কবর খোঁড়াই যাদের পেশা by আব্দুল আলীম
মুক্তিযোদ্ধা
জালাল মিয়া। চাকরি করেন আজিমপুর গোরস্থানে। ওই এলাকার সবার কাছে পরিচিত
দাড়িওয়ালা জালাল চাচা নামে। পেশায় একজন গোরখোদক তিনি। তবে এখন আর কবর
খোঁড়েন না। কবরে মাটি দেয়া ও মরদেহের গোসল করানো এখন তার কাজ।
সম্প্রতি এক দুপুরে আজিমপুর গোরস্থানের বোগদাদী শাহ’র মাজারের পাশে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি ১৭ বছরের যুবক। সকলের দেখাদেখি তিনিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধার একটি সার্টিফিকেটও দেয়া হয় তাকে। তবে ‘যারা অস্ত্র রেখেছে এমন সব মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে যেতে হবে’ জেনারেল ওসমানীর এমন এক ভাষণ শুনে সব সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলেন তিনি। পরে ১৯৭৫ সালে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গোরস্থানে চাকরি নেন। তখন জালাল মিয়ার বয়স মাত্র ২১ বছর। প্রথমে মিরপুর গোরস্থানে চাকরিতে যোগ দেন। সেই থেকে গোরখোদক পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টা পর্যন্ত মরদেহ দাফনের জন্য কবর খুঁড়েছেন। গোরখোদক পেশার জীবনে ঠিক কতগুলো মরদেহের কবর খুঁড়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে তার ভাষায় ‘অনেক... মানুষের কবর খুঁড়েছি’। একটি কবর খুঁড়লে গোরস্থানের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তাকে দেয়া হয় মাত্র ৪০ টাকা। এছাড়া, নিহতের আত্মীয়স্বজনরা যে বকশিশ দেন তাতেই চলে তার সংসার। এছাড়া, এখন গোসল করানো এবং বিভিন্ন কবরের দেখাশুনা করার কারণে আলাদা বকশিশ পান তিনি। দাফনকৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কবরের দেখাশুনা করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এতে যে কবরের দায়িত্ব নেন সেটার মাটি বৃষ্টিতে ভেঙে গেলে সেখানে নতুন মাটি দেন। কবরের ঘাস বা লতাগুল্ম ছেঁটে সৌন্দর্য রক্ষা করেন। এর বিনিময়ে বিশেষ বকশিশ পান তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ গোরস্থান থেকে ও গোরস্থানে অনেকবার বদলিও হয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ আজিমপুর গোরস্থানে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি ঢাকার দোহার থেকে প্রতিদিন সকালে বাইসাইকেল চালিয়ে আজিমপুর আসেন তিনি। সন্ধ্যায় কাজ শেষে আবার সাইকেলে করে বাড়ি ফেরেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জালাল মিয়ার শরীরে বাসা বেঁধেছে ডায়াবেটিস রোগ। ডায়াবেটিসের কারণে কাজ ছেড়ে বিশ্রাম নিতে পারেন না। বিশ্রাম নিলেই মাত্রা বেড়ে যায়। ৪০ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত থাকার পর গত বছর আজিমপুর গোরস্থানে দায়িত্ব পালনকালে অবসরে যান তিনি। তবে ডায়াবেটিসের কথা চিন্তা করে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। অস্থায়ী চুক্তিতে আজিমপুর গোরস্থানেই চাকরি করেন। কবরে মাটি দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ও দাফনের আগে গোসল করানোই এখন তার কাজ। সারাদিন গোরস্থানের দক্ষিণ গেট থেকে উত্তর গেট পর্যন্ত অনেক কবরের দেখাশুনা করেন। এতে হাঁটাহাঁটিও হয়ে যায়। এছাড়া, সকালে বাড়ি থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে কবরস্থানে আসতেও ব্যায়াম হয়ে যায়। কবরস্থানের কর্মরত মানুষগুলো ছাড়াও জালাল মিয়ার রয়েছে সুখী সংসার। পরিবারের সকলেই সরকারি চাকরিজীবী। ৫ ছেলেমেয়ের মধ্যে দুই ছেলে বিআরটিসির বাসের সরকারি ড্রাইভার। মেয়েদের ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রীও সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন।
