এ যেন স্বর্গোদ্যান
মাটি ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশছোঁয়া সব স্থাপনা। এক টুকরো ‘নদী’ বয়ে গেছে মাঝখান দিয়ে। চারপাশে বাহারি রঙের ফোয়ারা। আলোকরশ্মির ঝলমলে আলো ঢেউ তুলছে গোটা হাইজিংশা স্কয়ারে। এটা কি কোনো স্বর্গোদ্যান?
১৬তম এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে হাজারো দর্শনার্থী আর অতিথির মুখে ছিল এমনই বিস্ময়। ‘স্বর্গোদ্যানের চেয়েও বেশি কিছু’—তখনই দেওয়া যাচ্ছিল এই রায়।
সন্ধ্যার আলো-আঁধারি সেটিকেও কম মনে করাচ্ছিল। এমন অভিনবত্ব নিয়ে এশিয়ান গেমস যে আগে শুরু হয়নি! এক পাশে গ্যালারি। বাকি অংশ উন্মুক্ত। তারই ফাঁকে ফাঁকে কৃত্রিম হ্রদ। প্রায় ৬০ তলা উঁচু টাওয়ারের শরীরের আতশবাজির শব্দ আর আলোর ঝলকানি যখন শুরু হলো, গোটা গুয়াংজুর আকাশই লালে লাল। হ্রদের মধ্যে উঁচু ছয়টি টাওয়ারে ততক্ষণে শোভা পাচ্ছে ৪৫ দেশের ক্রীড়াযজ্ঞ এশিয়াডের লোগো।
কখনো নীল, কখনো হলুদ, কখনো সাদা—ক্ষণে ক্ষণে গোটা পরিবেশটা বদলেছে। আকাশ থেকে গান গাইতে গাইতে নামলেন স্থানীয় নামী শিল্পী শিং জ্যাং। তাঁর চারপাশে কৃত্রিম জলের ফোয়ারা ছুটল। মুহূর্তের মধ্যে গোটা স্কয়ার থেকে পানি উধাও! বিশাল এক মাঠে রূপান্তরিত হাইজিংশা স্কয়ারের রং তখন গাঢ় লাল। কয়েক শ ছেলেমেয়ের ডিসপ্লে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখল এই সন্ধ্যার দর্শক-অতিথিদের। চোখের পলক ফেলারও সুযোগ মিলল না কারও। একটার পর একটা চোখ ধাঁধানো সব আয়োজন নিয়ে কালকের সন্ধ্যা মাতিয়ে রাখল চীনের অন্যতম বড় এই শহর।
তারই কিছু নমুনা—সমুদ্রে গর্জন উঠেছে, মাছ ধরা জেলের কী অবস্থা ফুটিয়ে তুলতে আস্ত জাহাজই বানিয়ে ফেলা হলো! ঝড়ের প্রতিকূলে সেই জাহাজের লড়াই গোটা আয়োজন করল আরও বর্ণাঢ্য। জনতাকে মনে করিয়ে দিল, কুংফু-কারাতে আর ব্রুস লির ছবির জন্য পরিচিত ছিল যে চীন, সেই দেশটিই প্রতিকূলতাকে জয় করে বহু আগেই বিশ্বের ক্রীড়াসরে সমীহ জাগিয়েছে। মহাদেশীয় ক্রীড়াযজ্ঞ তো তার কাছে বড় কোনো ব্যাপারই নয়।
সিনেমা দৃশ্যে নায়ক-নায়িকার মতো শূন্যে ভেসে চলা, তারই ছন্দে খুদে সাঁতারুদের সিঙ্ক্রোনাইজড সাঁতার, কৃত্রিম হ্রদে স্পিড বোর্ড চালানো, একসঙ্গে এক শ পারফর্মারের মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া, ফুলের ওপর ঢেউ খাওয়া, চিল হলে উড়ে বেড়ানো—কী ছিল না কালকের দীর্ঘ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। অনন্য, অসাধারণ!
