শাওনকে নিয়ে বিতর্ক
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পত্রপত্রিকার পাতা এখনও মুখর। সর্বশেষ তার চিকিৎসা, চিকিৎসাব্যয়, দাফন ইত্যাদি নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। পাশাপাশি নুহাশপল্লীকে ঘিরে দানা বাঁধছে স্বপ্ন এবং তাতে সমর্থনও পাচ্ছেন শাওন।
হুমায়ূন আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয় ২৪ জুলাই। পরদিন মর্মস্পর্শী ভাষায় শিরোনাম দিয়ে সেই খবর ছাপায় পত্রপত্রিকা। পাশাপাশি মরহুম সাহিতিক্যের চিকিৎসা, মৃত্যু, দাফন ইত্যাদি নিয়েও বিতর্ক জমাট বাঁধতে থাকে। ২৯ জুলাই আমার দেশ ছাপায় আবদুল হাই শিকদারের কলাম ‘হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু: ঘরে-বাইরে হাজার প্রশ্ন’। দীর্ঘ প্রবন্ধে ৪৩টি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন উত্থাপন করে লিখেন, ‘আমি মাত্র ৪৩টি প্রশ্ন উত্থাপন করলাম আজ। ভবিষ্যতে যদি বেঁচে থাকি তাহলে হাজার প্রশ্ন নিয়েই একটা লেখা লিখতে চাই’।
শিকদার-উত্থাপিত বিতর্কের আগুনে পরদিন ৩০ জুলাই ঘৃতাহুতি দেয় ইত্তেফাক। এদিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় তিন কলামে ছাপা হয় ‘হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসাখরচের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন’ শীর্ষক এক রিপোর্ট। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো শহীদুল ইসলামের রিপোর্টটির উপশিরোনাম আরো চাঞ্চল্যকর: ‘বেলভ্যুতে সাড়ে চার কোটি টাকা খরচের কথা বলা হলেও বাস্তবে এক ডলারও ব্যয় হয়নি’। এতে বলা হয়, ‘সরকারি চিকিৎসাসুবিধা (মেডিকেইড) নেয়ায় লেখকের পরিবারকে একটি ডলারও পরিশোধ করতে হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ এসব তথ্য জানতেন কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ, তথ্য গোপন করে চিকিৎসা সুবিধা নেয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন এই লেখক। ... বেলভ্যু হাসপাতালের হিসাব বিভাগে হুমায়ূন আহমেদের মেডিকেইড সুবিধা তথ্য এখনো সংরক্ষিত আছে।’ প্রতিবেদনে পরোক্ষভাবে এ জন্য হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন ও প্রকাশক মাজহারের দিকে সন্দেহের তীর ছোঁড়া হয়েছে। এ নিতর্ক সামনের দিনগুলোতে আরো প্রবল হবে- এটা বলাই যায।
হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন কোনোভাবেই মানুষের সন্দেহের ধোঁয়া থেকে বেরুতে পারছেন না, তার একটি প্রমাণ মেলে নয়া দিগন্তের ২৭ জুলাই সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘সোশ্যাল মিডিয়ার কাঠগড়ায় শাওন’ শীর্ষক রিপোর্টে। এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছেন শাওন। লাশ দাফন বিতর্কের পাশাপাশি হুমায়ূনের চিকিৎসাকালে তার অবহেলার কথা বলা হয়েছে। তবে নয়া দিগন্ত এ-ও বলেছে, যে ভাষায় এসব সমালোচনা করা হচ্ছে, সেটি কতটা ন্যায্য ও যৌক্তিক, সে প্রশ্ন উঠৈছে।
তবে যতোই সমালোচনা হোক, অন্তত একটা ইস্যুতে শাওনের পক্ষে কলম ধরেছেন কবি আবদুল হাই শিকদার। ২৭ জুলাই আমার দেশ-এর সাহিত্য সাময়িকীতে ‘হুমায়ূন তীর্থ, নুহাশ পল্লী, বাংলাদেশ ডট কম’ নিবন্ধে তিনি লিখেন, ‘নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের দাফন সব বিবেচনায়ই যথার্থ হয়েছে। হুমায়ূনের ছেলেমেয়ে ও ভাইবোনদের প্রতি সহানুভূতি রেখেও বলব, শাওনের সিদ্ধান্তই সঠিক। এই সঠিকত্ব বুঝতে আরেকটু সময় লাগবে।’ শিকদার তার সঠিকত্বের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আলোকে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের ও প্রিয় স্থান নুহাশ পল্লীকে গড়ে তোলার দারুণ একটা সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তার পরিবার যদি সহযোগিতা করে, তাহলে নুহাশ হয়ে উঠতে পারে ‘হুমায়ূন তীর্থ’; হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যরকম এক স্ট্র্যাটফোর্ড আপন অ্যাভন; হয়ে উঠতে পারে একটা খাঁটি বাংলাদেশী শান্তিনিকেতন।