জালাল মিয়া ছাড়াও এই কবরস্থানে ৪০ বছর ধরে চাকরি করেন অবদুল মান্নান মিয়া। কবর খোঁড়া ও কবরের চালি বাঁশ বিক্রি করা তার কাজ। প্রতিটি কবর খোঁড়ার জন্য সরকারি বিল ৪০ টাকা ছাড়াও নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশ পান তিনি। এছাড়া, বাঁশের চালি ও চাটাই বিক্রি করেও আলাদা আয় হয় তার। আজিমপুর কবরস্থানে যারা গোরখোদক পেশায় জড়িত তাদের মধ্যে আবদুল মান্নান মিয়া সবচেয়ে বয়স্ক। আব্দুল মান্নান ও জালাল মিয়ার মতো প্রায় ১৫ জন এই গোরখোদক পেশায় জড়িত। তারা সবাই মান্নান ও জালাল মিয়াকে সমিহ করে। ভেতরে মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিরা বেশির ভাগ মান্নান মিয়ার সঙ্গেই যোগাযোগ করেন। পরে তিনি অনেকের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে মরদেহ দাফন করতে ন্যূনতম ৮০০০ টাকা লাগে। সরকারি খরচ ছাড়াও বাঁশের চালি, গোসল, গোরখোদকের বকশিশ ও কবর দেখাশুনাকারীর বকশিশ মিলিয়ে এই পরিমাণ টাকা লাগে। আর এসব বাঁশের চালি, চাটাই ও অন্যান্য উপকরণ ভেতরের নির্ধারিত লোক বিক্রি করে। সিটি করপোরেশন থেকে কন্ট্রাক্ট নিয়ে তারা এখানে ব্যবসা করেন। এমনকি এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে অনেকে চাকরি করেন। তাদেরও নিয়োগ দেন এই কন্ট্রাক্টররা। এত খরচ যারা বহন করতে পারেন না বা টাকা একেবারে নেই তারা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে যোগাযোগ করেন। পরে তারা খরচ বহন করে। আইনুল ইসলাম নামের এক কর্মচারী বলেন, রাত ১১টার পর গোরস্থানে কোন মরদেহ দাফন হয় না। আমরা দুই শিফটে কাজ করি। দিনে যারা ডিউটি করে রাতে তারা করে না। গোরখোদক থেকে শুরু করে কবরের দেখাশুনা করা পর্যন্ত সব বিভাগেই প্রায় ১৫ জন করে দায়িত্ব পালন করে। তবে রাতের শিফটে এই সংখ্যাটা অনেক কম থাকে। এছাড়া, এখানে যারা চাকরি করে তারা সবাই বাইরে থাকে। কবরস্থানের মধ্যে কারো থাকার জায়গা নেই।
সম্প্রতি এক দুপুরে আজিমপুর গোরস্থানের বোগদাদী শাহ’র মাজারের পাশে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি ১৭ বছরের যুবক। সকলের দেখাদেখি তিনিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধার একটি সার্টিফিকেটও দেয়া হয় তাকে। তবে ‘যারা অস্ত্র রেখেছে এমন সব মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে যেতে হবে’ জেনারেল ওসমানীর এমন এক ভাষণ শুনে সব সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলেন তিনি। পরে ১৯৭৫ সালে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গোরস্থানে চাকরি নেন। তখন জালাল মিয়ার বয়স মাত্র ২১ বছর। প্রথমে মিরপুর গোরস্থানে চাকরিতে যোগ দেন। সেই থেকে গোরখোদক পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টা পর্যন্ত মরদেহ দাফনের জন্য কবর খুঁড়েছেন। গোরখোদক পেশার জীবনে ঠিক কতগুলো মরদেহের কবর খুঁড়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে তার ভাষায় ‘অনেক... মানুষের কবর খুঁড়েছি’। একটি কবর খুঁড়লে গোরস্থানের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তাকে দেয়া হয় মাত্র ৪০ টাকা। এছাড়া, নিহতের আত্মীয়স্বজনরা যে বকশিশ দেন তাতেই চলে তার সংসার। এছাড়া, এখন গোসল করানো এবং বিভিন্ন কবরের দেখাশুনা করার কারণে আলাদা বকশিশ পান তিনি। দাফনকৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কবরের দেখাশুনা করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এতে যে কবরের দায়িত্ব নেন সেটার মাটি বৃষ্টিতে ভেঙে গেলে সেখানে নতুন মাটি দেন। কবরের ঘাস বা লতাগুল্ম ছেঁটে সৌন্দর্য রক্ষা করেন। এর বিনিময়ে