ছিল। এই আন্দোলনও একই। তো, সরকার বেশ নার্ভাস ছিল। আবার একই সঙ্গে আমি মনে করি, বিরোধী দল পরিস্থিতি অতটা ব্যবহার করতে পারেনি যতটা তাদের করা উচিত ছিল। আমি যদি বিরোধী দলে থাকতাম আমি নিজেকে বলতাম, তুমি খুব ভালো কাজ করে দেখাতে পারনি।
ভারত ভূষণ: তাহলে বিএনপিকে ব্যর্থ বলা যায়? (হাসি)
শ্রুতি: হ্যাঁ। (হাসি)।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, আপনি কেন মনে করেন, হাসিনা সরকার এই আন্দোলন নিয়ে এতটা সংবেদনশীল ছিল। এই ধরনের সড়ক সংশ্লিষ্ট বিক্ষোভ কী এর চেয়ে বড় কিছুর ইঙ্গিত বহন করে? ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সরকারের পতন হয় যখন সেনাদের গাড়ির চাপায় বিক্ষোভকারী মারা যায়। ১৯৯২ সালেও বাস ও শিক্ষার্থী নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সুতরাং, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা শুধু ব্যবস্থাপনার ইস্যু নয়। এটি কি অন্য কোনো মাত্রা বহন করে?
জয়ন্ত: আমি প্রথমে যেমনটা বলেছি, এটি দুর্বল শাসনের প্রশ্ন। অনেক মানুষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে চিন্তিত। আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা যে-ই সড়ক নিয়ে আন্দোলন করছিল, এটা স্রেফ স্ফুলিঙ্গ। মানুষ পুরো পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে চলছে, চাকরির কোটা, ইত্যাদি নিয়ে মানুষ অসন্তুষ্ট, তবে এই অসন্তোষ দানা বাঁধছে কিছু একটা নিয়ে।
শেখ হাসিনার সরকার বিএনপির মতোই এক ধরনের আতঙ্কে ভোগে। তিনি হয়তো ভেবেছেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে আগে তার সরকারকে অজনপ্রিয় হিসেবে তুলে ধরা, তাকে অজনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছিল। ফলে তিনি যেভাবে একে মোকাবিলা করেছেন, সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক অনুমেয় হলেও, সেটা ছিল সংকটের বাজে ব্যবস্থাপনা।
ভারত ভূষণ: পিনাক, বাংলাদেশে যখন ভিন্নমতালম্বীদের নিয়ে কথা বলা হয়, তখন এটাকে তৎক্ষণাৎ ব্লগারদের মৃত্যুর সঙ্গে লিঙ্ক করা হয়। তখন আপনি বলবেন, ও আচ্ছা, এটা তো চরমপন্থিরা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি যে রাষ্ট্রের দিক থেকে আসছে, সেটা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। সবকিছুকে চরমপন্থিদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই ধরনের বিশ্লেষণে কি এটা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে না যে, বাংলাদেশে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থীদের প্রতি অসহিষ্ণুতা বিরাজ করছে? এমনকি বিরোধী দলও। তাদের দেশের শত্রু বলা হচ্ছে।
পিনাক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটাই এমন যে, আমি যদি ক্ষমতায় থাকি, তাহলে আমার কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার অধিকার আছে। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকটা প্রোথিত। আপনি যে-ই দলের কথাই বলেন না কেন। সামরিক একনায়কতন্ত্রের কথা বাদ দিলাম, তাদের প্রকৃতিই হলো কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়া। কিন্তু এমনকি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দলগুলোও। আর আপনি যদি এক পরিবারের শাসনের দিকে তাকান, যেমনটা বিএনপিও, আমি মনে করি, এ ধরনের প্রবণতা দুই দলের মধ্যেই আছে। বিএনপি আমলেও দেখেছি সব ক্ষমতা খালেদার ছেলে তারেকের কুক্ষিগত ছিল। কিছুই হতো না তার অনুমতি ছাড়া। এখন আপনি দেখছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই সব ক্ষমতা। তিনি যদি কিছু না করেন, তাহলে কিছুই হয় না।
ভারত ভূষণ: শ্রুতি, এই বিষয়টা আমাকে অবাক করে যে, কেন শেখ হাসিনা মিডিয়াকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছেন? তিনি এমনও বলেছেন অনেক সম্পাদক যুদ্ধাপরাধী ছিলেন! যুদ্ধাপরাধীদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে যে এতগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা হলো, সেই ব্যাপারে কী বলবেন? আপনি তার মতো এত ভালো সম্পাদক কিংবা ভদ্রমানুষ সহজে পাবেন না। কিংবা বিরোধীদলীয় ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মুক্ত গণমাধ্যম মানে তো এ-ও যে, বিরোধীদলীয় পত্রিকাকেও চলতে দিতে হবে। এছাড়া সামপ্রতিক বিক্ষোভে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। আপনি মিডিয়াকে কেন প্রতিপক্ষ বানাচ্ছেন? আপনি ভালো রাজনীতিক হলে, তাদেরকে নিজের পাশে রাখতে বা নিরপেক্ষ রাখতে চাইবেন?