একটা চমৎকার মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নুহাশ পল্লীকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে হুমায়ুন আহমেদ মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, উন্মুক্ত থিয়েটার হল, প্রেক্ষাগৃহ, অ্যান্টিক শপ, গবেষণা কেন্দ্র, এমনকি একটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত।
ঢাকা থেকে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য থাকবে চমৎকার কোচ সার্ভিস। থাকবে পেশাদার গাইড। এই পর্যটকরা গিয়ে দেখবেন সেখানে দিনরাত চলছে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। অমাবস্যার রাতে যেখানে মঞ্চস্থ হবে মিসির আলি বিষয়ক নাটক অথবা চলচ্চিত্র। পূর্ণিমার রাতে বিশেষ ব্যবস্থায় চলবে হিমুকে নিয়ে নানা কাণ্ড। শরতে কিংবা চৈত্রের চন্দ্রিমা রাতে হবে সঙ্গীতের আসর। এভাবে মাসের প্রতিটি দিন কবে কী হবে, তার আগাম রুটিন জানিয়ে দেয়া হবে সবাইকে। সেই মোতাবেক ট্যুরিস্টরা যাবেন নুহাশ পল্লীতে। আবার এমনও হতে পারে নুহাশ পল্লীর হুমায়ূন তীর্থের প্রতিটি দিন হুমায়ূনের এক একটি বাইয়ের নামে অথবা চরিত্রের নামে হবে। যেমন- শঙ্খলীন কারাগার দিবস, মিসির আলি দিবস ইত্যাদি। সেদিনের পল্লী সাজবে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ বা চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে। এতে পর্যটন ভ্যালুও বাড়বে অনেকখানি। ঢাকার কোলাহল থেকে ক্ষণিক নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য নানা বয়সের নরনারীরা ছুটে যাবে নুহাশ পল্লীর হুমায়ূন তীর্থে। নির্মল আনন্দের মধ্যে একটি দিন কাটিয়ে তারা ফিরে যাবেন কর্মজীবনে। বিদেশী ট্যুরিস্টরা ঢাকায় এসে বলবেন ‘হুমায়ূন তীর্থ নুহাশ পল্লী, বাংলাদেশ’ এ যাব।
একই সঙ্গে হুমায়ূনকে নিয়ে গবেষণার জন্য জমা হবেন গবেষকরা, গ্রন্থাগারে থাকবে হুমায়ূনের বই এবং হুমায়ূনকে নিয়ে লিখিত গ্রন্থাদি। বাংলাদেশের সমাজ জীবন ও সংস্কৃতির উপর গ্রন্থরাজি। অর্থাৎ হুমায়ূনকে ঘিরে শিক্ষা-সংস্কৃতির একটি পজিটিভ চর্চা যদি নুহাশ পল্লীতে শুরু হয়, তাহলে বাংলাদেশ যেমন পাবে ঘুরে দাঁড়ানো ও বেড়ানোর নতুন মাত্রা, তেমনি শান্তি পাবে হুমায়ূন আহমেদের আত্মাও।’
একই দিন অর্থাৎ ২৭ জুলাই প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে হুমায়ূন আহমেদের অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার ‘কিছু অলৌকিক ঘটনার বয়ান’ পাঠকের সামনে নতুন এক হুমায়ূনকে তুলে ধরবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আলীম আজিজ ও তৈমুর রেজা।
হুমায়ূন আহমেদের সাবেক স্ত্রী, যৌবনের সঙ্গিনী গুলতেকিন খান অবশেষে ঢাকায় হুমায়ূন স্মরণে অনুষ্ঠিত এক সভায় উপস্থিত হন ২৭ জুলাই। সেখানে বক্তাদের কথা শুনতে-শুনতে কেঁদে ফেলেন তিনি। পরদিন সব পত্রিকায় সেই খবর ও ছবি ছাপা হয়। কালের কণ্ঠের শিরোনামটি ছিল মর্মস্পর্শী: ‘গুলতিকন এলেন, কাঁদলেন, কথা বললেন না’।
একই দিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রতাপ চন্দ্রের রিপোর্টটি ছিল ব্যতিক্রমী। ‘একটি আড্ডা, একটি গান এবং অচেনা এক হুমায়ূন আহমেদ’ শিরোনামে এতে বলা হয়, এক শ্রেণীর লোকের প্রোপাগাণ্ডার খপ্পরে পড়ে লেখকের ভক্তদের অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন নাস্তিক। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণ হবে আমেরিকায় একটি ঘরোয়া আড্ডার ভিডিওচিত্র দেখলে, যেখানে হুমায়ূন পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইস্রাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে তার জীবন-মৃত্যু সবকিছু মহান আল্লাহর ওপর সঁপে দেন।