বিশেষ বকশিশ পান তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ গোরস্থান থেকে ও গোরস্থানে অনেকবার বদলিও হয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ আজিমপুর গোরস্থানে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি ঢাকার দোহার থেকে প্রতিদিন সকালে বাইসাইকেল চালিয়ে আজিমপুর আসেন তিনি। সন্ধ্যায় কাজ শেষে আবার সাইকেলে করে বাড়ি ফেরেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জালাল মিয়ার শরীরে বাসা বেঁধেছে ডায়াবেটিস রোগ। ডায়াবেটিসের কারণে কাজ ছেড়ে বিশ্রাম নিতে পারেন না। বিশ্রাম নিলেই মাত্রা বেড়ে যায়। ৪০ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত থাকার পর গত বছর আজিমপুর গোরস্থানে দায়িত্ব পালনকালে অবসরে যান তিনি। তবে ডায়াবেটিসের কথা চিন্তা করে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। অস্থায়ী চুক্তিতে আজিমপুর গোরস্থানেই চাকরি করেন। কবরে মাটি দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ও দাফনের আগে গোসল করানোই এখন তার কাজ। সারাদিন গোরস্থানের দক্ষিণ গেট থেকে উত্তর গেট পর্যন্ত অনেক কবরের দেখাশুনা করেন। এতে হাঁটাহাঁটিও হয়ে যায়। এছাড়া, সকালে বাড়ি থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে কবরস্থানে আসতেও ব্যায়াম হয়ে যায়। কবরস্থানের কর্মরত মানুষগুলো ছাড়াও জালাল মিয়ার রয়েছে সুখী সংসার। পরিবারের সকলেই সরকারি চাকরিজীবী। ৫ ছেলেমেয়ের মধ্যে দুই ছেলে বিআরটিসির বাসের সরকারি ড্রাইভার। মেয়েদের ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রীও সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন।
জালাল মিয়া ছাড়াও এই কবরস্থানে ৪০ বছর ধরে চাকরি করেন অবদুল মান্নান মিয়া। কবর খোঁড়া ও কবরের চালি বাঁশ বিক্রি করা তার কাজ। প্রতিটি কবর খোঁড়ার জন্য সরকারি বিল ৪০ টাকা ছাড়াও নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশ পান তিনি। এছাড়া, বাঁশের চালি ও চাটাই বিক্রি করেও আলাদা আয় হয় তার। আজিমপুর কবরস্থানে যারা গোরখোদক পেশায় জড়িত তাদের মধ্যে আবদুল মান্নান মিয়া সবচেয়ে বয়স্ক। আব্দুল মান্নান ও জালাল মিয়ার মতো প্রায় ১৫ জন এই গোরখোদক পেশায় জড়িত। তারা সবাই মান্নান ও জালাল মিয়াকে সমিহ করে। ভেতরে মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিরা বেশির ভাগ মান্নান মিয়ার সঙ্গেই যোগাযোগ করেন। পরে তিনি অনেকের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে মরদেহ দাফন করতে ন্যূনতম ৮০০০ টাকা লাগে। সরকারি খরচ ছাড়াও বাঁশের চালি, গোসল, গোরখোদকের বকশিশ ও কবর দেখাশুনাকারীর বকশিশ মিলিয়ে এই পরিমাণ টাকা লাগে। আর এসব বাঁশের চালি, চাটাই ও অন্যান্য উপকরণ ভেতরের নির্ধারিত লোক বিক্রি করে। সিটি করপোরেশন থেকে কন্ট্রাক্ট নিয়ে তারা এখানে ব্যবসা করেন। এমনকি এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে অনেকে চাকরি করেন। তাদেরও নিয়োগ দেন এই কন্ট্রাক্টররা। এত খরচ যারা বহন করতে পারেন না বা টাকা একেবারে নেই তারা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে যোগাযোগ করেন। পরে তারা খরচ বহন করে। আইনুল ইসলাম নামের এক কর্মচারী বলেন, রাত ১১টার পর গোরস্থানে কোন মরদেহ দাফন হয় না। আমরা দুই শিফটে কাজ করি। দিনে যারা ডিউটি করে রাতে তারা করে না। গোরখোদক থেকে শুরু করে কবরের দেখাশুনা করা পর্যন্ত সব বিভাগেই প্রায় ১৫ জন করে দায়িত্ব পালন করে। তবে রাতের শিফটে এই সংখ্যাটা অনেক কম থাকে। এছাড়া, এখানে যারা চাকরি করে তারা সবাই বাইরে থাকে। কবরস্থানের মধ্যে কারো থাকার জায়গা নেই।
No comments