কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে স্বর্ণ বের হয় যেভাবে
বাংলাদেশ
ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণের পরিমাণ ও ধরন বদলে যাওয়া নিয়ে আলোচনা
দেশজুড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ভল্টে রাখা স্বর্ণের কোনো ধরনের হেরফের
হয়নি। যা হয়েছে ইংরেজি-বাংলায় হিসাব লেখার হেরফেরে। ওদিকে শুল্ক গোয়েন্দা
বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, জব্দকৃত স্বর্ণের হিসাব ও পরিমাপে গরমিল রয়েছে। এ
অবস্থায় সর্বত্র জিজ্ঞাসা ভল্টে কিভাবে রাখা হয় স্বর্ণ? কিভাবেইবা সেখান
থেকে বের করা হয়।
সূত্র মতে, সাধারণত জব্দ হওয়া স্বর্ণ বেশ কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা করে কঠোর নিরাপত্তায় ভল্টে জমা হয়। ভল্ট থেকে স্বর্ণ বের করার প্রক্রিয়াটিও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মোড়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে কর্মরত কর্মকর্তারা বলছেন, ভল্ট এলাকাকে বাংলাদেশে ব্যাংকের ভাষায় ‘মহা নিরাপত্তা এলাকা’ বলা হয়। স্বর্ণের যে ভল্ট সেখানে ঢুকতে গেলে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ও গেট কিপিং পার হতে হয়। শুরুতে পাঞ্চ কার্ড, তার পর কলাপসিবল গেট। এরপর দেহ তল্লাশি। স্বর্ণের ভল্ট পর্যন্ত তিনটি দরজা রয়েছে। আর সেই ভল্টে আলাদা আলমারিগুলোর আলাদা আলাদা চাবি। কিন্তু সেই চাবিও আবার সিন্দুকে রাখা হয়। আর এর দায়িত্বে থাকেন দুজন কর্মকর্তা। আবার জমা রাখা সোনা ভল্ট থেকে বের করতে হলেও একই নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানতে হয়। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনাসহ আরো বেশ কয়েকটি ধাপ পার করে ভল্ট থেকে সোনা বের করতে হয়। এরপর সেটি বিক্রি করে তার অর্থ সরকারকে দিয়ে দেয়া হয়। আর যদি কোনো সোনা নিয়ে আদালতে নিষ্পত্তি না হয়, সেগুলো অস্থায়ীভাবে ভল্টেই আলাদা জায়গায় জমা থাকে। আর গচ্ছিত স্বর্ণ যদি গয়না হয় তবে কোর্টে নিষ্পত্তির পর সেটি স্বর্ণকাররা কিনতে পারেন। সূত্র মতে, এত নিরাপত্তার পর স্বর্ণে অনিয়ম হয়ে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মো. মাছুম পাটোয়ারী বলেন, আদালতের নির্দেশনা ছাড়া ভল্ট থেকে এক রতি সোনা বের করার সুযোগ নেই। একইভাবে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনা রাখতে চাইলেও আদালতের নির্দেশনা মেনে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। আবার বের করতে চাইলেও একই ধাপ অনুসরণ করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভল্টে শুধু জব্দ হওয়া স্বর্ণের ঢোকার অধিকার রয়েছে। বিভিন্ন সময় কাস্টমস বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চোরাচালান বা চুরি-ডাকাতির স্বর্ণ আটক করে। ওই সংস্থাগুলো স্বর্ণ বার, গয়না বা অন্য কোনো মূল্যবান ধাতু বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করতে আসে। জব্দ স্বর্ণের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সেটিকে অস্থায়ীভাবে জমা গ্রহণ করা হয়। সেগুলো আদালতের নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে।
পরের ধাপে বাজেয়াপ্ত স্বর্ণের তালিকা আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখার জন্য বলে, তাহলে পরের ধাপে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখার অনুমতি চেয়ে আদালতের রায়ের কপিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় আবেদন করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার আবেদন আমলে নিয়ে পরের ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য একটি ফাইল পাঠায়। সেই ফাইল অনুমোদন হয়ে ফিরে আসার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সব স্বর্ণ নিয়ে আসার জন্য একটি তারিখ দেয়া হয়। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকারকে আসতে বলা হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বর্ণসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার নতুন করে স্বর্ণের ওজন করেন।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে কষ্টিপাথরে স্বর্ণের মান যাচাই করা হয়। কী পরিমাণ স্বর্ণ আছে তারও পরিমাপ করা হয়। স্বর্ণকার তথ্যগুলো বলতে থাকেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই তথ্যগুলো রেকর্ডবুকে লিখে নেন। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে সব স্বর্ণ একটি কৌটার মধ্যে রাখা হয়। ওই কৌটার মুখে ছোট একটি তালা লাগানো হয়। এরপর কৌটাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়ার পর সিলগালা করা হয়। সেই প্যাকেটের ওপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের একজন কর্মকর্তা আড়াআড়িভাবে স্বাক্ষর করেন। এরপর কৌটার চারদিক দিয়ে ছোট ছোট পিন গেঁথে দেয়া হয়। সর্বশেষ ধাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ছয় স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার করে ভল্টের মধ্যে ঢোকানো হয়। পরে ব্যাংক, কাস্টম হাউসের অথবা এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই সব সোনা মান নির্ধারণপূর্বক ব্যাংক গ্রহণ করে রসিদ দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এরপর যখন আদালতের নির্দেশ আসে যে রাষ্ট্রের অনুকূলে এই স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত করা হলো, তখন সেটি বিক্রি করে তার অর্থ সরকারকে দিয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এখানেই শেষ নয়। রাষ্ট্রের অনুকূলে বিষয়টি অদালতে নিষ্পত্তি হলো। এরপর স্বর্ণ যদি বার আকারে থাকে (সেটি হতে হবে প্রায় ৯৯% খাঁটি) সেটি আসলে ক্রয় করতে পারে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নিজে। তা ক্রয় করে সরকারকে অর্থ দিয়ে দেয়। আদালতে নিষ্পত্তি হয় না যে স্বর্ণের, সেগুলো অস্থায়ীভাবে জমা থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মো. মাছুম পাটোয়ারী বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেলে একই পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে অথবা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে সোনা তুলে দেয়া হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ব্যাংকে ৭০ জন পুলিশের একটি কন্টিনজেন্ট রয়েছে যারা অন্য কোথাও পাহারায় যায় না। তারা টাকশাল থেকে টাকাও আনতে যায় না। তারা শুধু এখানেই সার্বক্ষণিক পাহারা দেয়। রাতে ভল্ট বন্ধ করে যাওয়ার পর এমনকি গভর্নর এসে ঢুকতে চাইলেও তাকে পুলিশ ঢুকতে দেবে না। ভল্টে ঢোকার অধিকার রয়েছে শুধু কারেন্সি অফিসার, জয়েন্ট ম্যানেজার ক্যাশ এবং ডিজিএম ক্যাশ। কারেন্সি অফিসার যদি প্রয়োজন মনে করেন তার অনুমতি যিনি পাবেন তিনি শুধু ভেতরে প্রবেশ করেন। এখানে গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নর এবং সরকারের অন্য কর্মকর্তারা, অননুমোদিত ব্যক্তিদের যাওয়ার কোনো অধিকার নেই বা প্রয়োজনও নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভল্টে তদন্তাধীন স্বর্ণ গচ্ছিত ছিল ৯৬৩ কেজি, যা প্রায় এক টনের কাছাকাছি। গণমাধ্যমে আসা যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তা হলো ২০১৫ সালে গচ্ছিত প্রায় ৩৫০ কেজি স্বর্ণ নিয়ে। যে প্রতিবেদনটি নিয়ে এত আলোচনা তাতে বলা হয়েছে, ওই স্বর্ণ ছিল চাকতি ও আংটি। কিন্তু তা পাওয়া গেছে মিশ্র ধাতু আকারে। আর ওই স্বর্ণ ছিল ২২ ক্যারেট। কিন্তু তদন্তে পরীক্ষার পর নাকি পাওয়া গেছে ১৮ ক্যারেট। গচ্ছিত বেশিরভাগ স্বর্ণের ক্ষেত্রেই নাকি অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে।