মানুষ এমন সৃজনশীল চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এটা শুধুই একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নয়, চীন যেন আবার নিজেদের সৃজনশীলতার বার্তাই পাঠাল। গ্যালারির বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে থাকল তারই স্বীকৃতি। এশিয়ান অলিম্পিক কমিটির সভাপতি আহমেদ আল সাবাহর কণ্ঠে চীনের অকুণ্ঠ প্রশংসা শোনা তাই স্বাভাবিকই, ‘সাত বছরের প্রস্তুতির ফসল এটা। অভিনন্দন চীন।’
২০০৮ সালে অলিম্পিক গেমসের সফল আয়োজক বেইজিংও পেয়েছিল অকুণ্ঠ প্রশংসা। ১৯৯০ সালে এশিয়ান গেমসের আয়োজক ছিল চীনের রাজধানী। এবারই প্রথম গেমসের ৫৯ বছরের ইতিহাসে রাজধানীর বাইরে দ্বিতীয় শহর হিসেবে এশিয়ান গেমসের আয়োজন করছে গুয়াংজু। একই দেশের দুই শহরে ২০ বছরের ব্যবধানে দুবার এশিয়ান গেমস—চীন বলেই সম্ভব!
শহরজুড়ে থাকা উঁচু সব ভবনই তার সাক্ষ্য দেয় নীরবে। বাংলাদেশের মতো অপরিকল্পিত আর রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে এই ভবনগুলো হয়নি! পরিকল্পনার ছাপ সবখানেই। এক মিডিয়া-পল্লি আর মিডিয়া সেন্টারই করা হয়েছে গোটা বিশেষ নতুন ভবনে। বেশির ভাগই ১০ তলার ওপরে! প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের গেমস বাজেট তো এমনিতেই হয়নি!
গেমস-পল্লিতে একটা ভবনের গায়ে লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে। বাংলাদেশের পতাকা ঝুলিয়ে দেওয়ার অর্থ, এই ভবনে শুধু বাংলাদেশের অ্যাথলেটরাই থাকছে। ৪৫টি দেশের জন্যই আলাদা অট্টালিকা। ১০ হাজারের বেশি ক্রীড়াবিদের ১৬ দিনের এ সফরটা মাঠের বাইরে সুখকর করে তুলতে এর চেয়ে বেশি কিছু করার থাকতে পারে না।
সত্যিই এ যেন স্বর্গোদ্যান! এখানকার বিখ্যাত লাল ফুল কাপকায় আচ্ছাদিত গোটা শহর তো স্বর্গোদ্যানই হবে! সাড়ে তিন ঘণ্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ ক্ষণে আতশবাজির ঝলকানি আরও একবার। গুয়াংজুকে আসুন করতালিতে অভিনন্দন জানাই।
১৬তম এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে হাজারো দর্শনার্থী আর অতিথির মুখে ছিল এমনই বিস্ময়। ‘স্বর্গোদ্যানের চেয়েও বেশি কিছু’—তখনই দেওয়া যাচ্ছিল এই রায়।
সন্ধ্যার আলো-আঁধারি সেটিকেও কম মনে করাচ্ছিল। এমন অভিনবত্ব নিয়ে এশিয়ান গেমস যে আগে শুরু হয়নি! এক পাশে গ্যালারি। বাকি অংশ উন্মুক্ত। তারই ফাঁকে ফাঁকে কৃত্রিম হ্রদ। প্রায় ৬০ তলা উঁচু টাওয়ারের শরীরের আতশবাজির শব্দ আর আলোর ঝলকানি যখন শুরু হলো, গোটা গুয়াংজুর আকাশই লালে লাল। হ্রদের মধ্যে উঁচু ছয়টি টাওয়ারে ততক্ষণে শোভা পাচ্ছে ৪৫ দেশের ক্রীড়াযজ্ঞ এশিয়াডের লোগো।
কখনো নীল, কখনো হলুদ, কখনো সাদা—ক্ষণে ক্ষণে গোটা পরিবেশটা বদলেছে। আকাশ থেকে গান গাইতে গাইতে নামলেন স্থানীয় নামী শিল্পী শিং জ্যাং। তাঁর চারপাশে কৃত্রিম জলের ফোয়ারা ছুটল। মুহূর্তের মধ্যে গোটা স্কয়ার থেকে পানি উধাও! বিশাল এক মাঠে রূপান্তরিত হাইজিংশা স্কয়ারের রং তখন গাঢ় লাল। কয়েক শ ছেলেমেয়ের ডিসপ্লে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখল এই সন্ধ্যার দর্শক-অতিথিদের। চোখের পলক ফেলারও সুযোগ মিলল না কারও। একটার পর একটা চোখ ধাঁধানো সব আয়োজন নিয়ে কালকের সন্ধ্যা মাতিয়ে রাখল চীনের অন্যতম বড় এই শহর।