৩০ জুলাই পত্রপত্রিকায় হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের একটি বক্তব্য শাওনকে আবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দেয়। বাংলানিউজ পরিবেশিত খবরটি প্রথম পৃষ্ঠায় সিঙ্গল কলাম বক্স করে ছাপে নয়া দিগন্ত। এতে আয়েশা ফয়েজ বলেন, হুমায়ূনকে নুহাশ পল্লীতে দাফনে শাওনের পরিবার ছাড়া আর কেউ রাজি ছিল না।
সর্বশেষ আজ (মঙ্গলবার) হুমায়ূনকে নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজটি করে কালের কণ্ঠ। তারা হুমায়ূনের প্রথম সাক্ষাৎকারটি পুনর্মুদ্রণ করে। ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে ‘দশা’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়। সাক্ষাৎকারটি নেন শাকুর মজিদ। পাক্ষিক ‘দিশা’ এখন আর প্রকাশ হয় না। এটি প্রকাশিত হতো ঢাকার ধানমন্ডি থেকে। সম্পাদক ছিলেন শামসুন্নাহার জ্যোৎস্না। শাকুর মজিদ সেদিন শুধু হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকারই নেননি, কথা বলেছেন তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ এবং তৎকালীন স্ত্রী গুলতেকিনের সাথেও। সবই ছাপা হয়েছে কালের কণ্ঠে। দুর্লভ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ দাবি করতে পারে পত্রিকাটি।
কালের কণ্ঠ ২৬ জুলাই শীর্ষ সংবাদ করে রাজধানীর রাস্তাঘাটের দুর্দশা নিয়ে- ‘ঢাকা প্রায় অচল’। সাথে পূর্বাঞ্চলের পথঘাট, মীরপুর রোড ও গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি রোড নিয়ে তিনটি পার্শ্বরচনাও ছাপে তারা। তবে বিষয়টিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে দু’টি ছবি। একটির ক্যাপশন: ‘বঙ্গভবনসংলগ্ন রাস্তাটিতে এখন ধুলার সাম্রাজ্য’ এবং অপরটি ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে হা করা রাস্তা’। বঙ্গভবন হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন আর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের থীর্থস্থান। এ দু’জায়গার রাস্তার অবস্থা যখন এই, তখন সারা দেশের অবস্থা কী, তা বোঝার জন্য আর কিছু লাগে না।
৩০ জুলাই নয়া দিগন্তের শীর্ষ সংবাদটিও তাৎপর্যপূর্ণ। আশরাফুল ইসলামের করা সংবাদটির শিরোনাম ‘এক পরিবারের কাছে জিম্মি বিদ্যুৎ বিভাগ’। এতে বলা হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানের পরিবারের প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পেয়েছে, কিন্তু অর্থের অভাবে বড় তিনটি কেন্দ্রের কাজিই শুরু করতে পারেনি তারা। চুক্তি অনুযায়ী তাদের হাতে সময় আছে এক বছরেরও কম। ‘প্রভাবশালী পরিবার’ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না পিডিবি।
রিপোর্টটির বিষয়বস্তু ভালো, তবে লিখনশৈলী ও সম্পাদনা দুর্বল। ফলে রিপোর্ট পড়ে বড় তিনটি কেন্দ্রের কাজ শুরু করতে ব্যর্থতার কথা জানা গেলেও বাকী তিনটির কী অবস্তা, তা স্পষ্ট হয় না। শীর্ষ সংবাদ আরো সুলিখিত ও সুসম্পাদিত হবে- এটাই কাম্য।
‘এশিয়ার নোবেল’ নামে খ্যাত ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ২৬ জুলাই সব পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় খবরটি ছাপা হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল কালের কণ্ঠ ও নয়া দিগন্ত। কালের কণ্ঠে খবরটি প্রথম পৃষ্ঠায় জায়গা পায়নি, পেয়েছে শেষ পৃষ্ঠায়। আর নয়া দিগন্তই একমাত্র পত্রিকা, যারা সৈয়দা রিজওয়ানার ছবিটি ছেপেছে সাদা-কালোয় এবং তা-ও আধা কলামে। এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজটি করেছে সমকার। তারা দ্বিতীয় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে দুই কলাম বক্স করে খবরটি ছাপে। সঙ্গ তার প্রতিক্রিয়াও। পুরস্কারটির নাম নিয়েও একমত হতে পারেনি পত্রিকাগুলো। কেউ লিখেছে ‘ম্যাগসাইসাই’, কেউবা ‘ম্যাগসেসে’। বাংলাদেশের আরো অনেকে এ পুরস্কার পেয়েছেন। এতো দিন পরেও নামটি ঠিকভাবে লিখতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক নয় কি?
পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সাবেক রেলপথ মন্ত্রীর টাকার বস্তা কেলেঙ্কারি ইত্যাদি দুর্নীতির কেচ্ছাকাহিনীতে পাঠকের কান যখন ঝালাপালা, তখন প্রতিবেশী ভারতে ১৫ জন দুর্নীতিবাজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অপসারণ দাবিতে দিল্লীতে অনশন শুরু করেছে সমাজকর্মী আন্না হাজারের সমর্থকরা। ২৬ জুলাই এটিকে শীর্ষ সংবাদ করে ইত্তেফাক ঠিক কাজটি করেছে। তারা বলতে চেয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ জাগছে, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা নেই।
একই দিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় মাহবুব রনি ও গোলাম কিবরিয়া জীবনের রিপোর্ট ‘হারিয়ে যাচ্ছে রূপালী ইলিশ’ চিন্তাজাগানিয়া। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর নাব্যতা হ্রাস, পানিতে রাসায়নিক ও শিল্পবর্জ্যের মিশ্রণ, পদ্মা-মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা তৈরি ও বৃদ্ধি, ডুবো চর সৃষ্টি এবং কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণের ফলে ব্যাহত হচ্ছে ইলিশের প্রজনন’। রিপোর্টে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ইলিশের বংশবিস্তার ও এর সংরক্ষণে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার- এ তিন দেশের উদ্যোগে আঞ্চলিক ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র গঠন করা জরুরি। এ দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ইলিশ রক্ষার অন্য কোনো উপায় নেই’। চমৎকার রিপোর্টটিল জন্য সাধুবাদ পেতে পারে উত্তেফাক।
আমার দেশ ২৭ জুলাই শীর্ষ সংবাদ করে লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতবিনিময় অনুষ্ঠানকে। এতে প্রধানমন্ত্রী দু’টি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কথা বলেন। এক. বিশ্বব্যাংক পার্সেন্টেজ খায়, দুই. পদত্যাগী মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। অন্য পত্রিকাগুলো এদিন খবরটি তেমন গুরুত্ব দিয়ে না- ছাপলেও পর দিন থেকে এর প্রতিক্রিয়া ছাপায়। যেমন প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেন ‘দেশপ্রেমিকে পদোন্নতি’। একই দিন প্রথম আলো পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দু’রকম কথা নিয়ে তিন কলামে খবর ছাপায় এবং শীর্ষ সংবাদ করে ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না’।
২৭ জুলাই কালের কণ্ঠে মাছের অগ্নিমূল্য নিয়ে রিপোর্টটি ছিল প্রশংসনীয়। ‘রপ্তানি ও পাচারের কারণে মাছের দামে আগুন’ শীর্ষক রিপোর্টটি করেছেন রাজীব আহমেদ। বাছবিচার না করে লাগামহীন রফতানির ফল যে সবসময় ভালো হয় না, একথাটি স্পষ্ট ভাষায় বলার জন্য কালের কণ্ঠ পাঠকের সাধুবাদ পাবে। একই দিন তাদের শীর্ষ সংবাদ ‘খাবার মানেই বিষ’ ছিল অসাধারণ। রিপোর্টটি করেছেন তৌফিক মারুফ।
৩০ জুলাই ইত্তেফাকের শীর্ষ সংবাদ ‘জাল টাকার ছড়াছড়ি’ ছিল উল্লেখযোগ্য। আবুল খায়েরের করা রিপোর্ট পড়ে জানা যায়, টাকা জাল করা খবুই সহজ। একটি কম্পিউটার, দু’টি প্রিন্টার ও উন্নতমানের কাগজ হলেই হলো।
একই দিন ইত্তেফাকের শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে ভারতের একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও বর্তমানে সংসদ সদস্য চিরঞ্চিতের একটি বক্তব্য: ‘তরুণীরা খোলামেলা পোশাক বর্জন করলে ইভটিজিং কমে যাবে’। এ ধরনের কথা ‘মুসলমান মৌলবাদীরা’ বলেন, এখন অমুসলিমরাও বলতে শুরু করেছেন! এ ব্যাপারে প্রগতিশীলদের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষায় থাকতে পারেন পাঠক।
কালের কণ্ঠ ২৯ জুলাই শীর্ষ সংবাদ করে ‘নানা চাপে সরকার’। আবদুল্লাহ আল ফারুক ও পার্থ প্রতিম ভট্টাচার্যের রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মৃতপ্রায় শেয়ারবাজর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা, বিনিয়োগ কমে যাওয়া, নগরে যানজট ইত্যাদি অনেক সমস্যার জালে আটকা পড়েছে সরকার।
একই দিন প্রায় একই কথা উঠে এসেছে নয়া দিগন্তে। এদিন জাকির হোসেনের লিটনের রিপোর্ট ছিল ‘দিশেহারা আওয়ামী লীগ: পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা কৌশল’। এর পাশেই ছাপা হয় বিরোধী দলের খবর- ‘প্রস্তুতি ছয় মাস: ২০১৩ জুড়ে আন্দোলন’। মঈন উদ্দিন খানের রিপোর্টটি পড়ে বোঝা যায়, বিরোধী দলকে নিয়ে সরকারের এ মুহূর্তে ভাবনার কিছু নেই।