শ্রুতি: আমি মনে করি, এটা এসেছে সংশয় ও অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি থেকে। দেশের মধ্যে কী হচ্ছে, সেই ব্যাপারে কোনো সমালোচনা আপনি সহ্য করছেন না। অনেক সমালোচনা ভীষণ গঠনমূলক। মাহফুজ আনামের ইস্যু অনেক অবাক করার মতো বিষয়। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা তার আগের সরকারগুলোর সবচেয়ে কড়া সমালোচক ছিলেন তিনি। এ বিষয়টা আসলেই বিস্ময় জাগানিয়া, যেমনটা আপনি বলেছেন।
আমি মনে করি, সরকার এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যদিও এটি বিরোধী দলকে পুরোপুরি দমন করেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। এটা তাই বেশ আশ্চর্যজনক যে, সরকার এখনও দুশ্চিন্তায় ভোগে। আপনি গণমাধ্যমের ওপরও দমনপীড়ন চালাচ্ছেন। যেই আইসিটি আইন করা হয়েছে, যেটা খুব বিপজ্জনক। ধরা যাক, আপনি একজন ব্লগার আর আপনি চরমপন্থিদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। আপনি যদি পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে যান, উল্টো আপনাকে বিপদে পড়তে হতে পারে। আপনি ইন্টারনেটে কী লিখেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বেন। আমি মনে করি সাধারণ অর্থে, সমালোচনা অনেক গঠনমূলক হলেও, অসহিষ্ণুতা আছে ব্যাপক।
ভারত ভূষণ: সরকার নিজেই কিছু ধরনের বক্তব্য বা ব্লগিংকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত করেছে। চরমপন্থিরা যদি এসব লেখার কারণে কোনো ব্লগারকে মারতে যায়, সেক্ষেত্রে সেখানে সরকারেরও এক ধরনের দায় থাকে। কারণ, রাষ্ট্র নিজেই কিছু বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত করেছে। অনেকটা যেন এমন যে, নিজের পরিণতির দায় ওই ব্লগারেরই।
জয়ন্ত: এমনটা অনেক দেশেই হয়েছে। ভারতেও হয়েছে। তবে আসল কথা হলো, সমাজ নিজেও আগের চেয়ে অসহিষ্ণু হয়েছে। এ কারণে উভয়পক্ষের জন্যই সবকিছু সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এটা একটা সমস্যা। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্ন যখন আসছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম বেশ সরব, অনেক মুক্ত। তবে যে ধরনের আইন আছে, সেগুলো বেশ বিস্তৃত। তবে তার (শেখ হাসিনার) এখানে একটা সমস্যা আছে। ডেইলি স্টার সম্পাদক নিজে স্বীকার করেছেন তিনি মাইনাস টু ফর্মুলা সমর্থন করেছিলেন।
ভারত ভূষণ: তবে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। এটা করা যে উচিত হয়নি সেটা বলেছেন। এটা অনেক ভদ্রোচিত বক্তব্য...
জয়ন্ত: হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন এটা ভদ্রোচিত আচরণ। তার (প্রধানমন্ত্রী) উচিত ছিল তার এই বক্তব্যের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকানো। হেসে উড়িয়ে দেয়া। কিন্তু সমস্যা হলো, এক ধরনের সন্দেহ কাজ করে, দুই নেত্রীর মধ্যেই।
ভারত ভূষণ: তাই বলে ৮৩ মামলা সারা দেশজুড়ে?
পিনাক: এটা বাড়াবাড়ি ছিল...
ভারত ভূষণ: পিনাক, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে কথা বলি। এটা কি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে প্রণয়ন করা হয়েছে? বিএনপির সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে। ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলমের বিরুদ্ধেও এই ধারায় মামলা করা হয়েছে। ৫৭ ধারার বিপজ্জনক দিক হলো, অনলাইনে নানা কারণে, ধরুন, কাউকে মানহানি করলে, কুৎসা ছড়ালে, দাঙ্গা ছড়ালে, ইত্যাদি কারণে ৭-১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তাহলে বাংলাদেশে স্মার্টফোন সমেত সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারী যে কাউকেই তো এই মামলায় কারাগারে ঢুকানো যাবে?
পিনাক: আমি মনে করি, এটা এতটা বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত ও বাজেভাবে লেখা একটি ধারা যে, ধরুন আমি কালকে লিখলাম, আমি রসগোল্লার চেয়ে সন্দেশ বেশি পছন্দ করি, তাহলে হয়তো আমার বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন করা হবে! কারণ, আমি তো রসগোল্লার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছি!