তারই কিছু নমুনা—সমুদ্রে গর্জন উঠেছে, মাছ ধরা জেলের কী অবস্থা ফুটিয়ে তুলতে আস্ত জাহাজই বানিয়ে ফেলা হলো! ঝড়ের প্রতিকূলে সেই জাহাজের লড়াই গোটা আয়োজন করল আরও বর্ণাঢ্য। জনতাকে মনে করিয়ে দিল, কুংফু-কারাতে আর ব্রুস লির ছবির জন্য পরিচিত ছিল যে চীন, সেই দেশটিই প্রতিকূলতাকে জয় করে বহু আগেই বিশ্বের ক্রীড়াসরে সমীহ জাগিয়েছে। মহাদেশীয় ক্রীড়াযজ্ঞ তো তার কাছে বড় কোনো ব্যাপারই নয়।
সিনেমা দৃশ্যে নায়ক-নায়িকার মতো শূন্যে ভেসে চলা, তারই ছন্দে খুদে সাঁতারুদের সিঙ্ক্রোনাইজড সাঁতার, কৃত্রিম হ্রদে স্পিড বোর্ড চালানো, একসঙ্গে এক শ পারফর্মারের মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া, ফুলের ওপর ঢেউ খাওয়া, চিল হলে উড়ে বেড়ানো—কী ছিল না কালকের দীর্ঘ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। অনন্য, অসাধারণ!
মানুষ এমন সৃজনশীল চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এটা শুধুই একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নয়, চীন যেন আবার নিজেদের সৃজনশীলতার বার্তাই পাঠাল। গ্যালারির বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে থাকল তারই স্বীকৃতি। এশিয়ান অলিম্পিক কমিটির সভাপতি আহমেদ আল সাবাহর কণ্ঠে চীনের অকুণ্ঠ প্রশংসা শোনা তাই স্বাভাবিকই, ‘সাত বছরের প্রস্তুতির ফসল এটা। অভিনন্দন চীন।’
২০০৮ সালে অলিম্পিক গেমসের সফল আয়োজক বেইজিংও পেয়েছিল অকুণ্ঠ প্রশংসা। ১৯৯০ সালে এশিয়ান গেমসের আয়োজক ছিল চীনের রাজধানী। এবারই প্রথম গেমসের ৫৯ বছরের ইতিহাসে রাজধানীর বাইরে দ্বিতীয় শহর হিসেবে এশিয়ান গেমসের আয়োজন করছে গুয়াংজু। একই দেশের দুই শহরে ২০ বছরের ব্যবধানে দুবার এশিয়ান গেমস—চীন বলেই সম্ভব!
শহরজুড়ে থাকা উঁচু সব ভবনই তার সাক্ষ্য দেয় নীরবে। বাংলাদেশের মতো অপরিকল্পিত আর রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে এই ভবনগুলো হয়নি! পরিকল্পনার ছাপ সবখানেই। এক মিডিয়া-পল্লি আর মিডিয়া সেন্টারই করা হয়েছে গোটা বিশেষ নতুন ভবনে। বেশির ভাগই ১০ তলার ওপরে! প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের গেমস বাজেট তো এমনিতেই হয়নি!
গেমস-পল্লিতে একটা ভবনের গায়ে লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে। বাংলাদেশের পতাকা ঝুলিয়ে দেওয়ার অর্থ, এই ভবনে শুধু বাংলাদেশের অ্যাথলেটরাই থাকছে। ৪৫টি দেশের জন্যই আলাদা অট্টালিকা। ১০ হাজারের বেশি ক্রীড়াবিদের ১৬ দিনের এ সফরটা মাঠের বাইরে সুখকর করে তুলতে এর চেয়ে বেশি কিছু করার থাকতে পারে না।
সত্যিই এ যেন স্বর্গোদ্যান! এখানকার বিখ্যাত লাল ফুল কাপকায় আচ্ছাদিত গোটা শহর তো স্বর্গোদ্যানই হবে! সাড়ে তিন ঘণ্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ ক্ষণে আতশবাজির ঝলকানি আরও একবার। গুয়াংজুকে আসুন করতালিতে অভিনন্দন জানাই।
No comments