ফিলিস্তিনি
জাতিমুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যে নামটি জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে,
প্যালেস্টানিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সেই প্রয়াত নেতা ইয়াসির
আরাফাতের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া
ফিলিস্তিনি বীরকন্যা আহেদ তামিমি। রবিবার ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পান
তিনি। মুক্তির পর সাংবাদিকদের সামনে তামিমি অঙ্গীকার করেন, জাতিগত মুক্তি
না আসা পর্যন্ত তার প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।
|
ইয়াসির আরাফাতের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান আহেদ তামিমি |
ডিসেম্বরের
মাঝামাঝি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেনাদের গালে থাপ্পড়
মেরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের জীবন্ত প্রতীকে পরিণত হন তামিমি। তাকে
ইসরায়েলের কারাগারে নেওয়া হয়। মার্চে সামরিক আদালতে তার বিরুদ্ধে ঘোষিত হয়
জরিমানাসহ আট মাসের কারাদণ্ড। সে হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে থাকা
তামিমির মুক্তি পাওয়ার কথা ১৯ আগস্ট। তবে বিশেষ মূল্যায়নে ইসরায়েলি কারা
কর্তৃপক্ষ কারও কারা মেয়াদ কমিয়ে আনতে পারে। সেই বিশেষ মূল্যায়নেই রবিবার
তামিমির কারামুক্তি দেওয়া হয়। আহেদ তামিমির চূড়ান্ত মুক্তির সময় তার বাবা
বাসেম তামিমি তাকে সাংবাদিকদের ভিড়ের মধ্যে হাত দিয়ে ঘিরে বের করে নিয়ে
যান। ওই সময় তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই।
মুক্তির
পর রানটিস চেকপয়েন্ট থেকে তামিমি রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির
আরাফাতের সমাধিতে যান। পিএলও প্রধান ইয়াসির আরাফাত ২০০৪ সালের নভেম্বর
মাসে প্যারিসের উপকণ্ঠে একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, সম্পন্ন হয়নি মরদেহের
ময়নাতদন্তও। পরে তাকে রামাল্লায় সমাধিস্থ করা হয়। সেই সমাধিতে ফুল দিয়ে
শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তামিমি।
|
ভাইকে বাঁচাতে ইসরায়েলি সেনার হাতে কামড় দেন আহেদ তামিমি |
২০০৪
সালেই আরাফাতের জামাকাপড়ে পোলোনিয়াম-২১০ তেজস্ক্রিয় বিষের হদিস পাওয়া
গিয়েছিল এবং আরাফাতের স্ত্রী সুহা আরাফাত বিষয়টির তদন্ত দাবি করেছিলেন।
ফ্রান্স, রাশিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা ২০১২ সালে আরাফাতের লাশ
থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পাঠান। ২০১৩ সালে সুইশ বিজ্ঞানীরা
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল রামাল্লায় ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ এবং সুহা
আরাফাতকে প্রদান করেন। আল-জাজিরার তখনকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজ্ঞানীদের
রিপোর্টে পোলোনিয়াম-২১০'-এর বিষক্রিয়ায় আরাফাতের মৃত্যুর স্পষ্ট
সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। যদিও রিপোর্টের বয়ানে ‘মডারেট' বা মাঝারি গোছের
সাক্ষ্যপ্রমাণের কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও শীর্ষ সেনা
কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ‘রাইজ
অ্যান্ড কিল ফাস্ট: দ্য সিক্রেট হিস্টোরি অব ইসরায়েল’স টার্গেটেড
অ্যাসাসিনেশন্স’ নামের বইতে ইসরায়েলের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও লেখক রনিন
বার্গম্যানও দাবি করেন, রেডিয়েশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে ফিলিস্তিনের নেতা
ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করেছিল ইসরায়েল।
|
ইসরায়েলি সেনা সদস্যের সঙ্গে বাদানুবাদরত আহেদ তামিমি |
প্রয়াত
আরাফাতের সমাধি থেকে তামিমি যান তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এক ফিলিস্তিনি
বিক্ষোভে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ওই বাড়ির এক সদস্য নিহত হন।
ফিলিস্তিনিদের ঐহিত্যবাহী পাগড়ি কেফিয়েহ পরে আহেদ তামিমি সেই বাড়িতে
দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই শহীদের বাড়ি থেকে আমি ঘোষণা করছি,
দখলদারিত্ব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ জারি থাকবে।’ তিনি আরও বলেন,
জেলে বন্দি সব নারী শক্তিশালী। জেলে থাকা অবস্থায় যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন,
তাদের সবাইকে ধন্যবাদও জানান তামিমি।
|
বাবা বাসেম তামিমির সঙ্গে আহেদ তামিমি |
২০১৭
সালের ১৫ ডিসেম্বর তামিমির বাড়িতে হানা দেয় দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বাড়ির প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে দখলদার সেনাদের চলে যেতে বলেন ১৬ বছরের তামিমি।
কথায় কাজ না হওয়ায় পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকা দুই সেনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় একপর্যায়ে সেনাদের থাপ্পড় মারতে
শুরু করেন তামিমি। এই দুঃসাহসিক ভূমিকার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
তামিমি ও তার মাকে গ্রেফতার করে ইসরায়েলি সেনারা। একাধিক দফায় নেওয়া হয়
রিমান্ডে। বিপরীতে ফিলিস্তিনের বাইরে যুক্তরাজ্যসহ দুনিয়ার নানা প্রান্ত
থেকে তার মুক্তির দাবি ওঠে। সেই সময়ে ১৬ বছরের মেয়ে তামিমি হয়ে উঠেন
ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি আন্দোলন ও তৃতীয় ইন্তিফাদার প্রতীকী চরিত্র।
No comments