ভারত ভূষণ: রসগোল্লা তো কোনো মানুষই নয়...
পিনাক: রসগোল্লা কোনো মানুষ নয়, তবে কে না জানে যে, বাঙালিরা নিজেদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বেশ সংবেদনশীল। অথবা আমি বললাম যে, আমি ইলিশ মাছ পছন্দ করি না! কেউ হয়তো বলতে পারে, আরে দেখ, সে কুৎসা রটাচ্ছে। আমি মনে করি, এটা খুব বাজেভাবে লেখা একটি ধারা।
ভারত ভূষণ: আপনার যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেগুলেট করতে হবে, আপনার প্রয়োজন নেই একে এভাবে অতিমাত্রায় রেগুলেট করা যে এটা সমালোচকদের দমাতে আপনার অস্ত্র হয়ে উঠে...
পিনাক: তবে একটি কথা আমাকে অবশ্যই বলতে হবে। যেসব সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে রেগুলেট করতে চায়, তাদের পক্ষে একটা কথা আমি বলবো। আসলে, এটা হলো নিউ মিডিয়া। এ ধরনের ডিজিটাল মিডিয়া মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা কোনো সরকারেরই নেই। আসলে, পুরো বিশ্বই এ নিয়ে কসরত করছে যে কীভাবে সাইবারজাগরণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমি মনে করি, এখানে কিছু সমস্যা আছে। তবে যারা এই ধরনের ধারা যারা প্রণয়ন করেন তাদের বোঝা উচিত এসবের কিছু সীমা আছে। কিছু সীমা আছে যেগুলো আমাদের অতিক্রম করা উচিত নয়।
ভারত ভূষণ: শ্রুতি, এই বছরের জানুয়ারি নাগাদ, একটি দল বিএনপি থেকেই প্রায় ১২ লাখ লোকের বিরুদ্ধে ৫০ হাজারেরও বেশি মামলা করা হয়েছে। দলটির হাজার হাজার কর্মী কারাগারে। যেমনটা আপনি বললেন, খালেদা জিয়াও পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা চলছে। আমির খসরু মাহমুদ কিংবা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। এটা কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিক? নাকি নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ন্যূনমাত্রায় প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে?
শ্রুতি: আমি মনে করি এটি কিছুটা স্বাভাবিকই বাংলাদেশে। এমন নয় যে, অতীতে এতটা হয়নি। কিন্তু এবার এই ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে, বিশেষ করে গ্রেপ্তারের বেলায়। এটা হতে পারে এ কারণে যে, সরকার সেখানে টানা দুবার ক্ষমতায়। ফলে মানুষের স্মৃতি শুধু এই সরকারকে নিয়েই। ফলে, এটি এমন কিছু নয় যেটা অতীতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, বিরোধীপক্ষের ওপর আক্রমণ, পুলিশ ব্যবহার, সবই হয়েছে। তবে আপনি যেমনটা শিক্ষার্থী বিক্ষোভের কথা বললেন, এছাড়া মাদকবিরোধী যুদ্ধেও অনেকে নিহত হয়েছে। জয়ন্ত যেমনটা বলছিলেন, এসব হলো স্ফুলিঙ্গের মতো। আপনার কোনো মুক্ত গণমাধ্যম নেই, আপনি ব্লগেও লিখতে পারবেন না। আপনি হয়তো আইসিটি অ্যাক্টে মামলা খাবেন। আপনার ক্ষোভ তাহলে প্রশমিত হবে কীভাবে? এই ক্ষোভকে তো কোথাও যেতে হবে। আমি মনে করি, সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়ছে, এটা নজিরবিহীন নয়। এটা হলো বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। তবে এটা ধীরে ধীরে খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
ভারত ভূষণ: তাহলে এটা আসলে ন্যূনমাত্রার?
শ্রুতি: হ্যাঁ।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা ও বিরোধীপক্ষকে ওই নির্বাচন বয়কট করাতে বাধ্য করা কি হাসিনা সরকারের জন্য এটি রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক? এটা তো তার জন্য সহায়ক নয়, কারণ এর ফলে যত আসনই তিনি জিতুন না কেন, সেই জয়ের গ্রহণযোগ্যতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আমার সঙ্গে একজনের কথা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ট্রেনে আগুন লাগানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই লোক সিগারেটও খান না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন কিভাবে ট্রেনে আগুন লাগায়? আমি বললাম, আমি জানি না। তাহলে কি বিরোধীদলের সামর্থ্য ভেঙে দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনে গেলেও জিততে না পারে? এর ফলে তো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু হলো না।
জয়ন্ত: আমি মনে করি না এসবের পরিকল্পনা তিনি করে ফেলেছেন।
ভারত ভূষণ: কিন্তু ছয় মাস আগেই যদি এসব না করেন, তাহলে করবেন কখন?