তবে বিরোধী দলকে নিয়ে ভাবনার কিছু না থাকলেও সরকারের নিজেকে নিয়ে যে তীব্র মাথাব্যথা আছে বা হতে পারে, তা বোঝা যায় ২৯ জুলাই ইত্তেফাকের শীর্ষ সংবাদ দেখে। আলাউদ্দিন চৌধুরীর করা সংবাদটির শিরোনাম ‘উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন সংকটের আশঙ্কা: দাতাদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন’।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল, বাসভাড়া, বাসাভাড়া, ওষুধ এবং খাদ্যপণ্য- সবকিছুর দামই কেবল বেড়ে চলেছে। এর লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই। ফলে মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। তাদের এ দুঃখকথা ফুটে উঠেছে ৩০ জুলাই আমার দেশ-এর শীর্ষ সংবাদ ‘মধ্যবিত্তের সংসার আর চলছেনা’-তে। রিপোর্টটি করেছেন কাজী জেবেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালে অন্তবর্তী সরকার গঠন এবং তাতে বিএনপিও যোগ দিতে বলে জানিয়েছেন বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। আজ মঙ্গলবার প্রায়-সব পত্রিকা বিএনপির প্রতিক্রিয়াসহ একে শীর্ষ সংবাদ করলেও ব্যতিক্রম ছিল ইত্তেফাক। তারা শেষ পৃষ্ঠায় সিঙ্গল কলামে ছাপে খবরটি।
শিকদার-উত্থাপিত বিতর্কের আগুনে পরদিন ৩০ জুলাই ঘৃতাহুতি দেয় ইত্তেফাক। এদিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় তিন কলামে ছাপা হয় ‘হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসাখরচের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন’ শীর্ষক এক রিপোর্ট। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো শহীদুল ইসলামের রিপোর্টটির উপশিরোনাম আরো চাঞ্চল্যকর: ‘বেলভ্যুতে সাড়ে চার কোটি টাকা খরচের কথা বলা হলেও বাস্তবে এক ডলারও ব্যয় হয়নি’। এতে বলা হয়, ‘সরকারি চিকিৎসাসুবিধা (মেডিকেইড) নেয়ায় লেখকের পরিবারকে একটি ডলারও পরিশোধ করতে হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ এসব তথ্য জানতেন কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ, তথ্য গোপন করে চিকিৎসা সুবিধা নেয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন এই লেখক। ... বেলভ্যু হাসপাতালের হিসাব বিভাগে হুমায়ূন আহমেদের মেডিকেইড সুবিধা তথ্য এখনো সংরক্ষিত আছে।’ প্রতিবেদনে পরোক্ষভাবে এ জন্য হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন ও প্রকাশক মাজহারের দিকে সন্দেহের তীর ছোঁড়া হয়েছে। এ নিতর্ক সামনের দিনগুলোতে আরো প্রবল হবে- এটা বলাই যায।
হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন কোনোভাবেই মানুষের সন্দেহের ধোঁয়া থেকে বেরুতে পারছেন না, তার একটি প্রমাণ মেলে নয়া দিগন্তের ২৭ জুলাই সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘সোশ্যাল মিডিয়ার কাঠগড়ায় শাওন’ শীর্ষক রিপোর্টে। এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছেন শাওন। লাশ দাফন বিতর্কের পাশাপাশি হুমায়ূনের চিকিৎসাকালে তার অবহেলার কথা বলা হয়েছে। তবে নয়া দিগন্ত এ-ও বলেছে, যে ভাষায় এসব সমালোচনা করা হচ্ছে, সেটি কতটা ন্যায্য ও যৌক্তিক, সে প্রশ্ন উঠৈছে।
তবে যতোই সমালোচনা হোক, অন্তত একটা ইস্যুতে শাওনের পক্ষে কলম ধরেছেন কবি আবদুল হাই শিকদার। ২৭ জুলাই আমার দেশ-এর সাহিত্য সাময়িকীতে ‘হুমায়ূন তীর্থ, নুহাশ পল্লী, বাংলাদেশ ডট কম’ নিবন্ধে তিনি লিখেন, ‘নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের দাফন সব বিবেচনায়ই যথার্থ হয়েছে। হুমায়ূনের ছেলেমেয়ে ও ভাইবোনদের প্রতি সহানুভূতি রেখেও বলব, শাওনের সিদ্ধান্তই সঠিক। এই সঠিকত্ব বুঝতে আরেকটু সময় লাগবে।’ শিকদার তার সঠিকত্বের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আলোকে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের ও প্রিয় স্থান নুহাশ পল্লীকে গড়ে তোলার দারুণ একটা সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তার পরিবার যদি সহযোগিতা করে, তাহলে নুহাশ হয়ে উঠতে পারে ‘হুমায়ূন তীর্থ’; হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যরকম এক স্ট্র্যাটফোর্ড আপন অ্যাভন; হয়ে উঠতে পারে একটা খাঁটি বাংলাদেশী শান্তিনিকেতন।