এদিকে ভল্টে রক্ষিত সোনা গায়েবের ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে ছয় সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, সাধারণত জব্দ হওয়া স্বর্ণ বেশ কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা করে কঠোর নিরাপত্তায় ভল্টে জমা হয়। ভল্ট থেকে স্বর্ণ বের করার প্রক্রিয়াটিও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মোড়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে কর্মরত কর্মকর্তারা বলছেন, ভল্ট এলাকাকে বাংলাদেশে ব্যাংকের ভাষায় ‘মহা নিরাপত্তা এলাকা’ বলা হয়। স্বর্ণের যে ভল্ট সেখানে ঢুকতে গেলে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ও গেট কিপিং পার হতে হয়। শুরুতে পাঞ্চ কার্ড, তার পর কলাপসিবল গেট। এরপর দেহ তল্লাশি। স্বর্ণের ভল্ট পর্যন্ত তিনটি দরজা রয়েছে। আর সেই ভল্টে আলাদা আলমারিগুলোর আলাদা আলাদা চাবি। কিন্তু সেই চাবিও আবার সিন্দুকে রাখা হয়। আর এর দায়িত্বে থাকেন দুজন কর্মকর্তা। আবার জমা রাখা সোনা ভল্ট থেকে বের করতে হলেও একই নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানতে হয়। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনাসহ আরো বেশ কয়েকটি ধাপ পার করে ভল্ট থেকে সোনা বের করতে হয়। এরপর সেটি বিক্রি করে তার অর্থ সরকারকে দিয়ে দেয়া হয়। আর যদি কোনো সোনা নিয়ে আদালতে নিষ্পত্তি না হয়, সেগুলো অস্থায়ীভাবে ভল্টেই আলাদা জায়গায় জমা থাকে। আর গচ্ছিত স্বর্ণ যদি গয়না হয় তবে কোর্টে নিষ্পত্তির পর সেটি স্বর্ণকাররা কিনতে পারেন। সূত্র মতে, এত নিরাপত্তার পর স্বর্ণে অনিয়ম হয়ে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মো. মাছুম পাটোয়ারী বলেন, আদালতের নির্দেশনা ছাড়া ভল্ট থেকে এক রতি সোনা বের করার সুযোগ নেই। একইভাবে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনা রাখতে চাইলেও আদালতের নির্দেশনা মেনে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। আবার বের করতে চাইলেও একই ধাপ অনুসরণ করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভল্টে শুধু জব্দ হওয়া স্বর্ণের ঢোকার অধিকার রয়েছে। বিভিন্ন সময় কাস্টমস বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চোরাচালান বা চুরি-ডাকাতির স্বর্ণ আটক করে। ওই সংস্থাগুলো স্বর্ণ বার, গয়না বা অন্য কোনো মূল্যবান ধাতু বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করতে আসে। জব্দ স্বর্ণের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সেটিকে অস্থায়ীভাবে জমা গ্রহণ করা হয়। সেগুলো আদালতের নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে।
পরের ধাপে বাজেয়াপ্ত স্বর্ণের তালিকা আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখার জন্য বলে, তাহলে পরের ধাপে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখার অনুমতি চেয়ে আদালতের রায়ের কপিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় আবেদন করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার আবেদন আমলে নিয়ে পরের ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য একটি ফাইল পাঠায়। সেই ফাইল অনুমোদন হয়ে ফিরে আসার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সব স্বর্ণ নিয়ে আসার জন্য একটি তারিখ দেয়া হয়। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকারকে আসতে বলা হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বর্ণসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার নতুন করে স্বর্ণের ওজন করেন।