খোঁজ নেই মেরিনার by রোকনুজ্জামান পিয়াস
আফরোজা
বেগমের নেতৃত্বে লেবাননে গড়ে উঠেছে মানব পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
নিকটাত্মীয় নিয়ে গড়ে তোলা এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে
প্রতারিত করে যাচ্ছে চক্রটি। মেরিনা মেমি এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে পাড়ি
জমিয়েছিলেন লেবাননে। সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে
ফিরে আসতে আকুতি জানিয়েছিলেন স্বজনের কাছে। কিন্তু গত একমাস ধরে তার আর কোন
খোঁজ মিলছে না। আফরোজা বেগম ও স্বজনের কাছে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানালে
তারা উল্টো ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ অবস্থায় শঙ্কায় দিন কাটছে মেরিনার ১৫ বছরের
ছেলে আবদুল কাদেরের। তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই মেরিনা গিয়েছিলেন
লেবানন। এদিকে তার সন্ধান চেয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিভিন্ন
সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে আবেদন করেছেন মেরিনার স্বজনরা।
বাগেরহাট চিতলমারি উপজেলার চরচিংড়ি গ্রামের আলতাফ হোসেনের মেয়ে মেরিনা মেমি। জন্মের পর বাবাকে হারিয়েছেন। পরে বিয়ে হয় একই এলাকার শাহজাহানের সঙ্গে। ৭-৮ বছর আগে এক ছেলের জননী মেরিনার স্বামী শাহজাহানও মারা যান। এরপর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। একমাত্র ছেলে আবদুল কাদের তার নিকটাত্মীয়ের কাছে থেকে বড় হতে থাকে। নিজের আশ্রয় হয় ভাইদের সংসারে। কিন্তু সেখানেও বেশি দিন থাকতে পারেন নি। ভাইয়েরা গত দু’বছর আগে তার বিয়ে দেন একই গ্রামের ওমর আলীর সঙ্গে। যদিও ওমর আলীর স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি রয়েছে। দ্বিতীয় স্বামী ওমরই লেবানন থাকা তার ভাইপোর বউ আফরোজার সঙ্গে যোগসাজশে লেবানন পাঠায়। তার কথামতো ছেলের ভবিষ্যতের চিন্তা করে মেরিনা বিদেশ যেতে রাজি হন। এজন্য মানুষের বাসায় কাজ করে জমানো ৫০ হাজার টাকাও তাকে খরচ করতে হয়। মেরিনাকে বলা হয়েছিল লেবাননে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হবে। সেখানে তাকে মাসিক ১৬ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে। সেই আশ্বাসে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশনের মাধ্যমে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ৪ঠা জুলাই লেবাননের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন তিনি। দেশটিতে পৌঁছানোর পরদিন তিনি তার বোনের মেয়ে লাবনীর সঙ্গে কথা বলেন। এর ১৫ দিন পর আবারও তাকে ফোন করে কান্নাকাটি করেন। এ সময় মেরিনা তাকে জানিয়েছিলেন, গৃহকর্তা তাকে ঠিকমতো খাবার দিচ্ছে না। প্রতিদিনই মারধর করছে। গত একমাস আগেও একই কথা বলে কান্নাকাটি করেন। এখনও পর্যন্ত কোন বেতন তাকে দেয়া হয়নি। তিনি কান্নাকাটি করে দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান। এসব ঘটনা লেবাননে থাকা আফরোজাকে জানানোর পর উল্টো তিনি লাবনীকে হুমকি দেন। বলেন, ৩ বছরের আগে দেশে পাঠানো যাবে না। হুমকি দিয়ে বলেন, পারলে যেন লেবানন এসে তাকে দেশে নিয়ে যান। তার বর্তমান স্বামী ওমর আলীও এসব অভিযোগের পাত্তা দেন না। বরং তাকে জানালে উল্টো আফরোজার পক্ষ নেন। এ ব্যাপারে অভিযোগকারী মেরিনার বোনের মেয়ে চিলড্রেন উইমেন অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান লাবনী মজুমদার বলেন, লেবানন যাওয়ার পর তার খালা মেরিনা কয়েকবার ফোন করে কান্নাকাটি করেছে। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হচ্ছে জানিয়ে তিনি দেশে ফেরত আসার জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। একমাস আগে সর্বশেষ তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন তাকে অন্যত্র কাজের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার একমাত্র ছেলে একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে কাজ করে। সেও তার মায়ের জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছে। লাবনী মজুমদার বলেন, আফরোজা এবং তার স্বামীকে ফোন করলে তারা খারাপ ব্যবহার করে। হুমকি দেয়। ৩ বছরের আগে তাকে কোনভাবেই ফেরত পাঠাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ওমর আলী তাকে বলেছেন, আফরোজা তাকে জানিয়েছে ৬ মাসের আগে কোন বেতন দেয়া হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফরোজা, তার স্বামী আবদুল বাকী এবং দুই ভাগ্নি বর্তমানে লেবাননে রয়েছেন। তারাই গড়ে তুলেছেন মানব পাচারের সিন্ডিকেট। আফরোজা ১০-১২ বছর আগে লেবাননে যান। এরপর একেএকে সবাইকে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে মেরিনার বর্তমান স্বামী ওমর আলী বলেন, তার স্ত্রী ভাল আছে। তার সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেরিনার সঙ্গে কথা হয়নি, তবে ভাইয়ের ছেলের বউ আফরোজার সঙ্গে তার নিয়মিত কথা হয়। সে বলেছে মেরিনা ভাল আছে। তিনি আরও বলেন, আফরোজা তাকে এও বলেছে ৩ মাস পরে তাকে বেতন দিবে। তিনি আরও জানান, তার ভাইপো বাকি একবছর পরপরই দেশে আসেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশন এজেন্সির কর্মকর্তা জয়নাল জানান, তাদের এক আত্মীয় তার ভিসা পাঠিয়েছিল। আমরা শুধু প্রসেসিং করে দিয়েছি। তারপরও তিনি আফরোজার সঙ্গে কথা বলে ৩-৪ দিনের ভেতরে তার অবস্থা জানাবেন। জয়নাল জানান, তাকে লেবানন পাঠাতে প্রসেসিং করতে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গরিব বলে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আমরা নিজেরা আরও ২ হাজার টাকা দিয়ে তার কাজ করে দিয়েছি। এদিকে মেরিনার সন্ধান চেয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার কমিশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন মেরিনার ভাগ্নি লাবনী মজুমদার। আবেদনে তিনি সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জরুরিভাবে তাকে ফেরত আনতে আর্জি জানিয়েছেন।
বাগেরহাট চিতলমারি উপজেলার চরচিংড়ি গ্রামের আলতাফ হোসেনের মেয়ে মেরিনা মেমি। জন্মের পর বাবাকে হারিয়েছেন। পরে বিয়ে হয় একই এলাকার শাহজাহানের সঙ্গে। ৭-৮ বছর আগে এক ছেলের জননী মেরিনার স্বামী শাহজাহানও মারা যান। এরপর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। একমাত্র ছেলে আবদুল কাদের তার নিকটাত্মীয়ের কাছে থেকে বড় হতে থাকে। নিজের আশ্রয় হয় ভাইদের সংসারে। কিন্তু সেখানেও বেশি দিন থাকতে পারেন নি। ভাইয়েরা গত দু’বছর আগে তার বিয়ে দেন একই গ্রামের ওমর আলীর সঙ্গে। যদিও ওমর আলীর স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি রয়েছে। দ্বিতীয় স্বামী ওমরই লেবানন থাকা তার ভাইপোর বউ আফরোজার সঙ্গে যোগসাজশে লেবানন পাঠায়। তার কথামতো ছেলের ভবিষ্যতের চিন্তা করে মেরিনা বিদেশ যেতে রাজি হন। এজন্য মানুষের বাসায় কাজ করে জমানো ৫০ হাজার টাকাও তাকে খরচ করতে হয়। মেরিনাকে বলা হয়েছিল লেবাননে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হবে। সেখানে তাকে মাসিক ১৬ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে। সেই আশ্বাসে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশনের মাধ্যমে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ৪ঠা জুলাই লেবাননের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন তিনি। দেশটিতে পৌঁছানোর পরদিন তিনি তার বোনের মেয়ে লাবনীর সঙ্গে কথা বলেন। এর ১৫ দিন পর আবারও তাকে ফোন করে কান্নাকাটি করেন। এ সময় মেরিনা তাকে জানিয়েছিলেন, গৃহকর্তা তাকে ঠিকমতো খাবার দিচ্ছে না। প্রতিদিনই মারধর করছে। গত একমাস আগেও একই কথা বলে কান্নাকাটি করেন। এখনও পর্যন্ত কোন বেতন তাকে দেয়া হয়নি। তিনি কান্নাকাটি করে দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান। এসব ঘটনা লেবাননে থাকা আফরোজাকে জানানোর পর উল্টো তিনি লাবনীকে হুমকি দেন। বলেন, ৩ বছরের আগে দেশে পাঠানো যাবে না। হুমকি দিয়ে বলেন, পারলে যেন লেবানন এসে তাকে দেশে নিয়ে যান। তার বর্তমান স্বামী ওমর আলীও এসব অভিযোগের পাত্তা দেন না। বরং তাকে জানালে উল্টো আফরোজার পক্ষ নেন। এ ব্যাপারে অভিযোগকারী মেরিনার বোনের মেয়ে চিলড্রেন উইমেন অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান লাবনী মজুমদার বলেন, লেবানন যাওয়ার পর তার খালা মেরিনা কয়েকবার ফোন করে কান্নাকাটি করেছে। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হচ্ছে জানিয়ে তিনি দেশে ফেরত আসার জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। একমাস আগে সর্বশেষ তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন তাকে অন্যত্র কাজের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার একমাত্র ছেলে একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে কাজ করে। সেও তার মায়ের জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছে। লাবনী মজুমদার বলেন, আফরোজা এবং তার স্বামীকে ফোন করলে তারা খারাপ ব্যবহার করে। হুমকি দেয়। ৩ বছরের আগে তাকে কোনভাবেই ফেরত পাঠাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ওমর আলী তাকে বলেছেন, আফরোজা তাকে জানিয়েছে ৬ মাসের আগে কোন বেতন দেয়া হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফরোজা, তার স্বামী আবদুল বাকী এবং দুই ভাগ্নি বর্তমানে লেবাননে রয়েছেন। তারাই গড়ে তুলেছেন মানব পাচারের সিন্ডিকেট। আফরোজা ১০-১২ বছর আগে লেবাননে যান। এরপর একেএকে সবাইকে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে মেরিনার বর্তমান স্বামী ওমর আলী বলেন, তার স্ত্রী ভাল আছে। তার সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেরিনার সঙ্গে কথা হয়নি, তবে ভাইয়ের ছেলের বউ আফরোজার সঙ্গে তার নিয়মিত কথা হয়। সে বলেছে মেরিনা ভাল আছে। তিনি আরও বলেন, আফরোজা তাকে এও বলেছে ৩ মাস পরে তাকে বেতন দিবে। তিনি আরও জানান, তার ভাইপো বাকি একবছর পরপরই দেশে আসেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশন এজেন্সির কর্মকর্তা জয়নাল জানান, তাদের এক আত্মীয় তার ভিসা পাঠিয়েছিল। আমরা শুধু প্রসেসিং করে দিয়েছি। তারপরও তিনি আফরোজার সঙ্গে কথা বলে ৩-৪ দিনের ভেতরে তার অবস্থা জানাবেন। জয়নাল জানান, তাকে লেবানন পাঠাতে প্রসেসিং করতে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গরিব বলে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আমরা নিজেরা আরও ২ হাজার টাকা দিয়ে তার কাজ করে দিয়েছি। এদিকে মেরিনার সন্ধান চেয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার কমিশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন মেরিনার ভাগ্নি লাবনী মজুমদার। আবেদনে তিনি সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জরুরিভাবে তাকে ফেরত আনতে আর্জি জানিয়েছেন।
No comments