একটা চমৎকার মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নুহাশ পল্লীকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে হুমায়ুন আহমেদ মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, উন্মুক্ত থিয়েটার হল, প্রেক্ষাগৃহ, অ্যান্টিক শপ, গবেষণা কেন্দ্র, এমনকি একটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত।
ঢাকা থেকে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য থাকবে চমৎকার কোচ সার্ভিস। থাকবে পেশাদার গাইড। এই পর্যটকরা গিয়ে দেখবেন সেখানে দিনরাত চলছে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। অমাবস্যার রাতে যেখানে মঞ্চস্থ হবে মিসির আলি বিষয়ক নাটক অথবা চলচ্চিত্র। পূর্ণিমার রাতে বিশেষ ব্যবস্থায় চলবে হিমুকে নিয়ে নানা কাণ্ড। শরতে কিংবা চৈত্রের চন্দ্রিমা রাতে হবে সঙ্গীতের আসর। এভাবে মাসের প্রতিটি দিন কবে কী হবে, তার আগাম রুটিন জানিয়ে দেয়া হবে সবাইকে। সেই মোতাবেক ট্যুরিস্টরা যাবেন নুহাশ পল্লীতে। আবার এমনও হতে পারে নুহাশ পল্লীর হুমায়ূন তীর্থের প্রতিটি দিন হুমায়ূনের এক একটি বাইয়ের নামে অথবা চরিত্রের নামে হবে। যেমন- শঙ্খলীন কারাগার দিবস, মিসির আলি দিবস ইত্যাদি। সেদিনের পল্লী সাজবে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ বা চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে। এতে পর্যটন ভ্যালুও বাড়বে অনেকখানি। ঢাকার কোলাহল থেকে ক্ষণিক নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য নানা বয়সের নরনারীরা ছুটে যাবে নুহাশ পল্লীর হুমায়ূন তীর্থে। নির্মল আনন্দের মধ্যে একটি দিন কাটিয়ে তারা ফিরে যাবেন কর্মজীবনে। বিদেশী ট্যুরিস্টরা ঢাকায় এসে বলবেন ‘হুমায়ূন তীর্থ নুহাশ পল্লী, বাংলাদেশ’ এ যাব।
একই সঙ্গে হুমায়ূনকে নিয়ে গবেষণার জন্য জমা হবেন গবেষকরা, গ্রন্থাগারে থাকবে হুমায়ূনের বই এবং হুমায়ূনকে নিয়ে লিখিত গ্রন্থাদি। বাংলাদেশের সমাজ জীবন ও সংস্কৃতির উপর গ্রন্থরাজি। অর্থাৎ হুমায়ূনকে ঘিরে শিক্ষা-সংস্কৃতির একটি পজিটিভ চর্চা যদি নুহাশ পল্লীতে শুরু হয়, তাহলে বাংলাদেশ যেমন পাবে ঘুরে দাঁড়ানো ও বেড়ানোর নতুন মাত্রা, তেমনি শান্তি পাবে হুমায়ূন আহমেদের আত্মাও।’
একই দিন অর্থাৎ ২৭ জুলাই প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে হুমায়ূন আহমেদের অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার ‘কিছু অলৌকিক ঘটনার বয়ান’ পাঠকের সামনে নতুন এক হুমায়ূনকে তুলে ধরবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আলীম আজিজ ও তৈমুর রেজা।
হুমায়ূন আহমেদের সাবেক স্ত্রী, যৌবনের সঙ্গিনী গুলতেকিন খান অবশেষে ঢাকায় হুমায়ূন স্মরণে অনুষ্ঠিত এক সভায় উপস্থিত হন ২৭ জুলাই। সেখানে বক্তাদের কথা শুনতে-শুনতে কেঁদে ফেলেন তিনি। পরদিন সব পত্রিকায় সেই খবর ও ছবি ছাপা হয়। কালের কণ্ঠের শিরোনামটি ছিল মর্মস্পর্শী: ‘গুলতিকন এলেন, কাঁদলেন, কথা বললেন না’।
একই দিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রতাপ চন্দ্রের রিপোর্টটি ছিল ব্যতিক্রমী। ‘একটি আড্ডা, একটি গান এবং অচেনা এক হুমায়ূন আহমেদ’ শিরোনামে এতে বলা হয়, এক শ্রেণীর লোকের প্রোপাগাণ্ডার খপ্পরে পড়ে লেখকের ভক্তদের অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন নাস্তিক। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণ হবে আমেরিকায় একটি ঘরোয়া আড্ডার ভিডিওচিত্র দেখলে, যেখানে হুমায়ূন পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইস্রাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে তার জীবন-মৃত্যু সবকিছু মহান আল্লাহর ওপর সঁপে দেন।
৩০ জুলাই পত্রপত্রিকায় হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের একটি বক্তব্য শাওনকে আবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দেয়। বাংলানিউজ পরিবেশিত খবরটি প্রথম পৃষ্ঠায় সিঙ্গল কলাম বক্স করে ছাপে নয়া দিগন্ত। এতে আয়েশা ফয়েজ বলেন, হুমায়ূনকে নুহাশ পল্লীতে দাফনে শাওনের পরিবার ছাড়া আর কেউ রাজি ছিল না।
সর্বশেষ আজ (মঙ্গলবার) হুমায়ূনকে নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজটি করে কালের কণ্ঠ। তারা হুমায়ূনের প্রথম সাক্ষাৎকারটি পুনর্মুদ্রণ করে। ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে ‘দশা’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়। সাক্ষাৎকারটি নেন শাকুর মজিদ। পাক্ষিক ‘দিশা’ এখন আর প্রকাশ হয় না। এটি প্রকাশিত হতো ঢাকার ধানমন্ডি থেকে। সম্পাদক ছিলেন শামসুন্নাহার জ্যোৎস্না। শাকুর মজিদ সেদিন শুধু হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকারই নেননি, কথা বলেছেন তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ এবং তৎকালীন স্ত্রী গুলতেকিনের সাথেও। সবই ছাপা হয়েছে কালের কণ্ঠে। দুর্লভ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ দাবি করতে পারে পত্রিকাটি।