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে কষ্টিপাথরে স্বর্ণের মান যাচাই করা হয়। কী পরিমাণ স্বর্ণ আছে তারও পরিমাপ করা হয়। স্বর্ণকার তথ্যগুলো বলতে থাকেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই তথ্যগুলো রেকর্ডবুকে লিখে নেন। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে সব স্বর্ণ একটি কৌটার মধ্যে রাখা হয়। ওই কৌটার মুখে ছোট একটি তালা লাগানো হয়। এরপর কৌটাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়ার পর সিলগালা করা হয়। সেই প্যাকেটের ওপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের একজন কর্মকর্তা আড়াআড়িভাবে স্বাক্ষর করেন। এরপর কৌটার চারদিক দিয়ে ছোট ছোট পিন গেঁথে দেয়া হয়। সর্বশেষ ধাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ছয় স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার করে ভল্টের মধ্যে ঢোকানো হয়। পরে ব্যাংক, কাস্টম হাউসের অথবা এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই সব সোনা মান নির্ধারণপূর্বক ব্যাংক গ্রহণ করে রসিদ দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এরপর যখন আদালতের নির্দেশ আসে যে রাষ্ট্রের অনুকূলে এই স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত করা হলো, তখন সেটি বিক্রি করে তার অর্থ সরকারকে দিয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এখানেই শেষ নয়। রাষ্ট্রের অনুকূলে বিষয়টি অদালতে নিষ্পত্তি হলো। এরপর স্বর্ণ যদি বার আকারে থাকে (সেটি হতে হবে প্রায় ৯৯% খাঁটি) সেটি আসলে ক্রয় করতে পারে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নিজে। তা ক্রয় করে সরকারকে অর্থ দিয়ে দেয়। আদালতে নিষ্পত্তি হয় না যে স্বর্ণের, সেগুলো অস্থায়ীভাবে জমা থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মো. মাছুম পাটোয়ারী বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেলে একই পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে অথবা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে সোনা তুলে দেয়া হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ব্যাংকে ৭০ জন পুলিশের একটি কন্টিনজেন্ট রয়েছে যারা অন্য কোথাও পাহারায় যায় না। তারা টাকশাল থেকে টাকাও আনতে যায় না। তারা শুধু এখানেই সার্বক্ষণিক পাহারা দেয়। রাতে ভল্ট বন্ধ করে যাওয়ার পর এমনকি গভর্নর এসে ঢুকতে চাইলেও তাকে পুলিশ ঢুকতে দেবে না। ভল্টে ঢোকার অধিকার রয়েছে শুধু কারেন্সি অফিসার, জয়েন্ট ম্যানেজার ক্যাশ এবং ডিজিএম ক্যাশ। কারেন্সি অফিসার যদি প্রয়োজন মনে করেন তার অনুমতি যিনি পাবেন তিনি শুধু ভেতরে প্রবেশ করেন। এখানে গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নর এবং সরকারের অন্য কর্মকর্তারা, অননুমোদিত ব্যক্তিদের যাওয়ার কোনো অধিকার নেই বা প্রয়োজনও নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভল্টে তদন্তাধীন স্বর্ণ গচ্ছিত ছিল ৯৬৩ কেজি, যা প্রায় এক টনের কাছাকাছি। গণমাধ্যমে আসা যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তা হলো ২০১৫ সালে গচ্ছিত প্রায় ৩৫০ কেজি স্বর্ণ নিয়ে। যে প্রতিবেদনটি নিয়ে এত আলোচনা তাতে বলা হয়েছে, ওই স্বর্ণ ছিল চাকতি ও আংটি। কিন্তু তা পাওয়া গেছে মিশ্র ধাতু আকারে। আর ওই স্বর্ণ ছিল ২২ ক্যারেট। কিন্তু তদন্তে পরীক্ষার পর নাকি পাওয়া গেছে ১৮ ক্যারেট। গচ্ছিত বেশিরভাগ স্বর্ণের ক্ষেত্রেই নাকি অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে।
এদিকে ভল্টে রক্ষিত সোনা গায়েবের ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে ছয় সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
No comments