জয়ন্ত: তা ঠিক আছে, তবে আমি মনে করি না, তারা পরিকল্পনা করেছে, বিরোধী দলের সামর্থ্য ভেঙে দিয়ে নির্বাচনে জিতে যাওয়ার। আমি মনে করি এটা অনেকটা তার (শেখ হাসিনা) তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া। তারা (বিরোধী দল) এসবের জন্য দায়ী, তারা মানুষকে উস্কে দিচ্ছে, সুতরাং আমাকে পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। তবে আমার মনে হয়, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এক ধরনের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, যেটা কিছুটা সুষ্ঠুও।
ভারত ভূষণ: তবে দুই জিনিস তো আলাদা। পিনাক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বনাম সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনে সবাই প্রচারণা চালাতে পারবে, সবাই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারবে ভোটারের কাছে। এটা শুধু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চেয়ে আলাদা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আধামরা দলও অংশ নেবে, পুর্নদ্যোমে শক্তিশালী দলও অংশ নেবে।
পিনাক: আমি মনে করি, শাসক দল আওয়ামী লীগের একটা বড় ট্রাম্পকার্ড হলো, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। যদি আপনি দুবার নির্বাচনে অংশ না নেন, তাহলে এটা হবে। ফলে বিএনপি বেশ উভয় সংকটে আছে। একটা সমস্যা হলো, এত মামলা, বিরোধী পক্ষকে নানাভাবে দুর্বল করা। আরেক সমস্যা হলো, আপনি যদি নির্বাচনে অংশ না নেন, তাহলে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।
ভারত ভূষণ: আমি সেটা বুঝতে পারছি। তবে শেখ হাসিনা কী চান?
পিনাক: দেখুন, তিনি চান যে অংশগ্রহণ করুক। তবে সেক্ষেত্রে খুবই দুর্বল বিরোধী দল চান তিনি। যাতে করে তিনি জিতে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন। এটা বাংলাদেশে খুবই সাধারণ রাজনৈতিক খেলা। তবে বিএনপি হয়তো বলবে, আমরা এসব করিনি। তবে আমি আসলে তাদেরকে এ ব্যাপারে খুব ক্রেডিট দিতে প্রস্তুত নই। আমি মনে করি, উভয় দলই ক্ষমতায় গেলে এই কাজ করে। আপনার যদি মনে থাকে, এ কারণেই তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। কারণ, কোনো পক্ষই একে অপরকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু ওই সিস্টেম এখন নেই। ফলে নির্বাচন হবে এই সরকারের অধীনে, যেটি নির্বাচনের সময় ক্ষমতায় থাকবে।
ভারত ভূষণ: শ্রতি, আমার শেষ প্রশ্ন। এক কোটি বিশ লাখ নতুন ভোটার আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করবে। আপনি কি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের সামপ্রতিক যেসব বিক্ষোভ আমরা দেখেছি, সেসব নির্বাচনী ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলবে?
শ্রুতি: আমি মনে করি এটি নির্ভর করবে কী ধরনের প্রার্থী বিরোধীপক্ষ দাঁড় করায়। কারণ, সবকিছু সত্ত্বেও সরকারের কিছু অর্জন আছে। যেমন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই বাড়ছে। অনেক মানুষ হয়তো তাই রাজনৈতিকভাবে ক্ষুব্ধ হলেও, অর্থনৈতিকভাবে খুশি। তাই আমি মনে করি, কী ধরনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরকারকে লড়াই করতে হবে, সেটাই এই নির্বাচনের ফল নির্ধারক হবে।
ভারত ভূষণ: জয়ন্ত, তরুণ গোষ্ঠী নিয়ে আপনার মত কী?
জয়ন্ত: আমি মনে করি তরুণরা বিরোধী দলের পক্ষে বড় ফ্যাক্টর হবে। কারণ, তারা ক্ষুব্ধ। তবে, যেমনটা শ্রুতি বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধিও খুব ভালো ছিল। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলও অনেক কিছু নির্ধারণ করবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন তাই হয়তো শাসক দলের পক্ষে যাবে।
ভারত ভূষণ: পিনাক, আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন। তরুণরা কোনদিকে যাবে?
পিনাক: আমি নির্বাচন নিয়ে আগাম অনুমান করবো না। তবে আমার মনে হয়, তরুণদের ভোট ভাগ হবে। এখানে নির্ভর করবে তাদের পরিবার, অঞ্চলের ওপর। তবে শহুরে তরুণরা মোটা দাগে আওয়ামী লীগের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। আপনি দেখেছেন সব বিক্ষোভ। আমি মনে করি, তরুণদের ভোট তাই ভাগ হবে।
ভারত ভূষণ: আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এই আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য।
No comments