কালের কণ্ঠ ২৬ জুলাই শীর্ষ সংবাদ করে রাজধানীর রাস্তাঘাটের দুর্দশা নিয়ে- ‘ঢাকা প্রায় অচল’। সাথে পূর্বাঞ্চলের পথঘাট, মীরপুর রোড ও গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি রোড নিয়ে তিনটি পার্শ্বরচনাও ছাপে তারা। তবে বিষয়টিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে দু’টি ছবি। একটির ক্যাপশন: ‘বঙ্গভবনসংলগ্ন রাস্তাটিতে এখন ধুলার সাম্রাজ্য’ এবং অপরটি ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে হা করা রাস্তা’। বঙ্গভবন হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন আর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের থীর্থস্থান। এ দু’জায়গার রাস্তার অবস্থা যখন এই, তখন সারা দেশের অবস্থা কী, তা বোঝার জন্য আর কিছু লাগে না।
৩০ জুলাই নয়া দিগন্তের শীর্ষ সংবাদটিও তাৎপর্যপূর্ণ। আশরাফুল ইসলামের করা সংবাদটির শিরোনাম ‘এক পরিবারের কাছে জিম্মি বিদ্যুৎ বিভাগ’। এতে বলা হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানের পরিবারের প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পেয়েছে, কিন্তু অর্থের অভাবে বড় তিনটি কেন্দ্রের কাজিই শুরু করতে পারেনি তারা। চুক্তি অনুযায়ী তাদের হাতে সময় আছে এক বছরেরও কম। ‘প্রভাবশালী পরিবার’ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না পিডিবি।
রিপোর্টটির বিষয়বস্তু ভালো, তবে লিখনশৈলী ও সম্পাদনা দুর্বল। ফলে রিপোর্ট পড়ে বড় তিনটি কেন্দ্রের কাজ শুরু করতে ব্যর্থতার কথা জানা গেলেও বাকী তিনটির কী অবস্তা, তা স্পষ্ট হয় না। শীর্ষ সংবাদ আরো সুলিখিত ও সুসম্পাদিত হবে- এটাই কাম্য।
‘এশিয়ার নোবেল’ নামে খ্যাত ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ২৬ জুলাই সব পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় খবরটি ছাপা হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল কালের কণ্ঠ ও নয়া দিগন্ত। কালের কণ্ঠে খবরটি প্রথম পৃষ্ঠায় জায়গা পায়নি, পেয়েছে শেষ পৃষ্ঠায়। আর নয়া দিগন্তই একমাত্র পত্রিকা, যারা সৈয়দা রিজওয়ানার ছবিটি ছেপেছে সাদা-কালোয় এবং তা-ও আধা কলামে। এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজটি করেছে সমকার। তারা দ্বিতীয় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে দুই কলাম বক্স করে খবরটি ছাপে। সঙ্গ তার প্রতিক্রিয়াও। পুরস্কারটির নাম নিয়েও একমত হতে পারেনি পত্রিকাগুলো। কেউ লিখেছে ‘ম্যাগসাইসাই’, কেউবা ‘ম্যাগসেসে’। বাংলাদেশের আরো অনেকে এ পুরস্কার পেয়েছেন। এতো দিন পরেও নামটি ঠিকভাবে লিখতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক নয় কি?
পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সাবেক রেলপথ মন্ত্রীর টাকার বস্তা কেলেঙ্কারি ইত্যাদি দুর্নীতির কেচ্ছাকাহিনীতে পাঠকের কান যখন ঝালাপালা, তখন প্রতিবেশী ভারতে ১৫ জন দুর্নীতিবাজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অপসারণ দাবিতে দিল্লীতে অনশন শুরু করেছে সমাজকর্মী আন্না হাজারের সমর্থকরা। ২৬ জুলাই এটিকে শীর্ষ সংবাদ করে ইত্তেফাক ঠিক কাজটি করেছে। তারা বলতে চেয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ জাগছে, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা নেই।
একই দিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় মাহবুব রনি ও গোলাম কিবরিয়া জীবনের রিপোর্ট ‘হারিয়ে যাচ্ছে রূপালী ইলিশ’ চিন্তাজাগানিয়া। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর নাব্যতা হ্রাস, পানিতে রাসায়নিক ও শিল্পবর্জ্যের মিশ্রণ, পদ্মা-মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা তৈরি ও বৃদ্ধি, ডুবো চর সৃষ্টি এবং কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণের ফলে ব্যাহত হচ্ছে ইলিশের প্রজনন’। রিপোর্টে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ইলিশের বংশবিস্তার ও এর সংরক্ষণে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার- এ তিন দেশের উদ্যোগে আঞ্চলিক ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র গঠন করা জরুরি। এ দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ইলিশ রক্ষার অন্য কোনো উপায় নেই’। চমৎকার রিপোর্টটিল জন্য সাধুবাদ পেতে পারে উত্তেফাক।
আমার দেশ ২৭ জুলাই শীর্ষ সংবাদ করে লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতবিনিময় অনুষ্ঠানকে। এতে প্রধানমন্ত্রী দু’টি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কথা বলেন। এক. বিশ্বব্যাংক পার্সেন্টেজ খায়, দুই. পদত্যাগী মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। অন্য পত্রিকাগুলো এদিন খবরটি তেমন গুরুত্ব দিয়ে না- ছাপলেও পর দিন থেকে এর প্রতিক্রিয়া ছাপায়। যেমন প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেন ‘দেশপ্রেমিকে পদোন্নতি’। একই দিন প্রথম আলো পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দু’রকম কথা নিয়ে তিন কলামে খবর ছাপায় এবং শীর্ষ সংবাদ করে ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না’।
২৭ জুলাই কালের কণ্ঠে মাছের অগ্নিমূল্য নিয়ে রিপোর্টটি ছিল প্রশংসনীয়। ‘রপ্তানি ও পাচারের কারণে মাছের দামে আগুন’ শীর্ষক রিপোর্টটি করেছেন রাজীব আহমেদ। বাছবিচার না করে লাগামহীন রফতানির ফল যে সবসময় ভালো হয় না, একথাটি স্পষ্ট ভাষায় বলার জন্য কালের কণ্ঠ পাঠকের সাধুবাদ পাবে। একই দিন তাদের শীর্ষ সংবাদ ‘খাবার মানেই বিষ’ ছিল অসাধারণ। রিপোর্টটি করেছেন তৌফিক মারুফ।
৩০ জুলাই ইত্তেফাকের শীর্ষ সংবাদ ‘জাল টাকার ছড়াছড়ি’ ছিল উল্লেখযোগ্য। আবুল খায়েরের করা রিপোর্ট পড়ে জানা যায়, টাকা জাল করা খবুই সহজ। একটি কম্পিউটার, দু’টি প্রিন্টার ও উন্নতমানের কাগজ হলেই হলো।
একই দিন ইত্তেফাকের শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে ভারতের একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও বর্তমানে সংসদ সদস্য চিরঞ্চিতের একটি বক্তব্য: ‘তরুণীরা খোলামেলা পোশাক বর্জন করলে ইভটিজিং কমে যাবে’। এ ধরনের কথা ‘মুসলমান মৌলবাদীরা’ বলেন, এখন অমুসলিমরাও বলতে শুরু করেছেন! এ ব্যাপারে প্রগতিশীলদের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষায় থাকতে পারেন পাঠক।
কালের কণ্ঠ ২৯ জুলাই শীর্ষ সংবাদ করে ‘নানা চাপে সরকার’। আবদুল্লাহ আল ফারুক ও পার্থ প্রতিম ভট্টাচার্যের রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মৃতপ্রায় শেয়ারবাজর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা, বিনিয়োগ কমে যাওয়া, নগরে যানজট ইত্যাদি অনেক সমস্যার জালে আটকা পড়েছে সরকার।
একই দিন প্রায় একই কথা উঠে এসেছে নয়া দিগন্তে। এদিন জাকির হোসেনের লিটনের রিপোর্ট ছিল ‘দিশেহারা আওয়ামী লীগ: পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা কৌশল’। এর পাশেই ছাপা হয় বিরোধী দলের খবর- ‘প্রস্তুতি ছয় মাস: ২০১৩ জুড়ে আন্দোলন’। মঈন উদ্দিন খানের রিপোর্টটি পড়ে বোঝা যায়, বিরোধী দলকে নিয়ে সরকারের এ মুহূর্তে ভাবনার কিছু নেই।
তবে বিরোধী দলকে নিয়ে ভাবনার কিছু না থাকলেও সরকারের নিজেকে নিয়ে যে তীব্র মাথাব্যথা আছে বা হতে পারে, তা বোঝা যায় ২৯ জুলাই ইত্তেফাকের শীর্ষ সংবাদ দেখে। আলাউদ্দিন চৌধুরীর করা সংবাদটির শিরোনাম ‘উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন সংকটের আশঙ্কা: দাতাদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন’।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল, বাসভাড়া, বাসাভাড়া, ওষুধ এবং খাদ্যপণ্য- সবকিছুর দামই কেবল বেড়ে চলেছে। এর লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই। ফলে মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। তাদের এ দুঃখকথা ফুটে উঠেছে ৩০ জুলাই আমার দেশ-এর শীর্ষ সংবাদ ‘মধ্যবিত্তের সংসার আর চলছেনা’-তে। রিপোর্টটি করেছেন কাজী জেবেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালে অন্তবর্তী সরকার গঠন এবং তাতে বিএনপিও যোগ দিতে বলে জানিয়েছেন বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। আজ মঙ্গলবার প্রায়-সব পত্রিকা বিএনপির প্রতিক্রিয়াসহ একে শীর্ষ সংবাদ করলেও ব্যতিক্রম ছিল ইত্তেফাক। তারা শেষ পৃষ্ঠায় সিঙ্গল কলামে ছাপে খবরটি।
No comments